ভ্রমণ , ধর্মীয়কর্মআর ব্যবসা করার জন্য প্রতিবছর বহু ভারতীয় আর নেপালী চীনের তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে আসেন । তিব্বতে সংবাদদাতা কয়েকজন নেপালীর সংগে দেখা করলেন । তাদের মধ্যে কেউ কেউ ভ্রমণ আর কেউ কেউ ব্যবসা করার জন্য তিব্বতে এসেছিলেন । তিব্বতে দীর্ঘকাল থাকুন বা স্বল্পকালীন ভ্রমণ করুন না কেন , ভ্রমণকারীরা তিব্বতের প্রতি গভীর স্নেহ আর ভালবাসা ব্যক্ত করেছেন । তারা তিব্বতকে নিজেদের দ্বিতীয় জন্মস্থান বলে মনে করেন ।
৭৮ বছর বয়স্ক মিঃ ধর্ম রত্না তুলাধর লাসার বিখ্যাত পাচাও রাস্তায় একটি বাণিজ্য কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছেন । তিনি নেপালের পণ্য বিক্রি করেন । ১৯৪২ সালে তিনি ব্যবসা করার জন্য তার বড় ভাইয়ের সংগে তিব্বতে আসেন । তার পর তিনি মাঝে মাঝে নেপাল আর তিব্বতের মধ্যে আসা যাওয়া করতেন । গত শতাব্দির ষাটের দশক থেকে তিনি প্রতি বছরের বেশির ভাগ সময়ে লাসায় থাকেন ।
গত ষাটাধিক বছরে তুলাধর স্বচক্ষে ১৯৫১ সালে তিব্বতের শান্তিপূর্ণ মুক্তি , ১৯৫৯ সালে তিব্বতের গণতান্ত্রিক সংস্কার আর ১৯৬৫ সালে তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের প্রতিষ্ঠা দেখেছেন । আজ তিব্বতে অনেক পরিবর্তন হয়েছে । আধুনিক ব্যবস্থা , উঁচু উঁচু অট্টালিকা নির্মাণ করা হয়েছে , প্রশস্ত রাস্তায় নানা রকম যানবাহন দেখা যায় । তিব্বতের এই সব উন্নতি আর পরিবর্তনে তিনি খুব গৌরব বোধ করেন ।
আগে লাসা থেকে দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য ২৩ দিন সময় লাগতো । তখন কোনো যানবাহন ব্যবস্থা ছিল না , দেশে ফিরে যাওয়া ঘোড়ায় চড়ার ওপর নির্ভর করতো । এখন লাসা থেকে কাঠমুন্ডু পর্যন্ত সড়কপথ চালু হয়েছে । দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য গাড়িতে করে শুধু ১৮ থেকে ২০ ঘন্টা লাগে । বিমানে মাত্র এক ঘন্টারও একটু বেশি সময় প্রয়োজন ।
গত কয়েক দশকে মিঃ তুলাধর লাসা আর কাঠমুন্ডুর মধ্যে আসা যাওয়া করেন । প্রতি বছরের শীতকালে তিনি নেপালে বাস করেন এবং গ্রীষ্মকালে তিনি লাসায় ফিরে ব্যবসা করেন । তিনি বলেছেন , তিব্বদের সংগে তার অবিচ্ছেদ্য বন্ধুত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । তিনি একজন প্রায় তিব্বতীতে পরিণত হয়েছেন । শেষ জীবনে তিনি তিব্বতে বাস করতে চান ।
তার ছেলে মহেশ রত্না তুলাধর কাঠমুন্ডুতে একটি বাণিজ্য কোম্পানি স্থাপন করেছেন । তিনি তিব্বতের স্থানীয় বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন পণ্যদ্রব্য আর হস্তশিল্প- দ্রব্য বিক্রি করেন । যেহেতু তার আশি বছর বয়স্ক বাবা লাসায় থাকতে পছন্দ করেন , সেহেতু তিনি লাসা আর কাঠমুন্ডুর মধ্যে আসা যাওয়া করতে বাধ্য হন । লাসায় তার বাবার দোকানের ব্যবসার জন্য তার সাহায্যও প্রয়োজন । তিনি বলেছেন , এখন তিব্বত খুব দ্রুত বিকশিত হচ্ছে । বাজারে প্রচুর পণ্যদ্রব্য পাওয়া যাচ্ছে ।
আগে আমরা নেপাল থেকে তিব্বতে বিপুল পরিমাণ পণ্যদ্রব্য আমদানি করতাম । এই সব পণ্য বিক্রি করে প্রচুর আয় করা যেতো । এখন এই অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে । আমরা তিব্বত থেকে নেপালে বিপুল পরিমাণ পণ্য আমদানি করি , কিন্তু নেপাল থেকে তিব্বতে অল্প পরিমাণ পণ্য আমদানি করি ।
মহেশ বলেছেন , এখন তিব্বতীরা পণ্যের রকমারি ও গুণগত মানের ওপর খুব গুরুত্ব দেন । অধিক থেকে অধিকতর লোক ব্যবসা শুরু করেছেন । তাদের মধ্যে তিব্বতীরা ছাড়া চীনের অন্যান্য অঞ্চলের লোকও আছেন । বাজারে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে । পক্ষান্তরে কাঠমুন্ডুতে তার দোকানে চীনের পণ্য বিক্রির ব্যবসা ভাল চলছে । নেপালীদের চীনের পণ্য খুব ভাল লাগে ।
গত বিশাধিক বছরে তিব্বতে রত্না কুমার তুলাধর ব্যবসা করেন । তার পরিবার কাঠমুন্ডুতে । তিনি লাসার তাচাও মন্দিরের নিকটবর্তী পাচাও রাস্তায় একটি নেপালী তামা জিনিস , বৌদ্ধমূর্তি আর অলংকারের দোকান প্রতিষ্ঠা করেছেন । তিব্বতে দীর্ঘকাল ধরে জীবনযাপন করার দরুণ মিঃ রত্না স্থানীয় সমাজ ও পরিবেশ সম্পর্কে বেশি জানতে পেরেছেন । তিনি ভাল তিব্বতী ভাষা বলতে পারেন এবং তিব্বতীদের সংগে মিলেমিশে থাকেন ।
তিনি বলেছেন , সহস্রাধিক বছর আগে তিব্বতী রাজবংশে বিয়ে করার জন্য নেপালী রাজকুমারী তিব্বতে আসেন । তখন থেকে বহু নেপালী তিব্বতে আসেন । চীন আর নেপাল বরারই দুই বন্ধুভাবাপন্ন প্রতিবেশী রাষ্ট্র । দোশের সম্পর্ক সৌহার্দ্যপূর্ণ । তিব্বতে তার ব্যবসা করা খুব সুবিধাজনক ।
এখন তিব্বত খুব প্রসারিত হচ্ছে । এখানকার পরিবেশ আরো সুন্দর হয়েছে , যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো সুবিধাজনক হয়েছে আর খাওয়া দাওয়া প্রাচুর্য্যময় হয়েছে । তিব্বতী জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে । তিনি মনে করনে , তিব্বতের উন্নয়নের জন্য চীন সরকার ব্যাপক প্রচেষ্টা চালিয়েছে ।
মিঃ রত্না পাচাও রাস্তায় ব্যবসা করেন । প্রতিদিন তিনি দাচাও মন্দিরে উপাসনা করতে আসা তিব্বতীদের সংগে আদান প্রদান করেন । তিনি মনে করেন , তিব্বতীরা খুব শান্ত আর দয়ালু । তারা তিব্বতী বৌদ্ধ ধর্মক্রিয়ার খুব অনুসারী । উপাসনা করার জন্য তিনিও মাঝে মাঝে তিব্বতের মন্দিরে যান । তিনি বলেছেন , তিনি চীনের বি ভিন্ন অঞ্চল ঘুরে দেখতে চান । তিনি চীনের অভ্যন্তরভাগে আরেকটি দোকান প্রতিষ্ঠিত করতে চান ।
জুমাল জুদ্দিন দু' এক বছর করে তিব্বত ভ্রমণ আর লাসায় তার মায়ের আত্মীয় স্বজনের সংগে দেখা করতে আসেন । যখন তিনি লাসায় আসেন , তখন তিনি দাচাও মন্দিরের নিকটবর্তী পাচাও রাস্তায় বাজারে ঘুরে বেড়াতে যান । তিনি বলেছেন , আজ লাসা খুব সমৃদ্ধ হয়েছে । এটা চীনের অভ্যন্তরভাগের অন্যান্য বড় শহরের সঙ্গে তুলনা করা যায় । পাচাও বাজারে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের পণ্য পাওয়া যায় । তিব্বতের বিভিন্ন অঞ্চলে অধিক থেকে অধিকতর দোকান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ।
জামাল জুদ্দিন বলেছেন , তার শৈশব তিব্বতে কেটেছে । আগের চেয়ে তিব্বতে লক্ষনীয় পরিবর্তন হয়েছে । তিব্বত আরো সুন্দর হয়েছে , জনগণের জীবনযাপন আরো স্বচ্ছন্দ হয়েছে । তার তিব্বত আরো ভাল লেগেছে ।
যখন তিনি নেপালে ফিরে যান , তখন বন্ধু বান্ধব আর আত্মীয়- স্বজনকে উপহার দেয়ার জন্য তিব্বত থেকে বেশ কিছু পণ্য কিনেন । দুদেশের বাণিজ্যিক আদান প্রদান ত্বরান্বিত করার জন্য তিনি একটি আমদানি ও রফতানি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করতে চান ।
|