v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-02-24 18:22:04    
আফগানিস্তানের নারী জেনারেল হাতুল্লাহ জাই

cri
    হাতুল্লাহের বাড়ির বৈঠক-কক্ষ যেন এক বৃহত্তম প্রদর্শনী ঘর । ২০ বর্গমিটারের ঘরের সর্বত্রই নানা ধরণের পদক,কাপ ও সার্টিফিকেটে সাজানো । তিনি বলেছেন ,দেশবিদেশের প্যারাশুট জাম্প প্রতিযোগিতাগুলোতে তিনি এই সব পুরস্কার পেয়েছেন । ১৬ বছর বয়সে তাঁর প্রথম প্যারাশুট থেকে এ পর্যন্ত তিনি ৫০০-এরও বেশীবার প্যারাশুট জাম্প দিয়েছেন ।

    তিনি বলেছেন ,তিনি কখনো যুদ্ধে অংশ নেননি । তিনি আর সহকর্মীরা শুধু নানা ধরণের উদযাপনী তত্পরতায় আর অনুষ্ঠানে প্যারাশুট জাম্প দেন । যুদ্ধকালের প্যারাট্রুপারেরতুলনায় তাঁরা একেবারে ভিন্ন । তিনি যুদ্ধকে ঘৃণা করেন । আফগানিস্তান দীর্ঘস্থায়ীশান্তি চায় ।

    তাঁর প্রথমবার প্যারাশুট জাম্প বলতে গেলে হাতুল্লাহ এখনো ভয় করেন । তিনি বলেছেন ,প্রথম প্যারাশুট লাফের আগে আমি কেবল এক সপ্তাহের প্রশিক্ষণ নিয়েছি । যখন আমি ৮০০মিটার উঁচু আকাশ থেকে নিচে ঝাঁপিয়ে পড়ি , তখন আমি অনুভব করি ,নিচে নয় আমি যেন বাতাসের সঙ্গে উপরে যাচ্ছিলাম। আমি বারবার প্রার্থনা করি যে, আল্লাহ, তাড়াতাড়ি আমাকে মাটিতে নামিয়ে দেন । কারণ এখানে মাটিতে ফিরে যাওয়ার কোনো সিঁড়ি নেই ।

    দু'বছর পর একদিন,নববিবাহিতা হাতুল্লাহ এক সাংঘাতিক আঘাতের সম্মুখীন হন । এক দুর্ঘটনায় তার স্বামী মারা যান । তখন ১৮ বছর বয়সের হাতুল্লাহ গর্ভবতী ছিলেন । স্বামীর আকস্মিক মৃত্যুতে হাতুল্লাহ বেঁচে থাকার সাহস হারান ।

    অবশেষে তিনি দৃঢ় সংকল্প নিয়ে পরিবারপরিজনদের সমর্থনে সাহসের সঙ্গে জীবনের সম্মুখীন হতে সক্ষম হন । তিনি নিজের শ্রেষ্ঠত্ব দেখিয়ে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণের কমান্ডার হন ।

    প্যারাশুট জাম্প হাতুল্লাহের জন্যে যেমন প্রশংসা ও সুনাম বয়ে এনেছে তেমনি বহুবার বিপদও ডেকে এনেছে । একবার প্যারাশুট লাফ প্রতিযোগিতায় তিনি বিপদের সম্মুখীন হন । সেই দিন সাধারণ সময়ের মতো তিনি ২০০০ মিটার উঁচু আকাশ থেকে ঝাঁপিয়ে পড়েন কিন্তু ২০ সেকেন্ডের পর তিনি উপলব্ধি করলেন যে , তাঁর প্যারাশুট খুলছে না । তিনি বেশ কয়েকবার চেষ্টা চালালেও ব্যর্থ হন। তিনি তাড়াতাড়ি বিকল প্যারাশুট ত্যাগ করে জরুরী প্যারাশুট খোলার চেষ্টা করেন ।

    অবশেষে তিনি নিরাপদে মাটিতে অবতরণ করলেন । কিন্তু সময় দীর্ঘ হওয়ার কারণে যখন তিনি মাটিতে অবতরণ করেন তখন তাঁর হাতপা ও ঘাড় ভেঙ্গে যায় । তাসত্ত্বেও তিনি প্যারাশুট পরিত্যাগ করেননি । তিনি বলেছেন, আমি দলের একমাত্র নারী প্যারাট্রুপার । আমি চাই , সবাই জানবেন যে পুরুষের তুলনায় আমরা মহিলারা পিছিয়ে নই , আমরা অনুরূপ কাজ করতে সক্ষম।

    বিংশশতাব্দীর আশির দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রভাবে আফগানিস্তানের তখনকার সামাজিক রীতিনীতি আজকের তুলনায় অনেক পার্থক্য ছিল । তাই একমাত্র নারী প্যারাট্রুপার হিসেবে হাতুল্লাহ বিন্দুমাত্র অসুবিধা অনুভব করতেন না ।

    কিন্তু নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি ও শেষ দিকে তালিবান প্রশাসন প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে নারীদের স্বাধীনতা বিপুলভাবে সীমাবদ্ধ হয়েছে এমন কি একলা বাইরে যাওয়াও নিষিদ্ধ হয়েছে । প্যারাশুট জাম্পএমন কাজতো দুরের কথা । সুতরাং সেই কয়েক বছরে হাতুল্লাহ বাধ্য হয়ে নিজের পছন্দনীয় প্যারাশুট জাম্প ছেড়ে বাসায় হাতের কাজ করতেন ।

    হাতুল্লাহবুককেস থেকে এক লম্বা গুটানো কাগজ বের করেন ।খুলে দেখা গেলো,এটা তাঁর আঁকা প্যারাশুটের স্কেচ-ম্যাপ। হাতুল্লাহ বলেছেন,তালিবান শাসনামলে যদিও আমি অব্যাহতভাবে প্যারাশুট লাফ দিতে পারি নি তবুও নিজের কাজ যাতে ভুলে না যায় তার জন্যে আমি এই ম্যাপ তৈরী করেছি । আমি মাঝেমাঝে ম্যাপটি খুলে গবেষণা করি । তালিবান শাসন উচ্ছেদ হওয়ার পর মাদাম হাতুল্লাহ আবার প্যারাশুট জাম্পে ফিরে এসেছেন এবং অব্যাহতভাবে " প্যারাশুট জাম্পের রানী" নামের পৌরাণিকী কথা সৃষ্টি করেন । ২০০২ সালে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট কারজাই স্বয়ং হাতুল্লাহকে জেনারেল পদবিতে নিয়োগ করেন ।

    ২০০৫ সালের অক্টোবর মাসে হাতুল্লাহ আমন্ত্রিত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক নারী ফোরামে অংশ নেন । তিনি এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাইস আর যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি কিন্স বোগ প্রমূখ বিখ্যাত ব্যক্তিদের সঙ্গে ২০০৫ সালের বিশ্ব বিখ্যাত ব্যক্তির নামের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন । তিনি বলেছেন , এই গৌরব শুধু আমার নয় , এটা আমার দেশ ও জনগণের গৌরব ।

    প্রায় ৩০ বছরস্থায়ী যুদ্ধের পর আফগানিস্তানের নানা ব্যবস্থা ধ্বংস হয়েছে । তাই সরকার প্যারাশুট জাম্পকে বেশী গুরুত্ব দিতে পারে না । আজকের প্যারাট্রুপাররা এখনো ৩০ বছর আগেকার যন্ত্রপাতি ব্যবহার করছেন । প্যারাশুটের কাপড় যথেষ্ট নয় ,তাই প্যারাট্রুপাররা বাধ্য হয়ে নিজের কাপড় পরে প্যারাশুট জাম্প দেন । হাতুল্লাহ বলেন ,আফগানিস্তানের প্যারাশুট জাম্প বিকাশ হবে বলে আমি আশা করি । এখন রাষ্ট্রের পুনঃনির্মাণকাল ,বিভিন্ন ক্ষেত্র পুঁজি দরকার। তাই প্যারাশুট জাম্পকে অন্যান্য বুনিয়াদী নির্মাণ কাজের জন্যে পথ দিতে হবে । কিন্তু আমি কখনো প্রচেষ্টা পরিত্যাগ করিনি ।

    ২০০৪ সালের শেষ দিকে হাতুল্লাহ শেষবার প্যারাশুট জাম্প দেন । বয়স বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি ধাপেধাপে নিজের প্রধান কাজ প্যারাট্রুপারদের প্রশিক্ষণ এবং বাহিনীর নারী বিষয়ক কাজের উপরে স্থানান্তরিত করেন ।

    হাতুল্লাহ বলেছেন ,যদিও আমি আফগানিস্তানের প্রথম নারী প্যারাট্রুপার তবুও আমি চাই না আমি শেষ প্যারাট্রুপার হই । এখন নারী প্যারাট্রুপারকে প্রশিক্ষণ দেয়ার কাজ আর্থিক অসুবিধা ও সামাজিক জনমতের প্রভাবের সম্মুখীন হলেও প্যারাশুট জাম্পেআফগান নারীদের অবস্থান রক্ষার জন্যে আমি যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালাব ।