চীনে গ্রামবাসীদের সংখ্যা ৭৫ কোটিরও বেশি । তা দেশের মোট লোকসংখ্যার ৬০ শতাংশ । নানা কারণে চীনে শহরের চেয়ে গ্রামীণ চিকিত্সা ব্যবস্থার ব্যাপক ব্যবধান আছে । ব্যাপক সংখ্যক কৃষক কেমন করে যে সুস্বাস্থ্য রক্ষা আর সুষ্ঠু চিকিত্সা গ্রহণ করতে পারবেন , চীন সরকার এই সমস্যার ওপর অত্যন্ত মনোযোগ দেয় । কিছু দিন আগে চীন সরকার উল্লেখ করেছে যে , পরবর্তী ৫ বছরে গ্রামাঞ্চলে পূর্ণাংগ চিকিত্সা আর স্বাস্থ্য রক্ষা পরিসেবার ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে ।
চীনে গ্রামীণ চিকিত্সা ব্যবস্থা শহরের চেয়ে অনেক পিছিয়ে রয়েছে । পরিসংখ্যান অনুযায়ী , দেশের ৮০ শতাংশ চিকিত্সা সম্পদ শহরগুলো বিশেষ করে বড় বড় হাসপাতালে কেন্দ্রীভূত আছে । গ্রামীণ গণ-স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পূর্ণাংগ হয় নি , হাসপাতালের সরঞ্জাম পুরানো , অনুন্নত এবং যোগ্য চিকিত্সক কম । তাতে কৃষক রোগীদের চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না । এর সংগে সংগে চীনের কৃষকদের চিকিত্সার মৌলিক নিশ্চয়তা অভাব , তাদের চিকিত্সার খরচ নিজের , তবু চীনের কৃষকদের আয় অল্প । সেজন্য তাদের চিকিত্সার খরচ বহনের সামর্থ্য অত্যন্ত নগণ্য । মিঃ মা সি ছুন হুপে প্রদেশের ছান ইয়াং জেলার একজন সাধারণ কৃষক । তিনি শিশু বয়সেই হৃদরোগে আক্রান্ত হন । আগে বাচ্চাদের লেখাপড়া আর পারিবারিক জীবনযাপনের বোঝা ভারি বলে তিনি বরাবরই অস্ত্রোপচার গ্রহণের সুযোগ পান নি । ফলে তার শরীর আরো দুর্বল হয়ে পড়ল । ২০০৩ সালে তার ছেলে স্নাতক হয় । তখন ছান ইয়াং জেলায় নতুন গ্রামীণ সহযোগিতা চিকিত্সা ব্যবস্থার প্রবর্তন শুরু হয় । ফলে তিনি অস্ত্রোপচার গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন ।
তার অস্ত্রোপচার আর অন্যান্য চিকিত্সা করার জন্য মোট ৬০ হাজার ইউয়ান ব্যয় করা হয়েছে । নতুন গ্রামীণ সহযোগিতা চিকিত্সা তহবিলের নিয়ম অনুসারে তার জন্য ১০ হাজার ইউয়ান ব্যয় বহন করা হয়েছে ।
অস্ত্রোপচারের জন্য তিনি ব্যাংক থেকে ১০ হাজার ঋণ করেছেন । নতুন গ্রামীণ সহযোগিতা চিকিত্সা তহবিল যে তার ১০ হাজার চিকিত্সা ব্যয় বহন করেছে , তাতে তার অসুবিধা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য হয়েছে ।
দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের সি ছুয়ান প্রদেশের তুচিয়াংইয়েন শহর এমন একটি অঞ্চল , যেখানে নতুন গ্রামীণ সহযোগিতা চিকিত্সা ব্যবস্থা চালু হয়েছে । এই শহরের একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি মিঃ সেন লিন বলেছেন , নতুন গ্রামীণ সহযোগিতা চিকিত্সা ব্যবস্থায় অংশগ্রহণকারী কৃষকদের চিকিত্সা গ্রহণের হার আগের চেয়ে বেড়ে গেছে । কৃষকদের চিকিত্সার ভার কিছুটা কমে গেছে । তিনি বলেছেন , ২০০৩ সালে এই শহর সি ছুয়ান প্রদেশেনতুন গ্রামীণ সহযোগিতা চিকিত্সা ব্যবস্থা প্রবর্তনের একটি পরীক্ষামূলক শহর হিসেবে ধার্য করা হয়েছে । তখন থেকে ওখানকার কৃষকদের চিকিত্সা আর স্বাস্থ্য রক্ষার মান উন্নত হয়েছে ।সহযোগিতা চিকিত্সা ব্যবস্থা ব্যাপক কৃষকদের সমাদর পেয়েছে ।
নতুন গ্রামীণ সহযোগিতা চিকিত্সা ব্যবস্থা কৃষকদের চিকিত্সার অর্থনৈতিক চাপ কমানোর সংগে সংগে গামীণ প্রাথমিক স্তরের চিকিত্সা প্রতিষ্ঠানের আয়ও বাড়িয়ে দিয়েছে । থানার ক্লিনিক বর্ধিত আয় কাজে লাগিয়ে চিকিত্সা সরঞ্জাম কিনবে , চিকিত্সা কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেবে এবং চিকিত্সার মান উন্নত করবে । আগে দিনে আমাদের ক্লিনিকে থাকার জন্য ৬ থেকে ৮ জন রোগী ব্যবস্থা করা হতো । এখন এই সংখ্যা আঠার থেকে বিশে দাঁড়ায় । মাঝে মাঝে এই সংখ্যা তিরিশেরও বেশি । এতে কৃষকরা উপকৃত হয়েছে এবং হাসপাতাল প্রসারিত হয়েছে ।
নতুন গ্রামীণ সহযোগিতা চিকিত্সা ব্যবস্থা সুফল অর্জন করেছে বলে চীন সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে , এবছর থেকে সহযোগিতা চিকিত্সা তহবিলে অংশগ্রহণকারী কৃষকদের প্রতি সরকারী ভর্তুকী আর অর্থ বরাদ্দ করার মানদন্ড বাড়িয়ে দেয়া হবে এবং এই ব্যবস্থা চালু করার জন্য পরীক্ষামূলক আওতা ধাপে ধাপে সম্প্রসারিত হবে । আগামী ৫ বছরে এই ব্যবস্থা মোটামুটিভাবে সমগ্র চীনের গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়বে ।
চীনের কেন্দীয় আর স্থানীয় বিভিন্ন স্তরের অর্থ বিভাগগুলো নতুন গ্রামীণ সহযোগিতা চিকিত্সা তহবিলে অংশগ্রহণকারী কৃষকদের জন্য অর্থ বরাদ্দ বাড়িয়ে দেবে । এতে নতুন গ্রামীণ সহযোগিতা চিকিত্সা ব্যবস্থার নির্মাণকাজ আর বিকাশের জন্য ইতিবাচক শর্ত যোগানো হয়েছে ।
কিছু দিন আগে চীনের স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় পরবর্তী ৫ বছর মেয়াদী উন্নয়নের একটি কার্যক্রম পেশ করেছে । কার্যক্রমে উল্লেখ করা হয়েছে যে , পরবর্তী ৫ বছরে গ্রামাঞ্চলে স্বাস্থ্য রক্ষার বুনিয়াদী ব্যবস্থার নির্মাণকাজ খাতে চীন সরকার ২০ বিলিয়ন ইউয়ান রেন মিন পি বরাদ্দ করবে । এই কার্যক্রম অনুযায়ী , জেলা , থানা ও গ্রাম এই তিন পর্যায়ের গ্রামীণ চিকিত্সা ও স্বাস্থ্য রক্ষার পরিসেবা আর ইন্টারনেট বিশেষ করে থানার ক্লিনিক আর জেলার হাসপাতালের নির্মাণকাজ সুসংবদ্ধ আর পূর্ণাংগ করে তোলা হবে । এর সংগে সংগে গ্রামাঞ্চলে প্রাথমিক স্তরের চিকিত্সা কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেয়ার কাজ জোরদার করা হবে , থানা ও গ্রাম এই দুই পর্যায়ের চিকিত্সকদের প্রশিক্ষণ দেয়ার কোর্স প্রণয়ন করা হবে , গ্রামাঞ্চলের চিকিত্সা ও স্বাস্থ্যরক্ষা বিষয়ক কর্মীদের জ্ঞানের মান ও পরিসেবার সামর্থ্য উন্নত করা হবে এবং গ্রামাঞ্চলে চিকিত্সা ও স্বাস্থ্যরক্ষা কাজে নিয়োজিত কর্মীদের সামর্থ্য পূর্ণাংগ করে তোলার জন্য প্রতি বছর বিভিন্ন শহর থেকে গ্রামাঞ্চলের চিকিত্সা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কয়েক হাজার জন দক্ষ চিকিত্সা কর্মী পাঠানো হবে ।
|