১৪ বছর আগে ফেং চুন ছিলেন একজন ছোট দোকানদার। তিনি ইলেক্ট্রনিক্স বাজারে কীবোর্ড এবং কম্পিউটারের সি পি ইউ বিক্রী করতেন। আজ তিনি একটি বড় কোম্পানির প্রেসিডেণ্ট হয়েছেন । তাঁর কোম্পানি বছরে ৩০ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য বিক্রী করে । তাঁর কোম্পানির "আইগো" সিরিজের ডিজিটাল পণ্য জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার নামকরা মার্কার পণ্যকে পরাজিত করেছে । ঐ দেশদুটোর বড় বড় কোম্পানি বহু বছর যাবত্ একচেটিয়াভাবে চীনের বাজার নিয়ন্ত্রণ করেছিল। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ব্লেয়ারও চীনের এই কোম্পানির আইগো মার্কার ডিজিটাল পণ্য খুব পছন্দ করেছেন। চীনের নভোচারীরা নভোযানেও ফেং চুনের কোম্পানির ডিজিটাল পণ্য ব্যবহার করেন। চীনের আই টি শিল্প মহলে ফেং চুন এখন এক কিংবদন্তিতুল্য ব্যক্তি। তাঁর কোম্পানির নাম: হুয়াছি ডিজিটাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কোম্পানি (লিমিটেড)।
এ বছর ফেং চুনের বয়স ৩৬ বছর। ১৯৯২ সালে তিনি ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগ থেকে স্নাতক হন। তার পর তিনি পেইচিংয়ের চোংকুয়ানছুন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিল্পপার্কে গিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। প্রথম দিকে তিনি সস্তা ধরনের কীবোর্ড, মাউস ও কম্পিউটারের সিপিইউ বিক্রী করতেন। তিনি নিজেই বেশ ভারি ধরনের সিপিইউ এবং কীবোর্ড বহন করে খদ্দেরদের কাছে পৌঁছে দিতেন। তিনি বলেছন, "১৯৯২ সালে স্নাতক হবার পর নিজে ব্যবসা করতে চাইলে সবচেয়ে ভাল সুযোগ ছিল ইলেকট্রনিক্স শিল্পের ব্যবসা। তখন কম্পিউটার শিল্পের দ্রুত উন্নয়নের ফলে আমাদের এক সুবর্ণ সুযোগ হলো। তাই আমরা এই শিল্পেই নিজের ব্যবসা শুরু করলাম।"
বহু লোকের সঙ্গে ফেং চুনের খুব ভাল সম্পর্ক, তার উপর তাঁর ক্ষুরধার বুদ্ধি। তাঁর ব্যবসা ক্রমেই বাড়তে লাগলো। তিনি এই শিল্পক্ষেত্রে 'প্রথম' বা দ্বিতীয় স্থান অধিকার করলেন। ১৯৯৩ সালে তিনি হুয়াছি ডিজিটাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করলেন। তার পর তাঁর এই কোম্পানির ব্যবসার বার্ষিক মূল্য একটানা কয়েক বছরে ৬০ শতাংশেরও বেশি হারে বেড়ে চলেছে। ফেং চুন সুস্পষ্টভাবে উপলব্ধি করলেন , শুধু সস্তা ধরনের মাউস, কিবোর্ড আর কম্পিইটারের সিপিইউ বিক্রী করতে থাকলে তাঁর হুয়াছি কোম্পানির কোনো স্বকীয় মেধাসত্ব থাকবে না এবং নিজস্ব কোনো মূল প্রতিদ্বন্দ্বী সামর্থ্য থাকবে না । ফলে কোম্পনির দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়ন সম্ভব হবে না।
১৯৯৯ সালে চীনের ইণ্টার্নেট এবং কম্পিইটার জনপ্রিয় হবার ফলে চীনের বাজারে বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল পণ্যদ্রব্যের চাহিদা দারুণ বেড়ে যায়। তখন ফেং চুন ভাবতে শুরু করলেন, কিভাবে এই সুযোগ আঁকড়ে ধরে প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে কোম্পানির দ্রুত উন্নতি করা যাবে । গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করার পর তাঁর পরিচালিত কোম্পানিটি মোবাইল স্টোরেজ দ্রব্য, যেমন, মোবাইল ধরনের ইউডিস্ক, হার্ডডিস্ক, মেমোরিস্টিক ইত্যাদি গবেষণা ও উন্নয়নে পুঁজি বিনিয়োগ করেন এবং নিজেস্ব মেধাসত্বের 'আইগো'(দেশপ্রেমিক) মার্কা প্রতিষ্ঠা করেন। কোম্পানির এই ব্যবস্থা শিঘ্রই সফল হয়। সরকারী সংস্থা এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো তাঁর কোম্পানির আইগো মার্কার মোবাইল স্টোরেজ দ্রব্য পছন্দ করলো এবং প্রচুর কেনার জন্য অর্ডার দিতে লাগলো। এই সফলতার পর ফেং চুন আবার এমপি-থ্রি গবেষণা ও উন্নয়ন শরু করলো।তিনি বলেছেন, "১৯৯৯ সালে আমরা মোবাইল স্টোরেজ গবেষণা ও উন্নয়ন শুরু করার পর আমাদের বিনিয়োগের খুব উচ্চ মুনাফা পাওয়া গেল। এই প্রচুর পরিমাণ মুনাফাকে আমরা আবার এমপি-থ্রি গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ করলাম।"
চীনের এমপি-থ্রির বাজার দক্ষিণ কোরিয়া , জাপান ইত্যাদি দেশের নামকরা মার্কার একচেটিয়া দখলে ছিল । পরে ফেং চুনের হুয়াছি কোম্পানির 'আইগো'মার্কার এমপি-থ্রি এই একচেটিয়াপনা ভেঙে দিলো। ২০০৪ সালে 'আইগো' মার্কার এমপি-থ্রি চীনের বাজারে বিক্রির পরিমাণের দিক থেকে প্রথম স্থান অধিকার করলো এবং ইতিমধ্যেই একটানা দু বছর জাপান ও দক্ষিণকোরিয়ার স্যামসাং, সনি এবং ব্লেয়ার ইত্যাদি মার্কা ছাড়িয়েছে।
হুয়াছি কোম্পানির কর্মী ছেং লিচুন বলেছেন, "বিদেশী মার্কার তুলনায় আমাদের 'আইগো' মার্কার এমপি-থ্রি চীনাদের জন্য বেশি উপযোগী, তার কাঠামো , ডিজাইন এবং প্রয়োগের পদ্ধতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে চীনাদের ধারণার বিশেষ উপযোগী এবং গ্রহণযোগ্য।"
তিনি বলেছেন বিদেশের বাজারে 'আইগো'মার্কার এমপি-থ্রি বিক্রীর সুবিধার জন্য বিদেশীদের অভ্যাস অনুসারে তার কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে এবং ব্রিটেন, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্র ইত্যাদি দেশে 'আইগো' এমপি-থ্রি রপ্তানি করা হয়েছে ।
হুয়াছি কোম্পানির 'আইগো, মার্কার এমপি-থ্রি দেশী বাজারে স্থিতিশীলভাবে প্রথম স্থান অধিকার করে আছে, এখন কোম্পানিটি আবার এমপি-ফোর সিরিজের পণ্য উত্পাদন ও বিক্রি শুরু করেছে । 'আইগো' এমপি- ফোর বিদেশেও খুব সমাদৃত হয়েছে এবং ব্রিটেন ও ফ্রান্স থেকে প্রচুর অর্ডার পেয়েছে।
পেইচিংয়ের একটি কোম্পানির কর্মী ফান আনের গলায় ঝুলে আছে একটি 'আইগো' মার্কার এমপি-থ্রি ওয়াকমেন , তাতে তিনি নানা রকম মিউজিক শুনেন অফিসে যাওয়ার পথে। তিনি এমপি-ফোর ধরনের একটি নতুন ওয়াকমেন কিনতে চান। তিনি বলেছেন, " এমপি-ফোর ধরনের নতুন ওয়াকমেনের ডিজাইন চীনা ও পশ্চিমা শৈলীর মিশ্র স্টাইল । শুধু হাতের তালুর মতো বড়, ঝকঝকে দেখতে খুব সুন্দর। ব্যবহারের পদ্ধতিও খুব সোজা । অফিসে যাওয়ার রাস্তায় বা ভ্রমণের সময়ে অথবা অফিসে কাজের ফাঁকে ফাঁকে তা দিয়ে পছন্দ মতো সঙ্গীত শুনতে পারি ,এমন-কি ছবিও দেখতে পারি।"
জানা গেছে এখন আইগো মার্কার মোবাইল স্টোরেজ পণ্য চীনের ৩০ শতাংশ বাজার দখল করে ফেলেছে । আইগো মার্কার অতিস্পষ্ট ওডিও রেকর্ডিং সিস্টেম চীনের শেংচৌং ৬ মানুষবাহী নভোযানে ব্যবহার করা হয়েছে।
সম্প্রতি এই কোম্পানির নিজস্ব মেধাসত্বের ৮ মিলিয়ন পিক্সেল ডিজিটাল ক্যামেরা গত বছরের শেষ দিকে দেশ-বিদেশের বাজারে দেয়া হয়েছে । ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ব্লেয়ার গত বছর চীনের এই ক্যামেরা দেখে খুব পছন্দ করেছেন। ফেং চুনের ইচ্ছা এই যে , তাঁর কোম্পানির ডিজিটাল পণ্যদ্রব্য বিশ্বের প্রতিটি আনাচে কানাচে বিক্রী হবে । চীনের নিজস্ব মেধাসত্বের 'আইগো' মার্কা একটি আন্তর্জাতিক মার্কায় পরিণত হবে। এটাই হবে দেশবাসীদের গৌরব।
|