১৫ রাষ্ট্রগোষ্ঠীর আরেকটি নাম হচ্ছে "দক্ষিণ-দক্ষিণ আলাপ পরামর্শ ও সহযোগিতার শীর্ষনেতা পর্যায়ের গোষ্ঠী। তা হচ্ছে জোট নিরপেক্ষ ও "৭৭ রাষ্ট্রগোষ্ঠীর" পর উন্নয়নমুখী দেশগুলোর আরেকটি সহযোগিতামূলক সংস্থা। এ সব দেশ আলাদা এশিয়া, আফ্রিকা এবং ল্যাটিন আমেরিকায় অবস্থিত। উপরোক্ত দেশগুলো লোকসংখ্যা হচ্ছে ১৭০ কোটি এবং আন্তর্জাতিক আঙ্গঁনে ত্রর ব্যাপক প্রতিনিধিত্ব আছে। এই গোষ্ঠীর জি এন পি প্রায় ০.৪ ট্রিলিয়ন। তাই তা বিশ্বের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে।
১৫ রাষ্ট্রগোষ্ঠী ১৯৮৯ সালের সেপ্টেম্বর বেলগ্রেডে অনুষ্ঠিত জোটনিরপেক্ষ দেশগুলোর শীর্ষসম্মেলনে প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছিলে। কিছু জোটনিরপেক্ষ দেশের শীর্ষনেতারা মনে করেন, বড় ব্যাপকতাসম্পন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো তাদের সদস্য দেশের বাস্তব অবস্থা ভিন্নভিন্ন বলে কার্যকর তত্পরতা অবলম্বন করা সহজ নয়। তাই একটি ছোট ব্যাপকতাসম্পন্ন, রাষ্ট্রীয় গোষ্ঠী প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এই গোষ্ঠী " ফাঁকা কথা কম বলুন এবং কার্যকর কাজ বেশী করুন " এ স্লোগানের ভিত্তিতে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা ও উন্নয়নমুখী দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ত্বরান্বিত করে। ১৫ রাষ্ট্রগোষ্ঠীর প্রধান তত্পরতা হচ্ছে প্রতি বছরে পালাক্রমে সদস্য দেশগুলোতে একবার শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করা।
প্রতিষ্ঠার সময় ১৫ রাষ্ট্রগোষ্ঠীর সদস্যের মধ্যে রয়েছে: মালয়েশিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, আলজেরিয়া, মিসর, নাইজেরিয়া, সেনেগাল, জিম্বাবুয়, আর্জেনটিনা, ব্রাজিল, জামাইকা, মেক্সিকো, পেরু, ভেনিজুয়েলা ও যোগোস্লাভিয়া। পরে চিলি ও কেনিয়া যথাক্রমে এ গোষ্ঠীতে অংশ নেয়। তাই তার মোট ১৭টি সদস্য আছে। কিন্তু ১৫ রাষ্ট্রগোষ্ঠী এই নাম পরিবর্তিত হয়নি।
১৫ রাষ্ট্রগোষ্ঠীর লক্ষ্য হচ্ছে আরো কার্যকর উপায়ে দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা ও দক্ষিণ-উত্তর সংলাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, উন্নয়নমুখী দেশগুরোর অর্থনীতির উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা এবং জনগণের জীবন যাত্রার উন্নতি করা। এতে জোর দিয়ে বলা হয়েছে, উন্নয়নমুখী দেশুলোর উচিত প্রথমে নিজেদের প্রচেষ্টার উপর নির্ভর করে উন্নয়ন বাস্তবায়ন করা। এর সঙ্গে সঙ্গে এই লক্ষ্যের মত অনুযায়ী, সক্রিয়ভাবে দক্ষিণ-দক্ষিণ পারস্পরিক উপকারিতামূলক সহযোগিতার ক্ষেত্র বাড়ানো উচিত, যাতে বিভিন্ন দেশের অর্থনীতির সামঞ্জস্যপূর্ণ উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা যায়। আন্তর্জাতিক বিষয়াদিতে ১৫ রাষ্ট্রগোষ্ঠী বহু পাক্ষিক বৈষম্যমুক্ত আন্তর্জাতিক নতুন শৃংখলার গঠন সমর্থন করে এবং পুরোপুরিভাবে বিভিন্ন দেশের ভূভাগীয় অখন্ডতা ও দেশের স্বাধীনতা সুনিশ্চিত করার অনুরোধ জানায়। আন্তর্জাতিক সমাজে পরস্পরের উপর নির্ভর করে থাকা এবং বিশ্ব অর্থনীতির সহযোগিতার মৌলিক নীতি কার্যকরী করতে রাজী সংস্থাটি। এই গোষ্ঠী এই মত প্রকাশ করে, উন্নয়নমুখী দেশগুলো সমতার ভিত্তিতে উন্নত দেশগুলো, বিশেষে করে পশ্চিমা শিল্পোন্নতদেশগুলোর সঙ্গে সংলাপ জোরদার করবে।
২০০৪ ফেব্রুয়ারী দ্বাদশ ১৫ রাষ্ট্র গোষ্ঠীর শীর্ষ সম্মেলন ভেনিজুয়েলার রাজধানী কারাকাসে আয়োজিত হয় এবং "কারাকাস ঘোষণা"গৃহীত হয়। ঘোষণায় বলা হয়েছে, সম্মেলনে যোগদানকারীরা শক্তিসম্পদ ও উন্নয়ন সমস্যা নিয়ে মতৈক্যে পৌঁছেছেন। বিভিন্ন সদস্য দেশ পরিকল্পনা নির্ধারণ করা এবং শক্তিসম্পদ ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করার মাধ্যমে পাবলিক ও ব্যক্তি মালিকানাধীন বিভাগের পুঁজি বিনিয়োগ ত্বরান্বিত করে এবং বিভিন্ন দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি এগিয়ে নিয়ে যায়।
|