![]( /mmsource/images/2006/02/21/2006221114857c.gif)
আজ অমর ২১ ফেব্রুয়ারী এবং ইউনেস্কোর নির্ধারিত ' আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস'। ইউনেস্কোর উদ্যাগে চলতি বছর চীনের রাজধানী পেইচিংএও বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের মতো 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের' উদযাপনী তত্পরতা পালিত হচ্ছে। এটা হল চীনের আয়োজিত প্রথম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের উদযাপনী তত্পরতা।
২১ ফেব্রুয়ারী পেইচিং ভাষা বিশ্ববিদ্যালয়ে উদযাপনী অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছে। আমাদের সংবাদদাতা ইয়াং ওয়েই মিং উদযাপনী অনুষ্ঠানে গিয়ে সংশ্লিষ্টদের সাক্ষাত্কার নিয়েছেন এবং বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছেন । এর ওপর ভিত্তি করে আমাদের আজকের এই বিশেষ অনুষ্ঠান।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের উদযাপনী অনুষ্ঠান সেমিনার আর প্রদর্শনী অন্তর্ভুক্ত ছিল। দেশী-বিদেশী বিশেষজ্ঞ , পন্ডিত এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা এই ফোরামে মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। চীনের বিশেষজ্ঞরা বিদেশের প্রতিনিধিদের চীনের সংখ্যালঘু জাতির ভাষার সংরক্ষণ এবং বিশ্ববিদ্যালয়, মাধ্যমিক স্কুল আর প্রাথমিক স্কুলের চীনা ভাষা শিক্ষার কাজকর্ম সম্বন্ধে অবহিত করেছেন । ২১ ফেব্রুয়ারী থেকে ৬ মার্চ পর্যন্ত আয়োজিত প্রদর্শনীতে ' আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ' সঙ্গে প্রাসঙ্গিক ক্যাপশন যুক্ত ছবি দেখানো হচ্ছে। তা ছাড়া , চীনে বিদেশীদের চীনা ভাষা শিক্ষা আর বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের চীনা ভাষার কোর্সে ভর্তির সাফল্য এবং অন্যান্য দেশে ' আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ' উদযাপনের অভিজ্ঞতা এই প্রদর্শনীতে দেখানো হচ্ছে। চীনের ইউনেস্কোর জাতীয় কমিটির মহাসচিব টিয়ান সিয়াও কাং সাক্ষাত্কার দেয়ার সময়ে বলেছেন, প্রথমে আমরা চীনস্থ বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আশফাকুর রহমানকে ধন্যবাদ জানাই, তিনি প্রথমে ইউনেস্কোর চীনের জাতীয় কমিটির কাছে এই অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রস্তাব করেছেন। আমি মনে করি , এই তত্পরতার তাত্পর্যপূর্ণ, বিশেষ করে অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের যুগে আমাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষা করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভাষা হচ্ছে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ, তাই আমরা বলি ভাষা আর সংস্তৃকি হচ্ছে একটি জাতির মূল। কিন্তু এখন আমরা বহু সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি, তথ্যের দ্রুত উন্নয়ন ভাষার উপর প্রভাব ফেলেছে। অনেক ভাষা ক্রমে ক্রমে মৃত হচ্ছে। মানব জাতির সভ্যতার বিকাশ বিরাট বিপদে আছে। তাই আমরা শিক্ষা ও সংস্কৃতি সংক্রান্ত সংগঠক হিসেবে সমাজের বিভিন্ন পক্ষকে আমাদের মাতৃভাষা রক্ষা করার জন্য প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানাই। সবাই হাতে হাত মিলিয়ে আমাদের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার সুত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি রক্ষা করবে, আমাদের মাতৃভাষা রক্ষার জন্য নিরলস অবদান রাখবে। কেবল এভাবে পৃথিবী এক সুষম বিকশিত পরিবেশে থাকতে পারবে।
বাংলাদেশ, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, ভিয়েতনাম এবং তুরস্ক প্রভৃতি দেশের চীনস্থ দূতাবাস এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার ত্রিশাধিক জন প্রতিনিধি সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন এবং প্রদর্শনী দেখেছেন। পেইচিংয়ের কিছু বিশ্ববিদ্যালয়, মাধ্যমিক স্কুল এবং প্রাথমিক স্কুল ও সংশ্লিষ্ট সামাজিক গোষ্ঠীর সদস্যরা প্রদর্শনী দেখেছেন। এই সুযোগে আমি চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আশফাকুর রহমানের সাক্ষাত্কার নিয়েছি। প্রথমে তিনি এবারকার তত্পরতা আয়োজনের পটভূমি ব্যাখ্যা করেছেন।
প্রদর্শনী দু'সপ্তাহ চলবে। এবার উদযাপনী তত্পরতা সাফল্যের সঙ্গে আয়োজনের পিছনে রাষ্ট্রদূত সাহেবের প্রয়াস অনস্বীকার্য।
এবারকার তত্পরতার আয়োজক----চীনের শিক্ষা বিষয়ক আন্তর্জাতিক আদান-প্রদান সমিতির সচিবালয়ের বিদগ্ধজনের আদান-প্রদান ও তথ্য বিভাগের পরিচালক ছুং গাং ১৭ ফেব্রুয়ারী একটি তথ্য জ্ঞাপন সভায় বলেছেন, একবিংশ শতাব্দিতে বিশ্বায়নের দ্রুততর গতি থেকে সৃষ্ট সুযোগ-সুবিধা আর চ্যালেঞ্জের মুখে চীন পুরোপুরি উপলদ্ধি করেছে যে , সংস্কৃতির বহুমুখীকরণ রক্ষা করা বিশ্ব শান্তি আর উন্নয়নের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ । বহুমুখীকরণের উন্নয়ন তরান্বিত করা চীনের সুসংগত সমাজ গড়ে তোলার লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্যে কল্যাণকর।
তিনি ব্যাখ্যা করে বলেছেন, চলতি বছরের জানুয়ারী মাসে ইউনেস্কো চীনে 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' উদযাপনের যে প্রস্তাব উপস্থাপন করেছে তা অবিলম্বে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রভৃতি প্রাসঙ্গিক সংস্থার সক্রিয় সাড়া আর ব্যাপক সমর্থন অর্জন করেছে। দেশ-বিদেশের আয়োজক সংস্থাগুলোর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এবারকার উদযাপনী তত্পরতার প্রধান প্রসঙ্গ হল ' মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা জনপ্রিয় করে তোলা, বহুমুখী সংস্কৃতি সম্প্রসারিত করা'।
তিনি বলেছেন, ভাষার বিলোপ সম্ভবত সাংস্কৃতিক বিলোপ সৃষ্টি করতে পারে । বিশ্ব সমাজের কাঁধে ভাষা আর সংস্কৃতির বহুমুখীকরণের কঠোর দায়িত্ব ন্যস্ত আছে। তিনি বলেছেন, ভাষার বহুমুখীকরণ আর বহু -ভাষীক শিক্ষা তরান্বিত করা হলে শুধু যে মানব জাতির দৃশ্যমান আর অদৃশ্য উত্তরাধিকার সংরক্ষণ করা যায় তাই নয়, এর সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ব শান্তি আর সমৃদ্ধি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যে বহুমুখী সংস্কৃতি আর বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যকার পারস্পরিক সমঝোতা সম্প্রসারনেরও সহায়তা করা যায়।
তিনি বলেছেন, এই উপাদান বিবেচনা করে ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারীকে 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে স্থির করেছিল। এর উদ্দেশ্য হল ভাষা আর সংস্কৃতির বহুমুখীকরণ এবং বহুভাষীক সমাজ ব্যবস্থা তরান্বিত করা।
পেইচিংস্থ ইউনেস্কোর কার্যালয়ের উচ্চ কর্মকর্তা ড: সুন লেই বলেছেন, বর্তমান বিশ্বে ছ' হাজার থেকে ১০ হাজার ধরনের মাতৃভাষা রয়েছে। তবে অথ্যায়নের অগ্রগতি আর বিশ্বায়নের প্রক্রিয়া দ্রুততর হবার সঙ্গে সঙ্গে এদের মধ্যে অর্ধেক ভাষা বিলীন হচ্ছে অথবা হয়েছে। মাতৃভাষা যেমন সম্প্রদায়ের মধ্যে ভাব বিনিময়ের হাতিয়ার তেমনি তার সংস্কৃতি আর অবস্থানের প্রতিনিধি।
বলাই বাহুল্য, ১৯৫২ সালে মাতৃভাষার জন্যে বাঙ্গালীদের আত্মাহুতি দানের অনির্বায ফসল হচ্ছে আজকের আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস।
|