পূর্ব চীনের চে চিয়াং প্রদেশের রাজধানী হাং চৌয়ে পাও ছিয়ান নামক একজন বৃদ্ধা থাকেন । তিনি একজন ফ্যাশনপ্রিয় মানুষ । সমাজে কোনো ফ্যাশন প্রচলিত হলে তিনি সংগে সংগে শিখে ফেলেন । এখন তাঁর বয়স ৭৩ বছর । তবে তিনি যেমন ইংরেজী জানেন , তেমনি গাড়ি চালাতে পারেন । যখন তাঁর বয়স ষাট পার হয়ে গেল , তখন তিনি এই সব শিখে ফেলেছেন । এই কারণে তাঁর জীবন বৈচিত্র্যময় হয়ে উঠেছে এবং বার্ধক্য জীবনে তাঁর অনেক আনন্দ বেড়েছে। আজকের অনুষ্ঠানে আসুন , আমরা হাং চৌয়ের এই বৃদ্ধার ফ্যাশন জীবনের সংগে পরিচিত হই ।
হাং চৌয়ের সুপরিচিত পশ্চিম হ্রদের নিকটে তেং সিন গলি নামে একটি কমিউনিটিতে পাও ছিয়ানের বাড়ি অবস্থিত । এক দৈবাত সুযোগে পাও ছিয়ানের সংগে আমাদের সংবাদদাতার পরিচয় ঘটে । তাঁর গড়ন লম্বা নয় । তিনি সবসময় গুছিয়ে কথা বলেন । তাঁর তীক্ষ্ণ চিন্তাশক্তি রয়েছে । তাঁর ভাষার মধ্যে হাংচৌয়ের স্থানীয় ভাষার আমেজ আছে ।
হাংচৌ হচ্ছে একটি বিশ্ববিখ্যাত পর্যটন শহর । মরোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য ও সমৃদ্ধ পণ্যদ্রব্যের জন্যে হাংচৌ পৃথিবীর স্বর্গ বলে পরিচিত । একজন হাংচৌবাসী হিসেবে পাও ছিয়ান নিজেকে অত্যন্ত সৌভাগ্যবান বলে মনে করেন । তিনি বলেছেন , আমরা সবসময় হাংচৌয়ের সৌন্দর্য্য উপভোগ করি এবং তার বহু সুনামের মধ্যে নিমগ্ন আছি । এতে আমি খুবই আনন্দিত । অনেক বিদেশী ও বহিরাগত লোকের বক্তব্য অনুসারে যারা হাংচৌতে থাকেন , তারা সত্যিই সৌভাগ্যবান ব্যাক্তি । আমি সর্বদাই মনে মনে নিজেকে জিজ্ঞেস করি যে, তুমি হাং চৌকে ভালোবাসো কি ? উত্তরে আমি বলে থাকি , ভালোবাসি , অবশ্যই ভালোবাসি। তবে আমি মনে করি , শুধু ভালোবাসাটা যথেষ্ট নয় , তার জন্যে আমার আরো কিছু করা উচিত ।
অবসর নেয়ার আগে পাও ছিয়ান হাংচৌয়ের গণ শিল্প কলা প্রতিষ্ঠানে সাহিত্য রচনার কাজে নিয়োজিত ছিলেন । অবসর নেয়ার পর তিনি ভাবতে লাগলেন , সুবিখ্যাত পশ্চিম হ্রদ, রেশম ও লুং চিং চা ছাড়াও হাংচৌতে আরো অনেক ভালো ভালো জায়গা আছে । তাই ৫ বছর আগে তিনি একটি পরিকল্পনা হাতে নিলেন। তিনি স্থির করেছেন , এক বছরের মধ্যে প্রতিদিন তিনি হাংচৌয়ের একটি দর্শনীয় স্থান বা একটি পরিবার দেখতে যাবেন । তারপর ফিরে এসে একটি করে রিপোর্ট তিনি লিখবেন । তিনি আশা করেন যে , তাঁর এই সব রিপোর্টনের মাধ্যমে লোকেরা একটি সার্বিক হাংচৌকে জানতে পারবেন ।
পাও ছিয়ান নিজের রিপোর্টগুলোর জন্যে নাম দিয়েছেন " ৩৬৫ দিনে হাংচৌয়ে আমার আসাযাওয়া" । ৩ লাখেরও বেশি শব্দবিশিষ্ট এই লেখা এখন ওয়াইবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে । অনেক লোক ওয়াইবসাইটের মাধ্যমে তাঁর লেখা পড়েছেন ।
পাও ছিয়ান কিছু লিখতে পছন্দ করেন বলে ১৩ বছর আগে যখন তার বয়স ৬০ বছর ছিল , তখন তিনি কম্পিউটার শিখতে শুরু করেন । সেই সময়ে কম্পিউটার ধাপে ধাপে চীনের শহুরে নাগরিকদের জীবনে পবেশ করেছে । পাও ছিয়ানও নিজের জীবনে এই ধরণের আধুনিক হাতিয়ার ব্যবহার করতে চাইলেন ।
কম্পিউটার ব্যবহারের কৌশল আয়ত্ত করার পর পাও ছিয়ান আরো স্বচ্ছন্দভাবে লাখালেখি করতে পারছেন । শুধু তাই নয় , তিনি তার কমিউনিটিতে বিনাখরচের কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কোর্সও চালু করেছেন । তিনি বলেছেন ,
কম্পিউটার ব্যবহারের কৌশল আয়ত্ত করার পর আমি ভাবতে লাগলাম , আমার এই সদ্গুণ প্রসারিত করতে হবে । আমার মনে হয় , আমাদের কমিউনিটি হচ্ছে একটি বেশ ভালো প্ল্যাটফর্ম। কাজেই আমি আমাদের কমিউনিটিতে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করার প্রস্তাব দিলাম । এ পর্যন্ত ৩ বছরের মধ্যে মোট ৫টি প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করা হয়েছে । শিক্ষার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বয়স্ক লোকের বয়স ৭৮ বছর এবং সবচেয়ে কনিষ্ঠ লোকের বয়স বিশের কাছাকাছি ।
যখন পাও ছিয়ানের বয়স ৬৫ বছর , তখন বৃটেনে কর্মরত তার ভাগ্নির আমন্ত্রণে পাও ছিয়ান লনডনে বেড়াতে গিয়েছিলেন । সেই সময় ইংরেজী জানতেন না বলে তিনি মনে করলেন , বৃটেনে তিনি বোবার মত স্থানীয় লোকদের সংগে মেলামেশা করতে পারতেন না । বৃটেন থেকে স্বদেশে ফিরে আসার পর পাও ছিয়ান ইংরেজী শিখতে শুরু করেন । আজ তিনি সুনিপুণভাবে দৈনন্দিন নিত্য ব্যবহৃত ইংরেজী শব্দ আয়ত্ত করেছেন ।
হাংচৌতে যাদের বয়স ষাটের ওপর হয়েছে , তাদের মধ্যে খুবই কম লোক গাড়ি চালাতে শিখেন । কিন্তু যখন পাও ছিয়ানের বয়স ৬৯ বছর , তখন তিনি একটি দু:সাহসিক সিদ্ধান্ত নিলেন , তিনি গাড়ি চালাতে শিখবেন । যখন তার বয়স সত্তরের কাছাকাছি হল , তখন তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে গাড়ি চালানোর লাইসেন্স লাভ করেছেন এবং হাং চৌ শহরের একমাত্র ড্রাইভার হয়েছেন যার বয়স ৭০ বছর পার হয়ে গেছে । তখন থেকে তিনি গাড়ি চালানোর মজা উপভোগ করতে শুরু করেছেন ।
পাও ছিয়ান সবসময় যুগের সংগে তাল মিলাতে চান । সমাজে নতুন জিনিসের প্রচলন হলে তিনি সংগে সংগে তা ব্যবহার করেন । তিনি সর্বদাই তাঁর পুত্রবধুর সংগে মোবাইফোনের মাধ্যমে কথাবর্তা বলেন এবং তার কাছে এস এম এস পাঠান । তিনি প্রায় ওয়াইবসাইটে তার পৌত্রীর সংগে গল্প করেন । তার নিজের ভাষায় তিনি যুগের স্রোতের সংগে মিশে যেতে চান । তিনি বলেছেন ,
আমার মনে হয় , আমরা এখন আধুনিক সমাজে বাস করছি , আধুনিক কলা কৌশল আয়ত্ত করতে না পারলে বিশেষ করে আমাদের বুড়োদের জন্যে আমরা যুগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকবো ।
পাও ছিয়ান তাঁর কমিউনিটির কল্যাণমুলক কাজের জন্যেও অনেক সময় ব্যয় করেছেন । তার কমিউনিটিতে তিনি হলেন সবচেয়ে বয়স্ক স্বেচ্ছাসেবক । তাঁর প্রশংসার জন্যে কিছু দিন আগে হাংচৌ শহর তাকে বিজ্ঞান জনপ্রিয় করে তোলার শ্রেষ্ঠ স্বেচ্ছাসেবকের সম্মানে ভূষিত করেন । তেং সিন গলি কমিউনিটি তাকে কমিউনিটি নির্মাণের উত্সাহী ব্যক্তিত্ব হিসেবে নির্বাচন করেছেন ।
পাও ছিয়ানের তিনটি ছেলে আছে । তাদের চোখে তাদের মার জীবন পরিপূর্ণতা ও আনন্দে ভরপুর । এটা তাদের জন্যে সবচেয়ে বড় সান্ত্বনা । তার মেজো ছেলে মোং ইয়াং আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন , আমার মা একজন আধুনিক মানুষ । তিনি জীবনের মানের ওপর অত্যন্ত গুরুত্ব দেন । তার জীবনের ধারাবাহিকতার চেয়ে তিনি জীবনের উত্কর্ষের ওপর আরোবেশী গুরুত্ব দেন ।
|