v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-02-17 15:55:55    
তিব্বতী সুরকার মেইলানতুজে

cri
    পৃথিবীর ছাদে অবস্থিত তিব্বত স্বায়ত্ত- শাসিত অঞ্চল চীনের অন্যতম সংখ্যালঘুজাতি-তিব্বতী জাতি অধ্যুষিত অঞ্চল । গত সহস্রাধিক বছরে তিব্বতী জাতির জনগণ তিব্বতী জাতির উজ্জ্বল সংস্কৃতি সৃষ্টি করেছে । এখন এই মাটিতে বসবাসকারী শিল্পীরা অব্যাহতভাবে সংখ্যালঘুজাতির বৈশিষ্ট্য আর আধুনিক রীতি-নীতি সম্পন্ন সংগীত রচনায় ব্রতী হচ্ছেন ।

    মেইলানতুজে যুক্তরাষ্ট্রে একটি চীন-মার্কিন সাংস্কৃতিক আদান প্রদান তত্পরতায় অংশ নেয়ার পর এইমাত্র দেশে ফিরে এসেছেন । যুক্তরাষ্ট্রে তার এবারকার চীন-মার্কিন সাংস্কৃতিক আদান প্রদান তত্পরতায় অংশগ্রহণ সম্পর্কিত অভিজ্ঞতা প্রসংগে তিনি বলেছেন , হাওয়াই , শিকাগো , লসএঞ্জেলেস প্রভৃতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সংগে সাংস্কৃতিক আদান প্রদান চালাবার জন্য চীনের তিব্বত সাংস্কৃতিক সংরক্ষণ আর উন্নয়ন সমিতি যুক্তরাষ্ট্রে তিব্বতের সংস্কৃতি আর শিল্পকলা মহলের ৪জন পেশাগত ব্যক্তিকে পাঠিয়েছে । যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া এই চারজন পেশাগত ব্যক্তি তিব্বতে আলাদা আলাদাভাবে সংখ্যালঘুজাতির নৃত্য , সংগীত , প্রাচীন পুরাকীর্তি সংরক্ষণ আর চিত্রাঙ্কন ব্রতে নিয়োজিত থাকেন । তিব্বতের বিখ্যাত সুরকার হিসেবে তার এবারকার মার্কিন সফরের উদ্দেশ্য মার্কিন সুরকারদের কাছে তিব্বতের বৈচিত্র্যময় ঐতিহ্যিক সংগীত বর্ণনা করা ।

    কোনো কোনো মার্কিন সুরকার পঞ্চাশ আর ষাটের দশকের তিব্বতী সংগীত শুনেছেন । কিন্তু তারা আধুনিক তিব্বতী সংগীত শুনেন নি । আমি তাদের কাছে কয়েক শো এমন কি হাজার বছর আগেকার তিব্বতী সংগীত বর্ণনা করেছি । এতে তারা খুব অবাক হয়েছেন । তিব্বতের সংগীত ও সংস্কৃতি জানার জন্য কতকগুলো বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে যুক্তরাষ্ট্রে আবার যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছে । এবারকার পারস্পরিক আদান প্রদানে তারা আরো গভীরভাবে তিব্বতের শিল্পকলা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন । সংস্কৃতির আদান প্রদান করা দরকার । তিব্বতে এত বেশি উজ্জ্বল সংস্কৃতি আছে । তাকে সারা বিশ্বের জনগণের কাছে জানানো উচিত ।

    মেইলানতুজে এবার তিব্বতের সংগীত মহলের প্রতিনিধি হিসেবে চীন-মার্কিন সাংস্কৃতিক আদান প্রদান তত্পরতায় অংশ নিয়েছেন । তিব্বতের এই ৪৩ বছর বয়স্ক সুরকারকে তিব্বতের সংগীত মহলের একজন প্রতিভাবান সুরকার বলে মনে করা হয় ।

    তিব্বতের পূর্বাংশের ছাংতু অঞ্চলের একটি অফিসার পরিবারে মেইলানতুজের জন্ম । তার বাবা চীনা গণ মুক্তি ফৌজের একজন তিব্বতী অফিসার । তিনি তিব্বতের ঐতিহ্যিক সংগীত খুব পছন্দ করেন । ঘরোয়া সংগীত পরিবেশের প্রভাব আর নিজের শিল্পকলার কৃতিত্বের দরুণ সেইলাংতুজে ন'বছর বয়সে তিব্বতের মঞ্চে পরিবেশনা শুরু করেন । তিনি যেমন অভিনেতা তেমনি পরিচালক ছিলেন । তিনিও ছিলেন তিব্বতের একমাত্র এরহো নামে চীনের এক ধরণের ঐতিহ্যিক বাদ্যযন্ত্রী । তবে তিনি সংস্কৃতি আর সংগীতের তত্ত্বের ক্ষেত্রে নিজের দুর্বলতাও জানেন । সুতরাং তিনি ২০ বছর বয়সে চীনের বিখ্যাত শাংহাই সংগীত ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন । তিনি সুর সংগীত , সংখ্যালঘুজাতির সংগীত প্রভৃতি বিষয়ে অধ্যয়ন করেছেন ।

    এতক্ষণ আপনারা ' গতকালের সূর্য' নামে যে তিব্বতী জাতির বৈশিষ্ট্যপূর্ণ গান শুনেছেন , তা মেইলানতুজে ১৯৮৭ সালে রচনা করেছেন । তখন গানটি তিব্বতী নববর্ষ উপলক্ষে তিব্বত টেলিভিশন কেন্দ্রের আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পরিবেশিত হয় । সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে গানটি শীগ্গীরই গোটা তিব্বতে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে । এই সংগীতে তিব্বতী সংগীতের ঐতিহ্যিকত রীতি-নীতি আর আধুনিক যুগের বৈশিষ্ট্য দেখা দিয়েছে । গানটি তিব্বতের ব্যাপক শ্রোতাসহ চীনের মূলভূভাগের ব্যক্তিদের খুব ভাল লেগেছে । এই গান রচনার সফলতায় শিল্পকলার ব্যাপারে মেইলানতুজের প্রত্যয় বেড়েছে এবং তার সংগীত জীবনের অনেক পরিবর্তন হয়েছে ।

    মেইলানতুজে বলেছেন , একবার যখন তিনি তিব্বতের একটি দূরের পশুপালন এলাকায় সাক্ষাত্কার নিতে গেলেন , তখন তিনি শুনলেন এক তিব্বতী বাচ্চা 'গতকালকের সূর্য' নামে তার রচিত গানটি গাইছিল । এতে তিনি খুব মুগ্ধ হয়েছেন । তিনি নিজের জন্মভূমির ঋণ শোধের জন্য আরো বেশি ভাল সংগীত রচনা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন ।

    তখন থেকে মেইলানতুজে তিব্বতের ঐতিহ্যিক সংগীত থেকে পুষ্টি পাওয়ার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছেন । বিশ্বের জনগণের কাছে তিব্বতের প্রাচীন রাজকীয় সংগীতকে পরিচয় করে দেয়ার জন্য তিনি দু' বছর সময় নিয়ে তিব্বতের রাজকীয় সংগীত অধ্যয়ন করেছেন । ১৯৮৭ সালে তিনি তিব্বত স্বায়ত্ত- শাসিত অঞ্চলের শিল্পী দলের প্রধান যন্ত্র শিল্পী হিসেবে ব্রিটেনে গিয়েছিলেন এবং দর্শকদের সমাদর পেয়েছেন ।

    আমরা চীনের তিব্বতের পক্ষ থেকে ব্রিটেনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করতে গিয়েছিলাম । পরিবেশন খুব সাফল্যমন্ডিত হয়েছে । দর্শকরা মনে করেন যে , তিব্বতের সংগীত বিস্ময়কর , সংস্কৃতি উজ্জ্বল এবং ইতিহাস খুব সুদীর্ঘকালীন । দর্শকরা একাগ্রচিত্তে আমাদের পরিবেশনা শুনলেন । অনুষ্ঠানে অতিশয় আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে ।

    তার পরবর্তী দশ বছরে মেইলানতুজে আর বাদক দলের অন্যান্য সদস্যরা নিরন্তরভাবে নতুন সংগীত রচনা আর চর্চা করেছেন । তারা পর পর ফ্রান্স , জার্মানী , সুইডেন , অস্ট্রিয়া প্রভৃতি দশাধিক ইউরোপীয় দেশে পরিবেশনায় গিয়েছিলেন । এতে আরো বেশি লোক তিব্বতের উজ্জ্বল সংস্কৃতি জানতে পেরেছেন ।

    মেইলানতুজে নিরন্তর তিব্বতের অফুরন্ত সংগীত সম্পদ অধ্যয়ন করার সঙ্গে সঙ্গে নিজের সংগীত রচনার কাজ পরিপূর্ণ করে তোলার ওপরও গুরুত্ব দেন । ১৯৯৫ সালে তিনি পেশাগত সুর সংগীত রচনা করতে শুরু করলেন । তার রচিত 'ঈগল' নামে আরেকটি গানও ফলপ্রসূ হয়েছে । এই গান প্রসংগে তিনি বলেছেন ,

    তিব্বতী জাতি আর হান জাতির শ্রোতারা এই গান শুনতে খুব পছন্দ করেন । গানটিতে তিব্বতী জাতির সংগীতের ঐতিহ্য আর আধুনিক সংগীতের বৈশিষ্ট্য সংযুক্ত হয়েছে ।

    এ পর্যন্ত মেইলানতুজে দু'শতাধিক সংগীত রচনা করেছেন । এর মধ্যে বেশ কয়েকটি সংগীত রাষ্ট্রীয় পর্যায় পুরস্কার পেয়েছে । তিনি বলেছেন , যে কোন ধরণের সংগীত রচনা করুন না কেন , তাদের সংখ্যালঘুজাতির ঐতিহ্য পরিবর্তিত হবে না । লোক সংগীত জাতির ঐতিহ্যিক ভিত্তি হিসেবে তিব্বতে চিরস্থায়ীভাবে বজায় থাকবে ।