বসন্ত উত্সবের প্রথম দিনে চীনের শানতুং প্রদেশের কৃষক শি ইয়ু হাও বসন্ত উত্সবের জন্য বিশেষ দ্রব্য কেনার পর বাসায় ফিরার পথে সংবাদদাতার সঙ্গে মিলিত হয়েছেন। তিনি প্রফুল্ল মুখে তার কেনা বসন্তকালে লাগানো দু'বাক্যের কবিতার ছত্র সংবাদদাতাকে দেখিয়েছেন। তাতে লেখা আছে , কৃষিকর মওকুফ ঠিক বসন্তকালের বৃষ্টির মতো, কৃষকদের ধনী করার নীতি জনগণের মন উষ্ণ করেছে। শি ইয়ু হাও বলেছেন, "কৃষি কর মওকুফ করা হচ্ছে এই বছরে আমাদের পাওয়া সবচেয়ে বড় লাল ব্যাগবা বোনাস। "
কুকুর বর্ষের বসন্ত উত্সব হচ্ছে চীন কৃষি কর মওকুফ করার প্রথম বসন্ত উত্সব। ২০০৫ সালের ২৯ ডিসেম্বর দশম জাতীয় গণ কংগ্রেসের স্ট্যান্ডিং কমিটির ১৯তম অধিবেশনে এই বছরের ১ জানুয়ারী থেকে কৃষি কর সংক্রান্ত ধারা বাতিল করা, তামাক ছাড়া বিশেষ কৃষিজাত দ্রব্যের কর এবং সমস্ত গৃহপশু শিল্পের কর মওকুফ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ২৬০০ বছর স্থায়ী চীনের খাদ্যশস্য কর হিসেবে জমা দেয়ার ব্যবস্থা ইতিহাসের যাদুঘরে প্রবেশ করেছে।
শি ইয়ু হাও হচ্ছেন এই ঐতিহাসিক সংস্কারের একজন প্রত্যক্ষদর্শী। তিনি শানতুং প্রদেশের মোংইন জেলার থাওছু থানার দোশান গ্রামের কৃষক। তাঁর পরিবারের চার জন সদস্য মিলে পাঁচ মু জমি চাষ করেন। ২০০৪ সালে তিনি ২০৪.২৩ ইউয়ান কৃষি কর আদায় করেছেন। ২০০৫ সালে শানতুং প্রদেশের কৃষি করের হার কমানোর পর তাঁদের ভার কমিয়ে মাত্র ১০৫.৪৫ ইউয়ান কৃষি কর আদায় করেছেন।
সংবাদদাতা শানতুং, কুয়াংতুং, হোনান প্রভৃতি অঞ্চলের গ্রামে গিয়ে সব জায়গায় উষ্ণ ও আনন্দময় পরিবেশ বোধ করেন। পটকা ফাটানোর আওয়াজ প্রায় শুনা যায়, সিংহ ও ড্রাগন নাচ প্রায় দেখা যায়। অনেক কৃষক পরিবারে বসন্ত উত্সবের আগে টেলিফোন লাগানো হয়েছে। গ্রামাঞ্চলে ঘরোয়া বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের ব্যবসা খুবই ভালো, কিছু কিছু স্টল রঙ্গিন টেলিভিশন কিনতে চাইলে ১৫ দিন আগে অডার দিতে হয়।
কুয়াংতোং প্রদেশের ইয়াংচিয়াং শহরের পিংলান গ্রামের কৃষক লিন হোং চুয়াং বলেছেন, "এই বছর থেকে আমরা এক পয়সার কৃষি করও জমা দিতে হবে না। আমি সংবাদ থেকে এই খবরটি শুনার সময় আমার দুটো কান খাড়া হয়ে যায়। আমরা জমি চাষ করি, সরকারের নীতি এবং আকাশের উপর নির্ভর করি। আবহাওয়া আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না, কিন্তু ভালো নীতি পেলে আমাদের জীবন ভালভাবে কাটতে পারবো।"
এখনো আমাদের মনে আছে, চীনের প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়া পাও থাং রাজামলের কবি পাই জু ইয়ের কবিতা দিয়ে কৃষি, কৃষক এবং গ্রামের উপর তাঁর সযত্ন ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, কৃষকদের কষ্টের জীবন মনে মনে আছে, ক্ষুধা এবং ঠান্ডা লাগার কষ্টের আওয়াজ কানে কানে আছে। তাঁর কথা প্রস্তাবনা হিসেবে চীনের গ্রাম উন্নয়নের কতোকগুলো ব্যবস্থা কার্যকরী করতে শুরু হয়, যাতে ইতিহাসের কারণে সৃষ্ট শহর ও গ্রামের ব্যবধান কমানো যায়, শহরাঞ্চল ও গ্রামাঞ্চলের উন্নয়নের অসাম্য অবস্থা পরিবর্তন করা যায়।
২০০৬ সালে সার্বিকভাবে কৃষি কর বাতিল করার পর ১৯৯৯ সালের তুলনায় চীনের কৃষকদের প্রতি বছরে ১০০ বিলিয়ন ইউয়ান ভার কমবে, যা মাথাপিছু প্রায় ১২০ ইউয়ান ।
কিন্তু কৃষি করের ভার কমানো হচ্ছে কৃষকদের জীবনযাপনের ভার কমানোর আরম্ভ মাত্র। কুয়াংতুং প্রদেশের ইয়াং তুং জেলার থাং পিং নগরের কৃষক লিয়াং শেন চিয়া উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, "যদিও এখন কৃষি কর কমেছে, কিন্তু কৃষি উপকরণগুলোর দাম বেড়ে যাচ্ছে, আমাদের ভার এখনো খুব ভারি। "
তবে একই পিং লাই গ্রামের ক্যাডার লিন জু পিং সক্রিয়ভাবে বলেছেন, "সরকার কৃষি কর মওকুফ করা কৃষকদেরকে হৃদপিন্ডের বলকারক ঔষধ খাওয়ার মতো। এর ফলে কৃষকরা কৃষি উত্পাদনের উপর আস্থাবান। এটা নিঃসন্দেহে এক সক্রিয় ইঙ্গিত। "
তাছাড়া, কৃষি কর মওকুফের কারণে বহু বছর ধরে গ্রামের ক্যাডারদের আর সাধারণ কৃষকদের মধ্যকার "অসংগতি" প্রশমিত হয়েছে। ইয়াও হাও চৌং হচ্ছেন চিয়াংসু প্রদেশের এক গ্রামের ক্যাডার। বসন্ত উত্সবের আগের দিন রাতে তিনি আধা কেজি গরু মাংস নিয়ে কৃষকের বাসায় গিয়েছেন। তিনি বলেছেন, "গত বছর থেকে কৃষি কর জমা লাগছে না, অথচ প্রতি মু জমির জন্য কৃষককে ২০ ইউয়ান ভরতুকি দেয়া হয়। ফলে আমি আর গম্ভীর মুখে গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলি না। এই বসন্ত উত্সব খুব আরামের , খুব হালকা। "
ইয়াটিয়াও থানার উছাও গ্রামের কৃষক লিন চুও শহরে শ্রমিক হিসাবে কাজ করার পর ফিরে এসে একবার গ্রামের ২৫০ মু জমি চুক্তি করেছেন। লিন জু পিং সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন, "এখন দেশের নীতি ভাল হয়েছে, কৃষি কর মওকুফ করেছে, কৃষকরা কেন বাসায় না থাকে বাইরে গিয়ে শ্রমিকের কাজ করেন? এই বছরের বসন্ত উত্সব কালে তাঁদের গ্রামের সাত আট পরিবারের গ্রামবাসী গ্রামে ফিরে এসে জমি চাষ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।"
কৃষি কর চীনের ইতিহাসের মঞ্চ থেকে সরে গেছে, কিন্তু এটা গ্রাম সংস্কারের অবসান নয়, এটা হচ্ছে আরেকটি সংস্কারের আরম্ভ।
|