v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-02-16 21:08:34    
চীনের গ্রামীণ ভ্রমণ

cri
    চলতি বছরের প্রথম দিকে চীনের পযর্টন বিভাগ এ বছরের পযর্টনের প্রধান বিষয় প্রকাশ করেছে। এ বছরে পযর্টনের প্রধান বিষয় হল: ' নতুন গ্রামাঞ্চল, নতুন পযর্টন, নতুন অনুভুতি, নতুন নীতিরীতি'। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অধিক থেকে অধিকতর মানুষ গ্রামাঞ্চলে ভ্রমণ করতে আগ্রহী। কারণ গ্রামাঞ্চলের বায়ু পরিষ্কার, মানুষ সরল , পুরাকীর্তি সমৃদ্ধ এবং প্রাকৃতিক দৃশ্য সুন্দর। আসলে শুধু চীনের শহরবাসীরা চীনের গ্রামাঞ্চলে ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন তাই নয় বিদেশীরাও চীনের গ্রামাঞ্চলে ভ্রমণ করতে আগ্রহী।

    গ্রামাঞ্চল বলতে গেলে হয়ত গ্রামাঞ্চলের সংস্কৃতি, কৃষকদের জীবন এবং সেখানকার প্রাকৃতিক দৃশ্য আপনাআপনি আপনাদের মনে পড়ে। কিন্তু আজকাল চীনের গ্রামাঞ্চলে ভ্রমণ করতে যাওয়া শুধু যে চীনের গ্রামাঞ্চল দেখা তাই নয়।

    সবাই জানেন চীন একটি প্রাচীন দেশ যার ইতিহাস পাঁচ হাজারাধিক বছরের । চীনের সুদীর্ঘ ইতিহাস হল কৃষি সভ্যতার উন্নয়ন ইতিহাস। চীনের ঐতিহ্যিক  সংস্কৃতি গ্রামাঞ্চলে সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ পায়। আধুনিক যুগে পাশ্চাত্য শিল্পের সভ্যতা চীনে প্রবেশ করার পর শহরাঞ্চলের তুলনায় চীনের গ্রামাঞ্চলের উপর আধুনিক সভ্যতার প্রভাব পেক্ষাকৃত কম। সুতরাং বেশীর ভাগ ঐতিহ্যিক সংস্কৃতি সুরক্ষিত রয়েছে।

    চীনের অনেক গ্রামাঞ্চলে আঞ্চলিক রীতিনীতি হোক, ঐতিহ্যিক অপেরা হোক, লোক সঙ্গীত হোক , এমন কি প্রাচীন কালের চেহারাসম্পন্ন গ্রাম, বসতবাড়ী এবং মন্দির ইত্যাদি স্থাপত্যগুলোও অক্ষতভাবে সংক্ষরিত রয়েছে। বতর্মানে বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সে সব গ্রামাঞ্চলে ভ্রমণ করা বিদেশী পযর্টকদের চীনে ভ্রমণের প্রথম বিকল্প হয়ে দাঁড়িয়েছে ।

    ছিন অপেরার ইতিহাস তিন শতাধিক বছরের। পেইচিং অপেরার চাইতে ছিন অপেরার ইতিহাস আরও বেশী। এই অপেরা প্রধানত চীনের সেনসি প্রদেশে প্রচলিত হয়। এই অপেরা এখনও এই অঞ্চলের একটি জনপ্রিয় অপেরা। ছুটির দিনে স্থানীয় লোকের আয়োজিত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছিন অপেরা অবশ্য শোনা যায়। ছিন অপেরা ছাড়া, সেনসি প্রদেশে আরও আছে প্রাচীনকালে ধনী ব্যবসায়ীদের নিমির্ত বিলসী বসতবাড়ীগুলো। সে সব বসতবাড়ী এখনও অক্ষতভাবে সংরক্ষিত রয়েছে। যেমন ধনুণ ছিওচিয়া বসতবাড়ী এ সব বসতবাড়ীর অন্যতম। চীনের নাম-করা চলচ্চিত্র পরিচালক জেন ই মুর ছায়াছবিতে ছিওচিয়া বসতবাড়ী প্রথমবার ব্যাপক দর্শকদের নজরে পড়ে। গত শতাব্দীর নবই দশকের প্রথম দিকে পরিচালক জেন ই মু ওখানে ' লাল ল্যান্ঠন উপরে ঝোঁলানো' নামক একটি ছায়াছবি তুলেছেন। এর পর এই ছায়াছবি দেশ-বিদেশে খ্যাতি অর্জন করেছে।

    চলতি বছরের প্রথম দিকে চীন আন্তর্জাতিক বেতারের নিজস্ব সংবাদদাতা বিশেষভাবে ছিওচিয়া বসতবাড়ী পরিদর্শন করেছেন। পাঁচ শতাধিক বিদেশী পযর্টক সংবাদদাতার সঙ্গে একই দিনে ছিওচিয়া বসতবাড়ী পৌঁছলেন। পযর্টকরা এই প্রাচীন বসতবাড়ীতে অতীতের সংঘটিত রহস্যময় কাহিনী সনুসন্ধান করতে এসেছেন। এর সঙ্গে সঙ্গে এই বসতবাড়ীতে পরিবেশিত রীতিনীতি আর স্থানীয় অপেরা পযর্টকদের আকর্ষণ করছে। স্থানীয় গাইড মাসেন সেনসি প্রদেশের প্রবর্তিত 'গ্রামাঞ্চলের ভ্রমণ' সম্বন্ধে আশাবাদী।

    সেনসি প্রদেশের গ্রামীণ সংস্কৃতি প্রগাঢ়। এখানকার সমৃদ্ধ রীতিনীতি , স্থানীয় অপেরা আর নাচ খুব বিখ্যাত। তা ছাড়া, প্রাচীনকালের গ্রাম, বসতবাড়ী আর চার দিকের প্রাকৃতিক দৃশ্যও বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। এ সব 'গ্রামীণ ভ্রমণের' জন্যে সুবিধা যুগিয়েছে। বিশেষভাবে গত কয়েক বছরে এখানে হাইওয়ে আর গ্রামাঞ্চলের সড়কের নিমার্ন কাজ দ্রুত গতিতে বিকশিত হয়েছে।

    জানা গেছে, গুরুত্বপূর্ণ উত্সবে চীনের আন্তর্জাতিক পযর্টন সংস্থা এবং স্থানীয় পযর্টন সংস্থা সেনসি 'গ্রামীণ ভ্রমণের' বিশেষ পযর্টন লাইন খুলে। যেমন প্রত্যেক বছরের বসন্ত উত্সবে দেশী-বিদেশী পযর্টকরা এখানে চীনের ঐতিহ্যিক উত্সব উদযাপন করতে আসেন।

    চীনে সেনসির মতো আরও অনেক জায়গা আছে যাখানে 'গ্রামীণ ভ্রমণের সম্পদ আছে। দক্ষিণ চীনের ইয়াংসি নদীর প্রবাহিত এলাকায় তিন গিরিখাত নিমার্ন করা হয়েছে বলে হুপে প্রদেশের ইছান এখন পযর্টকদের একটি আদর্শ জায়গায় পরিণত হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিন গিরিখাতের প্রতিবেশী এলাকায় নানা ধরনের 'গ্রামীণ ভ্রমণের' ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। 'গ্রামীণ ভ্রমণ' প্রসঙ্গে চীনের খাংহুয়ে পযর্টন সংস্থার বাজার বিভাগের ম্যানিজার চাও চিন লন বললেন,

    'গ্রামীণ ভ্রমণে' মানসিকতা, ইতাহাসএবং প্রাকৃতিক দৃশ্য ইত্যাদি উপাদান অন্তভূর্ক্ত। সুতরাং একই জায়গায় বারবার ভ্রমণ করলেও একগুঁয়েমি বোধ করি না। ২০০৬ সালে পযর্টন সংস্থার উদ্যোগে এই 'গ্রামীণ ভ্রমণের' লাইনের সূত্রপাত হয়। এই গ্রামীণ ভ্রমণ বলতে প্রাচীনকালের গ্রাম এবং সংখ্যালঘু জাতি অধ্যুষিত এলাকায় ঘুরে বেড়ানো বুঝায়। মানুষের জন্যে নানা ধরনের নতুন অনুভুতি এনে দেওয়া ছাড়া গ্রামীণ ভ্রমণের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হল মানুষকে আরাম যুগিয়ে দেওয়া। বড় বড় শহরের নিকটবর্তী গ্রামাঞ্চলে কয়েক দিনের জন্যে বিশ্রাম নিলে মানুষ আরাম বোধ করেন। সেখানে লোকেরা টাটকা আওয়া নি:শ্বাস করতে পারেন কৃষকদের বাড়ীতে খাবার খেতে পারেন। সম্প্রতি কৃষি মাঠে ফুলমুল আর শাকসবজি কুড়ে নেওয়া অনেক শহরবাসীর একটি বিকল্প হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সাপ্তাহান্তিক কালে শহরের চার পাশের গ্রামাঞ্চলে ভ্রমণ করাকে ' কৃষকের বাড়ীতে উপভোগ' বলা হয়। প্রত্যেক বছরের মে থেকে অক্টোবর পযর্ন্ত সাপ্তাহান্তিক কালে পেইচিংবাসীরা ব্যক্তিগত গাড়ী চালিয়ে পেইচিং উপকন্ঠে ভ্রমণ করতে যান।