v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-02-15 20:18:38    
অলংকার ডিজাইনার মান খাই হুই

cri
    মান খাই হুই চীনের একজন অলংকার ডিজাইনার । তার ডিজাইন করা অলংকারগুলোর রং সুন্দর , রকমারিতা বেশী , শিল্পী ও সাধারণ নাগরিকরা তার ডিজাইন করা অলংকার পছন্দ করেন ।

    মাদাম মান খাই হুইয়ের বয়স চল্লিশের কিছু বেশী। তিনি পেইচিংয়ের তা সান চি শিল্পকলা অঞ্চলে ' ইং সু ' নামে একটি অলংকার দোকান খুলেছেন । তিনি আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন , তার দোকানের সব অলংকার তিনি নিজে ডিজাইন ও তৈরী করেছেন । তার দোকানে চীনামাটি ও পশুর হাড় দিয়ে তৈরী চায়ের কাপ ও পিরিচ আকারের একসেট অলংকার আছে । দৈনন্দিন জীবনের সাধারণ জিনিস মান খাই হুইয়ের হাতে সুন্দর অলংকার হয়েছে । গায়ের পোশাকের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এই ধরনের অলংকার পরলে নারীর সৌন্দর্য বাড়ে । তার ডিজাইন করা ' ঢেউ ' নামক অলংকার-সেট হলো রুপার তৈরী নানা আকারের জ্যামিতিক চিহৃ , এই সব অলংকার ক্রেতাদের কাছে খুবই সমাদৃত হয়েছে ।

    উল্লেখ করা যেতে পারে যে , তার দোকানে অলংকার প্রদর্শনের উপায়ও বৈশিষ্ট্যময় । মান খাই হুই মানুষের উপর অংশের অনেক প্রতিমূর্তি তৈরী করেছেন ,তিনি এই সব প্রতিমূর্তির গলায় ,কানে ও হাতে নানান ধরনের অলংকার সাজান । তার ডিজাইন ও তৈরী করা নানা ধরনের অলংকার প্রতিমূর্তির ফর্সা ও লম্বা গলায় ভারী সুন্দর লাগে । তাই এই দোকানের প্রতিমূর্তি ও তাদের গায়ের অলংকারগুলো এই দোকানের একটি বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছে ।

    মান খাই হুই অলংকার তৈরীর আগে ডিজাইনের পরিকল্পনা তৈরী করেন না । তিনি নিজের অনুভুতি অনুসারে অলংকার তৈরী করেন । শিল্পকলা ও জীবনের প্রতি নিজের উপলব্ধি ও অনুভূতি তিনি অলংকারে প্রকাশ করার চেষ্টা করেন । তিনি মনে করেন , অলংকার জিজাইনের প্রক্রিয়ায় তিনি আনন্দ বোধ করেন । তিনি বলেছেন , আমি অলংকার ডিজাইন ও তৈরীর কাজ পছন্দ করি । নিজের পছন্দমতো একটি অলংকার তৈরী করে আমি আনন্দ বোধ করি । সাধারণতঃ অলংকারগুলো তৈরী করে আমি সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি করি না , নিজে উপভোগ করার জন্য আমি সেগুলোর নিজের কাছে কিছুদিন রাখি ।

    মান খাই হুইয়ের তৈরী অলংকারের কাঁচামাল সোনা , রুপা , পিতল , চীনামাটি , দামী পাথর ও প্লাস্টিকে সীমাবদ্ধ নয় , ক্রিস্টাল তার অন্যতম প্রিয় কাঁচামাল । মান খাই হুইয়ের চোখে ক্রিস্টল এক ধরনের জীবিত পাথর , প্রতিটি ক্রিস্টলের আকার ভিন্ন , তিনি ক্রিস্টালের পবিত্রতা ও উজ্জ্বলতা পছন্দ করেন । ক্রিস্টাল দিয়ে তৈরী অলংকারগুলো প্রকৃতি ও সততার প্রতি তার আনুগত্য প্রকাশ পেয়েছে । তা ছাড়া , মান খাই হুই রুপাও পছন্দ করেন। কারণ রুপার অলংকার বেশী দিন ব্যবহার বা রাখার পর রং পরিবর্তিত হবে । তাই তিনি মনে করেন রুপার অলংকার ইতিহাসের কোনো এক সময় বা একটি কাহিনীর প্রতীক হতে পারে ।

    অলংকারগুলোর ডিজাইন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার । তিনি বলেছেন , অলংকার হচ্ছে ভ্রাম্যমান খোদাই কর্ম । সত্যিকার খোদাইকর্মের মতো অলংকারেরও নিজস্ব শিল্পগত মূল্য আছে । নারীদের গায়ে পরা অলংকারগুলো তার চরিত্র ও মানসিকতা প্রকাশ করে । মান খাই হুই বলেন , তার ডিজাইন করা অলংকারগুলো যে মূল্যবোধ প্রকাশ করে , তার মূল্য অলংকারের দামকে অনেক ছাড়িয়ে যায় । তিনি বলেছেন , আমি প্রতিটি অলংকার মন দিয়ে ডিজাইন করেছি । তাই অলংকারগুলো শুধু মানুষের হাত দিয়ে পাইকারীভাবে তৈরী একটি পণ্য নয় , এগুলো একএকটি হস্তশিল্পদ্রব্য।

    মান খাই হুই ইউরোপ ও আমেরিকার কিছু অলংকার ডিজাইন শিক্ষার জন্য বিদেশে যান এবং বিশ্ববিখ্যাত দামী পাথর ও মুক্তা প্রদর্শনী পরিদর্শন করতে যান । কিন্তু তিনি সমাজের বা আন্তর্জাতিক সমাজের প্রবনতা অনুসরণ করেন না , তাই তিনি কখনও এই সব প্রবনতার দ্বারা বর্জিত হবেন না। তিনি মনে করেন , একজন অলংকার ডিজাইনারের নিজের বৈশিষ্ট্য বজায় রাজা অত্যন্ত গুরুত্বপূণর্ণ । অন্ধভাবে সমাজের প্রবণতা অনুসারে অলংকার ডিজাইন করলে এক দিন না এক দিন ব্যর্থ হবেন তিনি ।

    মান খাই হুই যদিও প্রচুর সুন্দর সুন্দর অলংকার ডিজাইন করেছেন , তবু তিনি বিশেষভাবে অলংকার ডিজাইন শিখেন নি । বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশুনার সময় তিনি খোদাই শিখেন । ১৯৮৬ সালে চিয়াং সি প্রদেশের চিং তে চেন চীনামাটি ইন্সটিটিউটের খোদাই বিভাগ থেকে স্নাতক হওয়ার পর তিনি স্কুলের চিত্রশিল্প শিক্ষক আর ডিজাইন কম্পানির কর্মী ও হোটেলের শিল্পকলা বিভাগের প্রধান ছিলেন । পরে তিনি পেইচিংয়ের কেন্দ্রীয় চিত্রশিল্প ইন্সটিটিউটে ইনগ্রেইভ শিখেন । ১৯৯৬ সালে মান খাই হুই পেইচিংয়ে ইনগ্রেইভ অনুরাগীদের জন্য একটি কর্মশালা খোলেন । তিনি সেখানে ইনগ্রেইভ প্রদর্শনীর আয়োজনও করেছেন । তিনি বলেছেন , ইনগ্রেইভ কর্মশালা চালানোর সময় তিনি অলংকার ডিজাইনের কাজ শুরু করেছেন । নিজের খোদাই করা প্রতিমূর্তিগুলো আরো সুন্দর করে তোলার জন্য তিনি নিজে কিছু সহজ ধরনের অলংকার তৈরী করে প্রতিমূর্তির গায়ে সাজান । শীগ্রই অলংকার তৈরী তার সবচেয়ে প্রিয় কাজে পরিণত হয়েছে । তিনি উত্সাহের সঙ্গে অলংকার ডিজাইন ও তৈরী করেন , দু-তিন দিন পর পর তিনি এক সেট সুন্দর অলংকার তৈরী করতে পারেন । তাই তিনি পেইচিংয়ে একটি অলংকার দোকান খোলার সিদ্ধান্ত নিলেন ।

    মান খাই হুইয়ের দোকানে ক্রেতা সব সময় বেশী । শুধু সাধারণ নাগরিক তার ডিজাইন করা অলংকার পছন্দ করেন এমন নয় , চীনের নামকরা শিল্পীরাও তার দোকানে অলংকার কিনতে আসেন অথবা অলংকার অর্ডার করেন । তিনি মনে করেন , অর্ডার দেয়া অলংকার তৈরীর সময় ক্রেতার সঙ্গে মতবিনিময় করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । তিনি বলেছেন , ক্রেতারা অলংকার অডার দেয়ার সময় আমি তাদের সঙ্গে আলাপ করি । আমি ক্রেতাদের বাছাইকে শ্রদ্ধা করি । আমি ক্রেতার পছন্দমত অলংকার ডিজাইন করি , কিন্তু আলাপের সময় আমি আমার পরামর্শও দেই , আমার পরামর্শ আমি জোর করে ক্রেতাদের চাপিয়ে দেই না । আলাপের সময় আমি ক্রেতার ভালো প্রস্তাবও গ্রহণ করি ।