সুপ্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, সুদূর পেইচিং থেকে আপনাদের শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের সুরের ভুবন উপস্থাপন করছি আমি আপনাদের বন্ধু লিলি। আজকের আসরে চীনের লোকসঙ্গীত মঞ্চের অন্যতম প্রতিভাবান সঙ্গীতজ্ঞ বিখ্যাত বাঁশি বংশী বাদক চিয়াং কুওচির পরিচয় দেবো। তাঁর বাঁশি বাজানোর সুনিপুণ কলাকৌশল ছাড়াও, তিনি একজন সুরকার ও বায়ুচালিত নতুন বাদ্যযন্ত্রের উদ্ভাবক। আজকের অনুষ্ঠানে আমরা সুন্দর ও মনোরম সঙ্গীতের আমেজের ভেতর চিয়াং কুওচি'র বাঁশির বিশ্বে প্রবেশ করবো।
সুপ্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, আপনারা এখন যে সঙ্গীত শুনছেন তা হচ্ছে চিয়াং কুওচি'র রচিত ও বাজানো "আনন্দ" নামে বাঁশির সঙ্গীত। সঙ্গীতে দক্ষিণ চীনের চেচিয়াং প্রদেশের আঞ্চলিক অপেরা অনুসারে বাঁশির বিভিন্ন কৌশল দিয়ে জীবন্তভাবে দিন-দিন ধনী হয়ে উঠা চীনা কৃষকের আনন্দ বর্ণনা করা হয়।
৫৫ বছর বয়সী চিয়াং কুওচি চীনের শাংহাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন। পরিবার দরিদ্র বলে দশাধিক বছর বয়সে তিনি চীনের ঐতিহ্যিক পুতুল নাচের মতো "চামড়া ছায়াচিত্র" দলে প্রেরিত হন। সেখানে প্রশিক্ষণ নেয়ার সময় চামড়া ছায়াচিত্র পরিবেশন করার কাজে চিয়াং কুওচি বেশী আগ্রহ দেখালেন না। বরং তিনি এই দলের বাদ্যযন্ত্র, বিশেষ করে বাঁশি বাজানোর কলাকৌশলের প্রতি গভীরভাবে আকৃষ্ট হন। তাই তিনি একটি বংশী কিনে বাজাতে শুরু করেন। ১৯৭২ সালে তিনি চীনের বিখ্যাত বাঁশির বাদক চাও সোংথিংয়ের কাছে বাজানো শিখতে শুরু করেন। এরপর তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে শিল্পকলার দরজায় প্রবেশ করেন।
১৯৭৬ সালে চিয়াংকুওচি পেইচিংয়ে অনুষ্ঠিত একটি একক বাদ্যযন্ত্র প্রতিযোগিতায় প্রথমবারের মতো নিজের চমত্কার কলাকৌশল প্রদর্শন করেন। তিনি " নদনদী এলাকার নৌকার গান" নামে নিজের রচিত একটি বাঁশির সঙ্গীত দিয়ে প্রতিযোগিতার সর্বোচ্চ পুরস্কার জয় করেন। তারপর তিনি নানা ধরণের লোকসঙ্গীত প্রতিযোগিতায় বারবার শিরোপা অর্জন করেন। আচ্ছা, এখন আমার সঙ্গে " নদনদী এলাকার নৌকার গান" শুনুন। এই সঙ্গীতে দক্ষিণপূর্ব চীনের বসন্তকালের দৃশ্য ও স্থানীয় রীতিনীতি বর্ণনা করা হয়।
গত শতাব্দির ৭০'র দশকে চীনের চেচিয়াং প্রদেশে ইউইয়াও জেলার হোমুতু নামক স্থানে ভূগর্ভ থেকে নব্য প্রস্তর যুগের ধ্বংসাবশেষের কিছু-সংখ্যক হাড়নির্মিত বাঁশি আবিষ্কৃত হয়। এসব বাঁশি পাখির হাড় দিয়ে তৈরী ৭ হাজার বছর আগেকার জিনিস। তা হচ্ছে এ পর্যন্ত চীনে আবিষ্কৃত সবচেয়ে প্রাচীন বাদ্যযন্ত্র। হাড়নির্মিত বাঁশিতে কি শ্রুতিমধুর ধ্বনি বাজতে পারে? তা অনেক বাঁশি বাদকের মনোযোগ আকর্ষণ করে। চিয়াং কুওচি'র শিক্ষক চাও সোংথিং হাড়নির্মিত বাঁশির আকার ও সূরের নিয়ম অনুযায়ী মোরগের পায়ের হাড় দিয়ে একটি বাঁশি তৈরী করেন।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চিয়াং কুওচি বাঁশি বাজানোর আরো বেশী সুবিধা এবং আওয়াজ আরো স্পষ্ট হওয়ার জন্যে হাড়নির্মিত বাঁশির কিছু সংস্কার করেন। এখন আমরা একসাথে চিয়াং কুওচি'র হাড়নির্মিত বাঁশি দিয়ে বাজানো সঙ্গীত শুনবো।সঙ্গীতে প্রাচীনকালে বনে পশুপাখি শিকার করার দৃশ্য বর্ণনা করা হয়।
চিয়াং কুওচি শিক্ষকের কাছে বাঁশি বাজাতে শিখেন এবং বাঁশি তৈরী করার কৌশল আয়ত্ত করেন। বহুবার গবেষণা ও প্রচেষ্টার মাধ্যমে ১৯৯৬ সালে বন্ধুদের সহযোগিতায় সাফল্যের সঙ্গে একটি বিরাট বাঁশি তৈরী করেন।এই বাঁশি তিন মিটার লম্বা। বিরাট বাঁশির ধ্বনি খুব গম্ভীর। বর্তমানে বিরাট বাঁশি হচ্ছে বিশ্বে সবচেয়ে বড় বাঁশি। এখন আমরা একসাথে চিয়াং কুওচি'র তৈরী বিরাট বাঁশি দিয়ে বাজানো সঙ্গীত "জেসমিন ফুল" শুনবো।
প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে আমরা একসাথে চিয়াং কুওচি'র বিশ্বের সবচেয়ে ছোট বাঁশি দিয়ে বাজানো একটি সঙ্গীত শুনবো। এই বাঁশি শুধু ৩ সেন্টিমিটার লম্বা। এই বাঁশির ধ্বনি খুব উঁচু। আচ্ছা, প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, আমরা এখন চিয়াং কুওচি'র বাঁশি দিয়ে বাজানো রোমানিয়ার লোকসঙ্গীত শুনবো। সঙ্গীতে ছোট বাঁশির বিশেষ ধ্বনিতে প্রাণবন্তভাবে বুলবুল পাখি আকাশে স্বাধীনভাবে উড়ে যাওয়ার দৃশ্য বর্ণনা করা হয়।
সুপ্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, আজকের সুরের ভুবন এখানে শেষ হল। আমাদের সুরের ভুবন সম্পর্কে আপনাদের কোনো মতামত থাকলে আমাদের জানাবেন। সবাই ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন। আবার কথা হবে।
|