"ডাম্পলিং বানাতে খুব মজা লাগে!" কেনিয়ার নাইরোবি বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের ছাত্র রোনো ফিলিক্স আনন্দের সঙ্গে জানালেন এ কথা। ২৪ জানুয়ারী নাইরোবি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছাকাছি একটি চীনা রেস্টরোন্টে ৫০জন বিদেশী ছাত্রছাত্রী চীনা শিক্ষকের কাছে ডাম্পলিং বানানো শিখছে। তাদের বানানো ডাম্পলিংগুলোর আকার অদ্ভুত, কিছুটা এতো ছোট যে, এর মধ্যে সম্ভবত যথেষ্ট পুর দেয়া হয়নি। কিছুটার ভেতরে এত বেশী পুর দিয়েছে যে, যেমন ডাম্পলিংটির এক্ষুণি বিস্ফোরণ ঘটবে।
বিদেশী ছাত্রছাত্রীদের চীনা সংস্কৃতি আরো ভালভাবে বোঝানোর জন্য চীনের ঐতিহ্যিক বসন্ত উত্সব উপলক্ষে সবেমাত্র স্থাপিত আফ্রিকার প্রথম কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট ২৪ জানুযায়ী একটি ডাম্পলিং বানানোর ক্লাস আয়োজন করে। আগের ২৫জন ছাত্র নিয়ে গঠিত ক্লাসে সেদিন ৫০জনেরও বেশী ছাত্র অংশগ্রহণ করে।
ডাম্পলিং বানানোর আগে কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের সিনিয়র শিক্ষক সুন চিং ছাত্রদের বসন্ত উত্সব চীনাদের ভূমিকা ব্যাখ্যা করেন। তিনি বসন্ত উত্সবকালে চীনাদের কিছু রীতিনীতিও বিদেশী ছাত্রদের শুনিয়েছেন। যেমন ফু, অর্থাত সৌভাগ্য অক্ষর দরজায় লাগানো, আতশবাজি পোড়ানো এবং বাড়ির সকল সদস্য মিলে ডাম্পলিং খাওয়া ইত্যাদি চীনের ঐতিহ্য ছাত্রছাত্রীদের গল্প করে শুনিয়েছেন। ছাত্ররা ভীষণ মনোযোগ দিয়ে শুনেছিলো।
এরপর তারা নাইরোবি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছাকাছি একটি চীনা রেস্তোরায় এসে তাদের একটি বিশেষ ক্লাস নিয়েছে। রেস্তরায় পরিচালক তাদের জন্য ডাম্পলিং বানানোর পিঠা ও পুর প্রস্তুত করেছেন। কেনিয়াস্থ চীনা রাষ্ট্রদূত কুও ছুং লি'ও তাদের সঙ্গে এই মজার ক্লাসে অংশ নিয়েছেন। রাষ্ট্রদূত কুও তাদেরকে বুঝিয়েছেন যে, ডাম্পলিং হলো পরিবারের সকল সদস্য সমন্বিত এবং মিলেমিশে থাকার একটি আশাআকাঙ্খা। চীনের চন্দ্র বর্ষ প্রতি ১২ বছরে ১২টি পশুর নাম দিয়ে চিহ্নিত। চীনের চন্দ্র বর্ষ অনুসারে নতুন বছর হলো কুকুর বর্ষ। চীনের ঐতিহ্য অনুসারে কুকুর হলো আনুগত্য, বন্ধুত্ব ও মৈত্রীরপ্রতীক। এসব তথ্য জানতে ছাত্ররা খুব আগ্রহী।
রোনো ফিলিক্স নামক একছাত্র বলেছেন: "কেনিয়ায় ডাম্পলিংয়ের মতো খাবার নেই। উত্সবের সময়ে আমরা চাপাতি খাই। তা এক রকম রুটি। ডাম্পলিং চাপাতির চেয়ে রান্না করতে অনেক কঠিন। জাকারাইয়া নামক আরেকজন ছাত্র বলেছেন "ডাম্পলিং বানানো শুধু পিঠার ভেতরে পুর দেয়া, এ কোনো কঠিন কাজ নয়।" কিন্তু তাকে পিঠা ও পুর তৈরীর প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করার পর, সে বুঝেছে যে, কাজটি কত জটিল।
রান্না হওয়ার পর যখন গরম আর সুগন্ধ-সহ সিদ্ধ ডাম্পলিংগুলো ছাত্রদের সামনে রাখা হয়, তারা অবিলম্বে চপস্টিক্স দিয়ে খাওয়া শুরু করে। "খুব সুস্বাদু!" দেখা যায় তারা নিজের হাতে করা কাজে খুব সন্তুষ্ট। "আপনারা চীনারা একটু একটু একটি ডাম্পলিং শেষ করেন নাকি এক কামড়ে খেয়ে ফেলেন?" "বসন্ত উত্সবে চীনারা কি শুধু ডাম্পলিং খান?" "চপস্টিক্স দিয়ে কিভাবে ওকারি খাওয়া হয়? ওকারি হলো আফ্রিকার একরকম স্যুপের মতো খাবার।" খাওয়ার সময়েও তারা জ্ঞান শেখার সুযোগ ধরার চেষ্টা করছে।
ডাম্পলিং শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একটি মজার চীনা সংস্কৃতি শেখার ক্লাসও শেষ হয়েছে। অর্থনীতি ও টেলি-যোগাযোগ দু'টি বিষয়ে স্নাতক প ড়ুয়া নাইরোবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী লিয়া ইওয়াশিলা বলেছেন " এই ক্লাসের মাধ্যমে আমি চীনের বসন্ত উত্সবের আরো তথ্য পয়েছি। আশা করি ভবিষ্যতে আমিও চীনে যেতে পারি, নিজেই চীনাদের মধ্যে বসন্ত উত্সব কাটানোর অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবো।"
কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের চীন পক্ষের উপপরিচালক সুং লি শিয়েন সংবাদদাতাকে বলেছেন, নাইরোবি কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট ভবিষ্যতে চীনা ভাষা শেখানোর সঙ্গে সঙ্গে চীনা সংস্কৃতিরও প্রসার করবে। যাতে আরো বেশী কেনিয়ান মানুষ আরো ভালভাবে চীনকে জানাতে পারেন।
|