প্রথমে বারবার দেখা ও জেনে নেয়া বাচ্চাদের বুদ্ধির বিকাশের জন্যে উপকারী বিষয়টি নিয়ে কিছু আলোচনা করা যাক । শৈশব বাচ্চাদের বড় হওয়ার জন্যে এক গুরুত্বপূর্ণ দীক্ষা নেবার কাল । তাই অভিভাবকদের নানা উপায়ে নিজের বাচ্চার বিশ্বকে জানার দক্ষতা বাড়িয়ে দিতে হবে । সর্বপ্রথমে নিজের বাচ্চার জন্যে এক সরল ও উষ্ণ শোবার ঘর সাজাতে হবে । ঘরটিতে খুব বেশী আলো থাকার দরকার নেই । ঘরটির দেয়ালে কিছু রঙবেরঙয়ের ছবি যেমন প্রানী, উদ্ভিদ , মানুষ বা কার্টুনেরছবি লাগাতে পারেন ।
শিশু চিত হয়ে শোয়ার সময় তার ২০-৩০ সেন্টিমিটার উপরে শিশুর পছন্দনীয় খেলনা যেমন এক রঙের রিং , বেল , বেলুন ঝুলিয়ে দিতে পারেন । খেলনাটির কোমলও সুন্দর ধ্বনি থাকলে ভাল হয় । প্রত্যেকবার দু-একটা খেলনা ঝুলিয়ে দিতে পারেন এবং বাচ্চার নতুন জ্ঞানবোধ আকর্ষণ করার জন্যে খেলনাগুলো বারবার পরিবর্তন করতে হবে । যাতে বাচ্চার চোখ টেড়া না হয় তার জন্যে খেলনা ঝুলানোর জায়গা পরিবর্তন করতে হবে । যখন অভিভাবকরা বাচ্চাকে কোলে নেন তখন হাতে লাল বেলুন নিয়ে ২০-৩০ সেন্টিমিটার দূরে বাড়িয়ে বাচ্চার দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন এবং ধীরেধীরে বেলুনের সঙ্গেতার দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেবেন ।
তিন মাসের সময় বাচ্চা চোখ ঘুরিয়ে দেখতে সক্ষম । যখন বাচ্চা মনোযোগের সঙ্গে কোনো এক জিনিস বা কোনো মানুষের উপর নজর রাখে তাহলে তার বাচ্চার অদৃশ্য লক্ষ্য অন্বেষণের রহস্য বাড়ানোর জন্যে তাড়াতাড়ি সেই জিনিস বা লোকের চেহারা সরিয়ে দেবেন ।
চার মাস পর বাচ্চার দৃষ্টি শক্তি অনেক বেড়েছে । এ সময় তাকে ঘরের বাইরে নিয়ে ফুল, ঘাস আর নানা ধরণের লোকের চলাফেরা দেখাতে পারেন । এমন কি তার দর্শন-ক্ষেত্র ও তার দৃষ্টির সংবেদনশীলতা বাড়ানোর জন্যে তাকে সূর্য, চাঁদ, তারা , নীল আকাশ ও সাদা মেঘ দেখাতেও পারেন ।
পাঁচ-ছ' মাসের সময় শিশুর আত্ম সচেতনতা জোরদার করার জন্যে বাচ্চাকে আয়না দেখাতে পারেন । এ সময় আয়নার সামনে তার চোখ ,নাক ,মুখ ,কান দেখাতে পারেন ।
এর চেয়ে বড় বাচ্চাকে দৈনিক জীবনযাপনের জিনিসপত্র দেখানো ছাড়াও নানা ধরনের বইপত্র দেখাতে পারেন । শিশু বয়সের বাচ্চাদের বই ছবিভিত্তিক হওয়া উচিত । বাচ্চার দর্শণ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাষা সমন্বয় করে তাদের উপলব্ধিরক্ষমতা বাড়াতে হবে ।
বয়স বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাচ্চাদের কর্ম-ক্ষমতাও বেড়ে যায় । তারা অধিক থেকে অধিকতর জিনিস দেখতে পাবে । এ সময় অভিভাবকদের বাচ্চাকে জিনিসটার নাম , আকার ,রঙ ও ভূমিকা ইত্যাদি জানাতে হবে যাতে তাদের জেনে নেয়ার ক্ষমতা বাড়তে পারে ।
এখন বাচ্চাদের সুপ্ত প্রতিভাআবিস্কারের বিষয়টি নিয়ে কিছু আলোচনা করা যাক ।
বিশেষজ্ঞরা বহুমুখী বুদ্ধি-তত্ত্ব উল্লেখ করে মত প্রকাশকরেছেন যে , বুদ্ধিতে কমপক্ষে ৭ ক্ষেত্রের ক্ষমতা অন্তর্ভূক্ত । সেগুলো হল ভাষার মেধা , যুক্তিবিদ্যার বুদ্ধি , স্থান ও দর্শণের বুদ্ধি, সঙ্গীতের মেধা , ক্রীড়া ও শরিরের সমন্বয়ের বুদ্ধি , অন্তরের বুদ্ধি ও মানুষেমানুষে যোগাযোগের বুদ্ধি । মানুষের নানা বুদ্ধি জটিল সমন্বয়ে বিদ্যমান । কোনো এক লোকের সাত ধরণের বুদ্ধি থাকার সম্ভাবনা আছে । কিন্তু শিশু বেলায় সাধারণত এক বুদ্ধি বিশেষভাবে দেখা দেয় । যেমন বাচ্চার শরিরের সমন্বয়-বুদ্ধি ভাল বলে সে নাচ করতে পছন্দ করে , এ সময় যদি অভিভাবকরা তাকে ছবি আঁকতে চাপ দেন , তাহলে সম্ভবত উল্টা পরিণাম হবে । আর বাচ্চা ছোটো বেলা থেকে সঙ্গীত শুনতে পছন্দ করে এবং সঙ্গীতের তালে তালে নেচে উঠবে দেখে অভিভাবকরা যদি এ সুযোগ আঁকড়ে ধরে বাচ্চার জন্যে নাচ শিখার শর্ত সৃষ্টি করেন তাহলে ভবিষ্যতে বাচ্চা এক নৃত্য-শিল্পী হওয়ার সম্ভাবনা আছে ।
বহুমুখী বুদ্ধি তত্ত্বে মনে করা হয়েছে , প্রত্যেকে বৈচিত্রময় পদ্ধতিতে নিজের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন মেধা দেখাতে পারে , প্রত্যেকেনিজের প্রবল ও দুর্বলক্ষেত্র আছে , শিশুরাও ব্যতিক্রমনয় । দু' বছর বয়স হচ্ছেশিশুর অনুভূতি ও চলনের গতি পরিবর্তন এবং ভাষা শেখার উত্তম সময়কাল । তাই এ সময় বাচ্চাকে বেশী শুনতে দিতে হবে , বেশী দেখতে দিতে হবে , বেশী কথা বলতে দিতে হবে । অভিভাবকদের এ থেকে নিজের বাচ্চার বুদ্ধির বৈশিষ্ট্য উপলব্ধি করতে হবে এবং বাচ্চার বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী তাকে উপযুক্তভাবে প্রশিক্ষণ দিতে হবে , তাকে উত্সাহ ও পরিচালনা দিতে হবে । যাতে নিজের বাচ্চার বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বুদ্ধি বিপুলমাত্রায় সম্প্রসারিত হতে পারে ।
এখন বাবার সাথে বাচ্চাকে বেশী সময় থাকতে দেওয়ার বিষয় নিয়ে কিছু বলা যাক ।
সাধারণত মনে করা হয় যে , শিশু লালন পালন করা মায়ের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব । শিশুর জন্ম থেকেই মায়েরা মনেপ্রাণে বাচ্চার লালনপালন করার দায়িত্ব পালন শুরু করেন । এমন কি অনেক মা আরও ভালভাবে নিজের বাচ্চা লালনপালন করার জন্যে কাজ ছেড়ে সার্বক্ষনিক মা হয়েছেন । আসলে বাচ্চাদের শিক্ষাদানে বাবার ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ । তাহলে বাবাকে কিভাবে আরও বেশী সময় নিয়ে বাচ্চাদের শিক্ষাদান করতে হবে ?
এক, বাচ্চাদের জন্যে আরও বেশী সময় বের করুন । সাধারণত বাবার জ্ঞান বেশী , তাই বাবার উচিত বেশী সময় বাচ্চার সঙ্গে থাকা । এটা বাবার কাছ থেকে বাচ্চারঅনেক জ্ঞান লাভের অনুকূল ।
দুই , বেশী সময় বাচ্চার সঙ্গে খেলাধুলা করুন । বাবার উচিত সময় করে বাচ্চাকে পার্কে ও বিনোদনমূলক স্থানে নিয়ে খেলাধুলা করা ।কারণ এতে সৃজনশীলতা এবং দৈহিক শক্তি দুই-ই বাড়ে ।বাবার সঙ্গে আমোদ-প্রমোদ করা থেকে বাচ্চারা বেশী জ্ঞান লাভ করতে পারবে । এটা বাচ্চাদের বড় হওয়ার জন্যে উপকারী ।
তিন, বাবার ভালবাসা ব্যক্ত করুন । বাবাকে নানা উপায়ে নিজের ভালবাসা ব্যক্ত করতে হবে যাতে বাচ্চারা সবসময় বাবার ভালবাসা ও যত্ন অনুভব করতে পারে ।
চার , বাচ্চাদের সমর্থন ও উত্সাহ দিন । বাচ্চাদের একা একা কিছু করার সুযোগ সৃষ্টি করে দিন এবং তাদের নিজের ইচ্ছানুযায়ী অগ্রসর হতে সমর্থন ও উত্সাহ দিন ।
বাচ্চাদের শিক্ষা দেয়া স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই অভিন্ন দায়িত্ব । মায়ের ভালবাসায় বাচ্চারা আরও সুশীল ও নম্র হবে এবং বাবার ভালবাসায় বাচ্চারা আরও দৃঢ ও বলবান হতে পারে । বিশ্বাস করা যায় , ভাল বাবার ভূমিকায় অন্য কেউই স্থলাভিষিক্ত হতে পারে না ।
|