v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-02-08 13:21:33    
চীনের সংখ্যালঘু জাতির সাহিত্য পুরস্কার তেজী ঘোড়া পুরস্কার

cri

    কিছু দিন আগে চীনের অষ্টম সংখ্যালঘু জাতির সাহিত্য পুরস্কার ' তেজী ঘোড়া ' পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান পেইচিংয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে । ১৫টি সংখ্যালঘু জাতির ৩০টি সাহিত্য রচনা এই পুরস্কার পেয়েছে ।

  ' তেজী ঘোড়া ' পুরস্কার ১৯৮১ সাল থেকে চালু হয় । চীনে মোট চারটে জাতীয় পর্যায়ের সাহিত্য পুরস্কার আছে , এই চারটি সাহিত্য পুরস্কার হলোঃ লু সুন সাহিত্য পুরস্কার , মাও তুন সাহিত্য পুরস্কার , শিশু সাহিত্য পুরস্কার আর তেজী ঘোড়া সাহিত্য পুরস্কার । তেজী ঘোড়া সাহিত্য পুরস্কার সংখ্যালঘু জাতির সাহিত্যিকদের জন্য প্রবর্তিত একটি পুরস্কার । এই পুরস্কার প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া লেখকরা সব সংখ্যালঘু জাতির লোক । তারা নিজ জাতির ভাষা অথবা হান জাতির ভাষায় সাহিত্য রচনা করতে পারেন । বতর্মান ' তেজী ঘোড়া ' সাহিত্য পুরস্কার পাওয়া ৩০টি সাহিত্য রচনা এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া ৩৪৩টি সাহিত্য রচনা থেকে নির্বাচিত হয়েছে । এর মধ্যে ৫ টি উপন্যাস , ৫ টি ছোট গল্প , ৫টি প্রবন্ধ সংগ্রহ , বাকী ১৫টি রচনা হলো কবিতা সংগ্রহ , তথ্য কাহিনী আর সাহিত্য সমালোচনা ইত্যাদি ।

    সংখ্যালঘু জাতিগুলোর সাহিত্য রচনার জন্য বিশেষ পুরস্কার প্রবর্তিতহয়েছে—এমন দেশের সংখ্যা পৃথিবীতে বেশী নয় । চীন সরকার শুধু সংখ্যালঘু জাতির সাহিত্য রচনাকেই গুরুত্ব দেয় না , সংখ্যালঘু জাতির সাহিত্যিকদের নিজ জাতির ভাষা দিয়ে সাহিত্য রচনা করতেও উত্সাহ করে । চীনে হান জাতি ছাড়া ৫৫টি সংখ্যালঘু জাতি আছে । এই ৫৫টি সংখ্যালঘু জাতির মধ্যে ২১টি জাতির নিজস্ব ভাষা আছে । এবার মোট দশটি সংখ্যালঘু জাতির ভাষায় লেখা সাহিত্য রচনা পুরস্কার পেয়েছে , এটা পুরস্কার পাওয়া সাহিত্য রচনাগুলোর মোট সংখ্যার এক তৃতীয়াংশ । এই পুরস্কারের যাচাই কমিটির প্রধান , চীনের ই জাতির বিখ্যাত কবি চিদিমাচিয়া মনে করেন , ' তেজী ঘোড়া ' সাহিত্য পুরস্কারের একটি বৈশিষ্ট্যই সংখ্যালঘু জাতির লেখকদের নিজ জাতির ভাষায় সাহিত্য রচনা করতে উত্সাহ দেয়া। তিনি বলেছেন , আমরা সংখ্যালঘু জাতির লেখকদের নিজ জাতির ভাষায় সাহিত্য রচনাকে উত্সাহ দেই । কেন্দ্রীয় সরকার সংখ্যালঘু জাতিগুলোর ভাষার প্রসারকে গুরুত্ব দেয় এবং সংখ্যালঘু জাতির সংস্কৃতিকে যথেষ্ট মর্যাদা দেয় । এই পুরস্কার প্রবর্তনের আগে সংখ্যালঘু জাতির ভাষায় রচিত সাহিত্য কর্ম চীনের জাতীয় সাহিত্য প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত ছিলো । এই পুরস্কার প্রবর্তনসংখ্যালঘু জাতির সাহিত্যিকদের জন্য এক বিরাট অনুপ্রেরণা।

    গত বিশ বছরে চীনে সংখ্যালঘু জাতির লেখকের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। সংখ্যালঘু জাতির লেখকদের নিজ জাতির ভাষায় বা হান জাতির ভাষায় রচিত সাহিত্য কর্মগুলোতে সংখ্যালঘু জাতির বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত হয়েছে । তাদের লেখা কবিতা , উপন্যাস , ছোট গল্প , প্রবন্ধ ও অপেরায় সংখ্যালঘু জাতির অধিবাসীদের জীবন প্রণালী , রীতিনীতি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য জীবন্তভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে । সংখ্যালঘু জাতির লেখকরা তাদের সাহিত্য রচনায় নিজ জাতির অধিবাসীদের জীবন বর্ণনার মাধ্যমে তাদের বৈশিষ্ট্যময় মূল্যবোধ প্রকাশের চেষ্টা করেছেন । এবার ' তেজী ঘোড়া ' সাহিত্য পুরস্কার পাওয়া মান জাতির লেখক কুয়ান রেন সানের লেখা ' থিয়েনকাও তিহৌ ' চীনের কৃষকের জীবনের ভিত্তিতে রচিত একটি উপন্যাস । এই উপন্যাস ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে এবং ২৪ খন্ডের একটি সিরিজ নাটকে রুপান্তরিত করে শীঘ্রই টেলিভিশন অনুষ্ঠানে প্রচার করা হবে । গত বারের ' তেজী ঘোড়া ' সাহিত্য পুরস্কার পাওয়া ফু মি জাতির কবি লুনো দিচির রচিত কবিতা সংগ্রহ ' আমি আদিম ভূমির এক অংশ ছিলাম '-তে মাটির প্রতি ফু মি জাতির অধিবাসীর ভালোবাসা ও ভাবাবেগ প্রতিফলিত হয়েছে ।

    চীনের বতর্মান সাহিত্য মঞ্চে হান জাতি ও সংখ্যালঘু জাতিগুলোর সাহিত্যিকদের মিলিত প্রচেষ্টায় বিভিন্ন জাতির সংস্কৃতি পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হয়ে চীনা জাতির বৈশিষ্ট্যময় সাংস্কৃতিক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে । এবার মোট ৩২জন সংখ্যালঘু জাতির লেখক ' তেজী ঘোড়া ' সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন । তারা সাহিত্য রচনার মাধ্যেমে নিজ জাতির উন্নয়ন ও অধিবাসীদের জীবন বর্ণনা করেছেন , এতে তাদের উচ্চ দায়িত্ববোধ প্রতিফলিত হয়েছে । এই পুরস্কার যাচাই কমিটির প্রধান চিদি মাচিয়া বলেছেন , অনেক সংখ্যালঘু জাতির লেখক , বিশেষ করে অল্পবয়সী ও মধ্যবয়সী লেখকদের চিন্তাভাবনা সক্রিয় , তাদের সাহিত্য নৈপুণ্যও ভালো । তাদের রচিত সাহিত্য কর্মগুলোতে তারা যে নিজ জাতির সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন , তা' হান জাতি বা অন্য জাতির লেখকের পক্ষে সম্ভব হবে না । আমি মনে করি বতর্মানে চীনের বিভিন্ন জাতির সাহিত্যিকদের সম্পর্ক সুষম বলা যায় । বিভিন্ন জাতির লেখকরা পরস্পরকে অধ্যয়ন ও মতবিনিময় করেন , অনেক ক্ষেত্রে তারা একই মত পোষণ করেন । সাহিত্য রচনার সঙ্গে সঙ্গে তারা সংখ্যালঘু জাতির সাহিত্য গবেষনার কাজও করছেন । সংখ্যালঘু জাতির লোকসাহিত্যের গবেষনার সময় তারা এই জাতির ইতিহাস , ভাষা , ধর্ম ও রীতিনীতি পর্যালোচনা করছেন , তাই সংখ্যালঘু জাতির লোক সাহিত্য গবেষনায় এক নতুন পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে ।

    মিঃ পাও মিন তে মঙ্গোলীয় জাতির একজন কবি , তিনি চীনের ' সাহিত্য সমালোচনা ' পত্রিকার প্রধান সম্পাদক । সাংবাদিকদের সাক্ষাত্ দেয়ার সময় পাও মিন তে বলেছেন , বতর্মান চীনের সংখ্যালঘু জাতির সাহিত্য রচনা ও গবেষনা চালানোর সবচেয়ে ভালো সময়পর্ব , সবক'টি সংখ্যালঘু জাতির নিজের সাহিত্যিক আছে , তাদের মধ্যে কেউ কেউ নিজ জাতির ভাষায় সাহিত্য রচনা করছেন , কেউ কেউ হান জাতির ভাষায় রচনা করেন । তাদের সাহিত্য রচনা বৈশিষ্ট্যময় । সংখ্যালঘু জাতিগুলোর সাহিত্যের প্রসার চীনের সাহিত্য রচনায় নতুন প্রাণ শক্তি যুগিয়েছে ।

    তিনি বলেছেন , চীনের সংখ্যালঘু জাতিগুলোর মধ্যে পারস্পরিক প্রভাব আদান-প্রদান, পরস্পরকে অধ্যয়ন আর পারস্পরিক সম্বনয় সাধনের প্রক্রিয়ার সারসংকলন করা একটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার । এই কাজ করার বিরাট সামাজিক তাত্পর্য আছে । তিনি আরো বলেছেন , চীনের সংখ্যালঘু জাতির সাহিত্য রচনা আরো প্রসারিত করা উচিত , প্রতিটি জাতির নিজস্ব সাহিত্য সম্পদ আছে । চীনের সংস্কৃতির রকমারিতা ক্রমেই আরো বেশী লোকের দৃষ্টি আকর্ষন করছে । চীনের আর্থ-সামাজিক বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে চীনের সংখ্যালঘুজাতির সাহিত্য রচনা আরো সমৃদ্ধ হবে ।