শীতকালে মানুষরা সহজেই সর্দিতে ভুগে থাকে। সর্দি হলে মানুষের মাথা ব্যথা, জ্বর, কাশি, নাকানি ইত্যাদি সমস্যা হয়, তাতে রোগীদের জীবন ও কাজ ব্যহত হয়। সর্দির চিকিত্সা করার জন্য কি রকম ওষুধ ব্যবহার করা ভালো?
আমরা যে সর্দির কথা বলছি, তা সাধারণ সর্দি ফ্লু নয়। সাধারণ সর্দি হলো বিভিন্ন ভাইরাসে আক্রান্ত আপার শ্বাস-প্রণালীর হঠাত-ঘটিত প্রদাহ। তা সাধারণ রোগ হলেও তার উপর অবহেলা করলে চলবে না। পেইচিংয়ের থুং রেন হাস্পাতালের ডাক্তার মাদাম ছেন তুং নিং বলেছেন:
"সঠিক চিকিত্সা না করলে সর্দি সম্ভবত দেহের অন্য অঙ্গের উপর কুপ্রভাব ফেলবে। আপার শ্বাস-প্রণালী মানুষের দেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ। তা দিয়ে ভাইরাস কানে প্রবেশ করতে পারে এবং নিম্ন শ্বাস-প্রণালীতে প্রবেশ করে কিডনির প্রদাহ, কার্ডিওমাইওপাথি ইত্যাদি রোগ ডেকে আনতে পারে। তাই সর্দির ওষুধের নির্বাচন খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয়।"
এখন মানুষেরা সহজেই ওষুধ দোকানে সর্দির ওষুধ কিনতে পারেন। কিন্তু বিভিন্ন রকম ওষুধ দেখে কোনটা কিনবে এই প্রশ্ন নিয়ে নিশ্চয় অনেকের সমস্যা হয়। পেইচিংয়ের একটি ওষুধ দোকানের মিস ওয়াং জানান, কেনার সময়ে ওষুধ কার্যকর কিনা এবং তার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কেমন লোকেরা সাধারণত এই দুটি ব্যাপারের উপর বেশি নজর দেন। মিস ওয়াং বলেছেন,
"সাধারণত মানুষরা বিজ্ঞাপনে পরিচিত ওষুধ কিনতে পছন্দ করেন। কারণ এগুলো ওষুধ সাধারণত বড় বড় ওষুধ কারখানায় উত্পন্ন হয় বলে এগুলোর ফলপ্রসূতা ভাল। তাছাড়া, ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার উপরও মানুষরা বেশি মনোযোগ রাখেন।"
আসলে বিভিন্ন কারণে মানুষের সর্দি হওয়ায় তাদের ভিন্ন ওষুধ খাওয়া উচিত। এক ওষুধ দিয়ে সকল রোগ চিকিত্সা করা যাবে না। তাই নিজের রোগের লক্ষণ অনুযায়ী উপযোগী ওষুধ বেছে নেয়া উচিত।
বর্তমানে পশ্চিম ওষুধের মধ্যে প্রধাণত তিন রকম সর্দি ওষুধ আছে। প্রথমটি জ্বর ও মাথাব্যাথা প্রশমন করতে পারে। দ্বিতীয়টা নাকানি কমাতে পারে। তৃতীয়টা হলো এলাজি-বিরোধী ওষুধ, তা হাঁচি ও নাকানি নকমাতে পারে।
এসব ওষুধের উপাদান ও ভূমিকা ব্যাখ্যাপত্রে পাওয়া যায়। তাই ওষুধ কেনার সময়ে তার ব্যাখ্যাপত্র দেখে নিজের রোগের লক্ষণ অনুযায়ী উপযুক্ত ওষুধ কেনা যায়। তবে সঙ্গে সঙ্গে আপনি ওষুধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া পড়তে ভুলবেন না। যেমন জ্বর ও মাথাব্যাথা পশমনের ওষুধ বেশী খেলে সম্ভবত বিডনির সামর্থ্যের অবনতি ঘটানো যায়। তাই যকৃত ও বিডনির অবস্থা ভাল নয় এমন মানুষের এরকম ওষুধ ব্যবহার করার সময়ে সাবধান থাকা উচিত। হাইপাথিরৈডিজম রোগী, উচ্চ-রক্তচাপ ও হৃদ-রোগীদের রক্ত-শিরা সংকোচনের ওষুধ খেলে সতর্ক থাকতে হবে। এলাজি-বিরোধী ওষুধ খেলে মানুষ সহজে ঘুম পায়, তাই যারা দিনের বেলায় কাজ করেন, তাদের পক্ষে এই ওষুধ কম খেলে ভাল।
পশ্চিমা ওষুধ ছাড়া, সর্দির চিকিত্সায় চীনের ঐতিহ্যিক ওষুধও ভাল ফল দেখা দেয়। রোগীদের লক্ষণ অনুযায়ী ঠান্ডাজনিত ও গরমজনিত দুরকম সর্দির প্রতিকারে চীনের ঐতিহ্যিক ওষুধ ব্যবহার করা হয়। দুরকম সর্দির রোগীরা ভিন্ন ওষুধ খান। চীনের ঐতিহ্যিক ওষুধ গবেষণাগারের সি ইউয়ান হাসপাতালের ডাক্তার জাং ইয়ান ফিং বলেছেন:
"দুরকম সর্দির মানুষ নিজেরাও বুঝতে পারেন। গরমজনিত সর্দি হলে মানুষের বেশি জ্বর হয় বলে তারা ঠান্ডা বেশী ভয় করে না এবং কাশি করে হলুদ রংয়ের শ্লোষ্মা বের হয় এবং নাকের পানির রংও হলুদ। বরং ঠান্ডাজনিত সর্দির রোগীরা জ্বর বেশী নয়, তবে ঠান্ডাকে বেশি ভয় করেন এবং শ্লোষ্মা ও নাকের পানির কোনো রং নেই। এই দু'রকম লক্ষণ অনুযায়ী দু'রকম ওষুধ খাওয়া উচিত। বিপরিত ওষুধ খেলে মানুষের রোগের আরো অবনিত হবে।"
আরেকটি বিষয়ের উপর আপনাদের বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে। তা হলো এই যে, যদি একটানা তিনদিন ধরে রোগীদের ৩৮ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডের জ্বর হয় এবং ওষুধ খেলেও ভাল হয়ে যাচ্ছে না, তাহলে যথাশীঘ্রই ডাক্তারদের কাছে যাওয়া উচিত। তাছাড়া, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, গর্ভবতী নারী, বাচ্চা ও দুর্বল মানুষদের যদি সর্দি হয় তাহলে তাহলে ডাক্তার দেখতে যাওয়া ভাল।
কিছু সর্দির রোগীদের অবস্থা অত গুরুতর নয়, তারা ওষুধ না খেলেও নিজের যত্নে এক সপ্তাহের মধ্যে আরোগ্য লাভ করতে পারেন। এই সময় বেশী বিশ্রাম করা এবং ঘুমানো এবং সাদা পানি ও ফলের রস বেশী খাওয়া উচিত। সঙ্গে সঙ্গে আবহাওয়া অনুযায়ী কাপড় বেশী বা কম পরা উচিত, ঘরের আয়ু-বিনিময় ব্যবস্থা ভাল রাখা উচিত এবং লেপ াঝেমধ্যে আলোতে রাখা উচিত।
|