কয়েক বছর আগে মিঃলিউ আর মিসেস ওয়াংয়ের পরিচয় হয় একপার্কে এবং এই পার্কেই এদের রোমান্টিকপ্রেমকাহিনীও শুরু হয় ।বেশ কয়েক মাস ধরে প্রেমালাপের পর তাদের বিয়ে হয় । বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রী দুজন সুখী আর আনন্দের জীবনযাপন শুরু করেন ।পারিবারিক জীবন তাদের জন্যে যে আনন্দ বয়ে এনেছে তা আগে তারা কখনো অনুভব করেননি,তারা সুখের সাগরে অবগাহন করেছেন। কিন্তু ধীরেধীরে বিয়ের প্রথম দিক্কারসেই আবেগ সেই রোমান্টিক জীবন ধীরেধীরে কিছুটা ফিকে হয়ে আসে।কেন বিয়ে করে, বিয়ের পর স্বামীস্ত্রী দুজনের কিকি দায়িত্ব আছে ?বিয়ের ব্যাপারে অতিরিক্ত স্বপ্ন দেখা এবং চিন্তাধারার দিক থেকে কোনো প্রস্তুতি নেই বলে দুজনেরই কিছু হতাশা আছে। ফলে স্বামীস্ত্রী দুজনের মধ্যে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে ।
এ সম্পর্কে স্ত্রীমিসেস ওয়াং বলেছেন: আমাদের মধ্যে কিছু সমস্যা হয়েছে , আমাদের জীবন আর আগের মতো মধুর নয় , আমাদের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয় । বিয়ের আগে তিনি নিজের পরা ,নিজের আচরনের উপর খুব মনোযোগ দিতো, যা আমাকে গভীরভাবে মুগ্ধকরেছে এবং একারনে আমি তাকে ভালবেসেছি , কিন্তু বিয়ের পর এসব বদলে গেছে।
স্বামী মিঃ লিউ বলেছেন: আমি একজন খাতি পেইচিং-বাসী, সাধারন সময়ে পোষাকপরার ব্যাপারে আমি অমনোযোগী, আমি মনে করি , নিজের স্ত্রীর সামনে নিজেকে সংযত করার দরকার নেই ।
মিসেস ওয়াং বলেছেন: বিয়ের আগে তিনি আমার কথা শুনতেন,কিন্তু বিয়ের পর তিনি আর আমার কথার গুরুত্ব দেন না , এবং প্রায় আমার কথা মনে রাখেন না । একটা বিষয় আমি মোটেইসহ্য করতে পারি না যে , আমাদের বিবাহ বার্ষিকীর মতো এমন গুরুত্বপূণর্ণ দিনও তিনি ভুলে যান ।
মিঃলিউ বলেছেন: এ ছোটো সমস্যার জন্যে তিনি আমাদের দুপক্ষের পরিবারের সবার সামনে আমাকে তিরস্কার করেন ।
বিয়ের পরের জীবন আর বিয়ের আগের মতো রোমান্টিক নয় ।স্ত্রী চায় শান্ত আর আরামের জীবনযাবন, চায় স্বামী বেশি সময়ে তার সংগে থাকে । কিন্তু স্বামী বন্ধুদের সংগে গল্প করতে পছন্দ করেন এবং মাঝেমাঝে খুব দেরীতে ফিরে আসেন।
একদিন স্বামী কয়েক জন বন্ধুনিয়ে নিজের বাসায় গল্প করেন । তারা বিয়ার খান এবং গান গান। এসময়ে স্ত্রী ওয়াং ফিরে এসে দেখে অখুশী হন এবং স্বামীর বন্ধুদের সামনে স্বামীর সংগে ঝগড়া করেন । বন্ধুদের সামনে নাক কাটা গেছে বলে স্বামী লিউও স্ত্রীর সংগে ঝগড়া করেন ।
এবারের ঝগড়া সম্পর্কেস্ত্রী ওয়াং বলেছেন: এর পর থেকে আমাদের মধ্যে প্রায়ই ছোটোখাটো ব্যাপারের জন্যে ঝগড়া হয় । এটাই কি জীবন ?কেন ? আমি মনে মনে বলি, বিয়ের চেয়ে বিয়ে না করা ভাল । বিয়ে না করলে কত ভাল হত ।
এক দিন রাতে,স্বামী লিউ বাইরে মদ খেয়ে দেরীতে বাড়ি ফিরে আসেন , মদের কারনে দুজন আবার ঝগড়া করেন, দুজনের মনোভাবের ক্ষতিসাধন করার কথা বলেছেন,এমনকি বিবাহ-বিচ্ছেদের কথাও উল্লেখ করেছেন ।
তরুন বয়সের কারনে দুজন কেউই একটু আপোসরফা করেন না , আলাপরামর্শ করে দুজনের বিবাহ বিচ্ছেদহয়।কিন্তু তিনমাস পর দুজনের ছিন্ন বিবাহ পুনরুদ্ধার হয় ।
বিবাহ বিচ্ছেদকালেযারযার জীবন সম্পর্কে স্বামী লিউ বলেছেন: আমরা দীর্ঘকাল ধরে প্রেমালাপ করে বিয়ে করেছি , আমাদের কাছে বিবাহ-বিচ্ছেদ এক অত্যন্ত দুঃখের ব্যাপার ।ছাড়াছাড়ির সময়ে তার ভালর কথা প্রায়ই আমার মনে পড়ে । আমি তাকে বাইরে কথা বলতে অনুরোধ করি ।
স্ত্রী ওযাং বলেছেন: এই তিন মাসে আমি বাবামার বাড়িতে থাকি । পরিবারের সবাই আমাকে পরামশর্শ দেন । আমিও আমাদের আনন্দের দিনের কথা স্মরন করি , আমাদের প্রতিশ্রুতি স্মরন করি । আমি সত্যি নিজের দায়িত্বহীন আচরনের জন্যে অনুতাপ করি ।
স্বামী লিউ বলেছেন: বিবাহ-বিচ্ছেদের কথা মনে করলেই আমার দুঃখ হয় ।সত্যি আমাদের এমন কাজ করা উচিত নয় । বারবার চিন্তা ভাবনা করার পর আমি মনে করি, অন্যান্যদের তুলনায় নিজের স্ত্রীই সবচেয়ে ভাল ।
বিবাহ-বিচ্ছেদের তিন মাসে পরপক্ষ নতুন বিয়ে করতে পারে এমন ভয় তাদের আছে কিনা এ সম্পর্কে স্বামী লিউ বলেছেন: মনোভাবের কারন নয় ,আমরা ছোটোখাটো ব্যাপারের জন্য ছাড়াছাড়ি করেছি, আমরা পরস্পরের কথা মনে করি,পরস্পরের ভাল কথা ,আমাদের সুখি জীবন স্মরন করি,তাই আমি আমার স্ত্রীকে বিশ্বাস করি,তিনি নতুন বিয়ে করতে পারেন এমন ভয় আমার নেই । স্ত্রী ওয়াংও একই কথা বলেন ।
ঘটনাটির পর স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে আগের চেয়ে অনেক ভাল হয়েছে ।স্ত্রী স্বামীকে আরো বেশী যত্ন করেন ,স্বামীকে তার বন্ধুদের সংগে গল্প করার সময় দেন।স্বামী আরোবেশি সময় করে স্ত্রীর সংগে থাকেন। বিয়ের দিন ভাল করে মনে রাখেন ।এখন দুজন রোমান্টিকভাবে বিয়ের দিন পালন করেন। যে পার্কে দুজনের পরিচয় হয় সে পার্কে দুজন মাঝেমাঝে বেড়াতেও যান। এখন দুজন বিবাহ বিচ্ছেদের কালোছায়া থেকে বেরিয়ে এসেছেন, তারা এখন পরস্পরকে খুব মূল্যবান বলে মনে করেন ।তারা আর ছোটোখাটো ব্যাপারের জন্যে ঝগড়া করেন না , মত-পার্থক্য দেখা গেলে দুজন বসে ভালভাবে মত বিনিময় করতে পারেন এবং এক সংগে সমস্যা সমাধান করেন ।
সুখ সম্পর্কে এখন স্বামী-স্ত্রী দুজনের নতুন উপলব্ধি ও ব্যাখ্যা আছে । স্বামী লিউ বলেছেন: পরপক্ষকে মূল্য দেয়া ও ভালবাসা হলো আমার দৃষ্টিতে সুখ। আমি বিবাহিত অথবা অবিবাহিত সকল পুরুষ-বন্ধুকে বলতে চাই যে, আপনার স্ত্রীকে আপনার অর্জন হিসেবে মূল্যবান বলে মনে করুন। স্ত্রী ওয়াং রলেছেন: স্বামী-স্ত্রী দুজন মিলে আন্তরিকভাবে নিজের পরিবারের জন্যে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়াই আমার উপলব্ধিতে সুখ ।
মিঃ লিউ ও তার স্ত্রী ওয়াংয়ের কাহিনী এখানে শেষ হল,আমরা তাদের সুখী জীবন কামনা করি এবং আশা করি তরুন বন্ধুরা তাদের অভিজ্ঞতা থেকে কিছু শিখতে পেলেন ।
|