v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-02-07 10:30:23    
একজন বাংলাদেশী তরুণের চীন-প্রীতি

cri
    চীনের সুপ্রাচীন আর রহস্যময় ভূমির সুউজ্জ্বল সংস্কৃতি চীনে আসা বহু বিদেশী বন্ধুর মন কেড়েছে । বাংলাদেশের টগবগে যুবক মাহমুদ হোসেন তৌফিক তাদের অন্যতম । আট বছর আগে তিনি চীনে পড়তে আসেন । তখন থেকে তিনি বরাবরই চীনে লেখাপড়া আর জীবনযাপন করে আসছেন এবং চীনকে তাঁর দ্বিতীয় জন্মভূমি হিসেবে গ্রহণ করেছেন । আজকের অনুষ্ঠানে আসুন , আমরা চীনের সংস্কৃতিপ্রেমী বাংলাদেশের এই যুবক- তৌফিকের সংগে পরিচিত হই । অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করছি আমি শি চিং উ ।

    চীনের রাজধানী পেইচিংয়ের প্রখ্যাত ছিং হুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের সংবাদদাতা তৌফিকের সংগে দেখা করেছেন । দেখা মাত্রই তিনি সাবলীল চীনা ভাষায় আমাদের সংবাদদাতার কাছে চীন ও চীনা সংস্কৃতির প্রতি তাঁর ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন । তিনি বলেছেন ,

    চীনে সংস্কৃতি আছে । শিল্পকলা ও সংস্কৃতিপ্রেমী হিসেবে আমি চীনকে ভালোবাসী । কারণ আমি এখানে সুখ-স্বাচ্ছন্দে জীবনযাপন করছি । গত আট বছরের মধ্যে আমি একবার বাংলাদেশে ফিরে গিয়েছিলাম । সেখানে এক মাস ছিলাম । তখন আমি ভাবছিলাম , কবে আমি আবার চীনে ফিরে আসতে পারবো । যখন চীনে ফিরে আসলাম , তখন মনে হয়েছে , আমি যেন নিজের বাড়িতে ফিরে এসেছি ।

    ১৯৯৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শিক্ষকদের সুপারিশে তৌফিক পোরসেলিন অর্থাত চীনা মাটির জন্মভূমিতে পড়তে আসেন । এর আগে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মৃত শিল্প বিভাগের ছাত্র ছিলেন । চীনে আসার পর তিনি পেইচিংয়ের ছিং হুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন । তারপর তিনি আবার শ্রেষ্ঠ কৃতিত্ব দিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঁচ শিল্প বিভাগের স্নাকোত্তর ছাত্র হন । এইভাবে তিনি বাংলাদেশের প্রথম ব্যক্তি হয়ে উঠেন যিনি কাঁচের শিল্প বিভাগে ভর্তি হন । ২০০৫ সালের জুলাই মাসে তাঁর ব্যক্তিগত কাঁচের শিল্প প্রদর্শনী পেইচিংয়ে অনুষ্ঠিত হয় । ছিং হুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এই প্রথম একজন বিদেশী ছাত্র এমন প্রদর্শনীর আয়োজন করলেন ।

    প্রদর্শনীতে চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের মিনিস্টার মস্উদ মান্নান তৌফিকের সাফ্যলের স্বীকৃতি দিয়েছেন । তিনি বলেছেন , বিদেশে বাংলাদেশের তরুণ শিল্পী তৌফিকের সাফল্যজনক চারুশিল্প প্রদর্শনী দেখে আমি সত্যিই আনন্দিত । আমার মনে হয় , এই রকম প্রদর্শনী বিপুলভাবে শিল্পকলা বিভাগের বিতদেশী ছিত্রদের অনুপ্রেরণঅ দেবে । ভবিষ্যতেও আমরা এই রকম তত্পরতায় সাধ্যমত সাহায্য দিয়ে যাবো । ই

    নিজের পেশাগত লেখাপড়ার পাশাপাশি তৌফিক চীনের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির সংস্পর্শেও এসেছেন এবং বেশ সাফল্য অর্জন করেছেন । ছিং হুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির হওয়ার প্রথম বছরে একটি পাবলিক ক্লাসে চীনের হস্তলিপি ও চীনা চিত্রের সংগে তাঁর প্রথম পরিচয় ঘটে । তখন থেকে তিনি চীনের হস্তলিপর ও চীনা চিত্র ভালোবেসেছেন । সে সময় থেকে তিনি প্রতিদিন চীনা হস্তলিপি ও চিত্রকলা চর্চা করে এসেছেন এবং নিজের খরচে চারুকলা ইন্স্টিটিউটে গিয়ে শিক্ষকদের কাছ থেকে চীনা চিত্র আঁকার কৌশল শিখেন ।

    ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পূর্ব চীনের চে চিয়াং প্রদেশের হু চৌ শহরে বিদেশীদের হস্তলিপি ও চিত্র প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় । চীনে কর্মরত আর অধ্যয়ণরত শতাধিক বিদেশী বন্ধু এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন । এই প্রতিযোগিতায় তৌফিক দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছেন ।

    চীনা চিত্রাংকন ছাড়া চীনের রসাত্মক সংলাপ , রসিক নাটক আর অপেরার ওপরও তৌফিকের গভীর আগ্রহ রয়েছে । এমন কি তিনি চীনের রসাত্মক সংলাপের বিখ্যাত শিল্পী তিং কুয়াং ছুয়ানের কাছে এই শিল্প শিখেন । তিং কুয়াং ছুয়ান আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন , তৌফিক একজন পরিশ্রমী আর অনুসন্ধিত্সু ছাত্র । কোনো প্রশ্ন থাকলে তিনি সবসময় তার কাছে আসেন । তিনি এই ছিত্রকে খুবই পছন্দ করেন । তৌফিক সর্বদাই তাঁকে বাবা বলে ডাকেন ।

    চীনে তৌফিকের লেখাপড়া ও চীনের সংস্কৃতির প্রতি তার গভীর আগ্রহ চীনের বহু পত্র-পত্রিকার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। অনেক টেলিভিশন কেন্দ্র, বেতার আর খবরের কাগজ তাকে নিয়ে বিবরণ প্রকাশ করেছে । ২০০৪ সালে চীনের প্রকাশনালয়ের আমন্ত্রণে তৌফিক " চীনে বিদেশীদের জীবন" নামে একটি বইতে নিজের অভিজ্ঞতা লিখেছেন । এভাবে তিনি এই বইয়ের প্রথম লেখক হয়ে দাঁড়িয়েছেন । তারপর চীনা মেয়ে আন আনের সংগে তাঁর যৌথ উদ্যোগে " চীনা মাটির দেশে আমার তারকা জীবন" নামে একটি বই প্রকাশিত হয় । বইটিতে বিস্তারিতভাবে ছিং হুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে তার লেখাপড়া আর কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে । এই বইয়ের লেখিকা আন আন তার মূল্যায়ণ করে বলেছে ,

    তিনি খুব সাধু মানুষ এবং অন্যকে সাহায্য করতে পছন্দ করেন । তিনি সত্যিই একজন ভালো মানুষ ।

    তৌফিক আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন , তিনি অত্যন্ত সৌভাগ্যবান । কেন না তিনি চীনে আসতে পেরেছেন এবং সুগভীর চীনা সংস্কৃতি শেখার আর জানার সুযোগ পেয়েছেন । সংস্কৃতিতে ভরপুর এই দেশকে তিনি খুবই ভালোবাসেন । তৌফিক বলেছেন , তিনি এখন চীনাদের জীবনের মধ্যে মিশে যাবার চেষ্টা করছেন যাতে তিনি আরো ভালোভাবে চীনের সংস্কৃতি জানতে পারেন । তিনি বলেছেন ,

    চীনে আসার পর প্রথমে চীনাদের সংগে বন্ধুত্ব স্থাপন করতে হবে । কারণ আমি দেখতে পেয়ছি , চীনারা খুবই অতিথিপরয়ণ । তারা বিদেশীদের সংগে বন্ধুত্ব করতে পছন্দ করেন । দ্বিতীয়ত চীনে আসার পর চীনের টেলিভিশন অনুষ্ঠান দেখতে হবে । চীনের টেলিভিশন কেন্দ্রে বহু চ্যানেল আছে । আমি বেছে বেছে তা উপভোগ করতে পারি । টিভি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমি চীনের সংস্কৃতির অনেক খুঁটিনাটি বিষয় জানতে পারবো । তৃতীয়ত চীনে আসার পর আমি ভ্রমণে যেতে পারি । পেইচিং ছাড়াও আমি চীনের বিভিন্ন জায়গায় যেতে পারবো এবং বিভিন্ন স্থানের জনগণের জীবনযাত্রা আর স্থনীয় চালচলন ও সংস্কৃতি সম্ব্ন্ধে অনেক জানতে পারবো ।

    তৌফিক বলেছেন , চীনে লেখাপড়া আর জীবনযাপনের জন্যে তিনি আরো অনেক সময় ধরে চীনে থেকে যাবেন এবং চীনে ব্যাপকভাবে ভ্রমণ করবেন ও অনেক চীনা বন্ধু পাবেন । তিনি বলেছেন , এমনি করলেই কেবল সত্যিকারভাবে চীন, চীনা লোক আর চীনের সংস্কৃতি জানতে পারবেন ।