v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-02-03 19:09:05    
মঙ্গোলীয় জাতির পশুপালকদের বিদেশ কর্মপরিদর্শন

cri

    উত্তর চীনের অন্তমঙ্গোলিয়ার তৃণভূমির ১৩জন পশুপালক সম্প্রতি ইউরোপের পশুপালন ব্রত পরিদর্শন করার জন্য জার্মানী , ফ্রান্স , নেদারল্যান্ডস , বেলজিয়াম প্রভৃতি দেশে গিয়েছিলেন । তারা কেন ইউরোপ পরিদর্শনে গিয়েছিলেন আর তাদের পরিদর্শনের ফলাফল কি হয়েছে ?

    ৩৭ বছর বয়স্ক মঙ্গোলীয় জাতির পশুপালক ইরাতু অন্তঃমঙ্গলিয়ার পশ্চিমাংশের এরডোস্ মালভূমিতে বাস করেন । তার বাড়িতে প্রায় ৫ শো পশু আছে । বিদেশ পরিদর্শন শেষ করে দেশে ফিরে আসার পর তিনি নিজের পরিবারের পশু পালনের পুনর্গঠন করেছেন । তিনি বেশি দুধেল গাই পালন করবেন আর ছাগল একটু কম পালন করবেন । তিনি বলেছেন ,

    আমি যে সব দেশে গিয়েছিলাম , সে সব দেশে দুধেল গাই পালনের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয় । দুধজাত দ্রব্য স্থানীয় বাসিন্দাদের অন্যতম খাদ্য দ্রব্য । অন্য দিকে এ সব দেশে মাংসজাত দ্রব্য উত্পাদন শিল্পের ওপর মনোযোগ দেয়া হয় । এই শিল্পের শিল্পায়নের মাত্রা উঁচু , কসাইখানার সরঞ্জামের মান উন্নত আর পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন । যেমন একটি গরু জবাই করার জন্য এই গরুর জন্মস্থান , গরুর জবাইকারী আর জবাইয়ের সময় ইত্যাদি ক্ষেত্রে আগাগোড়া একটি পূর্ণাংগ রেকর্ড আছে । এতে মাংসের উত্কৃষ্টতা নিশ্চিত করা হয়েছে । সুতরাং তাদের মাংসজাত দ্রব্য বেশি রফতানি করা হয় ।

    মঙ্গোলীয় জাতির পশুপালকরা গরু আর ভেড়া পালনে খুব পারদর্শী । প্রাচীনকাল থেকে তারা বিস্তীর্ণ তৃণভুমিতে গরু ও ভেড়া চরান । তবু এখন তারা এই ক্ষেত্রে ঝামেলার সম্মুখীন হচ্ছেন । পশুপালনের ঐতিহ্য অনুযায়ী , পশু পালন পরিবার-ভিত্তিক পালনের ওপর নির্ভর করতো । পশুদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার গতি মাত্রাতিরিক্তভাবে পশুচারণভূমি বৃদ্ধির গতি ছাড়িয়ে যাওয়ার দরুন তৃণভুমিতে উদ্ভিদের দারুণ অভাব দেখা দিচ্ছে । অন্য দিকে পরিবারভিত্তিক পশু পালনের ফলে তৃণভূমির উদ্ভিদ গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । যেমন ছাগল-চারণ অঞ্চলের তৃণভুমিতে ঘাসের শিকড়ও খেয়ে ফেলা হয়েছে । এর সংগে সংগে পশু চরানোর জন্য পথে বেশি সময় লাগার কারণে পশুদের চর্বি নষ্ট হয়েছে।

    এই পরিপ্রেক্ষিতে ইরাতুর জন্মস্থান-এরদোস শহরের সরকার পশুশালায় পশু -পালন প্রণালী উপস্থাপন করেছে । এই প্রণালী অনুযায়ী , পশুপালকদের গরু আর ভেড়ার জন্য পশুশালা নির্মাণ করতে হবে । পশুশালায় পশু পালন করা হবে । এর সংগে সংগে ব্যাপকভাবে ঘাস লাগানো হবে । যাতে সারা বছর খাবার হিসেবে গরু আর ভেড়ার জন্য পর্যাপ্ত ঘাস সরবরাহ করা যায় ।

    ইরাতু বলেছেন , প্রথমে পশুপালকরা বুঝতে পারতেন না এবং তারা মনে করতেন যে , গরু ও ভেড়ার জন্য পশুশালা গড়ে তোলা আর তাদের জন্য ঘাস লাগানোর ফলে পশুপালকদের খরচ বেড়ে যাবে । কিন্তু তারা পরে আবিষ্কার করেন যে , তাদের এই দুশ্চিন্তার কোনো যুক্তি ছিল না । সুইয়াপারাতু এবার ইরাতুর সংগে বিদেশ ভ্রমণে গিয়েছিলেন । তিনি বলেছেন ,

    পশুশালায় পশুপালন শুরু হবার পর স্ত্রী ভেড়া উষ্ণ শালায় থাকে । আগে একটি স্ত্রী ভেড়া শুধু একটি ভেড়ার বাচ্চা জন্ম দিতো । এখন বছরে দু' তিনটি ভেড়ার বাচ্চা জন্ম দেয় । ভেড়ার বংশ দ্রুত বিস্তৃত করছে । শীতকালে জন্ম গ্রহনকারী ভেড়ার বাচ্চাদের জীবিত থাকার হারও বেড়ে গেছে এবং তারা মোটা হয়েছে । এখন আমি মনে করি , ভেড়া ও গরুর প্রজাতি-বৈচিত্র্যও আগের চেয়ে ভাল হয়েছে ।

    পশুশালায় পশু পালনের ব্যবস্থা নেয়ার পর এরদোস শহরে পশুপালন শিল্প দ্রুত প্রসারিত হয়েছে । শহরে ১ লক্ষেরও বেশি পশুপালক পরিবারে মোট ১ .৪ কোটি পশু পালন করা হচ্ছে । পশুচারণভূমির নির্মাণকাজ জোরদার করার ফলে তৃণভূমিতে উদ্ভিদ দ্রুত পুনরুদ্ধার হয়েছে ।

    পশুপালন পদ্ধতির পরিবর্তনের সংগে সংগে কৃষক আর পশুপালকদের ধারণাও পরিবর্তিত হয়েছে । ঘাস কেমন করে সুষ্ঠুভাবে বপন করা হবে , দুধেল গাই থেকে কি ভাবে আরো বেশি দুধ পাওয়া যাবে , দুধ দিয়ে কেমন করে প্রক্রিয়াকরণ করা হবে আর দুধজাত দ্রব্য কেমন করে বাজারে বিক্রি করা যাবে , এই সব বিষয় স্থানীয় কৃষক আর পশুপালকদের একটি আকর্ষণীয় আলোচ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে । পশুপালন এলাকা হিসেবে এরদোস শহরে আধুনিক পশুপালন শিল্প বিকশিত করতে হলে বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত জ্ঞান জানেন এমন বিপুল সংখ্যক পশুপালক লাগবে । একাগ্রচিত্তে বিবেচনা করার মাধ্যমে শহরের গণ সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে , তদন্ত আর অধ্যয়নের জন্য ১ শো বড় পশুপালক পরিবারের প্রতিনিধিদের বিদেশে পাঠানো হবে , যাতে তারা অন্য দেশের উন্নত মানের অভিজ্ঞতা থেকে জ্ঞান লাভ করতে পারেন ।

    ২০০৪ সালে পশুপালকদের এই বিদেশ ভ্রমণ কার্যক্রম শুরু হয় । সরকার আর পশুপালকরা যথাক্রমে ভ্রমণ খরচের ৭০ শতাংশ আর ৩০ শতাংশ বহন করে । ফলে এরদোস শহরের বহু পশুপালক ইউরোপ পরিদর্শনে গিয়েছিলেন ।

    গত বছরের অক্টোবর ইরাতু , সুইয়াপারাতু আর অন্যান্য ১১ জন পশুপালক এক সংগে বিমানযোগে জার্মানী , ফ্রান্স , নেদারল্যান্ডস , বেলজিয়াম , লুকসেমবুর্গ এই ৫টি দেশ পরিদর্শনে গিয়েছিলেন । এর আগে তারা শুধু বেতার আর টেলিভিশন থেকে এই ৫টি দেশ সম্পর্কে কিছু তথ্য জানতে পেরেছেন । এবার এই ৫টি দেশ পরিদর্শনে যাওয়ার ফলে তারা সত্যি উত্তেজিত আর অবাক হয়েছেন । সুইয়াপারাতু বলেছেন ,

    আমরা মনে করি , এই ৫টি দেশে তৃণভূমি আর পশুচারণভূমির নির্মাণকাজ খুব ভাল । তাদের ব্যবস্থাপনা বৈজ্ঞানিক এবং পশুশালায় পশুপালনের ব্যবস্থা আমাদের চেয়ে ভাল ।

    ইউরোপ পরিদর্শন শেষে এরদোস শহরের পশুপালকরা আধুনিক পশুপালন শিল্পের বিষয়ে আরো বেশি জানতে পেরেছেন । তারা যার যার পশুপালন শিল্প কাঠামোর পুনর্বিন্যাস আর সংস্কার করেছেন এবং সংস্কার চালাতে উত্সাহ দেয়ার জন্য তারা আত্মীয় স্বজন আর গ্রামবাসীদের কাছে নিজেদের অভিজ্ঞতা জানিয়ে দিয়েছেন ।

    এরদোস কৃষি আর পশুপালন শিল্প ব্যুরোর প্রধান মা তিং স্যু বলেছেন , এরদোসের পশুপালকরা যাতে অনিয়মিতভাবে ইউরোপে গিয়ে উন্নত মানের প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ আর শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন , সেজন্য এরদোস শহরের গণ সরকার কতকগুলো ইউরোপীয় দেশের সংগে পরামর্শ করছে , যাতে সংশ্লিষ্ট সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করা যায় ।