v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-02-04 21:08:41    
চীনের বিখ্যাত চলচ্চিত্র অভিনেত্রী ইয়ু লান

cri
    চীনে চলচ্চিত্রের এক শ' বছরের ইতিহাসে অনেক নামকরা অভিনেতা ও অভিনেত্রী দর্শকদের মন জয় করেছেন । এদের মধ্যে চলচ্চিত্র অভিনেত্রী ইয়ু লানের নাম চীনের দর্শকরা সবাই জানেন ।

    এ বছর ইয়ু লানের বয়স ৮৫ বছর । ইয়ু লানের মাথাভর্তি সাদা চুল , মুখের ভাঁজ আর গায়ে পরা সাদাসিদে জামা দেখে এখন কেউ কল্পনাও করতে পারেন না যে তিনি একদা একজন চলচ্চিত্র তারকা ছিলেন । কিন্তু অতীতকালের অভিনেত্রী জীবনের কথা স্মরণ করে তিনি এখনও উচ্ছ্বসিত হন । ইয়ু লান ' ছুই কানের লাল পতাকা ' , লিন পরিবারের দোকান ' আর ' বিপ্লবী পরিবার 'সহ দশটি চলচ্চিত্রে শ্রেষ্ঠ নারী চরিত্র সৃষ্টি করেছেন , এই সব নারী চরিত্র চীনা দর্শকদের মনে গভীর ছাপ ফেলেছে ।

    চীনের জাপানী আগ্রাসন বিরোধী যুদ্ধের সময় ইয়ু লান একজন যুবতী মেয়ে ছিলেন । ১৭ বছর বয়সে তিনি চীনের যুবকযুবতীদের মনের তীর্থস্থান ইয়ানানে গিয়ে জাপানী আক্রমণ বিরোধী সামরিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন , পড়াশুনা শেষ করে তিনি একজন নাট্য শিল্পী হিসেবে তখনকার লু সুইন শিল্পী দলে যোগ দেন ।

    ১৯৪৯ সালে ইয়ু লান তার জীবনের প্রথম চলচ্চিত্র – ' সাদাপোশাক পরিহিত যোদ্ধা '-এ অভিনয় করেন । এই চলচ্চিত্রে রণক্ষেত্রে চীনের চিকিত্সা কর্মীদের আহত যোদ্ধাদের সাহায্য করার কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে । এই চলচ্চিত্র শুটিংয়ের সময়ের কথা স্মরণ করে ইয়ু লান বলেছেন , এটা আমার জীবনে প্রথম চলচ্চিত্র । এর আগে আমি মঞ্চ নাটকে অভিনয় করতাম । আমি মনে করি নাটক ও চলচ্চিত্রে অভিনয় করা একেবারে ভিন্ন কাজ । চলচ্চিত্রে চরিত্র সৃষ্টির ক্ষেত্রে আমার কোনো অভিজ্ঞতা নেই । এই ছায়াছবিতে আমি মঞ্চ নাটকের মতো অভিনয় করেছিলাম , তাই এই ছবিতে আমার অভিনয় সাফল্যমন্ডিত হয় নি ।

    এই চলচ্চিত্রের পর ইয়ু লান এক পেশাদার চলচ্চিত্র অভিনেত্রী হলেন । তিনি অধ্যবসায়ের সঙ্গে চলচ্চিত্র অভিনয় শিখেন এবং নিজের নৈপুণ্য উন্নত করার চেষ্টা করেন । ইয়ু লানের দ্বিতীয় চলচ্চিত্রের নাম ' লুন সুই কৌ '। এই ছবি ইয়ু লানের প্রতিনিধিত্বকারী একটি চলচ্চিত্র । চীনের বিখ্যাত লেখক লাও শোর লেখা একটি নাটকের ভিত্তিতে রচিত চলচ্চিত্র ' লুন সুই কৌ 'তে ১৯৪৯ সালে নয়া চীন প্রতিষ্ঠার পর পেইচিংয়ের নাগরিকদের জীবন বর্ণনা করা হয়েছে । ইয়ু লান এই ছবিতে পুরনো পেইচিংয়ের একজন শ্রমজীবী নারী ছেন নিয়ান চির চরিত্র সৃষ্টি করেছেন । ছেন নিয়ান চি এক দয়ালু নারী , অন্য লোককে সাহায্য করতে আগ্রহী । একই সময় তিনি একজন সাহসী নারী , অযৌক্তিক ব্যাপার দেখে তিনি সাহসের সঙ্গে এর বিরোধিতা করেন । ইয়ু লান এই ছায়াছবিতে এই শ্রমজীবী নারী চরিত্র সৃষ্টি করেছেন এবং তার মনের অনুভূতির পরিবর্তন চমত্কারভাবে চিত্রিত করেছেন । এই ছবিতে ইয়ু লানের অভিনয়ের নৈপুন্যের দ্রুত উন্নতি হয়েছে । এ সম্পর্কে ইয়ু লান বলেছেন , এই ছায়াছবি ১৯৫১ সালে শুটিং করা হয়েছে । দৈনন্দিন জীবন ও অধ্যয়ন থেকে অর্জিত অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান আমি অভিনয়ে ব্যবহার করেছি । এই চলচ্চিত্রের অভিনয় সম্পর্কে আমি সন্তুষ্ট । আমি সাফল্যের সঙ্গে এক বৈশিষ্ট্যপূর্ণ চরিত্র সৃষ্টি করেছি বলে আমি আনন্দিত বোধ করি । এই ছবি তৈরীর সময় ইয়ু লান পেইচিং গণ শিল্পী দলের অনেক নামকরা অভিনেতা ও অভিনেত্রীর সঙ্গে কাজ করেছেন এবং তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছেন।

    গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকের শেষ দিক থেকে ' বিপ্লবী পরিবার ' ছবিটি দেখে অনেক দর্শক গভীরভাবে মুগ্ধ হন । ইয়ু লান এই চলচ্চিত্রে একজন দৃঢচিও মার চরিত্র সৃষ্টি করেছেন । তিনি বিপ্লবী সংগ্রামে নিজের স্বামী ও ছেলেকে হারান এবং শত্রুর জেলখানায় অনেক দিন কাটান । এই চলচ্চিত্রে ইয়ু লান অল্পবয়সী মেয়ে থেকে বৃদ্ধা পর্যন্ত এই পরিবারের মার সারা জীবনের অভিজ্ঞতা চিত্রিত করেছেন । এই চরিত্রের মানসিক অবস্থার পরিবর্তন বেশী এবং জীবনের যুব , পৌঢ ও বৃদ্ধ –এই তিন পর্যায়ের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করতে হবে বলে ইয়ু লানের পক্ষে এটা এক কঠিন ব্যাপার । ইয়ু লান এই চরিত্র সৃষ্টির জন্য ১৯৬১ সালে মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী পুরস্কার পেয়েছেন ।

    অভিনেত্রী ইয়ু লানের পক্ষে ছায়াছবি ' অগ্নিপরীক্ষায়' চিয়াং চিয়ের চরিত্র সৃষ্টি তার অভিনয় জীবনের শিখর ।উপন্যাস ' লাল পাথরের পাহাড়ের ' ভিত্তিতে রচিত এই চলচ্চিত্রে ইয়ু লান চিয়ান চিয়ে নামে এক বিপ্লবীর চরিত্র সৃষ্টি করেছেন । এই চলচ্চিত্রের কাহিনী হলো ১৯৪৮ সালে দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ছুং ছিং শহরের মুক্তির আগে একজন বিশ্বাসঘাতক শত্রুর চাপে কমিউনিষ্ট পার্টি সংগঠনের গোপন তথ্য ফাস করে । ফলে চিয়ান চিয়ে ও সুই ইউন ফোং প্রমুখ পার্টি নেতা গ্রেপ্তার হন । তারা জেলখানায় শত্রুর প্রলোভন ও অত্যাচারের সামনে নতিস্বীকার করেন নি । শেষে নয়াচীন প্রতিষ্ঠার প্রাক্কালে শত্রুর হাতে নিহত হন ।অনেক বছর ধরে এই চলচ্চিত্রের চিয়ান চিয়ে ও সুই ইউয়োন ফোং প্রমুখ বিপ্লবীর বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম চীনা দর্শকদের অনুপ্রাণিত করে এসেছে । ইয়ু লানের সৃষ্ট এই চরিত্র লেখকের কাল্পনিক চরিত্র নয় , তিনি চীনের বিপ্লবী সংগ্রামের একজন বীর ছিলেন , সঙ্গে সঙ্গে তিনি একজন স্ত্রী ও মা । তিনি নিজের স্বামী ও ছেলেকে ভালোবাসেন , কিন্তু দেশের জন্য তিনি নিজের পারিবারিক স্বার্থ বিসর্জন করেছেন । এই চলচ্চিত্রে ইয়ু লানের নীল রংয়ের ছি পাও পরে গলায় লাল রংয়ের রুমাল দিয়ে স্থির গতিতে ফাঁসির মাঠে যাওয়ার দৃশ্য এখনও দর্শকদের মনে আছে ।

    এই চরিত্র সৃষ্টির জন্য ইয়ু লান একাধিকবার ছুংছিং গিয়েছেন । তিনি উপন্যাসের লেখক ও চিয়ান চিয়ের পরিচিত ব্যক্তিদের সাক্ষাত্কার নিয়েছেন । তিনি বলেছেন , একটি চরিত্র সৃষ্টির আগে সম্ভব হলে আমি সেই চরিত্রের জীবন সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি । শুধু নিজের অনুভুতির উপর নির্ভর করে অভিনয় করা চলবে না । চরিত্রের জীবন , তার পরিচিত ব্যক্তিদের মন্তব্য ও তার জীবনের পরিবেশ জানতে হবে । ১৯৬০ সালে ইয়ু লান চীনের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের নির্বাচিত ২২জন সেরা চিত্র- তারকার আখ্যা পান । দুঃখের বিষয় হলো গত শতাব্দীর ষাটের ও সত্তরের দশকে চীনে তথাকথিত সাংস্কৃতিক বিপ্লবের দরুন ইয়ু লান অনেক শিল্পীর মতো নিজের প্রিয় অভিনয়ের কাজ করতে পারেন নি । ১৯৮১ সালে চীনের চলচ্চিত্র ব্রত পুনরুদ্ধারের সময় ইয়ু লানের বয়স ৬০ হলো । যদিও সরকারের নির্ধারিত অবসর নেয়ার বয়স হয়েছে , কিন্তু ইয়ু লান বিশ্রাম নেন নি । তিনি শিশু চলচ্চিত্র তৈরীর কাজে নিয়োজিত হন । তিনি চীনের একমাত্র শিশু চলচ্চিত্র স্টুডিওর প্রধান হিসেবে ছেলেমেয়েদের জন্য অনেক শিশু তোষ কাহিনী ছবি ও প্রামান্য ছবি তৈরী করেছেন । আজ পর্যন্ত এই স্টুডিও থেকে মোট ৫০টি শিশু তোষ ছায়াছবি ও ৩৫টি প্রামান্য ছবি তৈরী হয়েছে । দু বছর আগে স্বাস্থ্যগত কারণে ইয়ু লান শিশু চলচ্চিত্র স্টুডিওয়ের প্রধানের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন , তবু তিনি এখনও এই স্টুডিওর উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন । তার বাসায় ক্ষুদে দর্শকদের পাঠানো প্রচুর চিঠি ও নববর্ষের অভিনন্দন কার্ড আছে। দেশের বিভিন্ন জায়গার ছোট বন্ধুদের সঙ্গে আলাপ ও চিঠিপত্র বিনিময় করা ইয়ু লানের বার্ধক্য জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ।