v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-01-31 18:57:45    
আনন্দের সংগে বসন্ত উত্সব স্বাগত জানাই

cri
    ১৯ জানুয়ারী ছিল চীনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্যবাহী উত্সব । রেওয়াজ অনুসারে চীনারা বসন্ত উত্সবকে " নিয়ান উদযাপন " বলে গণ্য করে থাকেন । সসন্ত উত্সবের আগে চীনের শহর আর গ্রামাঞ্চল এক ব্যস্ততার পরিবেশ দেখা দেয় । সবাই বসন্ত উত্সবের জন্যে নানা ধরণের প্রস্তুতি নেন । এখন আসুন আমরা এক সাথে বসন্ত উত্সবকে স্বাগত জানানোর পরিবেশ অনুভব করি । আজকের আসর উপস্থাপন করছি আমি শি চিং উ ।

    আসুন , প্রথমে আমরা গ্রামাঞ্চলে যাই । বসন্ত উত্সবের আরো কিছু দিন বাকী থাকলেও চীনের বিভিন্ন এলাকার গ্রামগুলোতে উত্সবের নিবিড় পরিবেশ বিরাজ করছে । এক বছর ধরে ব্যস্ত থাকার পর কৃষির এই অবসর সময়ে কৃষকরা আনন্দের সংগে উত্সবের জন্যে প্রস্তুতি নিচ্ছেন ।

    পশ্চিম চীনের শেনসি প্রদেশের রাজধানী সি আনের নিকটবর্তী তুং হান নামক এক গ্রামে ১০-১২ জন কৃষক গ্রামটির কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত একটি খালি জায়গায় অনুষ্ঠানের রিহার্সেল করছেন । তাদের মধ্যে কেউ কেউ ঢাল ঢোল বাজাচ্ছেন , কেউ কেউ সোও না বাজাচ্ছেন , আবার কেউ কেউ নাচ করছেন । সেখানে এক সরগরম পরিবেশ বিরাজ করছে । বসন্ত উত্সব উদযাপনের সময়ে এই গ্রামের কৃষকরা নিজেদের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উত্সব পালন করবেন ।

    গ্রামবাসীরা আগেভাগে বসন্ত উত্সবের জন্যে তাদের প্রস্তুতি শুরু করেছেন । কেউ কেউ দরজা , জানালা আর দেওয়ালে চুনকাম করছেন । কেউ কেউ বাজার থেকে ছবি আর শ্লোক কিনে নেন । এসব থেকে ভবিষ্যত জীবনের প্রতি তাদের কল্যান আর সমৃদ্ধির আশা-আকাংক্ষা প্রতিফলিত হয়েছে ।

    বৃদ্ধ মা হুং চির বয়স সত্তরের কাছাকাছি । তিনি আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন , এই বছর তিনি ঐতিহ্যবাহী চালচলন অনুযায়ী বসন্ত উত্সব পালন করবেন । তিনি বলেছেন ,

    বসন্ত উত্সবের আগের দিন সব রকম প্রস্তুতি শেষ করতে হবে । বাড়িঘর পরিষ্কার করে রাখতে হবে এবং মাংস, ডিম আর শাকসব্জি কিনে রাখতে হবে । নব বর্ষের সময়ে একটানা কয়েক দিন ধরে রুটি তৈরি করতে হবে না ।

    মিস্টার মা উত্সবের সময়ে সমস্ত মাংস আর শাকসব্জি সবই আগেভাগে তৈরি করে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যাতে করে ছুটিতে তারা স্বচ্ছদে উত্সব উপভোগ করতে পারেন । মিস্টার মার পরিবারে ৩ প্রজন্মের ৬/৭ জন সদস্য রয়েছেন। বসন্তের আগের দিনে রেওয়াজ অনুসারে দাম্প্লিং খেতে হবে । ছেলেমেয়েরা উত্সবের আগের দিনের সেই রাতের জন্যে অপেক্ষা করছে । কারণ তারা বড়দের কাছ থেকে উত্সবের সেলামী পাবে । মধ্য রাতের ১২টার দিকে তারা আতস বাজি পোড়াতে পারবে ।

    এই সব চিরাচরিত চালচলন পালন করে গ্রামবাসীরা একের পর এক বসন্ত উত্সব উদযাপন করে আসছেন । তবে সামাজিক বিকাশ আর জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের সংগে সংগে গত ২/৩ বছরে শেন সির গ্রামাঞলের উত্সব পালনের ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন ঘটেছে । অতীতে উত্সবের পর ১৫ দিনের মধ্যে লোকেরা বেশি দূরে যেতে পারতেন না । কিন্তু এখন অনেক কৃষক উত্সবের পর কয়েক দিনের মধ্যে কাজ করার জন্যে শহরে যান । আরো অনেক কৃষক নিজের বাবামাকে শহরে নিয়ে গিয়ে উত্সব পালন করেন ।

    চীনের কৃষকরা কেমন করে বসন্ত উত্সবকে স্বাগত জানান , এই সম্বন্ধে আপনারা কিছু শুনলেন । এখন আসুন , আমরা শহরে গিয়ে একটু দেখি । এখন চীনের বিভিন্ন শহরেও উত্সব-প্রাক্কালীন আনন্দদায়ক পরিবেশ বিরাজ করছে । দোকানপাটে আর সুপারমার্কেটে অনেক লোক উত্সবের জন্যে কেনাকাটা করতে ব্যস্ত । বিভিন্ন রেস্তোরাঁর ব্যস্ততাঅনেক বেড়ে গেছে । বসন্ত উত্সবের আগের দিনের সন্ধ্যাবেলার খাবারের অর্ডার নেয়ার টেলিফোন একটির পর একটি বাজছে । জনসাধারণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের সংগে সংগে বহু শহরবাসী বিভিন্ন হোটেলে বা রেস্তোরাঁয় খেতে পছন্দ করেন । পূর্ব চীনের উপকূলীয় শহর থিয়ান চিনের কথা ধরা যাক । সেখানকার বিখ্যাত হোটেল আর রেস্তোরাঁয় বসন্ত উত্সবের ঠিক আগের দিনের ৫০ শতাংশের খাবারের অডার নেয়া হয়েছে ।

    খাওয়া-দাওয়া ছাড়াও বসন্ত উত্সবের সময় অনেক শহরবাসী অন্যান্য পরিকল্পনাও হাতে নিয়েছে । থিয়ান চিনের অধিবাসী মিসেস কাও সিও ইয়ু সপরিবার ভ্রমণের বিমান টিকেট কেটেছেন । তিনি তার পরিবার আর কয়েকজন বন্ধুর সংগে মিলে হংকংয়ে গিয়ে একটি বৈচিত্র্যময় উত্সব পালন করবেন ।

    বসন্ত উত্সবের সময়ে এক পরিবারের তিনজন সদস্য মিলে বাইরে ভ্রমণ করা একটি আনন্দদায়ক ব্যাপার । অন্য সময় আমরা সবাই ব্যস্ত । তাই একসাথে বাইরে ভ্রমণের সুযোগ খুবই কম । পরিবারের সবাই মিলে আমোদ- প্রমোদ করলে আমাদের মন হাল্কা হবে । বিশেষ করে এবার আমরা আমাদের সন্তানকে ভ্রমণে নিয়ে যাবো । ভ্রমণের মাধ্যমে আমার বাচ্চা অনেক জানতে পারবে এবং বাইরের পৃথিবী সম্বন্ধে তার জ্ঞানও বাড়বে ।

    দক্ষিণ চীনের চিয়াং সি প্রদেশের চিউ চিয়াংয়ের শহর আর গ্রামাঞ্চলের অধিবাসীদের জন্যে এবারকার বসন্ত উত্সব একটু অসুবিধাজনক হতে পারে । কেন না , কয়েক মাস আগে সেখানে বেশ বড় গোছের ভূকম্প হয়েছে । তবে আমাদের সংবাদদাতা সম্প্রতি সেখানে গিয়েছেন । তিনি দেখতে পেলেন , সেখানকার অবস্থা কল্পনাতীত ভালো । চিউ চিয়াং শহরের অধীনস্থ ইয়াং ছিয়াও নামে একটি গ্রাম এবারকার ভূকম্পে গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল । সারা গ্রামের ৩ শতাধিক পরিবারের অর্ধেক বাড়িঘর ভূকম্পে বিনষ্ট হয়েছে । এখনো নতুন বাড়িঘর নির্মিত হয় নি বলে অনেক গ্রামবাসী অস্থায়ীভাবে নির্মিত তাঁবুগুলোতে বসবাস করছেন । একজন স্থানীয় কর্মকর্তা আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন , সরকারের প্রচেষ্টায় তারা জোরেসোরে গ্রামবাসীদের জন্যে নতুন বাড়িঘর নির্মাণ করছেন যাতে দুর্গত কৃষকরা অবিলম্বে নতুন বাড়িতে উঠতে পারেন।

    বর্তমানে একেকটি গাঢ নীল রংয়ের তুলো-গাদানো তাঁবু হচ্ছে দুর্গত গ্রামবাসীদের অস্থায়ী বাসা । আমাদের সংবাদদাতা ওয়াং চিয়া ছিং নামক একজন কৃষকের তাঁবুতে গিয়েছেন । তুলোর পর্দা খুলতেই ভেতর থেকে গরম আবহাওয়া ভেসে আসছে । এখন কণকণে শীত হলেও সূর্য্যের আলোতে তাঁবুতে বেশ গরম লাগছে ।

    স্থানীয় মহকুমা সরকারের একজন কর্মকর্তা বলেছেন , বসন্ত উত্সবের প্রাক্কালে সরকার দুর্গত গ্রামবাসীদের কাছে তুলোর লেপ আর কাপড় এবং চাল প্রভৃতি নিত্য- প্রয়োনীয় জিনিষপত্র পাঠিয়েছে যাতে প্রত্যেক কৃষক আনন্দের সংগে এক শান্তিময় বসন্ত উত্সব পালন করতে পারেন ।