v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-01-26 18:15:21    
প্রাচীন নগর তালি

cri
    আজকের এই আসরে আপনাদের চীনের দক্ষিণাংশের ইয়ুন্নান প্রদেশে বেড়াতে নিয়ে যাচ্ছি। চীনের ইয়ুন্নান প্রদেশ এমন একটি প্রদেশ যেখানে চীনের অনেক সংখ্যালঘু জাতি বসবাস করে। তালি নামে একটি প্রাচীন নগর ইয়ুন্নান প্রদেশে অবস্থিত। এই প্রাচীন নগরের ইতিহাস ৬ শতাধিক বছরের। বর্তামনে এই নগরের বিন্যাস প্রায় প্রাচীনকালের মতো অবিকল সুসংরক্ষিত রয়েছে। নগরের অনেক জায়গায় প্রাচীনকালের স্থাপত্য দেখা যায়। এখানকার অধিবাসীরাও অতীতের রীতিনীতি মেনে চলে থাকেন। অবশ্যই সময়ের পালাবদলে এই প্রাচীন নগরে নতুনত্বও দেখা গেছে। পুরাতন আর আধুনিক এ দুটো দ্বন্দ্বময় ধারণা এই নগরে মিশ্রিত হয়।

    ইয়ুন্নান প্রদেশের পশ্চিমাংশে অবস্থিত তালি প্রাচীন নগরের আয়তন প্রায় ৬ বর্গ কিলোমিটার। প্রাচীন নগরের পাশের ছান পাহাড়ের উপর থেকে নীচে তাকালে তালি নগরের সড়ক সুবিন্যস্ত দাবা খেলার ছকের মতো নজরে পড়ে ।একটি বড় সড়ক প্রাচীন নগরের দক্ষিণ দিক থেকে উত্তর দিকে বিস্কৃত হয়।

    প্রাচীরের উঁচু আর মোটা দ্বার পার হয়ে প্রাচীন নগরে প্রবেশ করলে লোকেরা লক্ষ্য করতে পারেন যে আধুনিক শহরগুলোর তুলনায় এই নগর একেবারেই ভিন্ন। রাস্তার পাশে একটি নদীতে সচ্ছ পানি সামনের দিকে প্রবাহিত । নগরের ছোট-বড় রাস্তা কালো ইঁটের বাঁধানো। সারি সারি সব বাড়ীঘড়গুলোতে প্রাচীনকালের শৈলী।

    চীনের অন্যতম সংখ্যালঘু জাতি---বাই জাতি তালিতে বসবাস করে। বাই জাতির বাড়ীঘর দেখতে অনেকটা হ্যান জাতির বাড়ীঘরের মতো।তবে তাদের বাড়ীঘর বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। গাইড লি ই সংবাদদাতাকে ব্যাখ্যা করে বললেন,

    এখানে প্রত্যেক পারিবারের উদ্যানে একটি প্রধান ঘর, প্রধান ধরের দুপাশে দুটোশাখা ঘর, এবং প্রধান ঘরের সামনে একটি দেয়াল আছে। সন্ধ্যার সময় সূর্যের আলো এই দেয়ালে পড়ে। তারপর এই আলোর প্রতিফলন আবার এই উদ্যানে পড়ে। সুতরাং গোটা উদ্যানে দিনেরবেলায় সব সময় উজ্জ্বল থাকে। এখারকার মানুষ এই দেয়ালকে আয়না দেয়াল ডাকে।

    এই প্রাচীন নগরের অধিবাসীদের জীবনও বৈচিত্রময়। প্রায় প্রত্যেক পরিবারের ফল আর ঘাস চাষ করার অভ্যাসআছে। অনেক পরিবারে ছোট-বড় ফলের বাগানও আছে। লাল ফল আর সবুজ পাতা দেয়ালের বাইরে উকি মেরে এক একটি ফলের গলিতে পরিণত হয়েছে। ফলের সুগন্ধ সারা নগরের আকাশে ভেসে যায়।

    বসন্ত আর শরত্কালে ফল আর গাছের পাতাগুলো নদীতে পড়ে পানির সঙ্গে ভেসে যায়। কী সন্দর দৃশ্য।

    তালি বাসীদের জীবনে ঐতিহ্যিক চিহ্ন সব সময় দেখা যায়। 'তিন রাউন্ড চা' আস্বাদন করা প্রাচীন নগরের মানুষের অপরিবর্তিত জীবন যাপন পদ্ধতি।কিংবতন্দীতে বলা হয়েছে , প্রাচীনকালে তালির রাজা বিশেষ অতিথিদের স্বাগত জানানোর সময় এই চা পরিবেশন করা হতো। পরে তা জনসাধারণের মধ্যে প্রচলিত হয় এবং খুব জনপ্রিয় হয়ে গেছে। ' তিন রাউন্ড চা' বলতে 'তেতো চা', মিষ্টি চা', এবং ' পাঁচমিশালী চা' বুঝায়। প্রথম রাউন্ড চাকে 'তেতো চা' অথবা ' সেকা চা' বা ' বাইটো চা' বলা হয়। দ্বিতীয় রাউন্ডের চাকে 'মিষ্টি চা' বলা হয়। চায়ে আদা, মধু, বাদাম প্রভৃতি উপাদান দেওয়া হয়। তৃতীয় রাউন্ডেরচাকে 'পাঁচমিশালী চা' বলা হয়। এই চায়ে পেঁয়াজ ইত্যাদি গরম মসলার উপাদান দেওয়া হয়। তেতো, মিষ্টি আর পাঁচমিশালী চা হল এ ধরের চায়ের বৈশিষ্ট্য।

    একটি চা রেস্তোঁরার একজন কর্মচারী মিস হুওয়াং সংবাদদাতাকে বললেন, 'তিন রাউন্ড চায়ে' শুধু যে সুদীর্ঘকালের ইতিহাস আছে তাই নয় গভীর দর্শনও নিহিত।তিনি বললেন,

 'তিন রাউন্ড চায়ে' আসলে কিছুটা তাত্পর্য রয়েছে। এই চা থেকে বুঝা যায় যে, মানুষকে কষ্ট করতে হবে। কষ্ট না করলে কেষ্ট মেলে না। তার মানে সুখী জীবন দুষ্প্রাপ্য । সুতরাং সুখী জীবনকে সমুন্নত রাখা উচিত। পাচমিশালী চা মানে, জীবনে মানুষকে মাঝে মাঝে সারসংকলন করতে হবে। মাঝে মাঝে নিজের ভাল আর মন্দের দিকে তাকাতে হবে।

    চা আস্বাদন ছাড়া, এখানকার শতাধিক ববছরের ইতিহাসসম্পন্ন খাবার আস্বাদন না করলে চলবে না। তালি প্রাচীন নগরে লোকেরা এখানকার প্রকৃত খাবার আস্বাদন করতে পারেন। যেমন খাওলোসেন নামে একটি খাবার খুব বিখ্যাত। এই খাবার তৈরীর প্রণালী এই যে, দুধে রাসায়নিক বিক্রিয়া হওয়ার পর আবার গরম করা হয়। তারপর টাটকা দুধের সঙ্গে মিশে যায়। অবশেষে বাঁশের তৈরী মাদুরে শুকানো হয়। ডালিতে আরও অনেক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন খাবার আছে। একটি খাবার বিক্রির স্টলের সামনে পেইচিং থেকে আসা একজন পযর্টক এই স্টলের খাবার আস্বাদন করছেন। তিনি সংবাদদাতাকে বললেন,

    এখানকার খাবার খুব সুস্বাদু। তা ছাড়া এখানে যে খাবার বিক্রি করা হয় তা স্থানীয় বৈশিষ্টসম্পন্ন। বতর্মানে আমি ওজন কমাতে চেষ্টা করছি। কিন্তু এত বেশী সুস্বাদু খাবার দেখে আমার রুচি আপনাআপনি বেড়ে যায়। এখান থেকে পেইচিং ফিরে যাওয়ার পর আমি আবার ওজন কমাতে চেষ্টা করবো।

    তালি নগরের এ সব বৈশিষ্ট্য দেশি-বিদেশী পযর্টকদের আকর্ষন করছে। প্রত্যেক দিন এই নগরের ছোট-বড় হোটেলে আর ছোট-বড় রেস্তোঁরায় বিশ্বের বিভিন্ন জায়গার পযর্টক দেখা যায়। অনেক বিদেশী এমনকি এখানে দীর্ঘসময়ের জন্যে বসবাস করেন। তালিতে 'বিদেশী সড়ক' নামে একটি রাস্তা আছে। এই সড়কের দু'পাশে বা এবং কফি বার মালিক বিদেশী। যখন আমরা এই সড়কে হাঁটাহাঁটি করি তখন এই দৃশ্য আমাদের নজরে পড়বে। তা হল অনেক বিদেশী লোক দোকানপাটের সামনের চেয়ারে শুয়ে বই পড়ছেন অথবা চা বা কফি খাচ্ছেন। ক্যানাডার একজন পযর্টক লাওরেনটার সংবাদদাতাকে বললেন, এখানে কিছু দিন থাকলে স্বদেশে আরও যেতে যান না। তিনি বললেন,

    আমার মনে যে গভীর ছাপ রেখেছে তা হল এখানকার স্থানীয় ভাষা। এই ভাষা বিশেষ ধরনের। আমি কিছু শিখেছি। কারণ এখানে স্থানীয় ভাষা শিখলে তালির সংস্কৃতি আরও ভালভাবে বুঝতে পারি। তালি আর ইয়ুন্নানের মানুষ খুব অতিথিপারায়ন। তালির দৃশ্যও খুব সুন্দর।ইয়ুন্নানে ভ্রমণ করা খুব সুবিধাজনক। এখনকার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করা বেশী অসুবিধা নেই।