ভারতে পানি অভাব একটি গুরুতর সমস্যা। বছরের অধ্যেক সময়ে তার তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডের উপরে। গরম আবহাওয়া এবং বৃষ্টি অভাবের কারণে ভারতীয় লোকেরা পানি সাশ্রয়ের চেতনা গড়ে তুলেছেন। তারা তাদের দৃষ্টি অতি সাধারণ এবং সহজে পাওয়া বৃষ্টির উপরে নিবদ্ধ করেছে। ভারতে বৃষ্টি সংগ্রহের ব্যবস্থা এবং পানি-পরিবহনের ব্যবস্থা নানা ধরণের। তা নিয়ে ভারতের আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্যময় সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে।
অনেক ভারতীয় মানুষ বাড়ির ছাদ থেকে বৃষ্টি সংগ্রহ করে পাইপ দিয়ে বাগানের পানির ডোবাতে রাখা হয়। এক বর্ষাকালে বৃষ্টি সংগ্রহের পর সারা বছরের পানি ব্যবহারের চাহিদা মেটানো যায়। এখনো ভারতের অনেক গ্রামাঞ্চলে বাড়ি নির্মানকালে বাগানে ইট দিয়ে পানি রাখার একটি ডোবাও নির্মিত হয়। ডোবার ভেতরে অনেক পাথর ও বালি রাখা হয়। এগুলো দিয়ে সংক্ষিপ্ত পরিস্রাবনের পর পানি সরাসরি খাওয়া যায়। ছাদ অবনত বলে বৃষ্টি দ্রুত নেমে এসে পাইপের মাধ্যমে পানি রাখার ডোবাতে ঢুকে। ডোবার মুখ ভূমির চেয়ে উচ্চু যাতে পানি দুষিত না হয়।
নয়াদিল্লী ও অন্য কিছু মহানগরে ফ্লাইওভারগুলোও পানি সাশ্রয় ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করছে। স্থানীয় সরকার অনেক ফ্লাইওভারগুলোর নীচে বড় বড় পানির ডোবা নির্মান করেছে। বর্ষকালে বৃষ্টি সেগুলোর দু'পাশ দিয়ে পানি নিস্কাশন নালা দিয়ে ডোবায় পড়ে। তা দিয়ে শহরের ঘাসভূমিতে পানির চাহিদা মেটানো যায়। ভারতের বড় বড় বিমানবন্দরে সেমেন্টের মেঝে থেকেও বৃষ্টি সংগ্রহ করা হয়। কিছু বিমানবন্দরে খাল নির্মান করা হয়, তা দিয়ে বৃষ্টি নিকটের পানির ডোবায় ঢুকে পড়ে।
বৃষ্টি সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা আছে। প্রথমত তাতে অঞ্চলের সীমাবদ্ধতা নেই। কাজেই ভারতের অনেক জায়গায় বৃষ্টি সংগ্রহের নানা ব্যবস্থা আছে। যেমন দক্ষিণাঞ্চলে বাঁশি দিয়ে বৃষ্টি সংগ্রহের খাল তৈরী করা হয়। দ্বিতীয়ত, খরচ কম। পানি রাখার ডোবা বড় হতে পারে, ছোটও হতে পারে। তা প্রধানত পাথর, সেমেন্ট ও বালি দিয়ে তৈরী হয়। তৃতীয়ত, তা পরিবেশের উপর বড় গোছের প্রভাব ফেলে না।
ভারতের বিভিন্ন রকমের পানি সাশ্রয় ব্যবস্থা নির্মানের কাজে স্থানীয় পানি শক্তিসম্পদ পরিপূর্ণভাবে ব্যবহার করা হয়। উত্তরাঞ্চলের মরুভূমিতে একজন অবসরপ্রাপ্ত ইজিনিয়ার নাফের একরকম "কৃত্রিম হিমবাহ" আবিষ্কার করেছেন। তিনি প্রথমে একটি খাল নির্মান করেন, তারপর একটি ছোট ধাতুর পাইপের মাধ্যমে খালের পানি টেনে নিয়ে নিকটের একটি পাহাড়ের ছায়াময় এক নিম্ন ভূমিতে জমে রাখা হয়। ধাতু পাইপে পানি বরফে পরিণত হয়। বেশী পানি পাইপের আসার সঙ্গে সঙ্গে পানি বরফকে পাইপের বাইরে ঠেলে দিয়ে নিম্ন ভূমিতে হিমবাহে পরিণত হয়। হিমবাহ হলো মরুভূমিতের একমাত্র পানিসম্পদ, তা দিয়ে গ্রামবাসীরা বষন্তকালে চাষে পানি ব্যবহার করতে পারেন। এই বরফী পানি খুব শুদ্ধ। স্থানীয় মানুষরাও তা খেতে পারেন। ১৯৯৬ সালে তিনি ৪টি এমন কৃত্রিম হিমবাহ তৈরী করেছেন।
বৃষ্টি সংগ্রহ হলো ভারতের অনেক স্থানীয় সরকারের চিরাচরিত নীতি। কিছু দরিদ্র অঞ্চলে স্থানীয় সরকার নানা উপায়ে টাকা সংগ্রহ করে পানি সঞ্চয় ব্যবস্থা নির্মান করেছে। পানি সাশ্রয়ের জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার জল-সম্পদ মন্ত্রণালয় গঠন করে দেশের পানি সম্পদের একীভূত ব্যবস্থাপনা করে। ভারতে পানি সাশ্রয় সংক্রান্ত বেসরকারি ওয়েবসাইটও আছে, তাতে বিভিন্ন জায়গার বৃষ্টি সংগ্রহের অভিজ্ঞতা খুঁজে পাওয়া যায়।
|