v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-01-25 15:50:57    
বাংলাদেশের লেখিকা মনিকা আলীর লেখা উপন্যাস ' ইটের গলির ' চীনা সংস্করণ প্রকাশিত

cri
    বাংলাভাষী সাহিত্যিক , বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলামের রচনাগুলো বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত হয়ে চীনসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের পাঠকদের সমাদর পেয়েছে । কিন্তু চীনা পাঠকদের বাংলাভাষার আধুনিককালের উপন্যাসগুলো পড়ার সুযোগ কম । তারা শুধু বাংলাদেশের একটি আধুনিককালের উপন্যাস পড়েছেন , সেটি হলো ১৯৯৮ সালে সাংহাই বিদেশী ভাষা প্রকাশনায়ের প্রকাশিত বাংলাদেশের লেখিকা দিলারা হাসেমের লেখা ' ঘর মন জানালা ' ।

    আনন্দের ব্যাপার হলো ২০০৪ সালে এই অবস্থার কিছু পরিবর্তন হয়েছে। বৃটেনে প্রবাসী বাংলাদেশী লেখিকা মনিকা আলীর লেখা ' ইটের গলি ' নামে একটি উপন্যাস ২০০৪ সালে চীনা ভাষায় অনুদিত হয়ে চীনের জাতিয় পর্যায়ের প্রকাশনালয়-- চীনের গণ সাহিত্য প্রকাশনালয় প্রকাশ করেছে । এই বই ২০০৩ সালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদেশি উপন্যাস নির্বাচিত হয়েছে । এই ঘটনা চীনা পাঠক ও চীনের বিদেশী সাহিত্য গবেষনা কর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষন করেছে ।

    নতুন শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ বিদেশী উপন্যাস যাচাই কর্মসূচী ২০০১ সালে শুরু হয় । চীনের গণ সাহিত্য প্রকাশনালয় ও চীনের বিদেশী সাহিত্য সমিতির যৌথ উদ্যোগে এই কর্মসুচীর আয়োজন করা হয়েছে । চীনের গণ সাহিত্য প্রকাশনালয়ের বিদেশী সাহিত্য বিভাগের প্রধান লিউ খাই হুয়া বলেছেন , প্রতি বছর নির্বাচিত বিদেশি উপন্যাসের সংখ্যা আটটির বেশী হবে না । লেখককে প্রমানপত্র ও পুরষ্কার কাপ দেয়া হয় । নির্বাচিত উপন্যাসগুলো একবিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ বিদেশী উপন্যাস নামে চীনে প্রকাশিত হয় । ২০০৩ সালে ছয়টি বিদেশী উপন্যাস নির্বাচিত হয়েছে । ' ইটের গলি ' এই ছয়টি উপন্যাসের অন্যতম । মনিকা আলী পুরস্কার বিজয়ী ছয়জন লেখকের মধ্যে একমাত্র নারী ।

    এই কর্মসূচীর যাচাই কমিটি বাংলাদেশের এই উপন্যাসের উচ্চ মূল্যায়ন করেছে । যাচাই কমিটির মতে লেখিকা মনিকা আলী জীবনের অসংখ্য ছোট ছোট গল্প বর্ণনার মাধ্যমে জীবন্তভাবে প্রধান নায়িকা বৃটেনপ্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিক নাজনীনের চরিত্র তুলে ধরেছেন এবং এক ধরনের নতুন সংস্কৃতির প্রতি তার অনুভুতি ব্যাখ্যা করেছেন ।

    মিঃ সু ফু চুন ' ইটের গলি ' উপন্যাসটির সম্পাদক । তিনি এই উপন্যাসের সারমর্ম ব্যাখ্যা করে বলেছেন , ' ইটের গলি ' উপন্যাসে প্রধানতঃ বৃটেন-প্রবাসী বাংলাদেশীদের জীবনযাত্রা ও তাদের মানসিক অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে । উপন্যাসের নায়ক চানু আহমেদ বাংলাদেশের একজন সাধারণ নাগরিক । তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক , উন্নততর জীবনের সন্ধানে তিনি বৃটেনে যান । তিনি আশা করেন , তিনি বৃটেনের মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে এবং আরামে জীবনযাপন করতে পারেন । কিন্তু বর্ণবৈষম্য ও তার ব্যক্তিগত দক্ষতার অভাবে চানু বৃটেনের প্রধান সমাজে প্রবেশ করতে পারেন না । তিনি বৃটেনে সরকারী অফিসের কেরানীর কাজ করেছেন , খাবার ঘরের বাটিগুলো পরিষ্কার করার কাজ করেছেন এবং শেষে ট্যাক্সি ড্রাইভারের কাজ করেছেন । দীর্ঘদিন পর তিনি হতাশ হয়েছেন , তার মনের সব স্বপ্ন ভেঙ্গে গেলো ।

    চানু বৃটেনে থেকেও বাংলাদেশী ঐতিহ্যিক রীতি পুরোপুরি বজায় রাজার চেষ্টা করেন । তাই তার কথাবার্তা , খাওয়া-দাওয়া ও চালচলণের কোনো পরিবর্তন হয় নি । তিনি তার স্ত্রী আর মেয়েকেও তার মতো জীবনযাপনের পরামর্শ দিয়েছেন । যে সব বাঙ্গালী বৃটেনে যাওয়ার পর আগের অভ্যাসগুলো ছেড়ে দিয়ে নতুন স্টাইলের জীবন যাপন করতে শুরু করেন , চানু তার অধঃপতন ও মর্যাদাচ্যুতি ঘটেছে বলে মনে করেন । এই জন্য স্ত্রী ও মেয়ের সঙ্গে চানুর প্রায়ই সংখাত হয় । তিনি বাঙ্গালীদের মূল্যবোধে অটল থেকে বৃটেনের সংস্কৃতি সম্বন্ধে পুরোপুরি নেতিবাচক মনোভাব পোষন করেন । তাই চানু স্থানীয় নাগরিকদের সঙ্গে সুষমভাবে বসবাস করতে পারেন না । তিনি মানসিক কষ্ট সহ্য করতে না পেরে দেশে ফিরে যেতে বাধ্য হন । চানু প্রবাসী বাঙ্গালীদের একজন ব্যর্থ প্রতিনিধি ।

    এই উপন্যাসের আরেকজন প্রধান চরিত্র চানুর স্ত্রী নাজনীনের অবস্থা একেবারে ভিন্ন । ঐতিহ্যিক রীতিনীতি ও মূল্যবোধের সঙ্গে বার বার সংঘাতের মধ্য দিয়ে নাজনীন ধীরে ধীরে নতুন মূল্যবোধ ও সংস্কৃতি গ্রহণ করেছেন । তিনি অন্যান্য বাঙ্গালী মেয়ের মতো বাবার কথা অনুসারে চানুকে বিয়ে করলেন । তার বাবা মনে করেন , ১৮ বছর বয়সের মেয়ে বিদেশে কর্মরত ৪০ বছর বয়সী চানুকে বিয়ে করা সৌভাগ্যের ব্যাপার । স্বামীর সঙ্গে লন্ডনে গিয়ে নাজনীন ধীরে ধীরে নতুন পরিবেশে অভ্যস্ত হন । তিনি স্বামীর অপরিবর্তিত চালচলণ ও রীতিনীতি পছন্দ করেন না , তিনি স্বামী-স্ত্রীর অসুখী দাম্পত্য জীবন পছন্দ করেন না । তিনি সত্যিকার প্রেম চান , তাই নাজনীন বাংলাদেশের ঐতিহ্যিক নৈতিকতা উপেক্ষা করে প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করেন । স্বামী দেশে ফিরে যাওয়ার পর নাজনীন দুটি সন্তানসহ বৃটেনে থাকার জেদ ধরেন । একটি সংঘাতের পর তার প্রেমিক বিদায় না নিয়ে চলে গেলো । তবু নাজনীন হাল ছাড়েন নি । তিনি বাড়ী থেকে বেরিয়ে কাজ করতে শুরু করেন , তিনি দুটি সন্তানকে নিজ হাতে মানুষ করার চেষ্টা করেছেন । লেখিকা নাজনীনের উপর বাংলাদেশের নারী সমাজের জাগরণের আশা রাখেন।

    বেশীর ভাগ প্রবাসী বাঙ্গালীর মতো নাজনীনেরও সবসময় দেশের কথা মনে পড়ে । তার মা কষ্টকর জীবন সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করে নিজের জীবন শেষ করেছিলেন । তার ছোট বোন হাসিনা জীবিকার জন্য পড়াশুনা বন্ধ করে একটি ব্যক্তিগত শিল্পপ্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন । কঠোর পরিশ্রম করা সত্ত্বেও তাকে অবমাননাও স্বীকার করতে হয়েছে ।

  ' ইটের গলি ' উপন্যাসটির অনুবাদক , চীনের লানচৌ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসার ফু লুন এই উপন্যাসের বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে বলেছেন , লেখিকা মনিকা আলীর উপন্যাসে নায়িকা নাজনীনের জীবনের অভিজ্ঞতা বর্ণনার কৌশল বৈশিষ্ট্যময় । উপন্যাসের শুরুতে বিস্তারিতভাবে নাজনীনের জন্ম ও তার ছোট বেলার জীবন বর্ণনা করা হয়েছে । তার পর লেখিকা অষ্টাদমী নাজনীন ১৯৮৫ সালে চানুকে বিয়ে করার পর স্বামীর সঙ্গে বৃটেনে গিয়ে প্রবাস জীবন যাপনের বর্ণনা শুরু হয়েছে । মাঝখানের আঠারো বছরের জীবন নাজনিনের স্বপ্ন দেখা দেখা একেকটি ঘটনা বর্ণনার মাধ্যমে লেখিকা পূরণ করেছেন । এই উপন্যাসে বাংলাদেশের প্রবাসী নাগরিকদের জীবন ও তাদের ভাবাবেগ জীবন্তভাবে প্রতিফলিত হয়েছে । এই উপন্যাস চীনের পাঠকদেরও সমাদর পেয়েছে ।