২১ জানুয়ারী বলিভিয়ায় ইন্দিয়ানদের ঐতিহ্য অনুসারে বলিভিয়ার ইতিহাসের প্রথম নির্বাচিত ইন্দিয়ান প্রেসিডেন্ট এভো মোরালেসের জন্যে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয় । নতুন প্রেসিডেন্টের এই প্রদর্শনমূলক শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান টিটিকাকা হ্রদের তীরে অবস্থিত আইমারা সাংস্কৃতিক ধ্বংসাবশেষে অনুষ্ঠিত হয় । মোরালেস সুন্দর জাতীয় পোষাক পরে স্টাফ অব অথোরিটি হাতে নিয়ে সুপ্রাচীন ইন্দিনয়ানদের সাংস্কৃতিক রীতি অনুযায়ী শপথ গ্রহণ করেন । মোরালেস হচ্ছেন বলিভিয়ার বাম রাজনৈতিক পার্টি - সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন অর্জনের নেতা । গত ডিসেম্বার মাসে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি জয়লাভ করেন । মোরালেসের সংক্ষিপ্ত পরিচয় নিম্নরূপ :
মোরালেসের বয়স এখন ৪৬ বছর । তিনি অরুরো প্রদেশের একটি দরিদ্র ইন্দিয়ান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । পারিবারিক অবস্থা তেমন ভালো নয় বলে ছেলেবেলায় তাঁকে কৃষিকাজে তাঁর বাবামাকে সাহায্য করতে হতো ।
গত শতাব্দির আশির দশকে মোরালেসের পরিবার মধ্য বলিভিয়ার চাপারে প্রদেশে বসবাস করতে শুরু করেন এবং ফলমূল আর শাকসব্জির চাষ করেন । জীবন আর কাজকর্মের দুরুহ অবস্থার মধ্য দিয়ে মোরালেস অনুভব করেছেন কোকার চাষে নিয়োজিত ইন্দিয়াদের মর্মান্তিক দুর্দশা। তিনি ক্রমে জনসাধারণের স্বার্থ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ট্রেড ইউনিয়নের গুরুত্বও উপলব্ধি করেছেন । তিনি নিজের বাস্তব তত্পরতার দিয়ে ট্রেড ইউনিয়নের জন্যে কিছু কাজ করতে সংকল্প নিয়েছেন । ১৯৮৩ সালে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে স্থানীয় কোকা চাষীদের ট্রেড ইউনিয়নে যোগ দেন । অল্প দিনের পর তিনি ট্রেড ইউনিয়নের নেতা হন এবং নিজের রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন ।
২০০২ সালে মোরালেস " সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন অর্জনের " প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে সাধানণ নির্বাচনে অংশ নেন । তবে দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে তিনি ব্যর্থ হন । ২০০৫ সালের ১৮ ডিসেম্বার মোরালেস পদপ্রার্থী হিসেবে মোরালেস আবারো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন এবং শতকরা ৫৩৪.১ ভাগের নিরংকুশ ভোট পেয়ে প্রথম দফা নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন ।
প্রসিডেন্ট নির্বাচনের সময়ে মোরালেস আশাস দিয়েছিলেন, তিনি প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হলে তিনি শান্তিপূর্ণ উপায়ে ভেতর থেকে বলিভিয়ার রূপান্তর সাধন করবেন এবং অধিকাংশ লোকের গুরুত্বপূর্ণ সমম্যা সমাধানের প্রচেষ্টা চালাবেন । তিনি বলেছেন , তিনি যেমন বলিভিয়ার অর্থনৈতিক নমুনার পরিবর্তন করবেন , তেমনি বলিভিয়ার ইতিহাসের পরিবর্তন করবেন । তিনি সমাজে ইন্দিয়ানদের উপর বিদ্বেষ আর ভুল বোঝাবোঝি দূর করবেন এবং সত্যিকার অর্থে সমান আর ন্যায়সংগত শান্তি প্রতিষ্ঠা করবেন ।
বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হবার পর মোরালেস পর পর কিউবা , ভেনেজুইলা , স্পেন , বেলজিয়াম , ফ্রান্স, দক্ষিণ আফ্রিকা, চীন , ব্রাজিল প্রভৃতি দেশ সফর করেছেন এবং বোধ হয় এই বছরের শুরুতে বিশ্বের ব্যস্ততম রাষ্ট্রপ্রধানে পরিণত হয়েছেন । জানুয়ারী মাসের মাঝামাঝি সময়ে চীন সফরকালে চীনের প্রেসিডেন্ট হু চিন থাও , রাষ্ট্রীয় কাউসিলার থাং চিয়া সুয়ান ও বাণিজ্য মন্ত্রী পো সি লাই আলাদা আলাদাভাবে তাঁর সংগে দেখা করেছেন ।
|