১৯৮১ সালে মানব জাতি প্রথম বারের মতো এইডজ ভাইরাস আবিষ্কার করার পরবর্তী বিশাধিক বছরে এইডজ রোগ প্রকোপ দ্রুত আর বড় আকারে বিস্তৃত হয়েছে এবং তা গুরুতরভাবে মানব জাতির স্বাস্থ্য বিপন্ন করছে । এইডজ রোগের কার্যকর চিকিত্সার পদ্ধতি অন্বেষণ করার জন্য বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়েছেন । কিন্তু এ পর্যন্ত এইডজ আরোগ্য করার কোনো উপায় খুঁজে বের করা হয় নি । ২০০৫ সালে সারা বিশ্বে ৩১ লক্ষ লোক এইডজ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ।
এই পরিস্থিতিতে এইডজ প্রতিরোধ বিষয়ক জ্ঞান জনপ্রিয় করা আর জনগণের এইডজ প্রতিরোধের চেতনা বাড়ানো এইডজ সংক্রমণ প্রতিরোধের সবচাইতে কার্যকর পদ্ধতিতে পরিণত হয়েছে । চীনও এই কাজকর্মের ওপর ব্যাপক গুরুত্ব দেয় ।
সম্প্রতি পেইচিংয়ের পশ্চিম রেল স্টেশনে গ্রামীণ শ্রমিকদের মধ্যে এইডজ প্রতিরোধ জ্ঞান প্রচার করার একটি তত্পরতা বহু লোকের মনোযোগ আর অংশগ্রহণ আকর্ষণ করেছে । এই তত্পরতায় ২০ জনেরও বেশি বিশেষজ্ঞ লোকদের নানা রকম প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন । স্বেচ্ছাসেবকরা পথচারীদের তদন্তের প্রশ্নপত্র আর এইডজ প্রতিরোধ জ্ঞান বিষয়ক পত্র বিলি করেছেন । তা ছাড়া রেল স্টেশনের মহাচত্বরে এইডজ প্রতিরোধ জ্ঞান জনপ্রিয় করা সম্পর্কিত প্রায় ১ শোটি আলোকচিত্র আর প্রচারপত্র দেখা দিয়েছে ।
কথাবার্তা থেকে জানা গেছে , গ্রামীণ শ্রমিকটি মধ্য চীনের হোনান প্রদেশের শাংছু শহরের এক কৃষক । চাকরি করার জন্য তিনি পেইচিংয়ে এসেছেন । তিনি বলেছেন , তিনি এইডজ প্রতিরোধ জ্ঞান সম্পর্কে বেশি জানেন না । তিনি শুধু বেতার আর টেলিভিশন থেকে অল্প কিছু জানতে পেরেছেন ।
এই কৃষক এইডজ প্রতিরোধ জ্ঞান জানাবার দিক থেকে ব্যাপক গ্রামীন শ্রমিকদের অবস্থার প্রতিনিধিত্ব করেন । বর্তমানে চীনের শহরগুলোতে চাকরিরত গ্রামীণ শ্রমিকদের সংখ্যা ১২ কোটিতে দাঁড়িয়েছে । তাদের লেখাপড়ার মান অল্প এবং এইডজ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে তাদের জ্ঞান কম । তাদের মধ্যে যুবক আর প্রৌঢ়দের অনুপাত ৬৫ শতাংশে পৌঁছেছে । এই সব কৃষকের মধ্যে বেশির ভাগ অবিবাহিত বা দম্পতি আলাদা থাকেন । শহরে আসার পর আশেপাশের পরিবেশ তাদের জন্য অপরিচিত । পরিবার পরিজনের কাছ থেকে আলাদা থাকার দরুণ তারা নিঃসঙ্গ আর দুশ্চিন্তা অনুভব করেন । এই অবস্থায় তাদের যৌবনের আবেগ আর চাহিদা বেড়ে যায় । তা ছাড়া যেহেতু তাদের কর্মস্থান মাঝে মাঝে স্থানান্তরিত হয় , সেহেতু তাদের মধ্যে এইডজ রোগের দ্রুত আর ব্যাপক সংক্রমণের আশংকাও আছে ।
এই কারণে চীনে শহরে চাকরিরত গ্রামীন শ্রমিকদের এইডজ প্রতিরোধ জ্ঞান জনপ্রিয় করার একটি বিশেষ ও প্রধান অংশ বলে মনে করা হচ্ছে । এই কাজ সুষ্ঠুভাবে চালাবার জন্য চীনের সংশ্লিষ্ট সরকারী বিভাগ আর গণ গোষ্ঠী বৈচিত্র্যময় তত্পরতা চালিয়েছে । চীনে যেমন রেল স্টেশন প্রভৃতি জনবহুল জায়গাগুলোতে , তেমনি রেল গাড়িতেও এইডজ প্রতিরোধ জ্ঞান জনপ্রিয় করার তত্পরতা আয়োজন করা হয় ।
শহরে চারকি করতে যাওয়ার জন্য গ্রামীণ শ্রমিকরা রেল গাড়ির কথা বেশি বিবেচনা করে থাকেন । সুতরাং রেল গাড়িতে এইডজ প্রতিরোধ জ্ঞান জনপ্রিয় করার ওপর দিন দিন গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে । কিছু দিন আগে সংবাদদাতা পেইচিং থেকে অন্তঃমঙ্গোলিয়ায় যাওয়া একটি রেল গাড়িতে সাক্ষাত্কার নিয়েছেন । রেডক্রস সোসাইটির স্বেচ্ছেসেবকরা পর্যটকদের মধ্যে প্রচার তথ্য বিলি করলেন । সবাই মন দিয়ে তা পড়লেন । আমাদের দেশেও এই ধরণের তত্পরতা আয়োজন করা হয় । আমার মনে হয় এটি একটি খুব ভাল তত্পরতা । এইডজ প্রতিরোধ জ্ঞান জনপ্রিয় করার মাধ্যমে অনেকে হিতকর জ্ঞান লাভ করেছেন ।
এইডজ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে শহরে কর্মরত গ্রামীণ শ্রমিকদের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন । এইডজ প্রতিরোধ জ্ঞান জনপ্রিয় করার জন্য রেলস্টেশন আর রেলগাড়িতে পটর্যটকদের মধ্যে প্রচার কাজ চালানো হয় । এতে অভিজ্ঞতা অর্জনের পর ভবিষ্যদে এই তত্পরতা আরো সম্প্রসারিত হবে ।
এই সব তত্পরতা ছাড়া চীনের বিভিন্ন স্তরের স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগে গ্রামে গ্রামে এইডজ প্রতিরোধ জ্ঞান জনপ্রিয় করার অভিযানও চালানো হয় । এই অভিযান চালাবার জন্য চীনে গ্রামে গ্রামে এইডজ প্রতিরোধ জ্ঞান জনপ্রিয় করা সম্পর্কিত তথ্য, আলোকচিত্র আর প্রচারচিত্র দেখানো হয় । এতে গ্রামীণ শ্রমিকরা আর তাদের পরিবার পরিজন স্পষ্টভাবে এই সম্পর্কিত জ্ঞান জানতে পেরেছেন । শহরে গ্রামীণ শ্রমিকবহুল নির্মাণস্থলে সংশ্লিষ্ট বিভাগের উদ্যোগে সময় সময় এইডজ প্রতিরোধ জ্ঞান প্রচার বিষয়ক চলচ্চিত্রও পরিবেশন করা হয় এবং তাদের মধ্যে বিনা পয়সায় কনডোমও বিলি করা হয় ।
শহরে চাকরি করার সংগে সংগে আমাদের সুস্থ জীবনধারা বজায় রাখতে হবে , কোনো অন্যায় যৌন তত্পরতা চালাতে হবে না । নইলে সপরিবারের সুখ নষ্ট হবে ।
কিছু দিন আগে চীন সরকার শহরে কর্মরত গ্রামীণ শ্রমিকদের মধ্যে এইডজ প্রতিরোধ জ্ঞান জনপ্রিয় করার একটি অভিযান চালু করেছে । এই অভিযান অনুযায়ী , ২০০৬ সালের শেষ নাগাদ চীনের শহরগুলোতে ৬৫ শতাংশ কর্মরত গ্রামীণ শ্রমিক সার্বিকভাবে এইডজ প্রতিরোধ জ্ঞান জানতে পারবেন । ২০১০ সালের শেষ নাগাদ এই অনুপাত ৮৫ ভাগেরও বেশি হবে ।
|