v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-01-18 14:49:35    
চীন ও ভারতের সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের দূত ইয়াং ছি মিং

cri
    ভারতের নৃত্যনাট্য ' ভালোবাসার দীপ ' শীগ্রই পেইচিংয়ে মঞ্চস্থ হবে । এটা হচ্ছে চীনে ভারতের কোনো নৃত্যনাট্যের প্রথম পরিবেশনা । ইয়াং ছি মিং এই নৃত্যনাট্য চীনে মঞ্চস্থ করার ব্যবস্থা করেছেন , বহু বছর ধরে তিনি ভারতের শিল্পকলার সঙ্গে চীনা নাগরিকদের পরিচিত করার চেষ্টা করছেন ।

    ভারতের নৃত্যনাট্য ' ভালোবাসার দীপ ' ভারতের তিনটি বিখ্যাত চলচ্চিত্র --' সোনালি ময়ূর ' , ' লাগান ' আর ' দেবদাসের ' কিছু অংশ আর ছয়টি ঐতিহ্যিক নাচের ভিত্তিতে রচিত হয়েছে । চীনের কেন্দ্রীয় ব্যালে নৃত্যনাট্য দল এই নৃত্যনাট্য পরিবেশনে মঞ্চের সব কলাকৌশল সরবরাহ করে । এই নৃত্যনাট্য থেকে দশর্করা মঞ্চের সুন্দর সুন্দর দৃশ্যপট আর বিখ্যাত নাচ উপভোগ করতে পারবেন এবং নাটকের মননশীল কাহিনীর মাধ্যমে ভারতের শিল্পকলার বৈশিষ্ট্য অনুভব করতে পারবেন । আমাদের সংবাদদাতাকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে ইয়াং ছি মিং বলেছেন , ভারতের জনগণ চীনের শিল্পকলা সম্পর্কেজানতে চান , চীনা জনগণ ভারতের শিল্পকলা সম্পর্কেজানতে চান । নৃত্য ও সংগীতের মাধ্যমে চীনা দশর্করা সহজেই ভারতের সংস্কৃতি ও শিল্পকলা অনুভব করতে পারবেন এবং নাচ উপভোগের মাধ্যমে ভারতের শিল্পকলা ও সংস্কৃতির প্রতি তাদের আকর্ষণ বাড়বে ।

    ইয়াং ছি মিং চীনের সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান বিভাগের কমর্কর্তা নন । ভারতের সংস্কৃতির প্রতি তার প্রবল শখ আর এক দৈব ঘটনা ভারতের সংস্কৃতির সঙ্গেচীনা নাগরিকদের পরিচয় করিয়ে দিতে তাকে সাহায্য করেছে ।

    এ বছর ইয়াং ছি মিংয়ের বয়স ত্রিশের কিছু বেশি । পূর্ব চীনের চেচিয়াং প্রদেশের হাংচৌ শহরে তার জন্ম । মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষক প্রশিক্ষণ স্কুল থেকে স্নাতক হওয়ার পর তিনি একটি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন । কয়েক বছর পর তিনি পরীক্ষার মাধ্যমে পেইচিংয়ের আন্তর্জাতিকসম্পর্ক ইন্সটিটিউটের আন্তর্জাতিক অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হন । পেইচিং চীনের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র । পেইচিংয়ে অনেক সাংস্কৃতিক ও শিল্পকলা সংস্থা আছে । পড়াশুনার ফাঁকে ফাঁকে ইয়াং ছি মিং বিভিন্ন প্রদর্শনী ও শিল্পকলা ভবনে সময় কাটিয়েছেন । তিনি বলেছেন , শিক্ষক প্রশিক্ষণ স্কুলে পড়ার সময় আমি চিত্রশিল্প ও সংগীত শিখেছি । আমি ছোট বেলা থেকেই ছবি আঁকা ও গান করতে পছন্দ করি । বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার চার বছরে আমি পেইচিংয়ের বিভিন্ন যাদুঘর ও শিল্পকলা ভবনে গিয়েছি । সেই সব শিল্পকলা ভবনে আমি চীনের তথা বিভিন্ন দেশের শিল্পকলা সম্বন্ধে অনেক কিছু জানতে পেরেছি , এতে আমি আনন্দ বোধ করি , কারণ শিল্পকলা চিরস্থায়ী ।

    বিভিন্ন প্রদর্শনী ও শিল্পকলা ভবন পরিদর্শনের সময় ইয়াং ছি মিং অনেক শিল্পী ও লেখকের সঙ্গে মেলামেশার সুযোগ পান । শিল্পকলার প্রতি তার ভালোবাসা ক্রমেই বাড়ে , তাই তার স্নাতোকত্তর জীবনে তিনি মানুষ তত্ব ও বিভিন্ন দেশের শিল্পকলা নিয়ে গবেষণা করেছেন । তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রাচীন সভ্যতা ও প্রাচীন সংস্কৃতির বই পড়তে পছন্দ করেন । তিনি ভারত , প্রাচীন রোম , গ্রীস , পূর্ব আফ্রিকা আর ব্যাবিলোন সংস্কৃতি সম্পর্কিত বই পড়েন । ভারতের সংস্কৃতির প্রতি তার বিশেষ টান আছে। তিনি মনে করেন , ভারত ও পাকিস্তানের সংস্কৃতি চীনের সংস্কৃতির ওপর বিরাট প্রভাব ফেলেছে । বৌদ্ধধর্ম ভারত থেকে আসে , কিন্তু বৌদ্ধধর্ম চীনের অন্যতম প্রধান ধর্মে পরিণত হয়েছে , এতে প্রমাণিত হয়েছে , প্রাচীন চীনের প্রধান মতবাদ রু সম্প্রদায়ের তত্ত্বের সঙ্গে বৌদ্ধধর্মের মিল আছে । তাই ইয়াং ছি মিংয়ের মনে ভারতের সংস্কৃতি ও শিল্পকলার স্থান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ।

    ১৯৯৭ সালে ইয়াং ছি মিং চীনে ভারত দূতাবাসের কর্মকর্তা সঞ্চয়ের সঙ্গে পরিচিত হন । ভারতের সংস্কৃতি ও শিল্পকলা সম্পর্কে তার উপলব্ধি ও ভালোবাসা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ইয়াং ছি মিংয়ের মনে একটি ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে , তিনি ভারতের সংস্কৃতি ও শিল্পকলার সঙ্গে চীনাদের পরিচয় করিয়ে দিতে চান। তিনি বলেছেন , মিঃ সেন সঞ্চয়ের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পর আমি মনে করি ভারতের সংস্কৃতি চীনে প্রচারের একটি সুযোগ আমি পেয়েছি । ছোট বেলা থেকেই আমি ভারতের চলচ্চিত্রের গান ও সুর পছন্দ করি । কিন্তু আমি কখনো নিজের শখের সঙ্গে আমার কাজ সমন্বয় করার চেষ্টা করি নি । আমি মনে করি বিদেশের সংস্কৃতি চীনে প্রচারের একটি চমত্কার প্ল্যাটফরম পেয়েছি ।

    ইয়াং ছি মিং চীনের আধুনিক চিত্রশিল্প ভবনে কাজ করেন । চীনে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের সঙ্গে এই ভবনের যোগাযোগ আছে । ইয়াং ছি মিং চিত্রশিল্প উপদেষ্টা হিসেবে ভারতসহ অনেক দূতবাসের সঙ্গে মেলামেশা করেছেন , শিল্পকলার প্রতি ভালোবাসা ও অভিন্ন শখের কল্যাণে তাদের সম্পর্ক ক্রমেই ঘনিষ্ঠ হয় । ইয়াং ছি মিং আধুনিক চিত্র ভবনে ভারতের চিত্র শিল্প সম্পর্কিত একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন । এই প্রদর্শনী শুধু চীনা দশর্ক নয় , ভারতের বিভিন্ন মহলের ব্যক্তিদের কাছে সমাদৃত হয়েছে । তখন থেকে চীন ও ভারতের সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানে ইয়াং ছি মিংয়ের সুনাম বাড়ে। তার সাহায্যে চীনের সুন ছিং লিং তহবিল সংস্থা ভারতের আসবাবপত্র , অলংকার , প্রাকৃতিক দৃশ্য আর নাচগান ইত্যাদি বেশ কয়েকটি প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে । ২০০৩ সালে চীনে অনুষ্ঠিত ভারত সংস্কৃতি সপ্তাহে আলোকচিত্র , ভিডিও ক্যাসেট , নানা ধরনের প্রদর্শনী বস্তু আর আলোচনা সভার মাধ্যমে বিস্তারিতভাবে ভারতের ধর্ম , ইতিহাস , সংগীত , নাচ আর প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখানো হয়েছিল ।

    ইয়াং ছি মিং মনে করেন , শুধু প্রদর্শনী ও আলোচনা সভা সার্বিকভাবে ভারতের সংস্কৃতি দেখানোর জন্য যথেষ্ট নয় , তিনি ভারতের চলচ্চিত্রের কাহিনীর ভিত্তিতে রচিত নৃত্যনাট্য ' ভালোবাসার দীপ ' পেইচিংয়ের থিয়েটারে মঞ্চস্থ করতে চান । গত শতাব্দীর সত্তর ও আশির দশক থেকে চীনের দশর্করা ভারতের চলচ্চিত্র পছন্দ করতে শুরু করেন , তারা ছবিগুলোর গানগুলোও গাইতে ও শুনতে পছন্দ করেন , তাদের মনে ভারতীয় ছায়াছবি এখনও স্মরণীয়।

    গত বছরের নভেম্বর মাস থেকে ইয়াং ছি মিং নৃত্যনাট্য ' ভালোবাসার দীপ ' চীনে মঞ্চস্থ করার কাজ শুরু করেন । এটা সহজ ব্যাপার নয় । ইয়াং ছি মিং বলেছেন , মনের আশা পূরণের জন্য আমি কষ্ট ও ক্লান্তিকে ভয় করি না , আমি চীন ও ভারতের সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের কাজ চালিয়ে যাব। তিনি বলেছেন , এই নৃত্যনাট্য পরিবেশন থেকে পাওয়া সব অর্থ ভারতের এইডস রোগ প্রতিরোধ শিশু তহবিল সংস্থায় অনুদান হিসেবে দেয়া হবে । তার আরেকটি স্বপ্ন হল প্রতি দু বছর চীনে ভারতীয় নাচ-গান উত্সব আয়োজন করা হবে এবং চীনের বিভিন্ন শহরে ঘুরে ঘুরে নাচ-গান পরিবেশন করা ।