বর্তমান শতাব্দীতে প্রথম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্মেলন গত ৯ জানুয়ারী পেইচিংয়ে অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলণ থেকে জানা গেছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সামাজি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে চীন বৈজ্ঞানিক গবেষণার কাজ চালানোর উপর অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে এসেছে এবং উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে।
গত বছরের শরতের পর চীনের বার্ড-ফ্লুর দুর্যোগ দেখা দিয়েছে। প্রায় ৯টি প্রদেশে বার্ড-ফ্লুর প্রকোপ ঘটেছে। তবে পশু-পালন শিল্প যার গুরুত্বপূর্ণ শিল্প, সেই উত্তর-পূর্ব চীনের লিয়াওনিং প্রদেশের আনশান শহরের ছিয়ান শান এলাকায় বার্ড-ফ্লুর প্রকোপ ঘটেনি। এই এলাকার পশু সংক্রান্ত রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের হুয়াং মিং শিন জানিয়েছেন, এর প্রধান কারণ হলো এই যে, এই এলাকার সকল হাঁসমুরগির জন্যে চীনের বৈজ্ঞানিকদের তৈরি বার্ড-ফ্লু টিকা প্রদান করা হয়েছে। মিস্টার হুয়াং বলেছেন:
"আমাদের ছিয়েনশান এলাকায় প্রায় ৬০ লক্ষ মুরগি পালন করা হচ্ছে। গত তিন বছরে বার্ড-ফ্লু টিকা ব্যবহার করার পর এই এলাকায় কোনো বার্ড-ফ্লুর প্রকোপ হয়নি।"
ছিয়েনশান এলাকায় ব্যবহৃত এচ.৫.এন.১ বার্ড-ফ্লু টিকা শুধু মুরগিদের ফ্লু থেকে রক্ষা করে থাকে, তা নয়, বরং ভাইরাসের অনুকরণে বাধা দিতে পারে। বর্তমানে চীনে এ রকম ১ বিলিয়ন টিকা ব্যবহৃত হয়েছে। সেই টিকা ব্যবহৃত অঞ্চলে বার্ড-ফ্লু ঘটেনি। এই কারণে এবারকার জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্মেলনে এই টিকার গবেষণা দেশের বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে প্রথম শ্রেণীর পুরস্কার পেয়েছে। তার উত্তম ভূমিকার জন্যে এই টিকা এখন ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়ায়ও রফতানি হয়েছে। ভিয়েতনাম ইতোমধ্যে ৩০ কোটি টিকা ব্যবহার করেছে এবং চলতি বছরে আরো ৫০কোটি টিকা কিনবে।
সম্মেলনে আরেকটি আবিষ্কার মানুষের দৃষ্টি আকর্ষন করেছে, তা হলো ফোঁটা জলসেচ প্রযুক্তি। চীনাদের জনগণ মাথাপিছু জল সম্পদের পরিমান শুধু বিশ্বের গড়পড়তা পরিমানের চার ভাগের এক ভাগ। বিপুল পরিমাণ পানি ব্যবহার কৃষি ক্ষেত্রে করা হয়। পানি সাশ্রয়ের জন্য চীন ফোঁটা জলসেচ প্রযুক্তিতে আমদানি ও উন্নয়নের চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু আগেকার প্রযুক্তি ব্যবহারের সময়ে বালি সহজে পাইপে জমে যায়। সিআন যোগাযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লু বিং হেং এই সমস্যার সমাধান করেছেন। মিস্টার লু বলেছেন:
"বাঁকা পাইপে পানির ভেতরে বালি সহজে জমে যায়। আমাদের উদ্ভাবিত প্রযুক্তি এই সমস্যা সধান করতে পারে। অর্ধেক বছরের পরিক্ষায় ইসরাইলের যন্ত্রপাতির মধ্যে ৩০ শতাংশের এই সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু আমাদের যন্ত্রপাতিতে এক বছর ব্যবহারের পরও এ পর্যন্ত কোনো সমস্যা হয়নি।"
এমন নতুন প্রযুক্তি আরো অনেক আছে। যেমন সর্বোচ্চ জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পুরস্কারের অধিকারী উ মেং ছাওয়ের সৃষ্ট যকৃত সম্পর্কিত শল্য চিকিত্সার গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব ও প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা যকৃত ক্যান্সার রোগীদের জন্য নতুন চিকিত্সার উপায়ের সূচনা করেছে। জাতীয় বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির পুরস্কারের অধিকারী-প্রাকৃতিক গ্যাসের উন্নয়নের প্রযুক্তি এখন ব্যাপক পর্যায়ে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ প্রযুক্তির সুবাদে উত্তর-পশ্চিম চীনের শিনচিয়াং স্বায়ত্ত-শাসিত অঞ্চলের তারিম এলাকায় ১১টি প্রাকৃতিক গ্যাসের খনি খনন করা হয়েছে। তা চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য শক্তিসম্পদ যুগিয়ে দিয়েছে এবং জনগণের জীবনের চাহিদাও মিটিয়েছে।
চীনের বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তি সংক্রান্ত তথ্য গবেষনাগারের উপ-পরিচালক জাও শিন লি বিশ্লেষণ করে বলেছেন:
"বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জনসাধারণের জীবনের ক্ষেত্রে শক্তিশালী অবলম্বনের ভূমিকা নিচ্ছে। চীনে জনসাধারণের দৈনন্দিন জীবনের সর্বত্রই বিজ্ঞানের অগ্রগতি দেখা যায়। কৃষি, পরিবেশ-সুরক্ষা ও পরিবারে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির ক্ষেত্রে এর ভূমিকা আরো লক্ষ্যনীয়।"
অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের পরিসেবায় বিজ্ঞানের ভূমিকা আরো জোরদার করার জন্য চীনের প্রেসিডেন্ট হু চিনথাও সম্মেলনে বলেছেন :
"অর্থনৈতকি ও সামাজিক উন্নয়ন এবং জনগণের পরিসেবায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে নিয়োজিত করার নীতি অনুসরণ করে বৈজ্ঞানিক সৃজনশীলতাকে জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার চেষ্টার সঙ্গে যুক্ত করতে হবে যাতে বৈজ্ঞানিক সাফল্য জনসাধারণের জন্যে কল্যাণ এনে দিতে পারে।"
|