আমি চীনা আন্তর্জাতিক বেসরকারী সংস্থার সহযোগিতা উন্নয়ন সমিতির একজন উপদেষ্টা । আমার নাম আনড্রিস ফুলদা । আজকের এই গণ মাধ্যমের প্রশিক্ষণ কোর্সের লক্ষ্য হচ্ছে আমাদের একটি নতুন প্রকল্পের সংগে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি । আশা করি, এই তত্পরতার মাধ্যমে আমরা অনেক নতুন বন্ধু পাবো ।
এই রেকর্ডিং শুনে আপনি হয়তো কল্পনা করতে পারবেন না যে ,একজন জার্মান তরুণ এমন পরিষ্কার চীনা ভাষা বলতে পারেন । এই তরুণটির নাম ফুলদা । বয়স তার ২৮ বছর । তিনি বেশ লম্বা । মুখ তার সুদর্শন । তার কথাবার্তায় রয়েছে সম্প্রতির ভাব । চীনা সহকর্মীরা তাকে ছোট ফু বলে ডাকেন ।
চীনা আন্তর্জাতিক বেসরকারী সংস্থার সহযোগিতা উন্নয়ন সমিতির প্রধান কাজ হচ্ছে দারিদ্র্য বিমোচনের উন্নয়ন , প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ এবং সামাজিক উন্নয়েনের ক্ষেত্রে চীন আর বিদেশী বেসরকারী সংস্থার আদান -প্রদান আর সহযোগিতা তরান্বিত করা যাতে করে চীনের দারিদ্র্যগ্রস্ত এলাকারগুলোর সামাজিক আর অর্থনৈতিক বিকাশকে সামনে এগিয়ে নেয়া যায় । এই সমিতিতে ছোট ফু প্রধান কাজ হচ্ছে প্রকল্প সম্পর্কে কিছু প্রস্তাব দেয়া এবং কতকগুলো আন্তর্জাতিক সংস্থার সংগে সহযোগিতা নিয়ে পরামর্শ করা ।
ছোট ফু আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন , তার মাধ্যমিক স্কুলের একজন সহপাঠিনীর কারণেই চীনের সংগে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে । তিনি বলেছেন ,
সে একজন চীনা বংশোদ্ভূত সুন্দর মেয়ে । তার বাবা মা জার্মানীতে কাজ করেন বলে তার সংগে আমার পরিচয় হওয়ার সুযোগ ঘটেছে । আমরা একই মাধ্যমিক স্কুলে লেখাপড়া করতাম । তার কারণে আমার চীনকে জানার আকাংক্ষা জেগেছে ।
সেই মনোরম আর ভদ্র-নম্র মেয়ে প্রাচ্যের অন্তর্নিহিত আর ভদ্র সংস্কৃতি , বিশেষ করে চীনা সংস্কৃতির প্রতি এই তরুণ ফুলদার গভীর আগ্রহ জাগিয়েছেন। মাধ্যমিক স্কুল থেকে স্নাতক হওয়ার পর তিনি জার্মানীর কোলোন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পকলা বিভাগে ভর্তি হন । ৪ বছর আগে তিনি ফুলদা পেইচিংয়ে এসে এই বেসরকারী সংস্থায় আন্তর্জাতিক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করতে শুরু করন । তিনি বলেছেন ,
বলা যায় , আমার নিজের অভিজ্ঞতার দিক থেকে হোক আর আমার কাজের দিক থেকে আমার সংগে জড়িত অনেক ব্যাপার চীনের সংগে সম্পর্কিত । তাই আমি নানা দিক থেকে এই দেশকে জানতে পারি । এটা আমার সৌভাগ্য বলে আমি মনে করি । তা একটি মজার ব্যাপারও বটে ।
ফুলদা তার চীনের কাজকে খুবই ভালোবাসেন । কাজের উপর তার বিশেষ মনোনিবেশ রয়েছে । বেশির সময়ে তিনি পেইচিংয়ে কার করেন । তবে মাঝেমধ্যে সভা করা এবং তদন্তমুলক কাজ চালানোর জন্যে তিনি পেইচিংয়ের বাইরেও যান । কাজের জন্যে তিনি সবসময় সাধারণ চীনা লোকদের সংগে মেলামেশা করেন । অল্প দিনের মধ্যে তিনি তার জীবনের নতুন পরিবেশের মধ্যে মিলিত হয়েছেন ।
সহকর্মীরা বলেছেন , ছোট ফু একজন সরলমনা মানুষ । কোনো সমস্যা নিয়ে আলোচনার সময়ে তিনি সর্বদাই প্রাণ খুলে নিজের মতামত প্রকাশ করে থাকেন। তিনি কখনো অন্যদের খুশী করার জন্যে নিজের মতামত লুকানোর চেষ্টা করেন নি । এছাড়াও ছোট ফুর আরও অনেক সদ্গুণ আছে । তিনি সূক্ষভাবে কাজ করেন এবং সব ব্যাপারে সুবিবেচনা করেন । তার বেশ প্রবল দলগত সচেতনতা রয়েছে । কাজেই ফুলদা তার সহকর্মীদের মধ্যে বেশ সমাদর পান ।
তার উপর চীনা আন্তর্জাতিক বেসরকারী সংস্থার সহযোগিতা উন্নয়ন সমিতির মহা সচিব হওয়াং হাও মিংয়ের মূল্যায়নের মধ্যে এটা প্রমাণিত হয়েছে । তিনি বলেছেন ,
তিনি সবসময় নিষ্ঠার সংগে কাজ করেন সব ব্যাপারে নিয়ম মেনে চলেন । তিনি সর্বদাই বলে থাকেন , আমি জার্মান লোক হলেও এখন আমি চীনা আন্তর্জাতিক বেসরকারী সংস্থার প্রতিনিধি , আমার নিজের প্রতিনিধি নয় । আমার নিজের মনোভাব থাকতে পারে , তবে আমাকে সবসময় আমাদের সমিতির স্বার্থ রক্ষা করতে হবে ।
পেইচিংয়ে থাকার এই কয়েক বছরে চীনের সমাজের দ্রুত বিকাশ সর্বদাই ফুলদাকে বিস্ময়কর করে তুলে । তিনি বলেছেন , চীন একটি বিচিত্রদৃকের মত রংবেরংয়ের এবং পরিবর্তনশীল । এমন কি রোজ ভোরে বিছানা থেকে উঠে অফিসে যাওয়াও আমার পক্ষে আনন্দদায়ক । কাজ করার সময়ে অতি পরিশ্রমী হলেও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয় । অবসর সময়ে ছোট ফু ক্যামেরা হাতে নিয়ে বেরিয়ে চীনা লোকদের জীবনের দৃশ্য তুলে ধরতে পছন্দ করেন । তিনি মাঝে মাঝে বিশেষ বিশেষ রেস্টোরাঁনে গিয়ে সুস্বাদু চীনা খাবার খান । কোনো কোনো সময়ে তিনি নিজের গলা দিয়ে নিজের পছন্দ গান গেয়ে থাকেন । সম্প্রতি তিনি একজন চীনা বন্ধুর কাছ থেকে " সেই দূরদুরান্তের জায়গায় " নামক একটি চীনা গান শিখে ফেলেছেন ।
গানটিতে বলা হয়েছে , সেই দূরদুরান্তের জায়গায় একটি মেয়ে আছে । লোকেরা তার তাঁবুর পাশ দিয়ে চলার সময়ে মাথা ফিরিয়ে তার উপর তাকিয়ে তাকিয়ে থাকেন ।
চীনে কাজ করা আর জীবন যাপনের কয়েক বছরে ফুলদা যেমন চীনা সহকর্মীদের আস্থা লাভ করেছেন , তেমনি বেশ কয়েকজন চীনা বন্ধুর সংগে সুসম্পর্ক গড়ে তুলেছেন । তাদের মধ্যে অন্য একটি বেসরকারী সংস্থায় নিয়োজিত মাদাম সুং ছিং হুওয়া অন্যতম । ম্যাদাম সু একজন উদার মানুষ । তার বয়সও ফুলদার চেয়ে বেশি । তাই ফুলদা কোনো অসুবিধার সম্মুখীন হলে সবসময় তার কাছ থেকে পরামর্শ নেন ।
ফুলদা এখনো বিয়ে করেন নি । তিনি চীনের ঐতিহ্যবাহী মেয়েদের সেই নমনীয় রীতির খুবই প্রশংসা করেন । তার মতে চীনা মেয়েরা দেখতে স্নেহময় বাস্তবে সুদক্ষ । তিনি বলেছেন , তিনি এই রকম মেয়েকে পছন্দ করেন । বোধ হয় তিনি ভবিষ্যতে একজন চীনা মেয়েকে বিয়ে করবেন । চীনা ভাষা শেখা থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত চীনের সংস্কৃতির সংগে দশ বছর ধরে তিনি সংশ্লিষ্ঠ ছিলেন । ফুলদা বলেছেন , তিনি উপলব্ধি করেছেন , তিনি আর চিনের সংস্কৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারবে না । তিনি চীনে থাকুক এবং জার্মানীতে থাকুক , চীন তার নিজের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে ।
|