v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-01-16 17:38:34    
চীন  বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় তত্পর হয়ে উঠছে

cri
    গত ১৮ই ডিসেম্বর হংকংয়ে ' বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ষষ্ঠ মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন' সমাপ্ত হয়েছে। সম্মেলণটিতে কৃষি পণ্য আর অকৃষি পণ্যের বাজারে প্রবেশ অনুমোদন এবং উন্নয়নের সমস্যায় কিছু অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। চীন নিষ্ঠার সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিয়েছে এবং ন্যায় ও সমতার ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরিচালনার জন্য সক্রীয়ভাবে প্রস্তাব দিয়েছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় অন্তর্ভুক্ত হবার পর চার বছরে চীন ক্রমেই আরও দক্ষতার সঙ্গে বহুপাক্ষিক বাণিজ্য আলোচনায় অংশ নিচ্ছে এবং নিষ্ঠার সঙ্গে নিজের প্রতিশ্রুতি কার্যকরী করে দেশের বাজার উন্মুক্ত করেছে। চীন ইতিমধ্যেই বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার এক সক্রিয় সদস্যে পরিণত হয়েছে ।

    বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মহাসচিব প্যাস্কাল লামি মন্তব্য করেছেন, " চীন একটি অতি বুদ্ধিমান আলোচক । আলোচনা চালানোর কলাকৌশল আগে থেকেই ছিল চীনের একটি প্রাচীন শিল্পকলা।"

    এবারকার সম্মেলনের স্বাগতিক দেশ হিসেবে চীন সম্মেলনটিতে সকল উন্নয়নমুখী সদস্যদেশের স্বার্থের ওপর মনোযোগ রাখার জন্য সক্রিয়ভাবে প্রস্তাব দিয়েছে। চীনের প্রতিনিধি হংকং সম্মেলনে ৪৯টি স্বল্পোন্নত সদস্যদেশের যাবতীয় পণ্য শুল্কমুক্ত করার সুবিধা , কোটামুক্তভাবে বাজারে প্রবেশ এবং সকল উন্নয়নমুখী সদস্যদেশের জন্য বিশেষ ও ভিন্ন মাত্রার সুবিধা দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

    এ প্রসঙ্গে চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী পো শিলাই বলেছেন,

    " বিশ্ব বাণিজ্যের অবাধায়ন এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় চাবিকাঠি হলো সংখ্যাগরিষ্ঠদের স্বার্থ বিবেচনা করা, ব্যাপক উন্নয়নমুখী সদস্যদেশ ও অঞ্চলকে যথাযথভাবে এগিয়ে যেতে সাহায্য দেয়া, তাদের বিশেষ ও ভিন্ন মাত্রার সুবিধা দেয়া, যাতে হংকং সম্মেলনকালে তুলা ইত্যাদি সমস্যায় চলতি সময়পর্বের মতো একটি সুফল হিসেবে মতৈক্য অর্জন করা যায়, যাতে উন্নয়নমুখী সদস্যদেশ ও অঞ্চল বাস্তব উপকারিতা লাভ করতে পারে এবং দোহা রাউণ্ড আলোচনা সম্পর্কে বেশির ভাগ সদস্যদেশ ও অঞ্চলের আস্থা বাড়ানো যায়।"

    চীনের প্রস্তাব উন্নয়নমুখী দেশের গরীব কৃষকদের জন্য একটি সুখবর । অন্যান্য জনবহুল উন্নয়নমুখী দেশের মতো চীনের মাথাপিছু জিডিপির মান বেশ নিচু, শুধু এক হাজার চার শো মার্কিন ডলার। চীনের লোকসংখ্যার বৃহত্তম অংশ হলো কৃষকসম্প্রদায় , দিনে তাদের মাথাপিছু জীবিকার মান শুধু এক ডলারেরও কম--এমন দরিদ্রদের সংখ্যা চীনে প্রায় ২০ কোটি। পো শিলাই বলেছেন , চীনেরও অনেক অসুবিধা আছে, তবুও চীন বিশ্বের জন্য অবদান রাখছে । ২০০৫ সালে বিদেশ থেকে চীনের পণ্য আমদানির পরিমাণ মোট ৬০০ বিলিযন মার্কিন ডলার। এতে বিশ্বের জন্য এক নতুন বিরাট বাজার যুগিয়ে দেয়া হয়েছে। চীন সরকার ঘোষণা করেছে, ২০০৪ সালের শেষ নাগাদ চীনের কাছে যে সব দেশের ঋণের গুরুভার বোঝা, চীন সেই সব দেশের জন্যে ঋণ মওকুফ করে দিয়েছে।

    আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক সংরক্ষণবাদের বৃহত্তম শিকার-দেশ হিসেবে চীন এই সম্মেলনে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার আরও বেশি সদস্যদেশের প্রতি চীনকে পূর্ণ বাজার-অর্থনীতির মর্যাদা প্রদানের আহ্বান জানিয়েছে , ডাম্পিংবিরোধী নিয়মাবলী সুস্পষ্ট করা ও উন্নত করার দাবি সমর্থন করেছে এবং কিছু উন্নত দেশের নতুন সংরক্ষণবাদের বিরোধিতা করেছে।

    চীনের সমাজবিজ্ঞান একাডেমির বিশ্ব অর্থনীতি ও রাজনীতি গবেষণাকেন্দ্রের উপমহাপরিচালক লি সিয়াংইয়াং বলেছেন, "এবারকার হংকং সম্মেলনে চীন খুব সক্রীয়ভাবে মতামত প্রকাশ করেছে। চীনের অনেক প্রস্তাব সংখ্যাগরিষ্ঠ উন্নযনমুখী দেশের দাবি প্রতিফলিত করেছে, যেমন কৃষি পণ্যের অবাধ বাণিজ্যব্যবস্থা, উন্নয়নমুখী দেশের জন্য বিশেষ সুবিধা প্রদান এবং উন্নত সদস্যদেশগুলোকে অকৃষি পণ্যের বাজার আরও বেশি উন্মুক্ত করতে তাগিদ দেয়া ইত্যাদি। এতে প্রমাণিত হয়েছে বহুপাক্ষিক বাণিজ্যিক আলোচনায় অংশ নেয়ার ব্যাপারে চীন ক্রমেই সুদক্ষ হয়ে উঠছে।"

    চীন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার প্রতি নিজের দেয়া প্রতিশ্রুতি নিষ্ঠার সঙ্গে বাস্তবায়ন করেছে । চীন চার বার বিরাটমাত্রায় শুল্কের হার কমিয়েছে। ফলে চীনের আমদানি বছরে ৩০ শতাংশ হারে বেড়ে চলেছে। পক্ষান্তরে চীনা পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাণিজ্যিক দ্বন্দ্ববিরোধও বেড়েছে। ইইউ এবং যুক্তরাষ্ট্র পুনরায় চীনের ওপর বস্ত্রপণ্যের কোটা ধার্য করে বাধানিষেধ আরোপ করেছে। এই অসুবিধাজনক অবস্থায় চীন কড়াকড়ি ডাব্লিউ টি ও'র নিয়ম অনুসারে ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চালিয়েছে এবং নিজের উদ্যোগেই বস্ত্রপণ্য রপ্তানির শুল্ক বাড়িয়ে দিয়েছে। পেইচিংস্থ বিশ্ব ব্যাংকের প্রধান প্রতিনিধি বার্ট হোফমান বলেছেন, " গত কয়েক বছরে চীন সরকার এ ব্যাপারে যা করেছে তা প্রশংসনীয়, বিরোধের সম্মুখীন হয়ে চীন সবসময়ই নিয়ম মেনে চলেছে, যদিও তা প্রায়ই চীনের স্বার্থেরপ্রতিকূল।"

    নিজের বাজার উন্মুক্ত করার ক্ষেত্রে চীন সক্রীয় মনোভাব গ্রহণ করেছে। বিদেশের টেলিযোগাযোগ এবং বীমা কোম্পানিগুলো চীনে যার যার যৌথ কোম্পানি স্থাপন করছে , তাতে সংখ্যাগত বাধানিষেধ আর নেই । বিদেশী পুঁজির ব্যাংকগুলো চীনের ২৫টি প্রধান শহরে চীনা মুদ্রা রেনমিনবির ব্যবসা চালানোর অধিকার পেয়েছে। চীনে বিদেশী পুঁজির ব্যাংকগুলোর ব্যবসার পরিমাণ বছরে ৩০ শতাংশ হারে বেড়ে চলেছে , ১৮টি বৈদেশিক ব্যাংক চীনের ১৬টি ব্যাংকের শেয়ার কিনেছে, তাতে তাদের পুঁজি বিনিয়োগের মোট পরিমাণ ১৩ বিলিযন মার্কিন ডলার। নতুন বছরের শেষ নাগাদ চীনের ব্যাংকিং বাজার সার্বিকভাবে উন্মুক্ত হবে। তবে চীনের কতকগুলো ত্রুটির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সমাজের অভিযোগও আছে । তাদের সমালোচনা প্রধানত চীনের মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের ক্ষেত্রে। চীন সরকার মেধাস্বত্ব সুরক্ষার জন্য বিশ্বের সকল দেশের সঙ্গে সহযোগিতা করতে ইচ্ছুক। অর্থনীতির বিশ্বাযনে চীন সক্রীয়ভাবে অংশ নিতে থাকবে এবং আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসারে ব্যবসা চালাবে।