প্রায় পাঁছ বছর আগের এক দিন সন্ধ্যায় অষ্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় এক পরিবারের মালিক এক ট্যাক্সি ড্রাইভারকে ৮টি থালা আর ৮০৪ অষ্ট্রীয় ডলার দেন । এর মধ্যে ৫০০ ডলার হল গাড়ির ভাড়া আর ৩০৪ ডলার ও ৮টি থালা হল একটা চীনা খাবারের দাম । খাবারটি তৈরী করেছিলেন ঝকঝকে ফুল নামে পরিচিত চীনা রেস্তরাঁর মালিক মাদাম হান ছিনগেন । তিনি একজন চীনা নারী সবাই তাকে সুন্দরী বাবুর্চী বলে ডাকেন ।
১৯৮৮ সালে হান ছিনগেন স্বামী উ চিয়াংসির সঙ্গে পেইচিং থেকে ভিয়েনায় এসে একটি চীনা রেস্তরাঁ খোলেন । তখন ভিয়েনায় তিনশ'রও বেশী চীনা রেস্তরাঁ ছিল বলে চীনা রেস্তারাঁর ব্যবসা কঠিন ছিল ।
ব্যবসা খারাপ হওয়ায় যে পরিণাম হতে পারে তা ভাবাও যায় না । একদিন সব বাবুর্চি রেস্তরাঁ ত্যাগ করেন । কোনো উপায় নেই বলে হান ছিনগেন বাধ্য হয়ে নিজেই রান্না শুরু করেন । সেই রাতে বেশী অতিথি ছিলেন না , মাত্র দুই টেবিলে অতিথি ছিলেন । তাই তিনি আস্তে আস্তে তরকারী তৈরী করেন । তিনি রান্না ঘরের দরজার পর্দা থেকে অতিথিদের দিকে তাকান এবং ভাবেন , তার রান্না অতিথির পরীক্ষায় পাশ করতে পারবে কি? যখন অতিথিরা থালার সব তরকারী খেয়ে শেষ করে ফেলেন তা দেখে হান ছিনগেন অত্যন্ত খুশী হন ।
রেস্তঁরার ব্যবসা ধীরেধীরে স্বাভাবিক হয়েছে । এক দিন বাদামী রঙ চুলের একজন সুন্দরী মাদাম আসেন । তিনি রেস্তঁরার এক কোণায় বসে তেলেভাজা বাদাম-মাছ খান ।
এক সপ্তাহ পর হান ছিনগেন হঠাত উপলব্ধি করেন যে,তার রেস্তঁরাভর্তি হয়ে গেছে এবং সব অতিথি তেলে ভাজা বাদাম-মাছ নামের তরকারীটি অর্ডারকরেন । হান ছিনগেন জানলেন সেই বাদামী রঙ চুলের সুন্দরী মাদাম হলেন "দৈনিক ভিয়েনা "পত্রিকার খাদ্যের কলামিস্ট । তিনি সে দিন চুপেচুপে তরকারীটি খাওয়ার পর হান ছিনগেনের রান্না তরকারীটি স্বীকৃতি দেন । তার প্রশংসায় ধীরেধীরে ঝকঝকে ফুল রেস্তঁরা ভিয়েনায় নিজের মর্যাদাঅর্জন করে । ইউরোপে দশ-বারো বছরে হান ছিনগেন নিজের বুদ্ধি ও পরিশ্রম দিয়ে সেখানকার রেস্তঁরা ক্ষেত্রেবিশেষ স্থান অধিকার করেছেন । স্থানীয় পত্রপত্রিকায় বলা হয়েছে যে,হান ছিনগেন এমন একমাত্র বিদেশী ও অল্প সংখ্যক নারী যারা এপযন্ত বাবুর্চির টুপি পেয়েছেন । তার রেস্তঁরায় আসা অতিথিদের মধ্যে শিল্পী,বিখ্যাত ব্যক্তি,রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী রয়েছেন । হান ছিনগেনের রেস্তঁরা অস্ট্রিয়ার উন্নতমানের ও সৃজনশীল রেস্তঁরার অন্যতম ।
মর্যাদাও লাভের জীবন হান ছিনগেনের উপর বিরাট চাপ সৃষ্টি করেছে । এ সময় তিনি দেশে ফিরে যেতে চান । দেশের সব কিছুই তাকে আকৃষ্ট করে ।২০০০ সালে হান ছিনগেন ইউরোপে অর্জন করা মর্যাদাছেড়ে স্বামীর সঙ্গে নিজের দেশ ছেনতু শহরে ফিরে এলেন ।আরাম-প্রদজীবনযাপনের পরিবেশসম্পন্নছেনতু শহরে স্বামী-স্ত্রী দুজন ব্যবসার নতুন সুযোগ উপলব্ধিকরেছেন । হান ছিনগেন ইউরোপের কফি-সংস্কৃতিকে চা-সংস্কৃতি ভরপুর ছেনতু শহরে মিশিয়ে দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন । ইউরোপীয়ানরা কফি খাওয়াকে এক শিল্পে পরিণত করেছেন । কিন্তু ইউরোপের এই শত বছর ইতিহাসসম্পন্ন কফি –সংস্কৃতির সঙ্গে ছেনতু শহরে স্থানীয় প্রাচীনকালের চা-সংস্কৃতির বিরোধ সৃষ্টিহয়েছে । কফি দোকান খোলার প্রথম দিকে এক দিন এক পুরুষ অতিথি কয়েকজন নারী অতিথি নিয়ে দোকানটিতে আসেন । দোকানে ঢুকেই তিনি তাস আনতে বললেন । উত্তর হল ,মাফ করুণ , আমাদের এখানে তাস খেলার ব্যবস্থা নেই । কিন্তু অতিথিটি তাস খেলার জেদ করলেন । এই সময় দোকানের পরিবেশ বিব্রতকর হযে ওঠে । ছেনতুর লোক আত্মসম্মানকেঅত্যন্ত গুরুত্ব দেয় । অন্য লোকের সামনে দোকানদার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করলেন এটা একটা লজ্জার ব্যাপার । হান ছিনগেন সামনে এগিয়ে এসে বলেন , আমি জানি , নিঃসন্দেহে আপনার মতো সামাজিক পদমযাদাপূর্ণ মানুষ সপ্তাহে ছ'দিনে দোকানে চা খাবেন, সেখানে আপনি ইচ্ছানুযায়ী তাস খেলতে পারেন ,মাচিয়াং খেলতে পারেন এবং উচ্চস্বরে কথা বলতে পারেন । কেন আজ আপনি কয়েক জন সুন্দরী নারী বন্ধু নিয়ে আমার ইউরোপীয় স্টাইলের কফি দোকান বেছে নিয়েছেন ? নিশ্চয় আপনি ভিন্ন পরিবেশপূর্ণ এক জায়গা চান । তাহলে আমাকে আপনার জন্যে এমন এক অভিন্ন পরিবেশ বজায় রাখতে অনুমতি দিন । যাতে আপনার ইচ্ছা হলে আমি আবার এখানে আপনার জন্যে এমন একটি টেবিল বরাদ্দরাখতে পারি ।
এখন হান ছিনগেনের কফি দোকান ছেনতু শহরে খুব সমাদর পেয়েছে । নারী বাবুর্চি থেকে কফি দোকানের মালিক হয়ে উঠা হানছিনগেন নিজের প্রচেষ্টায় সুন্দর ভবিষ্যত তৈরী করেছেন ।
" নারী- পুরুষ সুষমভাবে বিকশিত হবে , বিশ্ব আরও সুন্দর ও উজ্জ্বল হবে " শিরোনামে কবিতা ।
১৯৯৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে , পেইচিংয়ে ,
যদিও ভাষা আর ত্বকের রঙ ভিন্ন
যদিও পার্থক্য ও মতভেদ থাকে,
চতুর্থ বিশ্বনারী সম্মেলনে গৃহিত "পেইচিং ঘোষণা" ও "কার্যক্রম কর্মসূচি "থেকে প্রমানিত হয়েছে ,আমাদের আছে অভিন্ন আশা আকাঙক্ষা, অভিন্ন ইচ্ছা—নারী-পুরুষ সুষমভাবে বিকশিত হবে,বিশ্ব আরও সুন্দর ও উজ্জ্বল হবে !
২০০৫ সালে আবার পেইচিংয়ে মিলিত হয়
পেইচিং বিশ্বনারী সম্মেলনের ১০ম বার্ষিকী উপলক্ষে
গত ১০ বছরের প্রক্রিয়ার দিকে পর্যালোচনাকরে
ভবিষ্যতের দিকে তাকায়
আমরা গোটা বিশ্বের বোনদের সঙ্গে মিলে
আবার মিলিত কন্ঠে
সমতা , উন্নয়ন ও শান্তির গান গাইতে চাই !
|