২৩ বছর বয়সী মিস জাং সিয়ে পেইচিংয়ের একটি কোম্পানির কর্মী । জন্মদিনে তিনি তাঁর একজন বন্ধুর কাছ থেকে গোলাপী রঙয়ের যে একটি সুন্দর বাক্স পেলেন তা খুলে তাঁর চোখে পড়ল, ফিকা হলুদ রঙয়ের এক কপি পেইচিং ডেলী । যেদিন তিনি জন্ম গ্রহণ করেন ,সেই দিনই এই খবরের কাগজ প্রকাশিত হয়েছিল । এই অসাধারণ উপহার পেয়ে তিনি যেমন বিস্মিত ,তেমনই আনন্দিত ।
তিনি বলেছেন , বাক্সটি পেয়ে প্রথম আমার মনে হল, ভেতরে চোকোলেট হবে । বাক্স খুলে দেখলাম, ভেতরে এক কপি খবরের কাগজ , এমন উপহার আমার কল্পনাতীত ।তাই আমিভীষন খুশী হয়েছি । ফুলের মত সাধারণ উপহারের চেয়ে এর মুল্য অনেক বেশী ।
মিস জংসিয়ে যে অসাধারণ উপহার পেয়েছেন তা তাঁর বন্ধু কিনেছেন মিয়াও সিং নামক একটি দোকান থেকে। এই বিশেষ দোকানে জন্মদিনের উপহার হিসেবে শুধু পুরনো খবরের কাগজ বিক্রি হয় । সম্প্রতি সি আর আইয়ের সংবাদদাতা সাক্ষাতকার নিতে উত্তর পেইচিংয়ে অবস্থিত এই দোকানে ঢুকে দেখতে পেলেন , নীল রংয়ের তিনচারটে তাকে এক এক রকমের খবরের কাগজ সাজানো । দেওয়াল ঘেষা গাদা গাদা খবরের কাগজ গুছানো হয় নি ।
এই দোকানের মালিক জেন জুনের বয়স চল্লিশের কাছাকাছি । তিনি সি আর আইয়ের সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন , তাঁর দোকানে এখন শুধু বিংশ শতাব্দির পঞ্চাশের দশকে প্রকাশিত দু রকমের খবরের কাগজ আছে।একটি হলো চীনের সর্বাধিক প্রভাবশালি " পিপলস ডেলি " ,অন্যটি হলো স্থানীয় সংবাদপত্র " পেইচিং ডেলী "। অনেক বছর আগেকার এক এক কপি সাধারণ সংবাদপত্র ভালো করে প্যাকিং করার পর এক এক অনন্য উপহার সমগ্রীতে পরিণত হয় ।
মি: জেন জুন মনে করেন , পুরনো খবরের কাগজকে জন্মদিনের উপহার হিসেবে দেয়া হলে মানুষের মনে যে কৌতুহল জাগে তার একটি কারণ হলো এই যে , অতীতে এমন দৃষ্টান্ত বিরল । আরেকটি বড় কারণ, তার সাংস্কৃতিক মুল্য । কেউ জন্মদিন পালনের সময়ে তার জন্মগ্রহণের দিনে প্রকাশিত এক কপি সংবাদপত্র পেলে তা পড়ে জানা যাবে সেই দিন চীনে ও বিশ্বে কি কি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে । অনেকে মনে করে,এটি একটি ভারি মজার ব্যাপার ।
তিনি বলেছেন , পুরনো খবরের কাগজের যেমন সাংস্কৃতিক মুল্য তেমনই ঐতিহাসিক মুল্য আছে ।বিশেষ করে পেইচিং একটি বড় শহর , তার সাংস্কৃতিক পরিবেশ অতুলনীয় .অনেকে কৃষ্টিকে গুরুত্ব দেয় ।তাদের জন্মগ্রহণের দিনে প্রকাশিত খবরের কাগজ পড়ে তখনকার ঐতিহাসিক ও সামাজিক অবস্থা জানা যাবে । এর মানে , তাদের জন্য অতীত ও ইতিহাস জানার একটি জানালা খোলা ।
পুরনো খবরের কাগজ সংগ্রহ মি: জেন জুনের শখ । সময় থাকলে তিনি গভীর আগ্রহে পুরনো খবরের কাগজ উলটিয়ে পড়েন । একদিন তিনি বেতার থেকে খবর শুনতে পেলেন যে , চীনের ক্রীড়া মহলের একজন খ্যাতনামা ব্যক্তি তাঁর জন্মদিন পালনের সময়ে তাঁর বিদেশী বন্ধুর কাছ থেকে গত শতাব্দির বিশের দশকে তার জন্মদিনে বৃটেনে প্রকাশিত এককপি "টাইমস" পেয়ে দারুন খুশী হয়েছেন । এই খবর শুনে মি : জেন জুনের পুরনো খবরের কাগজ নিয়ে ব্যবসা করার ব্যাকুল ইচ্ছা জেগে উঠল । তিনি তাঁর সংগৃহীত পুরনো খবরের কাগজ তন্ন তন্ন করে গুছিয়ে নিলেন এবং বাজার থেকে প্রচুর পুরনো খবরের কাগজ কিনলেন । গত বছরের দ্বিতীয়ার্ধে তাঁর দোকান খোলা হল ।
মি: জেন জুন সি আর আইয়ের সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন , জন্ম দিনের উপহার হিসেবে তাঁর পুরনো খবরের কাগজ বিক্রি হয় প্রধানত: ইন্টার নেটের মাধ্যমে । প্রকাশের সময়ের তারতম্যে এক এক কপি পুরনো খবরের কাগজের দামও ভিন্ন ভিন্ন । বিংশ শতাব্দির পঞ্চাশের দশকের এককপি সংবাদপত্রের দাম এখন প্রায় তিন শো ইউয়ান । তবে নববইয়ের দশকের এককপি সংবাদপত্রের দাম মাত্র আশি থেকে নববই ইউয়ান ।
আমাদের সংবাদদাতা যখন মি: জেন জুনের সাক্ষাতকার নিচ্ছিলেন তখন তাঁর সাহায্যকারী মি: হো সিং ইন্টার নেটের মাধ্যমে খদ্দেরদের সঙ্গে অন লাইন সংলাপ চালাচ্ছেন । মি: হো সিং বলেছেন , প্রথমদিকে পুরনো খবরের কাগজের ক্রেতারা সংখ্যায় ছিল অল্প । এখন ক্রেতার সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে । গড়পড়তা প্রতিদিন দশাধিক কপি পুরনো খবরের কাগজ বিক্রি হচ্ছে । কখনো কখনো একদিনে এক শোরও বেশী কপি বিক্রি হয় ।
মি: হো বলেছেন , এখন রোজ ইন্টার নেটে আমাদের পুরনো খবরের কাগজ বিক্রি হয় । কম হলে একদিন তিন চার কপি, বেশী হলে বিশ-তিরিশ কপি ।ব্যবসা আমাদের ভালই চলছে ।
অনেক ক্রেতা পুরনো খবরের কাগজ কেনার পর নোটিশ বোর্ডে মন্তব্যও প্রকাশ করেন । পেইচিংয়ের একজন নারী ক্রেতা নোটিশ বোর্ডে লিখেছেন : এই উপহার খুবই ভালো । আমার স্বামীর জন্মদিনে তাকে আনন্দঘন বিস্ময়ে অভিভুত করতে আমাকে সাহায্য করার জন্য মি: জেনকে অশেষ ধন্যবাদ । মি: ছেন নামে একজন ক্রেতা লিখেছেন: পুরনো খবরের কাগজ যথাসময়ে পেয়েছি। এই উপহার আমার বন্ধুর ভালো লেগেছে । আপনাকে ধন্যবাদ ।
পুরনো খবরের কাগজের ক্রেতা নানা মহলের । তবে শিক্ষক ও কোম্পানির কর্মচারীদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশী। ২৭ বছর বয়সী মাদাম ইয়াং সাও মিং পেইচিংয়ের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন । দিন খানেক আগে তাঁর স্বামীর জন্মদিন পালনের জন্য তিনি মি: জেনের দোকান থেকে এককপি খবরের কাগজ কিনেছেন ।
তিনি বলেছেন , আমি মনে করি ,আমার স্বামী এই খবরের কাগজ পড়ে জানতে পারবেন, তাঁর জীবনের প্রথম দিন পৃথিবীতে কী ঘটেছে , অন্য কোনো উপহার সামগ্রীর চেয়ে এই খবরের কাগজ অনেক বেশী মুল্যবান।
শুধু পেইচিংয়ের ক্রেতা নয় , চীনের অন্যান্য শহরের ক্রেতাও মি: জেন জুনের দোকান থেকে পুরনো খবরের কাগজ কিনেছেন । ২৮ বছর বয়সী মিং কো ই দক্ষিণ চীনের কুয়াংতং প্রদেশের মাওমিন শহরের নাগরিক । কিছু দিন আগে তিনি যখন খবর পেলেন ,তাঁর একজন সহৃদয় বন্ধুর জন্মদিন পালনের প্রস্তুতি চলছিল তখন তিনি ভাবতে লাগলেন , কী উপহার দিলে তাঁর বন্ধু খুশী হবেন । ওয়েবসাইটে পরিদর্শন করে তিনি স্থির করলেন , তাঁর বন্ধুর জন্য মি: জেনের দোকান থেকে এক কপি পুরনো খবরের কাগজ কিনবেন ।
তিনি বলেছেন , আমি নিশ্চিত , এই অপ্রত্যাশিত উপহার পেয়ে আমার বন্ধু সযত্নে তা সংপক্ষণ করবেন ।
পেইচিংয়ের একজন সমাজ বিজ্ঞানের বিশেষজ্ঞ এই প্রসঙ্গে মন্ত্রব্য করে বলেছেন , জন্মদিন পালন উপলক্ষে পুরনো খবরের কাগজ উপহার দেওয়ার যে রেওয়াজ প্রচলিত হচ্ছে, তাতে প্রতিফলিত হয়েছে জীবন যাপনে চীনাদের নতুনত্বের অভিসার ।
|