পেইচিংয়ে ফ্রান্সের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র খোলার পর চীনের বিভিন্ন স্থানে ফ্রান্সের ফ্যাশন প্রদর্শনী ও ফ্রান্সের চিত্র প্রদর্শনীও উদ্বোধন হয়েছে । ফলে চীনারা চীনে থেকেও ফ্রান্সের সংস্কৃতির স্বকীয়তার পরিচয় পেতে পারেন । ফ্রান্সের সংস্কৃতির একটি প্রধান অংগ হিসেবে ফরাসী ভাষাও চীনাদের একটি প্রিয় ভাষায় পরিণত হয়েছে । বিশেষ করে পেইচিং ও সাংহাইয়ের মত বড় শহরে ফরাসী ভাষার উপরে চীনাদের গভীর আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে ।
পেইচিংয়ের ২১ নম্বর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিশ জন ছাত্রছাত্রী ফ্রান্সের একজন শিক্ষকের কাছে দু মাস ধরে ফরাসী ভাষা শিখেছেন , তাদের শিক্ষার সুফল সি আর আইয়ের সংবাদদাতাকে দেখানোর জন্য তাঁরা বিশেষভাবে একটি গান গেয়েছেন।
ক্লাসরুমে ছাত্রী মা সি ইয়াং সি আর আইয়ের সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন , ভবিষ্যতে ফ্রান্সে গিয়ে পড়াশোনার জন্য সে ফরাসী ভাষা শিখছে ।সে বলেছে : ফ্রান্স একটি শিল্পোন্নত দেশ , অনেক বছর হল চীন ও ফ্রান্সের মধ্যেকার কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে , দুদেশের মৈত্রী অপেক্ষাকৃত গভীর । আমি মনে করি ফ্রান্সে লেখাপড়া শিখে দেশে ফিরে ভালো চাকরি পাওয়া সহজ হবে ।
ছাত্রী মা সি ইয়াং একটি শান্ত স্বভাবের মেয়ে । সে মনে করে , ফরাসী ভাষা আয়ত্ত্ব করলে প্রত্যক্ষভাবে ফ্রান্সের সংস্কৃতির পরিচয় পাওয়া সম্ভব হবে । তবে ইংরাজীর চেয়ে ফরাসী ভাষা অনেক কঠিন , বিশেষ করে তার উচ্চারণ । ফ্রান্সের শিক্ষকের সাহায্যে সে আস্তে আস্তে ফরাসী ভাষার বর্ণমালা সঠিকভাবে উচ্চারণ করতে পারছে ।
সে বলেছে, আমাদের শিক্ষকের শিক্ষাদানের পদ্ধতি বিজ্ঞানসম্মত বলে ফরাসী ভাষা আমাদের কাছে ক্রমশই সহজ মনে হচ্ছে । ফরাসী ভাষার উচ্চারন অপেক্ষাকৃত কঠিন , তবে তার নিয়ম জেনে নিতে পারলে তা আয়ত্ত্ব করা যায় ।
২১ নম্বর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাদাম জাও জিং চি সি আর আইয়ের সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন , ২০০০ সালে তাঁর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ফরাসী ভাষার ক্লাস খোলা হয়েছে । এই বছরে উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়েও ফরাসী ভাষার ক্লাস খোলা হয়েছে। এখন ২০০ জন ছাত্রছাত্রী ফরাসী ভাষা শিখছে ।
মাদাম জাও জিং চি আরো বলেছেন , নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের ফরাসী ভাষা পড়ানোর প্রধান উদ্দেশ্য হল ফরাসী ভাষার উপরে তাদের আগ্রহ সৃষ্টি করা , তারা সংক্ষিপ্ত কথোপকথন ও কবিতা আবৃত্তির চর্চা করে প্রাথমিকভাবে ফরাসী ভাষার সংগে পরিচিত হতে পারে । উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা তিন বছর ফরাসী ভাষা শিখার পর প্রাথমিকভাবে ফরাসি ভাষায় শুনা , বলা , পড়া ও লিখার ক্ষেত্রে সাবলীল হবে ।
তিনি বলেছেন , ইংরাজীর পাশাপাশি ফরাসী ভাষা শিখলে ভবিষ্যতে সামাজিক তত্পরতা ও আন্তর্জাতিক আদানপ্রদানে ছাত্রছাত্রীদের সুবিধা হবে ।
বস্তুত: সাত বছর আগে থেকে চীনের কিছু কিছু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ফরাসী ভাষার ক্লাস চালু হয়েছে । সেই বছরে চীনের তত্কালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াং জে মিন ও ফরাসী প্রেসিডেন্ট সিরাকের একটি বৈঠকে দু দেশের সাংস্কৃতিক আদান প্রদান জোরদার করার জন্য দু দেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পরস্পরেরর দেশর ভাষা পড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ।এই সিদ্ধান্ত কার্যকরী করার জন্য চীন ও ফ্রান্সের পররাষ্ট্র ও শিক্ষা বিভাগ নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়েছে । চীনে ফ্রান্সের দুতাবাস চীনা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ফরাসী ভাষা শিক্ষা প্রকল্প প্রনয়ণ করে এবং মিং আননোকে এই প্রকল্পের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নিযুক্ত করে ।
এ পর্যন্ত পেইচিং ও সাংহাইয়ের ২৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের তিন হাজারেরও বেশী ছাত্রছাত্রী ফরাসী ভাষা শিখছে । মিং আননো সি আর আইয়ের সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন , ফরাসী দুতাবাস ফরাসী ভাষার ক্লাস চালু করা- চীনা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জন্য প্রচুর পাঠ্যবই সরবরাহ করেছে এবং ফরাসী ভাষার শিক্ষকশিক্ষিকাদের সুপারিশ করেছে । তিনি চীনে ফরাসী ভাষা শিক্ষাদানে সন্তুষ্ট।তিনি বলেছেন :চার বছর আগে যখন চীনে আসি তখন এতবেশী চীনা ছাত্রছাত্রী ফরাসী ভাষা পড়তো না । এখন চীনের বহু তরুণ তরুণী কিশোর কিশোরী যে ফরাসী ভাষা শিখতে শুরু করেছে তা থেকে বোঝা যায় যে , চীনে ফরাসী ভাষা শিক্ষার ভবিষ্যত অত্যন্ত উজ্জ্বল ।
বর্তমানে চীনের ছশোটিরও বেশী উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পয়ত্রিশটিতে ফরাসী ভাষার ক্লাস খোলা হয়েছে ।শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী নয় , চীনের কর্মরত কর্মচারীরাও ফরাসী ভাষা শিখছেন । মাদাম লান ওয়েন ছিন তাঁদের মধ্যে একজন । প্রতি সপ্তাহের শনিবার তিনি পেইচিংয়ের রাজধানী শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করতে যান । তিনি চীনের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানের ইংরাজী ভাষার অনুবাদক ।
তিনি বলেছেন , বিদেশী ভাষার উপরে আমার আগ্রহ অপরিসীম । আমি এখন ইংরাজী তথ্য অনুবাদ করতে পারি , ফরাসী ভাষা জানলে আমার সামর্থ্য বেড়ে যাবে । মাদাম লানের বিশাধিক সহপাঠীর মধ্যে যেমন আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকশিক্ষিকা , তেমনই আছেন বিদেশী পুঁজি বিনিয়োজিত শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কর্মচারী । তাঁদের মধ্যে বয়োকনিষ্ঠের বয়স মাত্র বিশ বছর , জ্যেষ্ঠজনের বয়স ৫০ ছাড়িয়ে গেছে ।
গত দু বছরে ফ্রান্সে অধ্যয়নরত চীনা ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। সেই সংগে চীনের বড় বড় শহরে নানা ধরনের ফরাসী ভাষার শিক্ষাকোর্স আয়োজনের হিড়িক পড়েছে । সাবলিলভাবে ফরাসী ভাষায় কথা বলা এখন চীনাদের একটি নতুন ফ্যাশন ।
|