চু দেখলো উজি রাজ্যের রাজার মৃতদেহ সেখানে পড়ে আছে । সে রেগে কুপের কাছে বসে উখোংকে বললো , এখানে মুখোস পরা রাজার মৃতদেহ ছাড়া সেখানে কোনো সম্পদই নেই । উখোং মুক্তার মুখোশ পরাশো মৃতদেহটা নিয়ে আসতে বললো । চু তাই করলো । তারপর মৃতদেহটা নিয়ে তারা যাদুর মেঘে চড়ে ফিরে এলো আচার্যের কাছে ।
আচার্যের নির্দেশে দেবতা লাওজি-র কাছ থেকে মৃতসন্ঞ্জিবনি বড়ি নিয়ে এসে মৃত রাজাকে খাওয়ানো হলো । সঙ্গে সঙ্গে উঠে বসলেন রাজা । অশেষ কৃতজ্ঞতা জানালেন তিনি আচার্যের প্রতি ।
পরদিন আচার্য , তাঁর তিন শিষ্য এবং উজির রাজা ভিক্ষুর বেশে উজি রাজ্যে রওনা হলেন ।
নকল রাজার কাছে খবর দেয়া হলো , পাঁচজন ভিক্ষু এসেছে । তারা মহা থাং সম্রাটের আদেশে পশ্চিম দেশে যাচ্ছে বৌদ্ধশাস্ত্র গ্রন্থ সংগ্রহ করতে । নকল রাজা সঙ্গে সঙ্গে তাদের ডেকে পাঠালেন । শয়তান দানব রাজা আশ্চর্য হয়ে দেখলেন , উজির মৃত রাজা তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে আছে । দানব রেগে গিয়ে সবাইকে বন্দি করার নির্দেশ দিলেন । এগিয়ে এলো সৈন্য সামন্তরা । উখোং মন্ত্র পড়ে নিমেষের মধ্যে তাদের সবাইকে পাথরের মুর্তিতে পরিণত করলো । দানব রাজা মুহুর্তে তরোয়াল তুলে মেঘে উঠে গেলেন । উখোং ও ধাওয়া করলো তাকে আকাশেই । শুরু হলো প্রচন্ড যুদ্ধ । উখোং-এর ডান্ডার ঘা খেতে খেতে দানব ক্রমে কাহিল হয়ে পড়লো । এক সময় পালিয়ে প্রাণ বাঁচালো দানব ।
প্রাসাদে ফিরে দানব আচার্যের রুপ নিয়ে তাঁরই পাশে দাঁড়ালো । উখোং দানবকে মারার জন্য ডান্ডা তুলতেই দুজনে চিত্কার করে উঠলো , মেরো না , মেরো না , আমি গুরুদেব । উখোং হতবুদ্ধি হয়ে পড়লো । কি জ্বালাতনে পড়লো এবার । ডান্ডা নামিয়ে নিলো উখোং ।
চু তখন চললো , গুউরদেবকে বেড়ি আটার মন্ত্র পড়তে বলি । দানব তো আর মন্ত্র জানে না । গুউরদবে অনায়াসে মন্ত্র পড়লেন । আর দানব মন্ত্র উচ্চারণ করতেই পারলো না । তখনই বোঝা গেলো কে দানব ।
দানবকে ধরতে যেতেই সে আকাশে পালিয়ে গেলো । উখোং আর চু দুজনে তাকে ধাওয়া করলো । যুদ্ধ করতে করতে তারা মেঘের নবম স্তর পর্যন্ত পৌঁছুলো । উখোং কাহিল দানবকে প্রচন্ড এক আঘাত করতে যাবে এমন সময় শুনতে পেলো বোধিসত্ব মন্ঞ্জুশ্রি বলছেন , ওকে মেরো না । উখোং প্রণাম করলো দেবিকে । দেবি হাতের আয়না তুলে ধরতেই দানব সিংহে রুপান্তরিত হলো । সে ছিল দেবির পর্বত শৃঙ্গ । সিংহকে ধরে নিয়ে চলে গেলেন ।
দানবের হাত থেকে বাঁচলো সবাই । দেবি স্বয়ং দানবকে দমন করলেন । আবার শুরু হলো পশ্চিম দেশের পথে যাত্রা । আচার্য ও তাঁর তিন শিষ্য অবিরাম চলছেন । যেতে যেতে একদিন এক বড়ো পাহাড়ের সামনে এলেন । আচার্য বললেন , মনে হয় এই বিশাল পাহাড়ে কোনো দানব বাস করে । বলতে বলতেই হঠাত্ আকাশে দেখা গেলো এক লাল মেঘ । উখোং বললো , গুরু নিশ্চয় কোনো দানব আসছে । আর আমরা সামনে যেতে পারবো না । সবাই যে যার অস্ত্র নিয়ে তৈরি হলো । ওদিকে এই পাহাড়ের দানব খবর পেয়েছে যে এই পথ দিয়ে আচার্য সুয়ান চুয়াং পশ্চিম দেশে যাবেন । তার মাংস খেলে অমর হওয়া যায় । অতএব সে নজর রেখেছে পথের উপর ।
হঠাত্ লাল মেঘটা কেটে গেলো । উখোং স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে আবার আচার্যকে ঘোড়ায় তুলে যাত্রা শুরু করলো । এমন সময় শোনা গেলো এক শিশুর কান্না । এদিক ওদিক চেয়ে দেখা গেলো গাছের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বাঁধা অবস্থায় এক শিশু বাঁচাও বাঁচাও বলে চিত্কার করছে । শিশুটি কাঁদছে আর বলছে , আমার নাম লাল কুমার । শিশু আরও বললো , আমাদের বাড়িতে ডাকাত এসে বাবাকে হত্যঅ করেছে , মাকে ধরে নিয়ে গেছে আর আমাকে বেঁধে ঝুলিয়ে রেখেছে এই গাছের ডালে । তিন দিন আমি এইভাবে বন্দি । আমাকে বাঁচাও । আচার্য পাচিয়েকে বললো শিশুটাকে মুক্ত করতে ।
|