v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-01-09 17:08:22    
" সাশ্রয় ও পরিবেশ সংরক্ষণে চীনের কার্যক্রম"

cri
    যথাসময়ে বাতি নিভানো, পানির কল ঠিক মতো বন্ধ করা, ফলের খোসা আর কাগজ যেখানেসেখানে না ফেলা এবং শক্তি- সাশ্রয়ী পণ্যদ্রব্য ব্যবহার করা ইত্যাদি সাশ্রয় ও পরিবেশ সংরক্ষণের তত্পরতা এখন অনেক চীনা মানুষের অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে । চীনারা এখন উপলব্ধি করেছেন যে, এ সব তত্পরতা চীনের অর্থনীতির টেকসই উন্নয়নের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাতে নিজেদের জীবনযাত্রার পরিবেশেরও উন্নতি হবে।

    তিং কুওফেই ছিলেন দক্ষিণপূর্ব চীনের চেচিয়াং প্রদেশের থাইচৌ শহরের বর্জ্য সংগ্রহের পেশাগত কর্মী । তাঁর বর্জ্য সংগ্রহের ব্যবসা দ্রুত বেড়েছে । তিনি ইতিমধ্যেই বর্জ্য এলুমিনিয়ামের জিনিসপত্র সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াকরণের একটি ছোট কারখানা স্থাপন করেছেন। তার কারখানায় উন্নত মানের এলুমিনিয়াম ঢালাইয়ের আধুনিক উত্পাদন লাইন স্থাপিত হয়েছ। সংগ্রহ ও এলুমিনিয়াম প্রক্রিয়াকরণের সময়ে সৃষ্ট বর্জ্য গ্যাস সংগ্রহের ব্যাপারে তিনি বছরে আবার অতিরিক্ত ৪ লক্ষ মার্কিন ডলারের মতো মুনাফা লাভ করেন। তিনি বলেছেন, " এখন আমি বুঝেছি আমার উপায় ঠিক হয়েছে, বজ্য গ্যাসও কাজে লাগানো যায়।"

    জানা গেছে, চেচিয়া প্রদেশে এখন বর্জ্য ধাতুর জিনিসপত্র, কাগজ, প্লাস্টিক আর কাঁচ ইত্যাদি সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াকরণের ঘাঁটি গড়ে উঠেছে, তাতে বছরে অর্জিত মুনাফা ৫৬২ কোটি মার্কিন ডলার।

    চীনে আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে ঐতিহ্যিক শিল্পের রুপান্তর করার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয় , তাতে কাঁচা মাল ও শক্তিসম্পদ আরও কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যায় । রাজধানী পেইচিং মহানগরে "চীনের সিলিকন ভ্যালি" নামে পরিচিত চোংকুয়ানছুন হাইটেক শিল্পপার্কে ১৫ হাজার শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়েছে । সেখানে শক্তিসম্পদ ও কাঁচামাল সাশ্রয়ের নতুন নতুন দ্রব্য নিয়ে গবেষণা ও উন্নয়নের কাজ জোরদার করা হচ্ছে।

    চোংকুয়ানছুনের শিতাই গোষ্ঠির প্রেসিডেণ্ট মাদাম ওয়াং সিয়াওলান বলেছেন, "শিতাই গোষ্ঠি- কোম্পানিতে যে ওয়েল্ডিং যন্ত্র উত্পাদিত হয়, তা পেইচিং অলিম্পিক গেমসের ১০টিরও বেশি প্রকল্পে যাবতীয় ওয়েল্ডিং কাজে ব্যবহার করা হয়। জাতীয় স্টেডিয়াম প্রকল্পেও আমাদের শিতাই কোম্পানির ওয়েল্ডিং যন্ত্র ব্যবহার করা হয় । পুরনো ওয়েল্ডিং যন্ত্রের তুলনায় আমাদের নতুন ওয়েল্ডিং যন্ত্র প্রচুর কাঁচা মাল ধাতু আর বিদ্যুত্ বাঁচাতে পারে । একটি ওয়েল্ডিং যন্ত্রই বছরে ১০ হাজার কিলোওয়াট ঘণ্টার বিদ্যুত বাঁচাতে পারে।"

    শিতাই গোষ্ঠির উত্পাদিত আধুনিক যন্ত্রপাতি এখন লোহা ও ইস্পাত, তেল ইত্যাদি শিল্পে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। সম্পদের সাশ্রয় এবং পরিবেশ সংরক্ষণ এখন চীন সরকারের অগ্রাধিকার দেয়ার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। চীনের উপপ্রধানমন্ত্রী জেং ফেইইয়েন সম্প্রতি একটি সম্মেলনে মন্তব্য করেছেন, শক্তিসম্পদের সাশ্রয় এবং পরিবেশ সংরক্ষণ এখন চীনের এক মৌলিক রাষ্ট্রীয়নীতি। তিনি বলেছেন, " নতুন পরিস্থিতির মুখোমুখী হয়ে আমরা সুস্পষ্টভাবে অর্থনীতিকে বাস্তবিকভাবেই সার্বিক , সমন্বিত ও টেকসই উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধাঁচের রূপান্তরের গতি দ্রুততর করা এবং সম্পদের সাশ্রয়কে রাষ্ট্রের মৌলিক নীতি হিসেবে অবলম্বন করার প্রস্তাব উত্থাপন করেছি, যাতে আবর্তনশীল অর্থনীতির উন্নয়ন করা এবং সম্পদ ও শক্তির উত্কৃষ্ট ব্যবহার বিরাট মাত্রায় বাড়ানো যায়। ২০১০ সালে একই পরিমাণ পণ্য উত্পাদনের জন্য বা জি ডি পিতে ডলার-প্রতি শক্তিসম্পদের খরচ ২০০৫ সালের চেয়ে ২০ শতাংশ কমানো যাবে।"

    বর্তমানে সম্পদের সদ্ব্যবহার ও পরিবেশ সংরক্ষণ সমন্বিত করার কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে ।

    তিব্বত ও ছিংহাই প্রদেশের মালভূমি সৌরশক্তির সম্পদে সমৃদ্ধ । তিব্বতের তুইনা গ্রাম-এলাকার গড়পড়তা উচ্চতা সমুদ্র সমতল থেকে ৪৫০০ মিটার । তিন বছর আগে স্থানীয় সরকার সেখানে একটি সৌরশক্তির বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণ করেছে । তাতে গ্রামটিতে প্রথমবারের মতো বিদ্যুত ব্যবহারের ব্যবস্থা চালু হয়েছে।

    গ্রামবাসী বাসাংছিরেন বলেছেন, "২০০২ সালে গ্রামে সৌরশক্তির বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপিত হবার পর আমরা টেলিভিশন আর ভিসিডি দেখতে পেরেছি। এখন আমাদের গ্রামের অনেকের বাড়িতে টেলিভিশন আর ভি সি ডি ইত্যাদি বৈদ্যুতিক সামগ্রি চালু হয়েছে । তিব্বতী চা তৈরির জন্য চায়ের সঙ্গে ঘি মেশানোর কাজেও বৈদ্যুতিক যন্ত্র ব্যবহার শুরু করেছি ।"

    তিব্বতে সৌর বিদ্যুত ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। তাতে তিব্বতীদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন যেমন হয়েছে, তেমনি পরিবেশ দূষণ কমানো হয়। বিশেষ করে তিব্বত-ছিংহাই মাল ভূমির প্রতিবেশ সুরক্ষা করা হয়।

    তিব্বতের মতো সিনচিয়াং আর অন্তর্মঙ্গোলিয়া অঞ্চলেও সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি সম্পদ কাজে লাগানো হচ্ছে ব্যাপকভাবে। প্রত্যন্ত পাহাড়ী অঞ্চলে ছোট ছোট জলবিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে । এ সব পুন:ব্যবহার্য শক্তিসম্পদ উন্নয়ন আরও জোরদার করা হবে। ২০২০ সালে চীনে মোট শক্তিসম্পদ সরবরাহের মধ্যে ১৫ শতাংশ হবে পুন:ব্যবহার্য শক্তিসম্পদ,যেমন সৌরশক্তি , বায়ু ও জলবিদ্যুত ইত্যাদি।

    চীনের লোহা ও ইস্পাত, অলৌহ ধাতুশিল্প, রসায়ন, নির্মাণসামগ্রি ইত্যাদি শিল্প উত্পাদনে প্রচুর শক্তিসম্পদ খরচ হয় এবং প্রচুর দূষণ সৃষ্টি হয়। এ সব ক্ষেত্রে ' আবর্তনশীল শিল্প' উন্নয়নের পরীক্ষামূলক কাজ চলছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা চৌ ছাংই বলেছেন, "আবর্তনশীল অর্থনীতির উন্নয়নে সম্পদের সদ্ব্যবহার ত্বরান্বিত করা হয় । এটা এক নতুন ধারণা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির এক নতুন ধাঁচ। এটা অর্থনীতি ও সমাজের উন্নয়নের বিভিন্ন দিকের সঙ্গে জড়িত, এতে আমাদের প্রয়োজন ক্রমেই অনুসন্ধান করা এবং অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করা ।"