২০০৫ সালের গোড়ার দিকে চীনের কেন্দ্রীয় সরকার কৃষির সার্বিক উত্পাদন ক্ষমতার নির্মাণকাজ জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছে । বছরের মাঝামাঝি সময় সরকার গ্রীষ্মকালীন শস্যের প্রাচুর্য ফলন আর কৃষকদের আয় বৃদ্ধি নিশ্চিত করার ব্যবস্থা প্রণয়ন করেছে এবং বছরের শেষ নাগাদ সমাজতান্ত্রিক গ্রামাঞ্চলের নির্মাণকাজ সমগ্র পার্টি আর সমগ্র দেশের জনগণের যৌথ কার্যক্রমে পরিণত হয়েছে । গত বছর চীনের কৃষি , কৃষক আর গ্রামাঞ্চলের কাজে নতুন ধারণা , নতুন ব্যবস্থা আর নতুন অগ্রগতি দেখা দিয়েছে ।
চীনের রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশনের পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে , ২০০৫ সালে চীনের শস্য উত্পাদন পরিমাণ ৪.৮ বিলিয়ন টনে দাঁড়িয়েছে । এটা ২০০৪ সালের তুলনায় ০.১ বিলিয়ন টন বেড়ে গেছে ।
তাহলে ফলন প্রাচুর্য কি কৃষকদের আয় বৃদ্ধি আনবে ? এবছর গ্রীষ্মকালীন ফসল কাটার পর বহু অঞ্চলের কৃষকরা উপকার লাভ করে নি । তার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই যে , রাসায়নিক সার আর কীটনাশক ওষুধের দাম বেড়েছে । এতে খাদ্য শস্য উত্পাদনের উপকার নষ্ট হয়েছে । গত কয়েক বছরে গত কয়েক মাসে দেশের সরবরাহ বাড়ানো , রফতানি নিয়ন্ত্রণ করা আর রাসায়নিক সারের দাম স্থিতিশীল করার ব্যবস্থার মাধ্যমে বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরীণ রাসায়নিক সারের দাম স্থিরগতিতে নেমে যাচ্ছে ।
চীনের কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে , বর্তমানে হুপেই , চিয়াংসি , আনহুই , সিছুয়ান, হুনান প্রভৃতি প্রদেশে কৃষকদের কাছ থেকে ন্যুনতম দামে ধান ক্রয় করা হচ্ছে । কৃষকদের কাছ থেকে খাদ্য শস্য ক্রয়ের জন্য কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করেছে ।
যদিও বর্তমানে খাদ্য শস্যের দাম স্থিতিশীল , কিন্তু দাম হ্রাস পাওয়ার চাপ এখনো বিরাজমান । এই সংগে সংগে উত্পাদন কাঁচামালের প্রভাবে ২০০৬ সালে কৃষি উত্পাদনের উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ার আশংকা বজায় থাকবে । অন্যান্য বাধা-বিঘ্ন , যেমন আবাদী জমি বছরে বছরে হ্রাস পাওয়া , আবহাওয়া পরিবর্তনশীল আর জল সম্পদের অভাব এই ধরণের সমস্যার ওপরও গুরুত্ব দেয়া উচিত ।
উন্নয়ন আর সংস্কার কমিশনের অধিবেশনে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যে , যে সব প্রধান খাদ্য দারুণ অভাব , প্রধান খাদ্য উত্পাদনকারী এলাকাগুলোতে সে সব খাদ্য ক্রয়ের জন্য সরকার ন্যূনতম দাম ধার্য করেছে , যাতে কৃষকদের স্বার্থ নিশ্চিত করা যায় । এর সংগে সংগে কৃষি উত্পাদন উপকরণের দাম নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সংস্কার ও পূর্ণাংগ করে তোলা হয়েছে এবং কৃষকদের প্রতি রিসিয়নিক সার , ডিজেল প্রভৃতি কৃষি উত্পাদন উপকরণের প্রত্যক্ষ ভরতুকী ব্যবস্থাও ধাপে ধাপে গড়ে তোলা হয়েছে ।
চীনে কৃষি কর শব্দটা বিগত হয়ে যাবে । অর্থ মন্ত্রী চিন রেন ছিং বলেছেন , ২০০৫ সালের শেষ নাগাদ ৮০ কোটি কৃষক কৃষি কর আদায় না করার কথা ।
২০০৫ সালে চীন সরকার কৃষি সাহায্য ও উপকারমূলক নানা রকম নীতি প্রণয়ন করেছে । ফলে কার্যকরভাবে কৃষকদের উত্পাদনের সক্রিয়তা উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে এবং কৃষি আর গ্রামীণ অর্থনীতিতে দ্রুত ও সুষ্ঠু বিকাশের প্রবণতা বজায় রয়েছে । চীনের রাষ্ট্রীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী , ২০০৫ সালের প্রথম কোয়ার্টারে কৃষকদের মাথাপিছু গড়পড়তা নগদ আয় ১১ শতাংশ বেড়ে ২৪৫০ ইউয়ানে দাঁড়িয়েছে । এই বৃদ্ধি হার শহরবাসীদের চেয়ে বেশি । আসলে ২০০৪ সাল থেকে কৃষকদের মাথাপিছু গড়পড়তা নগদ আয়ের বৃদ্ধি হার বহুবার শহরবাসীদের ছাড়িয়ে গেছে ।
আরো খুশির ব্যাপার এই যে , কৃষকদের আয় বাড়ানোর কাঠামো আরো উন্নত হয়েছে । যেমন তাদের বেতনমূলক আয় দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে । ২০০৫ সালের প্রথমার্ধে কৃষকদের বেতনমূলক আয় গত বছরের অনুরুপ সময়ের তুলনায় ৬.৬ শতাংশ বেড়ে ৫২১ ইউয়ানে পৌঁছেছে । এর মূলে রয়েছে গ্রামীণ শ্রমিকদের আয় । ২০০৫ সালে শহরে চাকরি করার জন্য গ্রামীণ শ্রমিকদের সংখ্যা দ্রুত বেড়েছে ।
কৃষকদের আয় বেড়ে যাওয়ায় গ্রামাঞ্চলের উপভোগ বাজারও তেজিয়ান করে দেয়া হয়েছে । ২০০৫ সালের প্রথম ১০ মাসে চীনের শহর আর গ্রামাঞ্চলের বাজারে খুচরা বিক্রয়ের বৃদ্ধি হার যথাক্রমে১৩.৬ শতাংশ আর ১১.২ শতাংশ বেড়েছে । এই দুটোর ব্যবধান ২০০৪ সালের তুলনায় আরো কমে গেছে ।
অর্থনীতিকরাও বলেছেন , শহর আর গ্রামাঞ্চলের ব্যবধান এখনো একটি উচ্চ মানে বজায় রয়েছে । মত্স চাষ , হাঁস-মুরগি ও পশুপালন এলাকাগুলো বার্ডফ্লু প্রভৃতি সংক্রামক রোগ প্রকোপের শিকার হয়েছে । উল্লেখযোগ্য যে , কৃষকদের আয় বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার দীর্ঘকালীন আর কার্যকর ব্যবস্থা এখনো গড়ে তোলা হয় নি , সুতরাং এই ক্ষেত্রে প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকতে হবে ।
২০০৫ সালে সরকারী কাজকর্ম সংক্রান্ত রিপোর্টে স্পষ্টভাষায় উল্লেখ করা হয়েছে যে , শিল্পের সাহায্যে কৃষি ত্বরান্বিত করা আর গ্রামাঞ্চলকে শহরের সমর্থনের কর্মসূচী পালন করতে হবে । এই নতুন কর্মসূচীর পরিচালনায় আর্থিক বিভাগ কৃষিকে আর্থিক সাহায্যের ব্যবস্থা নিরন্তর জোরদার করবে , নানা রকম প্রণালী আর পদ্ধতিতে খাদ্যের উত্পাদন বৃদ্ধি আর কৃষকদের আয় বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করবে ।
গরীব জেলা আর থানাগুলোতে কর আদায় বৃদ্ধির ভার কাটিয়ে উঠা , সরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সংখ্যা কমানো আর খাদ্য উত্পাদনকারী জেলাগুলোকে পুরস্কার দেয়ার জন্য চীন সরকার ১৫ বিলিয়ন ইউয়ান বরাদ্দ করেছে । এর সংগে সংগে নতুন বর্ধিত কৃষির সার্বিক উন্নয়ন পুঁজি বিলি করার ক্ষেত্রে প্রধান প্রধান খাদ্য উত্পাদনকারী এলাকার জন্য বেশি সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়েছে । এর সংগে সংগে শহরে চাকরির জন্য গ্রামীণ শ্রম শক্তিকে প্রশিক্ষণদেয়া , দারিদ্র্য বিমোচন ও উন্নয়ন আর দুর্যোগ প্রতিরোধ প্রভৃতি কাজ আরো জোদার করা হয়েছে ।
কমিউনিস্ট পার্টির অধিবেশনে সমাজতান্ত্রিক নতুন গ্রামাঞ্চল গড়ে তোলার ঐতিহাসিক কর্তব্য উপস্থাপন করা হয়েছে এবং গ্রামীন বুনিয়াদি ব্যবস্থা উন্নত করা একটি স্পষ্ট নীতি হিসেবে প্রথম বারের মতো ধার্য করা হয়েছে । অর্থনীতিবিদরা মনে করেন যে , এই ব্যবস্থায় গ্রামীণ বাজার সম্প্রসারিত করা , গ্রামীণ শ্রম শক্তি স্থানান্তরিত করা আর কৃষকদের আয় বাড়ানোর ওপর সুগভীর প্রভাব ফেলবে ।
চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের একটি অধিবেশনে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যে , ২০০৬ সাল আর পরবর্তী কয়েক বছরের মধ্যে পুঁজিবিনিয়োগের দিকস্থিতি আরো সংশোধন করতে হবে এবং কৃষি ও গ্রামীণ বুনিয়াদি ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অর্থ বরাদ্দ বাড়াতে হবে । এ থেকে প্রতিপন্ন হয়েছে যে , শহরকে কেন্দ্র করে নির্মাণকাজের প্রধান দিকস্থিতি গ্রামীণ নির্মাণকাজের দিকে স্থানান্তরিত করার ওপর আরো বেশি গুরুত্ব দেযা হবে ।
|