v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-01-06 15:58:13    
সিনচিয়াংয়ের উইগুর জাতির শিক্ষিকা বাহারগুলি

cri
    তিন বছর আগে ৫৫ বছর বয়সে গুলবাহার অবসর নিয়েছেন । দীর্ঘকালীন অধ্যাপনার কাজে তিনি উপলব্ধি করেছেন যে, সিনচিয়াংয়ের বৃত্তিমূলকশিক্ষা ও প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ অত্যন্ত দুর্বল , কোনো বিশেষ দক্ষতা না থাকার কারণে অনেক লোক উপযুক্ত কাজ পেতেন না । অনেক চিন্তাভাবনা ও অর্থ সংগ্রহ করার পর তিনি সিনচিয়াংয়ের রাজধানী উরুমুচিতে এক বৃত্তিমূলকপ্রযুক্তি প্রশিক্ষণ বিদ্যালয় খুলেন । যাদের জীবনযাত্রা কষ্টকরএবং যারা লেখাপড়া করতে অত্যন্ত আগ্রহী বিদ্যালয়টি সেই সংখ্যালঘূজাতির শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থান-সহায়ক প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ দেয় ।

    স্কুল খোলার সেই দিনই বিদ্যালয়টি কয়েকডজন কর্মচ্যুত লোককে গ্রহণ করেছে । তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ । তাদের বোঝা কমানোর জন্যে গুলবাহার তাদের শিক্ষার ফি কমিয়ে দিয়েছেন , এমনকি বাদ দিয়েছেন । তিনি বলেছেন,প্রত্যেকজনের শুধু নিজের খাওয়া, পরা ও বিনোদনের জন্যে জীবিত থাকা উচিত নয়, বরং সমাজের জন্যে কিছু তাত্পযময় কাজ করা উচিত ।নিজের বিদ্যালয়ে প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ লাভ করে শিক্ষার্থীরা পুনরায় কর্মসংস্থান পান দেখে আমি অত্যন্ত আনন্দবোধ করি । আমার এই ক্লান্তির বা কষ্টকর কাজের কিছু মূল্য সৃষ্টি হয়েছে ।

    সাইচিয়াং সাহেব গুলবাহারের প্রযুক্তিগতপ্রশিক্ষণ বিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। দুই সন্তানের বাবা এই ভদ্রলোক প্রশিক্ষণ নেয়ার আগে কর্মচ্যুত ও বেকার ছিলেন । চার সদস্য বিশিষ্ট পরিবার সরকারের দেয়া ১৫০ রেনমিনপির উপর নির্ভর করত । তাদের সংসারের কষ্ট বোঝা যায় । সাইচিয়াং আশা নিয়ে গুলবাহারের প্রযুক্তিগতপ্রশিক্ষণ বিদ্যালয়ে ঘরোয়া বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি মেরামত করার কৌশল শিখেন । টাকাপয়সা বাঁচানোর জন্যে তিনি মাঝেমাঝে খালি পেটে ক্লাসে আসেন ।

    সাইচিয়াংয়ের অসুবিধা জানার পর গুলবাহার শুধু তার শিক্ষার ফি বাদ দেননি বরং মাঝেমাঝে তাকে আর্থিক সাহায্যও দেন । গুলবাহার ও অন্যান্য শিক্ষকের সাহায্যে সাইচিয়াং প্রশিক্ষণ শেষে এক পারিবারিক বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি মেরামতের দোকান খুলেছেন । এখন তার ব্যবসা খুব ভাল চলছে এবং সংসারও ভালর দিকে যাচ্ছে ।

    গত আগষ্ট মাসে গুলবাহার দক্ষিণ সিনচিয়াংয়ে শিক্ষকতা করার সময়ে জানতে পেরেছেন যে,ভূমিকম্প থেকে রেহাই পাওয়া ২০জন অনাথ ছেলেমেয়ে মাধ্যমিক স্কুল পাশ করার পর অব্যাহতভাবে শিক্ষাগ্রহণ করতে সক্ষম হবে না । যাতে এই ২০জন অনাথ ছেলেমেয়ে নিজের বিদ্যালয়ে কিছু প্রযুক্তি আয়ত্ত করতে পারে , তার জন্যে তিনি তাদেরকে নিজের বিদ্যালয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ।

    স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের রাজধানী উরুমুচি শহরে প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ নিতে পারবে কথাটা শুনে এই সব অনাথ ছেলেমেয়েরা খুব খুশি হয় এবং এই সুযোগকে খুব মূল্যবান বলে মনে করে । তারা গুলবাহারের কাছে ভালভাবে পড়াশুনা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে । তাদের কথায় গুলবাহার অত্যন্ত মুগ্ধ হয়েছেন । তিনি বলেছেন , ছেলেমেয়েরা আমাকে কথা দিয়েছে যে , তারা ভালভাবে পড়াশুনা করবে ,তারা কোনো মতেই আমাকে নিরাশ করবে না । তাদের কথায় আমি মুগ্ধ হয়েছি ,আমি অবশ্যই তাদেরকে দক্ষ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলব ।

    এই ২০জন অনাথ ছেলেমেয়ে উরুমুচি আসার পর গুলবাহার মায়ের মতো তাদের লেখাপড়া আর দৈনন্দিন জীবনযাত্রার যত্ন দেন । ১৮ বছর বয়সী উইগুর জাতির মাইমুলান বলেছে , একবার অসুখ হয়ে আমি হাসপাতালে ভর্তি হই । প্রিন্সিপাল গুলবাহার তিনদিন ধরে হাসপাতালে আমাকে দেখাশোনা করেন এবং আমার জন্যে সুস্বাদু তরকারী রানা করেন । বিস্ময়ানন্দেআমি কয়েকবার কেঁদে উঠি ।

    গুলবাহার ছেলেমেয়েদের আগ্রহ অনুযায়ী প্রশিক্ষণের ক্লাস বন্দোবস্ত করেন । যেমন ছেলেরা ফ্রিজ , রঙিন টেলিভিশন, কাপড় ধোয়ার মেশিন সহ ঘরোয়া বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিমেরামত করার কৌশল শিখতে আগ্রহী আর মেয়েরা সেলাই করার কৌশল শিখতে আগ্রহী । গুলবাহার এই ছেলেমেয়েদের জন্যে অনেক কষ্টস্বীকার করেছেন বলে ছেলেমেয়েরা তাঁর কাছে অনেক কৃতজ্ঞ । নিজের কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করার জন্যে ১৭ বছর বয়সী আসিযা এক কবিতা লিখেছে । ভূমিকম্পে আমরা অনাথ হয়েছি , কিন্তু ভাগ্য ভাল যে , আমাদের জীবনে দেবতার মতো মা গুলবাহার এসেছেন। তিনি বসন্তের উষ্ণ বাতাসের মতো আমাদের সান্ত্বনা দিয়েছেন । তিনি আমাদের গ্রহণ করেছেন ,আমাদের বিদ্যা শিখিয়েছেন । শিক্ষিকা গুলবাহার, আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি ।

    তিন বছর ধরে মোট তিন হাজার ছ'শ ছেলেমেয়ে গুলবাহারের প্রযুক্তিগতপ্রশিক্ষণ বিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন । প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ লাভের পর বেশির ভাগ লোক উপযুক্ত কাজ পেয়েছেন । তাদের জীবনযাপনের অবস্থা অনেক উন্নত হয়েছে । বিদ্যালয়টির উপদেষ্টা বলেছেন , যারা পুনরায় কর্মসংস্থান পেয়েছেন তারা মাঝেমাঝে উপহার নিয়ে গুলবাহার ও অন্যান্য শিক্ষকদের দেখতে আসেন । ঐ দৃশ্য দেখে আমরা সবাই মুগ্ধ হই । আমরা সমাজের দুর্বল জনগোষ্ঠীর যত্ন দিতে আরও সংকল্পবদ্ধ ।