v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2006-01-05 15:06:28    
ছিংহাই হ্রদ

cri
    ছিনহাই-তিব্বত মালভূমিকে ' পৃথিবীর ছাদ' বলা হয়। এই মালভূমির উত্তর-পূবাঞ্চলে একটি হ্রদ আছে। এর নাম 'ছিংহাই হ্রদ। এই হ্রদের আয়তন ৪৫০০ বর্গ কিলোমিটার। এই বিশাল হ্রদএকটি রহস্যময় হ্রদ। প্রাচীন কাল থেকে এটা সব সময় একটি দশর্নীয়স্থান।বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন আর আকর্ষনীয় প্রাকৃতিক দৃশ্য ছাড়া, ছিংহাই হ্রদের চার দিকে বৈচিত্রময় জাতি গোষ্ঠীর রীতিনীতি অধিক থেকে অধিকতর পযর্টকদের আর্কষণ করছে। এখন শুনুন এ সম্বন্ধে চীন আন্তর্জাতিক বেতারের নিজস্ব সংবাদদাতার লেখা একটি প্রতিবেদন।

    গত আগস্ট মাসের এক দিন। সংবাদদাতা খুব সকালে ঘুম থেকে উঠলেন।তিনি ছিংহাই প্রদেশের রাজধানী সিনিং শহর থেকে গড়ীতে চড়ে পশ্চিম দিকে গেলেন। যাওয়ার পথে সারি সারি পাহাড়, বিশাল তৃণভূমি এবং দলে দলে শুরু আর ভেড়া নজরে পড়ে। তাদের গাড়ী প্রায় ১৫০ কিলোমিটার চলার পর দূর থেকে ছিংহাই হ্রদ দেখা গেলো। হ্রদের তীরের কাছে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে হ্রদের পানি আরও নীল হয়ে গেছে। হালকা নীল রং থেকে প্রগাঢ় নীল রং পরিবর্তিত হয়ে গেছে। সংবাদদাতা ছিংহাই হ্রদের দক্ষিণ পারের হাইনান তিব্বতী স্বায়ত্তশাসিত বিভাগের গনহো জেলায় এসে পৌঁছলেন।এই জেলার পযর্টন বিভাগের পরিচালক লি ইয়েন লিন সংবাদদাতাকে ছিংহাই হ্রদ গঠন প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করেছেন। ২০ কোটি বছর আগে ছিংহাই মালভূমি ছিল একটি সমুদ্র । পরে ভূ-প্রকৃতির পাহাড় তৈরীর অবিরাম প্রক্রিয়ার ফলে সমুদ্রের তলদেশ ধীরে ধীরে উচু হয়ে গেছে। সমুদ্রের পানি চার দিকে উচু উচু পাগাড়ে ঘেরা । আস্তে আস্তে এক একটি ছোট-বড় হ্রদ গঠিত হয়। ছিনহাই হ্রদ এ সব ছোট-বড় হ্রদের অন্যতম। দেশী-বিদেশী পযর্টকরা যাতে ভালভাবে ছিংহাই হ্রদের সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন সেই জন্যে গনহো জেলা ১০টি বড় জাহাজ কিনেছে। এ প্রসংগে পযর্টন ব্যর্রোর পরিচালক লি ইয়েন লিন বললেন,

    জাহাজে বসে বসে আমরা প্রধানত দুটো দর্শনীয়স্থান দেখতে পারি। একটি হল পাখি দ্বীপ। এই দ্বীপ হল চীনের অতিথি পাখি সমাবেশিত হওয়ার জায়গা। এই দ্বীপে চল্লিশাধিকপ্রজাতির পাখি আছে। আরেকটি দেখার মতো জায়গা হল হাইসিন পাহাড়।এই জায়গা হল পবিত্রধমীর্য় জায়গা।এর ইতিহাস সুদীর্ঘকালের। ভ্রমন তরীতে উঠে দূরের দিকে তাকালে বিশাল ছিংহাই হ্রদ দৃষ্টিগোচরহয়। নীল রংয়ের পানি সূর্যের আলোতে চকচক করছে। সাধারণ স্থল-বেষ্টিত হ্রদের তুলনায় ছিনহাই হ্রদ আরও বিশাল। তাই যখন জাহাজ হ্রদের পানির ওপর এগিয়ে চলে তখন মানুষ সমুদ্রের সমতল থেকে ৩২০০ মিটার উঁচু মালভূমির উপস্থিতি অনুভব করতে পারে না। পাখির দ্বীপ ছিংহাই হ্রদের একটি চিত্তাকর্ষক জায়গা বলা যায়। এই দ্বীপ ছিনহাই হ্রদের উত্তর-পশ্চিমাংশে অবস্থিত। দ্বীপের আয়তন ০.৮ বর্গ কিলোমিটার। বসন্তকাল আমার সঙ্গে সঙ্গে চীনের দক্ষিণাংশ আর দক্ষিণ-পূর্বাংশের নানা ধরনের অতিথি পাখিগুলো এই দ্বীপে সমাবেশিত হয়। পাখি দ্বীপের পরিবেশ রক্ষা করার জন্যে স্থানীয় সরকার এই দ্বীপে একটি চৌকি নির্মান করেছে। পযর্টকরা চৌকিতে উঠে মুক্তমনে পাখির দ্বীপের গোটা দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন। চীনের হোনান প্রদেশ থেকে আসা ম্যাডাম চো ইন পরিদর্শন করার পর সংবাদদাতাকে বললেন,

    আমি কোন দিন এত বেশী পাখি দেখি নি। কি সুমহার , কি সুন্দর। এত বেশী পাখি দেখার সুযোগ পাওয়া খুব কঠিন। প্রকৃতিতে একটি পাখির স্বর্গ রয়েছে বলে আমি খুব খুশী। হাইসিন পাহাড় ছিনহাই হ্রদের আরেকটি দর্শনীয়স্থান। এই পাহাড় হ্রদের কেন্দ্রের একটু দক্ষিণ দিকে অবস্থিত। পাহাড়ের পরিবেশ সুন্দর। পাহাড়ে মন্দিরও আছে। হাইসিন পাহাড়ে দাঁড়িয়ে চার দিকে তাকালে একটি প্রাকৃতিক চিত্রাঙ্কন মানুষের চোখে পাড়ে।

    শ্রোতা বন্ধুরা, এ সব দেখার পর আপনার ছিনহাই হ্রদের ভ্রমণ শেষ হয়নি। কেননা হ্রদের তীরের রীতিনীতি না জানা চলবে না।

    ২০টিরও বেশী সংখ্যালঘু জাতি ছিনহাই হ্রদের চার দিকে বসবাস করে। এ সব সংখ্যালঘু জাতির মধ্যে তিব্বত জাতির লোক সংখ্যা সবচেয়ে বেশী। পযর্টকরা যাতে তিব্বত জাতির বৈশিষ্ট্যময় সংস্কৃতি আর রীতিনীতি সম্বন্ধে জানতে পারেন সেই জন্যে স্থানীয় সরকার নানা ধরনের তাত্পর্যপূর্ণ তত্পরতার আয়োজন করেছে। আপনারা একটু আগে যে সংগীত শুনেছেন তা হল পযর্টকদের জন্যে যুবক-যুবতীদের গাওয়া বিয়ের অনুষ্ঠানের সংগীত। গনহো জেলার সংস্কৃতি কেন্দ্রের উদ্যোগে এ সব তত্পরতা আয়োজিত হয়। এই সংস্কৃতি কেন্দ্রের পরিচালক ছেনাচি সংবাদদাতাকে ব্যাখ্যা করে বললেন, তিব্বতী পরিবারের বিয়ের রীতিনীতির সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া পযর্টকদের দেখানোএই অনুষ্ঠান আয়োজনের লক্ষ্য। তিনি বললেন,

    আসলে এই বিয়ের অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত হয়েছে। পযর্টকরা এই অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারেন। পযর্টকরা যেমন বরের ভূমিকা অভিনয় করতে পারেন তেমনি বধুর ভূমিকা অভিনয় করতে পারেন।

    অন্য একটি জায়গায় তিব্বত শৈলীর ঘোড়ার দৌড় প্রতিযোগিতাপরোদ্যমে চলছে। দশর্করা মাঝে মাঝে উচ্ছাস করছেন।

    গনহো জেলার সংস্কৃতি আর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যুর্রোর পরিচালক লি হাই ছিন সংবাদদাতাকে বললেন, আমরা সবচেয়ে ভাল স্থানীয় রীনিনীতি আর সংস্কৃতি পযর্টকদের সামনে দেখিয়েছি। আমাদের উদ্দেশ্য এই যে, পযর্টকরা ছিনহাই হ্রদ আসার পর শুধু যে এখানকার সুন্দর দৃশ্য দেখতে পারেন তাই নয় হ্রদের তীরের সাংস্কৃতিক আকর্ষণও দেখতে পারেন। আমার মনে হয়, এ সব দেখা উচিত।

    পর্যটকদের মধ্যে অনেকেই বিদেশী। ফ্রান্স থেকে আসা একজন মহিলা তাঁর কয়েক জন সফরসংগীর সঙ্গে ছিনহাই হ্রদ পরিদর্শন করার পর সংবাদদাতাকে বললেন,

    আমার চোখে ছিনহাই হ্রদ সুন্দর। হ্রদের পযর্টন ইভেন্টও চমত্কার। তা ছাড়া, এখানকার মানুয যে কাপড়-চোপড় পরে তা খুব সুন্দর। আমি পছন্দ করি।