রাতে খাওয়ার পর আচার্য হল ঘরে পুজায় বসলেন । গভির রাতে একবার ঝড়ও উঠলো । তাঁর একটু তন্দ্রা এসেছিলো । এমন সময় তিনি শুনলেন কে যেনো তাঁকে ডাকছে । চোখ মেলে দেখলেন , কে একজন হল ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে কাঁদছে ।
আচার্য তাকে ছদ্মবেশি দানব মনে করে ভত্র্সনা করলেন এবং দুর হয়ে যেতে বললেন ।
মানুষটা বিনয়ের সঙ্গে প্রণাম করে জানালো , যে সে ভুত অথবা দানব নয় । সে ১৫ মাইল দুরের উজি রাজ্য থেকে এসেছে । তার রাজ্যে একবার খরা হয় । তখন সে এক তাও সন্যাসির সাহায্যে রাজ্যে বৃষ্টি নামায় । ফলে রাজ্যের সবার প্রাণ বাঁচে । কৃতজ্ঞতায় সে তাকে ধর্ম ভাই বলে গ্রহণ করে । তারপর থেকে ঐ তাও সন্যাসি তার সঙ্গেই থাকতো । একদিন ষড়যন্ত্র করে তাও সন্যাসি তাকে কুপের মধ্যে ফেলে দেয় । তারপর পাথর আর মাটি চাপা দিয়ে সেখানে কলাগাছ লাগায় । এরপর রুপ বদল করে ঐ শয়তান । তার রাজ্য এবং সমস্ত সম্পদ অধিকার করে নেয় । তিন বছর যাবত এই অবস্থা চলছে । এখন একমাত্র আচার্যই পারেন তাকে রক্ষা করতে । সে চায় প্রতিশোধ নিতে । ঐ লোকটা আচার্যের হাতে সোনাদিয়ে মোড়া একটা জেড পাথরের রাজদন্ড দিলো । এটা দেখিয়ে আচার্য উজি রাজ্যে প্রবেশ করতে পারবেন ।
সবটাই ছিল আচার্যের স্বপ্ন । কিন্তু জেড পাথরের রাজদন্ডটা সত্যি । উখোং সব শুনে বললো , নিশ্চয় এ ঘটনা সত্যি । সে আরও বললো , গুরুদেব এই পুজার ঘরেই থাকবেন । আমি কাল এখানেই নিয়ে আসবো তাকে ।
পরদিন সকালে এক ডিগাবাজি খেয়ে উখোং উজি রাজ্যে পৌঁছুলো । সে দেখলো নগরের পুর্ব ফটক দিয়ে একদল রাজকর্মকর্তা ও রাজকর্মচারি বের হলো তাদের নেতা হলো এক জেনারেল । তাদের সঙ্গে উজি রাজ্যের যুবরাজও ছিলো । উখোং এক সাদা খরগোশের রুপ নিলো । যুবরাজ তাকে তীর বিদ্ধ করে ধরার জন্য দৌড়াতে লাগলো পিছু পিছু । এভাবে যুবরাজকে চমত্কার সেই কাঠের মন্দিরের সামনে নিয়ে এলো উখোং । যুবরাজ মন্দিরে ঢুকে দেখলো একজন সন্যাসি বসে আছে । তিনি যুবরাজকে দেখে দাঁড়ালেন না । যুবরাজ এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সন্যাসিকে বন্দি করার নির্দেশ দিলো । উখোং মন্ত্র পড়ে আচার্যকে আড়াল করলো । তখন আর সন্যাসির কাছাকাছি পৌঁছুতে পারলো না কেউ । যুবরাজ এতে আরও ক্ষিপ্ত হলো । এবার আচার্য তাকে জেড পাথরের রাজদন্ড দেখালেন । যুবরাজ জানতে চাইলো কেমন করে এই সম্পদ আচার্যের হাতে এলো । আচার্য তাঁর স্বপ্নের ঘটনা খুলে বললেন । যুবরাজ কাহিনি পুরোপুরি বিশ্বাস না করলেও বিষাদগ্রস্ত হলো ।
উখোং বললো , রাজমাতাকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেই যুবরাজ ঘটনার সত্যতা জানতে পারবে । কিন্তু এসব কথা কোনোমতেই কাউকে বলা হবে না । কারণ আমরা ঐ শয়তান দানবকে ধরার চেষ্টা করবো । যুবরাজ চলে গেলো মন ভার করে ।
আচার্য ঘুমিয়ে গেলেন । চু মেঘের মতো নাসিকা গর্জন করে ঘুমাচ্ছিল । উখোং তাকে গিয়ে জাগালো । সে ঠাট্টা করে বললো , যুবরাজ বলেছে দানবের নাকি এক মহাসম্পদ আছে । আজ রাতেই সেটা চুরি করে তোমার কাছে রাখতে চাই ।
উত্ফুল্ল হয়ে উঠলো চু । বাইরে এসে তারা মেঘে চড়ে উজি রাজ্যের রাজধানিতে এলো । তারা প্রাসাদের বাগানের কাছে এসে দেখলো সেখানে লেখা আছে "সম্রাটের বাগান" । বাগানের ফটকে লোহার তালা ঝুলছে । তালা ভেঙে দুজনে বাগানে ঢুকলো । সেখানে সত্যি তারা কলাগাছ দেখলো । উখোং বললো এখানেই আছে সেই সম্পদ । চু কলাগাছটা উপড়ে ফেললো । সেখা গেলো সত্যি এক পাথরের ঢাকনার মতো কি যেনো আছে । সেই ঢাকনা সরাতেই পুরনো কুপ দেখা গেলো । প্রায় ৭০/৮০ ফুট গভির সেই কুপ । উখোং তার ডান্ডাকে দড়িতে রুপান্তরিত করে কুপে নামালো চু-কে । সেখানে ডুব দিয়ে চু ড্রাগন রাজার প্রাসাদে পৌঁছুলো। প্রহরি দানবের কাছে চু-এর খবর পেয়ে ড্রাগন রাজা মনে করলেন যে আচার্যই হয়তো উজির রাজকে উদ্ধার করতে পাঠিয়েছেন । ড্রাগন আনন্দিত মনে চুকে সম্পদ দেখাতে নিয়ে গেলেন ।
|