গত বিশাধিক বছর ধরে প্রতি বছর তিব্বতী আর অন্যান্য সংখ্যালঘুজাতির বিপুল সংখ্যক ছাত্রছাত্রী উচ্চ শিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে লেখাপড়ার জন্য চীনের অভ্যন্তরভাগে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তি হয় । তাদের মধ্যে অনেকেই কিছু লোক মাস্টার্স ডিগ্রি বা ডক্টরেট ডিগ্রি পাওয়ার জন্য বিদেশেও অধ্যয়ন করতে যায় । শিক্ষার কোর্স সম্পন্ন হবার পর তারা তাদের এই জন্মস্থল তিব্বতে ফিরে যায় । তারা তাদের অর্জিত জ্ঞান দিয়ে তুষার মালভূমিতে জন্ম ও বড় হওয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ।
৪১ বছর বয়স্ক দাওয়াছিরেন তিব্বতের ইটখাজে অঞ্চলের পাইলং জেলার একটি কৃষক পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন । ২২ বছর বয়সে পেইচিং কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘুজাতি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হবার পর তিনি তিব্বত স্বায়ত্ত শাসিত অঞ্চলের সমাজ বিজ্ঞান একাডেমীতে চাকরি করেন । ১০ বছর পর জাতিতত্ত্ব বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা লাভের জন্য তাকে যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও অঙ্গরাজ্যের কেইস্ ওয়েস্টার্ন রির্জাভ বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয় ।
১৯৯৮ সালে তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন । তার পর তিনি নিজের জন্মস্থল-তিব্বতে ফিরে আসেন । এবার তিনি তিব্বতের সমাজ বিজ্ঞান একাডেমীতে চাকরি করেন নি , দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য তিব্বতের গরীব তিনজে জেলায় গিয়েছেন ।
তিনজে জেলা চীনের চুমোলংমা পর্বতশৃংগের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের প্রকৃতি সংরক্ষণ এলাকায় অবস্থিত । দাওয়া আবিষ্কার করেন যে , এই সংরক্ষণ এলাকার ৪টি জেলার মধ্যে শুধু তিনজে জেলায় আন্তর্জাতিক বেসরকারী সংস্থার কোনো সহযোগিতা প্রকল্প নেই । এতে তিনি খুব আশ্চর্য হলেন । তার প্রচেষ্টা আর মধ্যস্থতায় মার্কিন ট্রেস্ ফাউন্ডেশনের ৮০ লক্ষ ইউয়ান অর্থানুকূল্যে ৪ বছর মেয়াদী একটি গ্রামীণ দারিদ্র্য বিমোচন প্রকল্প তিনজে জেলায় প্রতিষ্ঠিতহয় ।
পুঁজিবিনিয়োগের উত্তম ফলপ্রসূতা অর্জনের জন্য দাওয়া ৪ মাসের মধ্যে একটি স্থানীয় থানায় তদন্ত চালান । তিনি আবিষ্কার করেন যে , তিনজে জেলার সবচেয়ে গরীব গ্রামের নাম জাসিচি । সেখানকার গ্রামবাসীদের বাসার মেঝের আয়তন ছোট , তা শুধু তুংফুং মার্কার একটি ট্রাকের মতো । সুতরাং গ্রামবাসীরা নিজের গ্রামকে তুংফং গ্রাম নামে ডাকেন ।
দাওয়া গ্রামবাসীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার জন্য চেষ্টা করেন । তিনি গ্রামবাসীদের নিয়ে একটি সভা ডাকেন এবং তাদেরকে ধনী হবার পরবর্তী পরিকল্পনা জিজ্ঞাসা করেন ।
দু'দিনের সভা শেষে সবাই বলেন যে , ধনী হবার পর গ্রামের সব পতিত জমিকে আবাদী জমিতে রুপান্তরিত করা দরকার ।
আসলে তুংফং গ্রামে পানির অভাবের দরুণ পর্যাপ্তআবাদী জমি থাকলেও পুরোপুরি ব্যবহার করা যায় নি । গ্রামে সমস্ত জমিতে জলসেচের জন্য শুধু একটি ক্ষুদ্র হ্রদের উপর নির্ভর করতে হতো । কিন্তু সমুদ্র সমতলের তুলনায় হ্রদের পানির উচ্চতা নীচু , জমি তার চেয়ে উঁচু । সুতরাং সারা বছরে ৬০ শতাংশ জমি শুষ্ক ছিল । দাওয়ার সাহায্যে জলসেচ প্রকল্প নির্মাণের জন্য গ্রামবাসীরা প্রকৌশলীদের আমন্ত্রন জানান । জমিতে জলসেচের জন্য তারা পাম্প কিনেছেন ।
১৯৯৯ সালের মে মাসে তুংফং গ্রামে জমিতে প্রথম বারের মতো পাম্প দিয়ে জলসেচ শুরু হয় । এটা তারা জীবনে কখনো ভুলতে পারবেন না ।
গ্রামবাসীরা খুব গরীব ছিলেন । তারা সবাই আমাকে হাদা নামে শুভেচ্ছামূলক এক ধরণের রেশমী ওড়না উপহার দেন । পানি দেখে গ্রামবাসীরা খুব উত্তেজিত হয়ে উঠেন । কোনো কোনো বৃদ্ধা পানির জন্যে উপাসনা করেন । গ্রামবাসীরা কুওচুয়াং উ নামে স্থানীয় এক ধরণের নাচ করেন এবং যবের মদ খান।
জমিতে জলসেচ সমস্যা নিষ্পত্তি হবার পর গ্রামের সকল পতিত জমি গ্রামবাসীদের মাঝে বন্টন করা হয় । তারা যব ও মটর চাষ করেন । ঐ বছরে গ্রামের খাদ্য শস্যের বার্ষিক উত্পাদন পরিমাণ ২০ হাজার কিলোগ্রাম বেড়ে ৫০ হাজার কিলোগ্রামে দাঁড়ায় ।
তুংফং গ্রামে জলসেচ প্রকল্প সম্পন্ন হবার পর দাওয়া তিনজে জেলায় আরো পঞ্চাশাধিক দারিদ্র্য বিমোচন প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেন । এই সব প্রকল্পের মধ্যে স্কুল , বিশুদ্ধ পানি আর গ্রামীণ চিকিত্সা ব্যবস্থা সংস্কারের প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত ।
চার বছর আগে বিশ্ব প্রকৃতি তহবিল দাওয়াকে তিব্বত সম্পর্কিত প্রকল্পের কর্মকর্তা নিয়োগ করেছে । তার কর্তব্য হচ্ছে তিব্বতের উত্তর -পশ্চিমাংশের ছাংথাং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের প্রকৃতি সংরক্ষণ এলাকায় বন্য প্রাণী সংরক্ষণের দায়িত্ব বহন করা ।
ছাংথাং প্রকৃতি সংরক্ষণ এলাকা যেমন চীনের বৃহত্তম প্রকৃতি সংরক্ষণ এলাকা , তেমনি তাও বিশ্বের বৃহত্তম মালভূমির চিড়িয়াখানা । ওখানে তিব্বতী ছাগল , বন্য তিব্বতী ষাঁড় , ভল্লুক, বন্য গাধা ইত্যাদি বিরল বন্য প্রাণী দেখা যায় । ছাংথাং এলাকায় বন্য প্রাণীর সংখ্যা ও প্রজাতি-বৈচিত্র অধিক থেকে অধিকতর হয়ে উঠার সংগে সংগে তারা স্থানীয় গবাদি পশুদের ঘাস খাওয়ার প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু করে । ভল্লুক মাঝে মাঝে পলুপালকদের বাড়িতে প্রবেশ করে গবাদি পশুর ওপর আক্রমণ চালায় । এতে পশুপালকদের খুব মন খারাপ হয়েছে । তারা খুব দুঃখিত । কেন এই সব বন্য প্রাণীকে পালা হচ্ছে ?
এইভাবে দাওয়া স্থানীয় পশুপালক আর বন্য প্রাণীদের মধ্যেকার সম্পর্কের সমন্বয় করতে শুরু করেন ।
আমরা স্থানীয় পশুপালকদের জন্য প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করেছি । আমরা পরিবেশ সংরক্ষণের দিক থেকে বন্য প্রাণী সংরক্ষণের তাত্পর্য আর প্রয়োজনীয়তা বুঝিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছি । শিক্ষা কোর্সে প্রশিক্ষণ নেয়ার পর তারা বুঝতে পেরেছেন যে , বন্য প্রাণী সংরক্ষণের মাধ্যমে যেমন নিজের তেমনি বংশধরদেরও উপকার হবে ।
২০০৪ সালে দাওয়া একটি তহবিল স্থাপনের পরিকল্পনাও প্রণয়ন করেছেন । এই পরিকল্পনা অনুসারে বন্য প্রাণীর জন্য যে সব পশুপালক ক্ষতিগ্রস্ত হয় , তাদের উপযুক্ত অর্থনৈতিক ক্ষতি- পূরণ দেয়া হবে । এই কার্যক্রম পশুপালকদের প্রশংসা পেয়েছে । এখন তারা বন্য প্রাণীকে পরিবারের দ্বিতীয় রকম গবাদি পশু হিসেবে সংরক্ষণ করেন ।
|