১৯৯০ সালের ডিসেম্বর মাসে শুল্ক আর বাণিজ্য বিষয়ক সাধারন চুক্তির উরুগুয়ায় দফা আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পর, সালয়েশিয়ার তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী মহাবির আসিয়ান এবং চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ "পূর্ব এশিয় অর্থনীতি কমিউনিটি" প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। কিন্তু দেশী-বিদেশী চাপে পড়ে তা বাস্তবায়িত হয় নি।
বিশ্ব আর আঞ্চলিক অর্থনীতির অবাধকরণের জন্যে উদ্ভূত প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রচন্ড থেকে প্রচন্ডতর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, ১৯৯৯ সালে আসিয়ানের পঞ্চম শীর্ষ সম্মেলনে প্রকাশিত একটি ঘোষণায় জোর দিয়ে বলা হয়, আসিয়ানের সদস্য দেশগুলোর উচিত রাজনীতি, অর্থনীতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একীকরণ দ্রুততর করা। সম্মেলনে এরপরের প্রতি বছর শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, এবং শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেয়ার জন্যে এশিয়ার অন্য দেশগুলোকে স্বাগত জানানো হয়। ১৯৯৭ সালে এশিয়ার আর্থিক সংকট পূর্ব এশীয়ার দেশগুলোর জন্যে বিপর্যয়মূলক ক্ষতি এনে দিয়েছে। তবে এই সংকট বিভিন্ন দেশের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতা উন্নয়নের প্রবল ইচ্ছাও আরো তীব্রতর করে তুলে ১৯৯৭ সালের শেষ দিকে আসিয়ান, চীন এবং জাপানও দক্ষিণ কোরিয়ার নেতারা কুয়ালালুম্পুরে ১০+৩ সহযোগিতা ব্যবস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়। গত কয়েক বছরে, "১০+৩" ক্রমে ক্রমে পুর্ণাংগ ব্যবস্থাসমুন্ন, বিষয়বস্ত সমৃদ্ধ, প্রানবন্তু, বিরাট সম্ভাবনাময় এক সহযোগিতা ব্যবস্থায় পরিণত হয়। ১০+৩ পূর্ব এশীয় চেতনা জোরদার করেছে, পূর্ব এশিয়ার উন্নয়ন ত্বরান্বিত করেছে, দৃঢ়ভাবে পূর্ব এশীয় সহযোগিতার পথনির্দেশক স্থাপন করেছে এবং সহযোগিতাকে আরো গভীড় করার জন্যে দৃঢ় ভিত্তি স্থাপন করেছে।
২০০১ সালে, ১০+৩ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী পূর্ব এশিয়ার ১৩টি দেশের ২৬জন বিশেষজ্ঞকে নিয়ে গঠিত "পূর্ব এশিয়ার ভবিষ্যত্বানী গ্রুপ" "পূর্ব এশিয়া সাধারণ কমিউনিটি" প্রতিষার একটি রির্পোট পেশ করেন। তাতে পূর্ব এশীয় অঞ্চলের সহযোগিতার জন্যে উন্নয়নের এক নীল নকসা উপস্থাপন করা হয়। ২০০৪ সালে লাওসের রাজধানী ভিয়েনটিয়ানে অনুষ্ঠিত দশম আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনে আসিয়ান আর চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার নেতারা ২০০৫ সালে কুয়ালালুম্পুরে প্রথম পূর্ব এশীয় শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেন।
২০০৫ সালের এপ্রিল মাসে, আসিয়ানের ১০টি সদস্য দেশ ফিলিপিনসের সেবুতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে পূর্ব এশীয় শীর্ষ সম্মেলনের সময়সূচি, পদ্ধতি ও অংশগ্রহণকারী দেশ ইত্যাদি প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করা হয় এবং এইমর্মে ফলে ঐক্য মতে প্রতিষ্ঠিত হয় যে, আসিয়ানের উচিত পূর্ব এশীয় শীর্ষ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় আর প্রধান চালিকা ভূমিকা পালন করা। আসিয়ান অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর শর্তও উপস্থাপন করেছে সে শর্তগুলো হচ্ছে এই যে,, আসিয়ানের সঙ্গে বাস্তবসম্মত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক থাকতে হবে, আসিয়ানের সংলাপকারী অংশদারী হতে হবে এবং "দক্ষিণ-পূর্ব মৈত্রী ও সহযোগিতা চুক্তি"-তে শামীল হতে হবে। আগামী জলাই মাসে ভিয়েনটিয়ানে অনুষ্ঠিত ৩৮ তম আসিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলনে প্রস্তাব করা হয়, পূর্ব এশীয় শীর্ষ সম্মেলন নিয়মিত আসিয়ানের সদস্য দেশে অনুষ্ঠিত হবে, আসিয়ানের পালক্রমিক সভাপতি দেশ তার আয়োজন করবে। একই সময়ে ১০+৩ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলনে প্রথম পূর্ব এশীয় শীর্ষ সম্মেলন ১৪ই ডিসেম্বর কুয়ালালুম্পুরে অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আসিয়ানের ১০টি সদস্য দেশ আর চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া ছাড়া, পূর্ব এশীয় শীর্ষ সম্মেলনে অষ্ট্রেলিয়া, ভারত ও নিউজিল্যান্ডকেও আমন্ত্রণ করা হয়।
চীন দৃঢ়ভাবে পূর্ব এশিয়া সহযোগিতাকে সমর্থন করে এবং তাতে অংশ নেয়। চীন পূর্ব এশীয় শীর্ষ সম্মেলনে আসিয়ানের প্রধান ভূমিকা সমর্থন করে। পূর্ব এশিয়ার শীর্ষ সম্মেলনের অনুষ্ঠান পূর্ব সহযোগিতা প্রক্রিয়ায় একটি বিরাট ঘটনা। এ সম্মেলন অংশগ্রহণকারী দেশগুলো কর্তক মিলিতভাবে উন্নয়নের কর্মসূচী আলোচনার জন্যে একটি নতুন প্ল্যাটফোর্ম স্থাপন করেছে এবং পূর্ব এশিয়ার সহযোগিতাকে আরো বিশাল, ব্যাপক ও উচ্চপর্যায়ে উন্নতী করবে।
|