|
|
(GMT+08:00)
2005-12-29 14:43:45
|
|
ফনহুয়াং শহর
cri
চীনের মধ্য অঞ্চলের হুনান প্রদেশের পশ্চিমাঞ্চলে ফনহুয়াং নামে একটি ছোট শহর আছে। শহরের আয়তন বেশী বড় নয় কিন্তু শহরের ইতিহাস সুদীর্ঘকালের। শহরের চার দিকে পাহাড়ের ঘেরা । ওখানকার দৃশ্য চিত্তাকার্ষক। নিউজল্যান্ডের লেখক রেভি আলেই যিতি চীনের প্রায় ৬০ বছরে বসবাস করেছেন তিনি বললেন, ফনহুয়াং হল চীনের সবচেয়ে সুন্দর ছোট শহর। আজকের এই আসরে আপনাদের এই ছোট শহরে বেড়াতে নিয়ে যাচ্ছি। ফনহুয়াং চীনের বিখ্যাত আধুনিক লেখক সেন ছন ভেনের জন্মস্থান। তাঁর লেখাতে মাঝে মাঝে একটি বৈশিষ্ট্যময় প্রাচীন নগর আবির্ভাব হয়। এই প্রাচীন নগর পাঠকদের মনে গভীর ছাপ সৃষ্টি রেখেছে। এই প্রাচীন নগর হল ফনহুয়াং । যদি কেউ সশরীরে ফনহুয়াং নগরে বেড়াতে যান তাহলে তিনি অবশ্যই লেখক সেন ছন ভেনের লেখাতে বনির্ত সুন্দর দৃশ্য দেখতে পারেন। বিশেষ করে তাঁর লেখাতে নগরের পুরাতন অংশ যে বর্ণনা করা হয়েছে তা ঠিক অতীতের মতো সংরক্ষিত রয়েছে। উঁচু উঁচু উত্তর দ্বার থেকে ৪ শতাধিক ইতিহাস সম্পন্ন প্রাচীন প্রাচীর পার হয়ে ফনহুয়াং নগরে প্রবেশ করলে লোকেরা সুন্দর রোপালী আলঙ্কার পরা মিও জাতির মেয়েরা মরনম লোক সঙ্গীত গাইতে দেখতে পারেন। ফনহুয়াং নগরের লোকসংখ্যা ৩ লক্ষ। অধিকাংশ মিও আর টু জাতি। এই ছোট নগরে লোকেরা শুধু যে জাতীয় পোষাক পরা মিও আর টু জাতির লোককে দেখতে পারেন তাই নয় , এ দুটো জাতির স্থাপত্যের রীতিনীতি প্রতিনিধিত্ব-করা বসতবাড়ীও দেখতে পারেন। ফনহুয়াং নগর বেশ ছোট। আধা ঘন্টার মধ্যে গোটা নগর ঘুরে বাড়ানো যায়। গোটা নগরে বেশী কয়েকটি দর্শনীয়স্থান আছে। এগুলোর মধ্যে নগরের পশ্চিমাংশের পুরাতন এলাকা পযর্টকদের বেশী আকর্ষন করে। দীর্ঘ বছর পর এখানে মোটামুটি ত্রয়োদশ শতাব্দী থেকে গঠিত এতিহ্যিক বিন্যাস আর চেহারা সংরক্ষিত রয়েছে। এই পুরাতন এলাকা টোচিয়াং নদীর পাশে। নদীর সচ্ছ পানি এই ছোট নগর দিয়ে প্রবাহিত হয়। নগরে অনেক ছোট-বড় গলি ছড়িয়ে পড়ে। সমস্ত গলি লাল রংয়ের পাথর বসানো হয়। গলির দু'পাশে খাট খাট বাড়ীঘরের ইতিহাস শতাধিক বছরের। নগরের স্থাপত্যগুলোর বিন্যাস অত্যন্ত সুশৃংখল। সড়কের পাশের বাড়ীঘরের মধ্যে অধিকাংশই দোকান হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। চার পাশের পাহাড়ে অনেক মন্দির নিমির্ত হয়েছে। ফনহুয়াংএর দৃশ্য মনোরম বলে দেশের বিভিন্ন জায়গার চিত্রাঙ্কন শিল্পীরা এখানে ছবি আঁকতে আসেন। ডোচিয়াং নদীর পারে ছবি আঁকা একজন মেয়ে সংবাদদাতাকে বললেন, তিনি তাঁর পড়ার সাথীদের সঙ্গে দক্ষিণ চীনের জেনচিয়াং থেকে এখানে এসেছেন। আমি জেনচিয়াং মাধ্যমিক স্কুলের একজন ছাত্রী।প্রত্যেক বছর আমাদের স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীরা গাড়ীতে এখানে আসে। এখানে আসতে পথে দশ-বারো ঘন্টা লাগে। এখানকার বাড়ীঘরগুলো বৈশিষ্ট্যময়। আমার খুব ভাল লেগেছে। এই যুবতীর দৃষ্টিতে স্বচ্ছ ডোচিয়াং নদীর পানি, নদীর দু'পারের সারি সারি বৈশিষ্ট্যময় বাড়ীঘর, সরল পাথর রাস্তা, সুন্দরী মিও জাতির মেয়েদের নিয়ে এই ফনহুয়াং ছোট নগর গঠিত হয়েছে। ফনহুয়াং ছোট নগরের রাস্তায় হাঁটলে মনে হয় লোকেরা সুদূর অতীতে ফিরে গেছে। রাস্তার দু'পাশের দোকানপাট সবই প্রাচীন কালের শৈলী। নদীর পানি ধীরে ধীরে প্রবাহিত হচ্ছে। স্হানীয় লোক পানিতে কাপড়চোপড় ধুইতে ধুইতে গল্প বলে। তারা জানেন না তারাও পযর্টকদের দৃষ্টিতে একটি দৃশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি একটি ছোট নোকায় চড়ে ডোচিয়াং নদীর দু'পাশের দৃশ্য উপভোগ করতে শুরু করি। দৃশ্য উপভোগ করার সঙ্গে সঙ্গে আমি নোকার মালিকের গল্প শুনি। তিনি বলেছেন, আমি তিন বছরের জন্যে নোকা চালিয়েছি। নদীর দু'পারের প্রত্যেক পরিবারে নোকা চালানোর লোক আছে। এখন নদী বরাবর এলাকায় অধ্যুষিত স্থানীয় লোকেরা সচ্ছল জীবন যাপন করছে।পযর্টন মৌসুমে এখানকার স্থানীয় লোক খুব ব্যস্ত। এই বুরো লোক ফুহুয়াংএ বড় হয়েছেন। অতীতে তিনি কৃষির উপর নির্ভর করে জীবনযাপন করতেন। এখন কৃষির কাজ ছাড়া, তিনি পযর্টন মৌসুমে পযর্টকদের স্বাগত জানান। পযর্টকরা তাঁর নৌকায় বসে নদীর দু'পাশের দৃশ্য উপভোগ করেন। নদীর দু'পারের দৃশ্য উপভোগ করার পর আমি এ সব পাথর বসানো সড়কে ফিরে এলাম। সড়কের দু'পাশের দোকাগুলোতে আমি স্মরক জিনিস খুঁজতে গেলাম। ফনহুয়াং নগরের দোকানগুলোতে সবচেয়ে জনপ্রিয় জিনিস হল আদার তৈরী মিস্টি। এ ধরনের মিস্টি হাতের তৈরী। একটি মিস্টি তৈরীর ওয়াকশপে মালিক জেন সংবাদদাতাকে বললেন, আমার নানী এই মিস্টি তৈরীর পদ্ধতি উদ্ধার করেন।তিনি ছিং রাজবংশ আমলে এ ধরনের মিস্টি তৈরী করেন। তিনি খাদ্যের ব্যবসা করতেন। পরে তিনি উদ্ধার করেন যে আদা আর লাল চিনি এক সঙ্গে মিশ্র করা হলে যে মিস্টি তৈরী করা হয় তা শরীরের জন্য উপকারী। খেতেও খুব মজা লাগে। ফনহুয়াং ছোট নগরে আরেকটি জিনিস উল্লেখ না করলে চলবে না। এটা হল মিও জাতির লোক শিল্পকলা। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য জিনিস হল কাগজ কাটা। এখানকার কাগজ কাটা দেশ-বিদেশে বিখ্যাত।
|
|
|