v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-12-28 13:12:11    
নাবিক চেন হে ও পৃথিবীর প্রথম বিদেশ নৌযাত্রা

cri
    ছ' শ বছর আগে চীনের বিখ্যাত নাবিক চেন হো একটি বিরাট নৌবহর নিয়ে বিদেশে নৌযাত্রা করেছিলেন । ২৮ বছরের মধ্যে তিনি সাত বার প্রধানতঃ ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চল ও আফ্রিকার ত্রিশটিরও বেশী দেশ সফর করেছিলেন । এটা পৃথিবির প্রথম বিরাটাকারের নৌযাত্রা । এই নৌযাত্রার ৬০০ তম বার্ষিকী উপলক্ষে চীনের জাতীয় যাদুঘর এ সম্পর্কিত একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে ।

    গত ১১ জুলাই নাবিক চেন হোর বিদেশ নৌযাত্রার ছয় শ'তম বার্ষিকী । চেন হোর সাত বার বিদেশে নৌযাত্রা বিশ্বের নৌযাত্রার ইতিহাসের একটি বড় ঘটনা । এই নৌযাত্রার ছয় শ'তম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে সম্প্রতি চীনের বিভিন্ন জায়গায় নানা ধরনের কর্মসূচি নেয়া হয়েছে । চীনের জাতীয় যাদুঘরের উদ্যোগে আয়োজিত বিরাটাকার প্রদর্শনী এই সব কর্মসূচির অন্যতম । এই প্রদর্শনীর শিরোনামঃ হাজার মাইলের বিদেশ যাত্রা । এর আগেও চেন হোর নৌযাত্রা সম্পর্কে বেশ কয়েকবার প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছিলো , এবারের প্রদর্শনীর আকার সবচেয়ে বড় , তথ্য ও পুরাকীর্তিও সবচেয়ে পরিপূর্ণ । চীনের উপপরিবহন মন্ত্রী হুয়ান সিয়েন ইয়াও এই প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেছেন , ছ' শ বছর আগে চেন হো সাত বার নৌবহর নিয়ে ভারত মহাসাগরে নৌযাত্রা করেছিলেন , এই মহত্ ঘটনা গোটা পৃথিবীতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল । ছয় শ' বছর পর চীনের জাতীয় যাদুঘর প্রচুর ঐতিহাসিক তথ্য-উপাত্তের মাধ্যমে বিশ্বের নৌযাত্রা ইতিহাসের এই অভুতপূর্ব ঘটনাকে দর্শকদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছে । এই প্রদর্শনীতে ছয় শ' বছর আগে চীনের নৌযাত্রা ও জাহাজ নির্মানের উচুঁ মান দেখানো হয়েছে । প্রাচীনকাল থেকেই চীনা জাতি একটি শান্তিপ্রিয় জাতি , দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে এখনও চেন হোর নৌযাত্রার ধ্বংসাবশেষ ও পুরাকীর্তির চিহৃ রয়েছে । চেন হো প্রাচ্যের সভ্যতা প্রচারের জন্য শান্তিদূতের ভুমিকা নিয়েছিলেন । তার স্মৃতির জন্য বিভিন্ন দেশ নানা ধরনের কর্মসূচি নিয়েছে । আমরা এই প্রদর্শনী ও অন্যান্য স্মৃতি কর্মসূচি নেয়ার মাধ্যমে চীনা জাতির শান্তি অন্বেষন ও প্রতিবেশীদেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার ঐতিহ্য প্রচার করবো ।

    চীনের জাতীয় যাদুঘরের কর্মীরা প্রদর্শনীতে দর্শকদের জন্য নৌযাত্রার পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন । প্রদর্শনী কক্ষে প্রবেশ করেই দর্শকরা তিনটি প্রাচীন নৌকার মডেল দেখতে পান । নৌকার পালগুলো তোলা হয়েছে , প্রদর্শনী কক্ষের দেওয়ালে সমুদ্রের বড় ছবি টাঙানো হয়েছে । এই ধরনের পটভুমিতে দেখে মনে হয় নৌকা তিনটি যেন পাল তুলে অগ্রসর হচ্ছে । জানা গেছে , ঐতিহাসিক তথ্য অনুসারে চেন হোর নৌযাত্রার নৌকা অনুকরণ করে এই তিনটি পাল তোলা নৌকা তৈরী করা হয়েছে । এই প্রদর্শনীতে দেখানো ৮০টিরও বেশী পুরাকীর্তি ও দু শ'টি আলোকচিত্র চেন হোর জীবন কাহিনী , তার নৌযাত্রার ঐতিহাসিক পটভুমি , যাত্রায় সংঘটিত ঘটনাগুলো আর নৌযাত্রার বিরাট প্রভাব বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে ।

    চেন হোর জন্মস্থান দক্ষিণ পশ্চিম চীনের ইউনান প্রদেশ । তার আসল নাম মা সান পাও । ১৩৭১ সালে ইউনান প্রদেশের এক মুসলমান পরিবারে চেন হো জন্মগ্রহণ করেন । পরে চেন হো মিং রাজবংশের রাজা চু লির একজন দেহরক্ষী হন । বিশেষ অবদান রাখার জন্য তিনি রাজার পুরষ্কার পান । রাজা তার নাম পরিবর্তন করলেন , রাজার দেয়া নতুন নাম হলো চেন হো । ১৪০৫ সালে চেন হো রাজার আদেশে নৌবহর নিয়ে তার বিদেশ নৌযাত্রা শুরু করেন ।

    প্রদর্শনীতে প্রদর্শিত ১৩ মিটার দীর্ঘ চেন হোর নৌযাত্রার মানচিত্রে তার সাতবার বিদেশী যাত্রায় পার হওয়া শহর , দ্বীপ , জলরাশি , নৌপথ ও কমপাস ব্যবহারের পদ্ধতি চিহ্নিত করা হয়েছে । এই মানচিত্রে জায়গার নাম পাঁচ শ'র বেশী , বিদেশী নাম প্রায় তিন শ' । চেন হো ও তার সফরসঙ্গীরা চান ছেন, অর্থাত আজকের ভিয়েতনামের হু চি মিং শহর থেকে চেন লা অর্থাত আজকের কাম্বোডিয়া, সিলান অর্থাত আজকের শ্রীলংকা , লিও সান রাজ্য অর্থাত আজকের মালদ্বীপ হয়ে আফ্রিকার কেনিয়া পর্যন্ত মোট ত্রিশটি দেশে গিয়েছিলেন।

    ঐতিহাসিক তথ্য থেকে জানা গেছে , চেন হোর বিদেশী নৌযাত্রার পথ ৪০টির বেশী , তার নৌযাত্রার মোট দৈর্ঘ্য এক লক্ষ ৬০ হাজার নটিক্যাল- মাইল । পৃথিবীতে প্রাচীন নৌযাত্রার ইতিহাসে চেন হোর নৌযাত্রায় অংশ নেয়া নাবিকের সংখ্যা সবচেয়ে বেশী এবং নৌযাত্রার আওতা সবচেয়ে ব্যাপক । দুঃখের বিষয় হলো চেন হোর মৃত্যুর পর রাজকীয় কর্মকর্তারা চেন হোর নৌযাত্রার তথ্যগুলো আগুনে পুড়িয়ে ফেলেন। তাই তার নৌযাত্রার তথ্য ও পুরানিদর্শন পর্যাপ্ত নয় । তবে তার সপ্তম নৌযাত্রার আগে তৈরী চেন হো ঘন্টা , চেন হোর প্রদান অর্থে খোদাই করা ধমর্শাস্ত্র ' মিয়াও ফা লিয়েন হুয়া চিন ' আর চেন হোর ছয়বার নৌযাত্রায় ফুচিয়েনের ছান লে পার হওয়ার ঘটনা লিপিব্ধ ' থিয়েন ফেই ' ফলক চেন হোর বিদেশী নৌযাত্রার সাক্ষ্য । প্রদর্শনীতে দেখানো ১১ মিটার দীর্ঘ নৌকার হালের স্টক দেখে দর্শকরা অবাক হন । এই বড় হালের স্টক ১৯৫৭ সালে নানচিংয়ের মিং রাজবংশের নৌকা তৈরী কারখানার ধ্বংসাবশেষের নীচ থেকে উদ্ধার করা হয় । এই প্রদর্শনীর দায়িত্বশীল ব্যক্তি মাদাম ওয়াং ইয়োন হোন বলেছেন , চেন হোর নৌযাত্রার নৌকাগুলো নান চিংয়ের এই নৌকা নির্মাণ কারখানা তৈরী করা হয় । উদ্ধারকৃত এই হালের স্টকের দৈঘ্য ১১ মিটার , এই স্টক চেন হোর নৌকার হালের স্টক না হলেও এটা প্রমাণ করতে পারে যে ছয় শ' বছর আগে চীন এতো বড় নৌকা নির্মাণ করতে পারতো । জানা গেছে , চেন হোর নৌবহরে নৌকার সংখ্যা এক শ'র বেশী , এগুলোর মধ্যে একনম্বর নৌকার দৈর্ঘ্য ১২৬ মিটার , চওড়া ৫১ মিটার , নৌকাটি সাত হাজার টন মাল বহন করতে পারে ।

    চেন হোর নৌযাত্রা বিভিন্ন দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক আদান প্রদান ও বাণিজ্য তরান্বিত করেছে । প্রদর্শনীর ছবিগুলোতে দর্শকরা দেখেছেন , থাইল্যান্ড , মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া চেন হোকে শান্তির দূত হিসেবে গণ্য করে শ্রদ্ধা করে । সেই সব দেশে চেন হোর স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে সান পাও মন্দির নির্মিত হয়েছে ।

    উত্তর পূর্ব চীনের হার বিন শহরের মাধ্যমিক স্কুলের ছাত্রী পাই চিং এই প্রদর্শনী দেখে আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন , এই প্রদর্শনী দেখে আমি চেন হোর নৌযাত্রার পটভূমি ও তার জীবন কাহিনী জানতে পেরেছি। ছয় শ' বছর আগে চেন হো যে এত বেশী নৌকা নিয়ে সাত বার বিদেশে সফর করেছিলেন , তা' সত্যিই এক বিরাট ঘটনা । তিনি বিদেশী নৌযাত্রার মাধ্যমে চীনের সংস্কৃতি প্রচার করতে আর বিদেশের সংস্কৃতি চীনে আনার চেষ্টা করেছিলেন , চেন হো সত্যিই চীনের একজন বীর ।