প্রাচ্যের নারী লাবণ্যের ও স্নিগ্ধতার জন্য বিশ্ববিখ্যাত । বর্তমানে সামাজিক কর্মকাণ্ডে নারীদের অংশগ্রহণের সুযোগ বৃদ্ধির সঙ্গেসঙ্গে চীনের কর্মজীবী নারীদের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে । তাঁরা নারী- প্রকৃতির চিরাচরিত কোমলতা বজায় রাখার সঙ্গে সঙ্গে হাল ফ্যাশনের মধ্যে নিজদের ব্যক্তিত্ব প্রকাশের চেষ্টাও করছেন ।
পেইচিংয়ের পশ্চিম উপকণ্ঠে অবস্থিত জিন ইউয়ান শিন ইয়ান শা বিপণী কেন্দ্রকে পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্ বিপণী কেন্দ্র বলা যায় । এই কেন্দ্রের ভিতরে রেস্তোরাঁ, চিত্তবিনোদন , ছুটি কাটানো আর পরিসেবার সঙ্গে সম্পর্কিত চার শোটিরও বেশী বিশেষ দোকান আছে । অনেক ক্রেতা মনে করেন , এই কেন্দ্রে গিয়ে জিনিষপত্র কেনা অনেকটা উপভোগের শামিল ।কারণ, সেখানকার পরিবেশ আরামদায়ক । হাল-ফ্যাশনের পোশাক পরিহিত কর্মীরা সহৃদয় ও প্রাণোচ্ছল। এটা তাঁদের মনে গভীর দাগ কেটেছে ।
এই বিপণীর জেনারেল ম্যানেজার মাদাম ফু ইয়াও হং সি আর আইয়ের সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন , এই কেন্দ্রের অর্ধেক কর্মীই নারী ।তাঁরা ফ্যাশন-দুরস্ত পোশাক পরা আর অমায়িক ব্যবহারের জন্য সুপরিচিত।
তিনি বলেছেন ,এখন চীনের দোকান-বাজার আর পরিসেবা শিল্পের মধ্য ও উচ্চ স্তরের অনেক কর্মকর্তাই নারী । আমাদের কোম্পানিও এই রকম । আমাদের মধ্য ও উচ্চ স্তরের দুই তৃতীয়াংশ ব্যবস্থাপকই নারী । তাঁরা যার যার কর্মস্থলে দায়িত্বপালনে কৃতার্থ হয়েছেন । তাঁরা সর্বক্ষণ যেমন চরিত্র গঠন তেমনই বাহ্যিক ভাবমূর্তি গড়ার উপর নিবিড় দৃষ্টি রাখেন ।
এই বিপণীর কর্মীদের মত চীনের অসংখ্য কর্মজীবী নারী ফ্যাশনের পূজারিনী । তাঁরা প্রচলিত পেশাগত পোশাক পরেন । তাঁদের রূপসজ্জা বাহুল্যবর্জিত । তাঁরা চুল বাঁধার ধরণ মাঝে মাঝে বদলে দেন এবং পছন্দসই রং দিয়ে তাঁদের চুল রং করে নেন । তাঁদের কেউ কেউ মুখশ্রী বৃদ্ধি করতে নিয়মিত বিউটি পার্লারে যান । কেউ কেউ বা ব্যায়ামাগারে গিয়ে সংগীতের তালে তালে দেহ গঠনের ব্যায়ম করেন।
চীনা নারীদের ফ্যাশন পূজার প্রবণতা প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন , এটা নতুন যুগে তাঁদের আত্মমূল্যবোধের নিদর্শন। চীনের নারী ও শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের পরিচালক মাদাম চাং ছি সি আর আইয়ের সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন , এখন চীনের শ্রমজীবীদের ৪০ শতাংশই নারী । নারী সমাজ চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি । বাজারের প্রতিদ্বন্দ্বিতা তীব্র আকার ধারণের সঙ্গে সঙ্গে নিজদের সামর্থ্য বাড়ানোর জন্য চীনের কর্মজীবী নারীরা সচেতনভাবে হাল-ফ্যাশনের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন ।
তিনি বলেছেন , কর্মজীবী নারীরা বাইরে কাজ করেন , তাঁদের চরিত্র, ব্যক্তিত্ব ও ভাবমূর্তি তাঁদের পেশার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সম্পর্কিত । প্রকৃতপক্ষে ফ্যাশনের অভিসার হলো সংস্কৃতির উপর মানুষের দখলের বহি:প্রকাশ , তার সঙ্গে মিশে আছে অন্যদের প্রতি মানুষের সদ্ভাব ও শ্রদ্ধা ।
চীনের কর্মজীবী নারীরা শুধু সাজগোজ ও রূপ নয় , নিজদের কথাবার্তা ও আচার-ব্যবহারের উপরও সবসময় নজর রাখেন । এই সদ্ভ্যাস মোটা অংকের বেতন-ভোগী নারী ও কৃতী নারীদের মধ্যে বিশেষভাবে লক্ষণীয় ।
পেইচিংয়ে বি এম ডাবলিউ গাড়ির এজেন্সির মাদাম লি ইং চীনের গাড়ি শিল্পের সর্বজনবিদিত আধুনিক নারী । তাঁর বন্ধুবান্ধব সবাই বলেন , লি ইং একাধারে দামী গাড়ির এজেন্সি ও আধুনিক নারীদের প্রতিনিধি । ফ্যাশন সম্বন্ধে লি ইং বলেছেন :আমি মনে করি , একজন মানুষের কথার্বাতা ও ব্যবহার তার চরিত্রের পরিচায়ক । ব্যবসায় করতে রোজ আমাকে নানা রকম মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করতে হয় । আমাকে দেখা মাত্র যাতে তাঁদের ভালো লাগে সেদিকে আমি সবসময় খেয়াল রাখি ।
লি ইংকে সুন্দরী বলা যায় । তবু তিনি রোজ যত্ন করে সেজে বাড়ি থেকে বের হন । বাণিজ্যিক ভোজসভায় আমন্ত্রণ পেলে তিনি ছিপাও নামক চীনা ঐতিহ্যবাহী পোশাক আর মণি- হার পরে ভোজসভায় অংশ নিতে যান ।কিন্তু অফিসরুমে তিনি সাধাসিধে পেশাগত স্কার্ট পরেন ।নিজের জ্ঞানের পরিধি বাড়ানোর জন্য তিনি প্রতিদিন নতুন তথ্য সংগ্রহ করেন এবং নতনু আদব-কায়দা ও দৃষ্টিকোণ জেনে রাখার চেষ্টা করেন । তিনি সুন্দরভাবে গল্ফ খেলতে পারেন । সম্প্রতি তিনি পেইচিংয়ের একটি গল্ফ প্রতিযোগিতার একক বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন।
কিন্তু এই কথাও অনস্বীকার্য যে , হাল-ফ্যাশন আজো বহু চীনা নারীর চেনা শব্দ নয়। চীনের একটি ওয়েবসাইটের নারী চ্যানেলের প্রধান সম্পাদক মিস গাওলু তার কারণ বিশ্লেষণ করে বলেছেন ,তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ সারাদিন ভীষণ ব্যস্ত , কেউ কেউ ঘরকন্নার ফাঁদে আটকে পড়েছেন বলে ফ্যাশনের দিকে মনোযোগ দেওয়ার অবকাশ নেই তাঁদের ।
গত বছর চীনের একটি নারী সংগঠনের উদ্যোগে শ্রেষ্ঠ ফ্যাশন দুরস্ত কর্মজীবী নারী নির্বাচনের আয়োজন করা হয় । সামাজিক সম্পদ সৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে উজ্জ্বল ভাবমূর্তি গড়তে নারীদের উত্সাহ দেওয়াই এই তত্পরতার উদ্দেশ্য ।
ফ্যাশনের প্রধান উপাদান কী ? এই প্রশ্নের রকমারি উত্তর শোনা যায় ।তবে বোধহয় বি এম ডাবলিউ গাড়ির এজেন্সির মাদাম লি ইংয়ের উত্তর সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য । তাঁর মতে ফ্যাশনের সারমর্ম হলো আত্মবিশ্বাস ।
তিনি বলেছেন , আমি মনে করি , ফ্যাশন দুরস্ত -নারী হতে চাইলে প্রথমে তাঁর আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে । মানুষের ফ্যাশন-পিপাসা সহজাত । সমাজে কাজ করে নারীদের সাধারণ দক্ষতা নিয়ে নিশ্চিন্ত থাকা উচিত নয় । বরং তাদের প্রচ্ছন্ন শক্তি স্ফুরিত করে সমাজের সামনে নিজেদের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব দেখাতে হবে ।
|