সম্প্রতি চীনে প্রকাশিত জনসাধারণের পুষ্টি ও স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট একটি জরীপ থেকে জানা গেছে, দারিদ্র এবং খাবারের কাঠামো একসিয়ে হওয়ার কারণে মধ্য-পশ্চিম চীনের গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী গ্রামবাসীদের পুষ্টি আহরণের ব্যাপক অভাব রয়েছে। বরং উপকুলীয় শিল্পোন্নত অঞ্চল ও অধিকাংশ শহরাঞ্চলে বসবাসকারীরা অতিরিক্ত-পুষ্টি ও পুষ্টির ভারসাম্যহীন তার সমস্যার সম্মুখীণ। ।
চীনের পুষ্টিবিজ্ঞানী চিয়াং চিয়েনপিং বলেন, পুষ্টি অভাব ও অতিরিক্ত-পুষ্টি উভয়ই অপুষ্টি। আজ অপুষ্টি চীনা নাগরিকদের স্বাস্থ্যের উপরে প্রত্যক্ষ প্রভাব বিস্তার করছে।
"খাওয়ার বদ অর্জায়ের কারণে চীনে হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, বহুমূত্ররোগ ও মেদময় ইত্যাদি দীর্ঘস্থায়ী রোগীদের সংখ্যা দ্রুতভাবে বাড়ছে। চীনে উচ্চ রক্তচাপ রোগীদের সংখ্যা ১৬ কোটি, মেদময় মানুষ গোটা লোকসংখ্যার ৩০ শতাংশের কাছাকাছি। শিশুদের পুষ্টির অবস্থাও সন্তোষজনক নয়। শহরাঞ্চলের একমাত্র ছেলেমেয়েদের নিজেদের ইচ্ছা মতো খাবার নির্বাচন ও অতিরিক্ত পুষ্টির কারণে মেদময় শিশুদের সংখ্যা দ্রুত বেড়েছে। সঙ্গে সঙ্গে কিছু কিছু বয়স্কদের রোগ তরুণ-তরুণীদের মধ্যেও দেখা গেছে।"
তিনি ইএসব সমস্যার বিশ্লেষণ করে বলেন, চীনা নাগরিকদের খাবার প্রধানত শাকসব্জী, জাতীয় খাবার, আকরিকসম্পন্ন মাংষ জাতীয় খাবার কম খান বলে শহরাঞ্চল ও গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারীরা ক্যালসিয়াম, লৌহ, জিনক ও ভিটামিন এই, বি২ ইত্যাদি পুষ্টির উপাদান কম আহবণ করেন।
উল্লেখ্য, বয়স্কদের অপুষ্টির অবস্থা বাচ্চাদের স্বাস্থ্যের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। গ্রামাঞ্চলে নিয়মমাফিক ওজনের চেয়ে কম ওজনের বাচ্চাদের হার ১৪ শতাংশ ছাড়িয়েছে। চীনে ২০ কোটি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ৪০ শতাংশই ক্যালসিয়ামের অভাব এবং রক্তের স্বল্পনার হার ৩০ শতাংশ। কিছু দরিদ্র অঞ্চলের ছাত্রছাত্রীরা অপুষ্টির কারণে রিকেট ও রক্তের স্বল্পতার রোগে আক্রান্ত হয়।
দশ বছর আগে, কিছু পুষ্টি বিজ্ঞানীর প্রচেষ্টায় ছাত্রছাত্রীদের পুষ্টির অবস্থা উন্নত করার তত্পরতা চীনে চালানো হয়। যেমন "সয়াবিনের তত্পরতা অভিযানে" সরকারী খরচে দরিদ্র অঞ্চলের শিশুদের প্রতিদিন এক কাপ সয়াবিনেরদূধ খাওয়ার ব্যবস্থা নেয়া হয়। ফলে সয়াবিনদূধ খাওয়া শিশুদের রক্তের স্বল্পতার হার স্পষ্টভাবে কমেছে এবং স্বাস্থ্যগত অবস্থা লক্ষ্যনীয়ভাবে উন্নত হয়েছে। এরপর চীন সরকার শহরাঞ্চলে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে "ছাত্রছাত্রীদের দূধ খাওয়ার পরিকল্পনা" বাস্তবায়িত করেন। কিছু স্কুল ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিশেষ পুষ্টিসম্মত খাবার সমন্বয়ের ব্যবস্থা চালু করেছে। এ সম্বন্ধে চীনের পুষ্টিবিজ্ঞানী চিয়াং চিয়েনপিং বলেছেন:
"আধা শতাব্দি ধরে বিশ্বের অন্য দেশেও শিশুদের মধ্যে পুষ্টিসম্মত খাবারের ব্যবস্থা ও দূধ খাওয়ার পরিকল্পনা চালু হয়। চীনের অবস্থা এখন অনেক ভাল হয়েছে। তাই আমাদের ছাত্রছাত্রীদের পুষ্টি বাড়ানোর অনুকূল অবস্থা রয়েছে।"
২০০১ সালে চীন সরকার জাতীয় গণ পুষ্টি ও উন্নয়ন কেন্দ্র স্থাপন করেছে। তার দায়িত্ব হলো জনসাধারণের পুষ্টির অবস্থা উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট তত্পরতা চালানো। চীনা নাগরিকদের অপুষ্টি অবস্থা অনুযায়ী, এই কেন্দ্র বিশ্বে ব্যাপক ব্যবহৃত খাবারের সুসংবদ্ধকরণের পদ্ধতিতে চীনা জনসাধারণের পুষ্টি অবস্থা উন্নত করার চেষ্টা করছে। তা হলো ময়দা, চাউল ও খাবার তেলের মধ্যে পুষ্টিগত উপাদন মিশানো হওয়া যাতে জনসাধারণ আরো সুবিধাজনকভাবে ও কম-খরচে প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় পুষ্টি আহরণ করতে পারে।
চীনের জাতীয় গণ পুষ্টি ও উন্নয়ন কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞ ইয়ু শিয়াওতুং মনে করেন যে, জনসাধারণের পুষ্টি উন্নয়নের ক্ষেত্রে সরকারের আরো ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
"আমাদের দেশে দু'ক্ষেত্রের কাজ জোরদার করা উচিত। এক, সুসংবদ্ধকরণজনিত খাবার ও অন্য পুষ্টিসম্মত খাবার জনপ্রিয় করে তুলতে হবে যাতে চীনা জনগণের পুষ্টির অবস্থা উন্নত হয়। দুই, বিশেষ অঞ্চলের জনগণের পুষ্টির উন্নয়নের উপর জোর দিতে হবে, যেমন দরিদ্র অঞ্চলে বসবাসকারীদের পুষ্টিগত ও স্বাস্থ্যগত অবস্থা উন্নত করা জরুরী, যাতে দরিদ্র্যের কারণে রোগ সংক্রান্ত হওয়া বা রোগের কারণে দরিদ্র্য হওয়ার প্রবণতা রোধ করা যায়।"
পুষ্টি সম্পর্কিত জ্ঞানের অভাব হলো চীনা জনগণের অপুষ্টি হওয়ার এক প্রধান কারণ। সম্বন্ধে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, চীনে যথাশীঘ্র সম্ভব পুষ্টিবিজ্ঞানীদের পরামর্শ ব্যবস্থা স্থাপন করা উচিত যাতে চীনা জনগণ এ ক্ষেত্রে সঠিক প্রস্তাব পেতে পারে।
|