২০০৫ সালের ১১ নভেম্বর 'পেইচিং অলিম্পিক গেমস ২০০৮-এর মঙ্গল প্রাণী' প্রকাশিত হয়েছে । পাঁচটি প্রাণীর প্রতিকৃতি হিসেবে পাঁচটি পুতুল হল এই গেমসের মঙ্গল প্রাণী। নভেম্বর মাস থেকে এই সব মঙ্গল প্রাণীর পুতুল ইত্যাদি সামগ্রি চীনের বড় বড় শহরে খুব বিক্রি হয়েছে । গ্রামবাসীরাও শহরে থাকা তাদের আত্মীয়সজন ও বন্ধুবান্ধবদের মাধ্যমে শহর থেকে এই সব স্মারকবস্তু কিনতে শুরু করেছেন। বিশেষজ্ঞদের অনুমান, ৫টি মঙ্গল প্রাণীর এই সেট পুতুল বিক্রয়ের ফলে চীনের কোটি কোটি মার্কিন ডলার আয় হতে পারে।
পেইচিংয়ে অলিম্পিক গেমসের বিশেষ পণ্যের একটি দোকানে পুতুল কেনার জন্য ভিড় জমে থাকে ।মি: লু লিন এই দোকানে সর্বশেষ সেট পুতুল কিনে সংবাদদাতার কাছে বলেছেন, "আমি আগে থেকেই একসেট পুতুল কিনেছি, এখন আর এক সেট কিনেছি আমার বন্ধুর জন্য । আমার বন্ধু অন্য অঞ্চলে থাকে , সেখানে পাওয়া যায় না বলে আমাকে তাঁর জন্য এক সেট কিনতে অনুরোধ করেছেন।
মিস চিয়াং চিং পুতুল কিনতে পারেন নি, কারণ পুতুল সেদিনের মতো দোকানে শেষ হয়েছে। নিরুপায হয়ে তিনি পুতুলের প্রতিকৃতি ছাপানো রেশমী রুমাল কিনেছেন। তিনি বলেছেন, " আমিও এক সেট পুতুল কিনতে চাই । সেটা দেখবার মতো স্মারকবস্তু। আমি দিনে তিন বার এই দোকানে এসেছি , কিন্তু প্রত্যেক বারই দোকানদার বলছে, পুতুল শেষ হয়েছে।" পাঁচটি প্রাণীর প্রতিকৃতি হিসেবে পাঁচটি পুতুল হল পেইচিং অলিম্পিক গেমসের মঙ্গল প্রাণী। এগুলোর চীনা নাম যথাক্রমে পেই পেই , চিংচিং, হুয়ান হুয়ান, ইংইং এবং নিনি এই পাঁচটি চীনা শব্দ দিয়ে একটি বাক্য হয়। চীনা বাক্যটি হলো "পেইচিং হুয়ান ইং নি" তার বাংলা অর্থ হল: " পেইচিং তোমাকে স্বাগত জানায়"। এ ৫টি প্রাণীর প্রতিকৃতিতে মাছ, প্যাণ্ডা, তিব্বতী এণ্টিলোপ, সোয়ালো পাখি এবং অলিম্পিক পবিত্র মশালের চেহারার মিশ্রণ।
শুধু চীনারা নয়, বিদেশি বন্ধুরাও এই ৫টি মঙ্গল প্রাণীর পুতুল কিনতে আগ্রহী। রাশিয়ার মাদাম আন্না আলাবের্ট বলেছেন, "আমি এইসব পুতুল খুব পছন্দ করি, পুতুলগুলোর চীনা বৈশিষ্ট্য খুব স্পষ্ট, আমি বেশি কিনতে চাই, উপহার হিসেবে এগুলো আমার বন্ধুদেরও দিতে পারি।"
জাপানের মাদাম সুয়েনাগা ইউকিও এই পুতুল খুব পছন্দ করেন। তিনি বলেছেন, " পুতুলগুলো যত সুন্দর বলে আমি কল্পনা করেছিলাম, আসলে তার চেয়েও আরও বেশি চমত্কার। আমি এক সেট পুতুল কিনতে চাই ।"
ক্যানাডার মাদাম সামানথা সোওয়াসেই পুতুল কিনে দেশে নিয়ে যেতে চান। তিনি বলেছেন, "মঙ্গল পাণী মোট ৫টি, খুবই মজার । আমি প্যাণ্ডা আকৃতির পুতুল চিংচিং সবচেয়ে পছন্দ করি, এই পুতুলগুলো কিনে আমার ভাতিজাদের উপহার দেবো, তাদের খুব ভাল লাগবে।"
পেইচিংয়ের অলিম্পিক পণ্যের বিশেষ দোকানের দায়িত্বশীল ব্যক্তি মাদাম ওয়াং সিয়াও ইয়েন জানিয়েছেন, দোকানে এই মঙ্গল প্রাণীর পুতুলের প্রতিকৃতির পণ্য মোট তিন শো ধরনেরও বেশি। যেমন রেশমী রুমাল, 'দো-পাট্টা' অর্থাত্ ওড়না , টিসার্ট, লেখার জন্য সামগ্রি, ব্যাজ, ইত্যাদি। তবে দেশ-বিদেশের ক্রেতারা পুতুল সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন। তিনি সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন, সম্প্রতি পুতুল সিরিজ পণ্যদ্রব্য দেদার বিক্রি হয়েছে। তিনি বলেছেন, " আগে আমাদের দোকানে এক দিনে গড়পড়তা দশ থেকে বিশ হাজার ইউয়ানের জিনিস বিক্রি হতো। কিন্তু এই বিশেষ পুতুল বিক্রয় শুরু হবার পর থেকে পণ্য বিক্রয় দ্রুত বেড়ে চলেছে আর গত প্রায় এক মাসে আমাদের দোকানে মোট এক কোটি ইউয়ানের অলিম্পিক দ্রব্য বিক্রি হয়েছে । এক দিনে সবচেয়ে বেশি ১০ লক্ষ ইউয়ানের পুতুল সিরিজের জিনিস বিক্রী করেছি। খদ্দেররা অনেক কিছু কিনতে চায় , কিন্তু চাইলেই কি আর হয়? দোকানে কি রকম মাল আছে তা দেখতে হবে, সব রকমই পাওয়া যায় , তা নয়।
চীনে নিবন্ধিত অলিম্পিক বিশেষ পণ্যের দোকান মোট ২৮টি, অবশ্য আরও আছে ১৬০টিরও বেশি অস্থায়ী বিক্রয়কেন্দ্র। পেইচিং, সাংহাই, শেনচেন, ছিংতাও , নানচিং , ছেংতু ইত্যাদি বড় বড় শহরে মঙ্গল প্রাণীর পুতুল সিরিজ সামগ্রি পাওয়া যায়।
চীনের পিপলস বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য বিষযক প্রফেসার লু তোংপিং অনুমান করেছেন , এই পুতুল সিরিজ পণ্য বিক্রযের মোট পরিমাণ ৩০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। তিনি বলেছেন, "৩০ কোটি মার্কিন ডলার এই সংখ্যাটা এমনভাবে হিসেব করে বের করেছি যে, আগেকার সিডনি অলিম্পিক গেমসের মঙ্গল প্রাণীর কারুশিল্পজাত দ্রব্য, স্মারক বস্তু বিক্রয বাবদ মোট আয় ছিল ৩০ কোটি ডলারের কম । এখন চীনের অবস্থা ভিন্ন, বিদেশী পর্যটকদের সংখ্যা আমাদের পূর্ব-অনুমাণের চেয়ে বেশি, তা'ছাড়া দেশী পর্যটক খুব বেশি। ফলে এই বিশেষ অলিম্পিক পণ্যের বাজার সিডনি অলিম্পিকের চেয়ে বড়। পুতুল ইত্যাদি বিক্রির মোট আয় ৩০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে আমি আশাবাদী।
আমাদের সংবাদদাতা পুতুল তৈরির একটি কারখানায় গিয়ে দেখেছেন, উত্পাদনের প্রতিটি লাইনে পুরোদমে উত্পাদনের কাজ চলছে। তবুও বাজারের চাহিদা মেটাতে পারছে না। কারখানাটির শ্রমিক ওয়াং হোং ব্যাখ্যা করে বলেছেন, এই পুতুল তৈরির প্রক্রিয়া খুবই জটিল। যেমন, কাপড় কাটা, সেলাই, তুলো গাদানো, সাজানো এবং প্যাকিং ইত্যাদি পর্ব আছে । পুতুলের মাথা তৈরি করার কলাকৌশণ সবচেয়ে কঠিন।
তিনি বলেছেন, " অলিম্পিক পবিত্র মশালের চেহারার পুতুলের মাথার ওপর অগ্নিশিখার আকৃতি তৈরি করা সবচেয়ে কঠিন। আমি দিনে শুধু ১৮টি তৈরি করতে পারি।"
পেইচিং অলিম্পিক গেমসের সাংগঠনিক কমিটি ইতিমধ্যেই মঙ্গল প্রাণীর মেধাস্বত্ব কড়াকড়িভাবে সংরক্ষণে রাখার আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছে ।
|