ফিলিস্তিন ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসসহ ১১টি ফিলিস্তিনী সশস্ত্র সংগঠন ২২ ডিসেম্বর ফিলিস্তিন জাতীয় ক্ষমতা সংস্থার উদ্দেশ্যে বহিরাগত চাপ মোকাবিলা করা আর ফিলিস্তিনের বিধান পরিষদ নির্বাচনের সময়োচিত আয়োজন নিশ্চিত করার আহবান জানিয়েছে ।
ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ বিধান পরিষদ নির্বাচনের আয়োজন স্থগিত রাখবে বলে যে খবরাখবর বেরিয়েছে , তার জবাবে হামাস প্রভৃতি সংগঠন এই আহবান জানিয়েছে । খবরে প্রকাশ , ফিলিস্তিন স্বশাসন সরকারের উপ-প্রধানমন্ত্রী , তথ্য মন্ত্রী নাবিল শায়াথ্ ২১ ডিসেম্বর এই মত প্রকাশ করেছেন যে , যদি ইসরাইল বিধান পরিষদের নির্বাচনে পূর্ব জেরুজালেমের ফিলিস্তিনী ভোটারদের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করতে অপচেষ্টা চালায় , তাহলে ফিলিস্তিন এই নির্বাচন স্থগিত রাখবে ।
আগামী বছরের ২৫ জানুয়ারী ফিলিস্তিন বিধান পরিষদের নির্বাচন আয়োজনের কথা । কিন্তু ২২ ডিসেম্বর প্রকাশিত একটি ফিলিস্তিনী গবেষণাগারের জনমত জরীপ অনুযায়ী , ৪০ শতাংশ ফিলিস্তিনী ভোটার বিধান পরিষদের নির্বাচনে হামাসের পক্ষে ভোট দেবে । কিন্তু আব্বাসের অধীনস্থ ফিলিস্তিন মুক্তি আন্দোলনের প্রধান সংগঠন ফাতাহ শুধু ২০ শতাংশ সমর্থনের হার পেয়েছে ।
ইসরাইলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের লাইন অনুসরণকারী হামাস যুক্তরাষ্ট্র আর ই ইউ'র চোখে সন্ত্রাসী সংগঠন বলে পরিগণিত । তার রাজনৈতিক উথ্থানে পাশ্চাত্ত্য দেশগুলো আর ইসরাইল উদ্বেগ প্রকাশ করেছে । মার্কিন জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদ আর ই ইউ সম্প্রতি আর্থিক সাহায্য বন্ধ করার হুমকি দিয়েছে এবং ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্যে ফিলিস্তিন বিধান পরিষদের নির্বাচনে হামাসের অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখার দাবি জানিয়েছে । ইসরাইল সরকারী কর্মকর্তা ২১ ডিসেম্বর এই মত প্রকাশ করেছেন যে , যদি ফিলিস্তিন বিধান পরিষদের নির্বাচনে হামাসকে অংশগ্রহণ করতে দেয়া হয় , তাহলে পূর্ব জেরুজালেমের আরবদের ভোটদানে অনুমতি দেয়া হবে না ।
ফিলিস্তিনের পক্ষে আড়াই লক্ষ ফিলিস্তিনীর ভোট দানের অধিকার নিশ্চিত করা জেরুজালেমের সার্বভৌমত্ব সংশ্লিষ্ট একটি নীতিগত সমস্যা । যেহেতু ফিলিস্তিন আর ইসরাইল দুই-ই জেরুজালেমের ক্ষেত্রে সার্বভৌম বলে ঘোষণা করেছে , সেহেতু ১৯৯৩ সালে অসলোতে দুদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত প্রটোকলে একটি বিশেষ নিয়মবিধি অনুযায়ী , পূর্ব জেরুজালেমের ফিলিস্তিনীদের ডাকে ভোট পাঠানোর পদ্ধতিতে ফিলিস্তিনের বিভিন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে অনুমতি দেয়া হয়েছে । ১৯৯৬ সালে ফিলিস্তিনের সাধারণ নির্বাচন আর এ বছরের জানুয়ারী মাসে ফিলিস্তিন জাতীয় ক্ষমতা সংস্থার চেয়ারম্যানের নির্বাচনে এই ধরণের পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়েছে । এবারকার বিধান পরিষদের নির্বাচনে পূর্ব জেরুজালেমের আরবদের অংশ নিতে ইসরাইল যে বাধা দিচ্ছে , তাতে ফিলিস্তিন তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছে । শায়াথ্ বলেছেন , পূর্ব জেরুজালেমের ভোটারদের ভোটদান ছাড়া ফিলিস্তিনের বিধান পরিষদের নির্বাচন আয়োজন করা অসম্ভব হবে । কারণ এ থেকে এটাই প্রতিপন্ন হবে যে , জেরুজালেম যে ইসরাইলী দখলকৃত ফিলিস্তিনী ভূভাগ ফিলিস্তিন এই সত্যতা থেকে সরে দাঁড়িয়েছে ।
পাশ্চাত্ত্য দেশগুলো আর ইসরাইল থেকে আগত বহিরাগত চাপ ছাড়া ফাতাহর আংশিক কর্মকর্তারাও বিধান পরিষদের নির্বাচন স্থগিত রাখার দাবি জানিয়েছেন , যাতে অভ্যন্তরীণ মতভেদ নিরসন করা যায় আর হামাসের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা যায় ।
বর্তমানে বিধান পরিষদের নির্বাচন যে সময় মতো আয়োজন করা হবে কি না , ফিলিস্তিন জাতীয় ক্ষমতা সংস্থা এই গুরুত্বপূর্ণ বাছাইয়ের সম্মুখীন হচ্ছে । যদি নির্বাচন সময়মতো আয়োজন করা হয় , তাহলে তা হামাসের অনুকূল হবে । নির্বাচন স্থগিত রাখা হলে ফিলিস্তিন আর হামাসের মধ্যে সাংঘাতিক প্রতিদ্বন্দ্ব হতে পারে । হামাস এই সুযোগের অজুহাতে জনগণের আশা-আকাংক্ষা লংঘন করা আর অভ্যন্তর ও বাইরের চাপের সামনে নতি স্বীকার করার জন্য ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলবে । ফিলিস্তিনের প্রধান আলোচনার প্রতিনিধি এরেকাত সতর্ক করে বলেছেন , নির্বাচন স্থগিত রাখা হলে দুর্যোগমূলক পরিণাম হতে পারে এবং এতে বল প্রয়োগ , বিশৃংখলা আর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ঘটার আশংকাও আছে ।
|