v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-12-23 16:06:53    
তিব্বতী পশুপালকদের চিকিত্সা সুব্যবস্থা

cri
  ১২ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার চীনের তিব্বত স্বায়ত্ত শাসিত অঞ্চলে ১০ লক্ষ তিব্বতী পশুপালক বাস করেন । যেখানে পানি ও ঘাস আছে , সেখানে তিব্বতী ষাঁড় আর ভেড়া পাল চরানো হয় । পশুপালনের জীবনধারা ভ্রাম্যমান আর যোগিযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত বলে পশুপালকরা চিকিত্সার অসুবিধার সম্মুখীন হতেন ।

    ৪১ বছর বয়স্ক লুসানতেনচেন চুংপা জেলার পুতৌ থানার একজন পশুপালক । সম্প্রতি তার স্ত্রী হৃদরোগে আক্রান্ত হন । চিকিত্সা গ্রহণের জন্য তিনি তার স্ত্রীকে পশু খামার থেকে ৬ শো কিলোমিটার দূরে জেলা শহরের হাসপাতালে নিয়ে গেলেন । ওখানে তিনি আবিষ্কার করলেন , শিক্ষকের রক্ষণাবেক্ষণে জেলা শহরের প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষারত তার ছেলেও এই হাসপাতালে চিকিত্সা গ্রহণ করছিল । ডাক্তার তেনচেনকে জানালেন , তার ছেলের একটু সদি আর কাশি ছিল । ওষুধ খেলে ভাল হবে । কিন্তু তার স্ত্রীকে তো হাসপাতালে থেকে চিকিত্সা গ্রহন করতে হবে ।

    সর্দি-জ্বর , মাথা ব্যথা আর উদারময়ের মতো সাধারণ রোগ গ্রামের চিকিত্সক চিকিত্সা করতে পারেন । তবে মারাত্মক রোগ চিকিত্সা করার জন্য জেলা শহর হাসপাতালের ডাক্তারের উপর নির্ভর করতে হবে ।

    চুংপা জেলা সমুদ্র সমতলের তুলনায় ৫ হাজার মিটারেরও বেশি উঁচু । তার আয়তন ৪০ হাজার বর্গ কিলোমিটারেরও বেশি । ওখানে প্রায় ২০ হাজার পশুপালক থাকেন । পশুপালন বৃত্তি প্রধান বিস্তীর্ণ এই জেলার প্রাকৃতিক পরিবেশ খুব দুরূহ । গত শতাব্দির ষাটের দশকে এই জেলায় একটিমাত্র বড় হাসপাতাল-চুংপা জেলার গণ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয় । গত কয়েক দশক ধরে এই হাসপাতালে বরাবরই স্থানীয় পশুপালকদের জন্য চিকিত্সা করা হয় । এই হাসপাতালের চিকিত্সার ব্যবস্থা আর সরঞ্জাম উন্নত করার জন্য গত বছর স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের সমর্থনে ৫ তলা বিশিষ্ট একটি নতুন হাসপাতাল ভবন সম্পন্ন করা হয় । তা এই জেলার স্থাপত্যের একটি পরিদর্শনে পরিণত হয়েছে । চিকিত্সা গ্রহণের জন্য এই হাসপাতালে সংগে সংগে শতাধিক রোগীর থাকার ব্যবস্থা করা যায় ।

    ৬০ বছর বয়স্ক নিমাতেনচু চুংপা জেলা হাসপাতালের মেডসিন বিভাগের একজন ডাক্তার । গত ৩০ বছরে তিনি এই হাসপাতালে চাকরি করেছেন । তিনি বহু পশুপালককে চেনেন । যখন লুসানতেনচেনের স্ত্রী ও ছেলে এই হাসপাতালে আসেন , তখন তারা ডাক্তার নিমাতেনচুকে চান ।

    বর্তমানে আমাদের হাসপাতালে সার্জারী বিভাগ , মেডসিন বিভাগ , শিশু রোগ বিভাগ আর স্ত্রী রোগ বিভাগ এই ৪টি বিভাগ আছে । আগে হাসপাতালে চিকিত্সার ব্যবস্থা খুব অনুন্নত ছিল । ডাক্তারদের হাতে রক্ত চাপ পরিমাপ যন্ত্র আর হৃদস্পন্দন পরীক্ষার যন্ত্র ছাড়া আর কোনো হাতিয়ার ছিল না । এখন তাদের কাছে হৃদযন্ত্রের চিত্রাঙ্কলেখ , বি আলট্রা সাউন্ড প্রভৃতি চিকিত্সার সরঞ্জামও ব্যবহার করা হচ্ছে ।

    জেলা শহরে শুধু ৬শোরও একটু বেশি অধিবাসী আছেন । সুতরাং বেশির ভাগ সময় নিমাতেনচু আর তার সহকর্মীরা গ্রামাঞ্চলে গিয়ে পশুপালকদের জন্য চিকিত্সা করে থাকেন । আগে যোগাযোগ ব্যবস্থা আনুন্নত বলে তাদের সংগে সংগে ওষুধ নিয়ে ঘোড়ায় চড়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে চিকিত্সা করতে হতেন । নিমাতেনচু আনন্দের সংগে সংবাদদাতাকে বলেছেন , তার অশ্বারোহণের নৈপুণ্য যে এত ভাল , তার মূলে রয়েছে তখন ঘোড়ায় চড়ে গ্রামে গ্রামে পশুপালকদের জন্য চিকিত্সার পরিসেবা । এখন এই নৈপুণ্য কাজে লাগিয়ে তাদের জন্য আরো ভালভাবে পরিসেবা করা যায় । কয়েক বছর আগে হাসপাতাল একটি মোটর গাড়ি কিনেছে । এতে পশুপালকদের চিকিত্সার জন্য আরো সুবিধাজনক হয়েছে । ফলে নিমাতেনচুর ঐ ঘোড়ার ব্যবহার আর নেই ।

    প্রতি বছরের গ্রীষ্মকাল আর শরত্কালে ডাক্তার নিমাতেনচু আর সহকর্মীদের গ্রামাঞ্চলে ঘুরে চিকিত্সা করতে হয় । কারণ এই কয়েক মাসের মধ্যে পশুপালকরা খাবার নিয়ে বাসা থেকে অনেক দূরের তৃণভূমিতে গিয়ে পশু পালন করে থাকেন । তখন তাদের পক্ষে চিকিত্সার সমস্যা আরো তীব্র হয়ে উঠে । নেমাতেনচু বলেছেন , চুংপা জেলার ১৩ থানা আর ৬০ গ্রাম আছে । প্রত্যেক গ্রাম আর থানায় গ্রামীণ চিকিত্সক আছেন । কিন্তু তারা শুধু মাথা ব্যথা , সর্দি-জ্বরের মতো সাধারণ রোগ চিকিত্সা করতে পারেন । জেলায় তার মতো কঠিন ও মারাত্মক রোগ চিকিত্সা করতে পারেন এমন ডাক্তারের সংখ্যা শুধু বিশাধিক । বছরে তারা কমপক্ষে তিন চার বার গ্রামে গ্রামে গিয়ে ঘুরে চিকিত্সা করেন ।

    বর্তমানে চুংপা জেলায় ওষুধ আর চিকিত্সা ব্যবস্থার অভাব যুগ চলে গেছে । এই জেলার স্বাস্থ্য ব্যুরোর প্রধান মিঃ চাও হুই চ্যুন মনে করেন যে , জেলায় চিকিত্সা আর স্বাস্থ্য রক্ষার ক্ষেত্রে এখনো কতকগুলো সমস্যা বিরাজমান । ভবিষ্যতে স্বাস্থ্য ব্যুরো নিম্ন লিখিত এই কয়েক দিক থেকে ব্যবস্থা নেবে ।

    জেলার চিকিত্সা আর স্বাস্থ্য রক্ষার কাজ উন্নত করতে চাইলে ডাক্তাদের পেশাগত উত্কৃষ্টতা ও নৈপুণ্য উন্নত করতে হবে ; ওষুধ ও চিকিত্সা ব্যবস্থার অভাব নিরসন করতে হবে এবং পশুপালকদের চিকিত্সার সুবিধার জন্য ভ্রাম্যমান চিকিত্সার ব্যবস্থা আরো পূর্ণাংগ করে তুলতে হবে ।

    চিকিত্সার ব্যবস্থা ক্রমাগত উন্নত হবার সংগে সংগে চুংপা জেলায় ব্যাপক পশুপালকের চিকিত্সার নিশ্চয়তা ব্যবস্থাও দিন দিন পূর্ণাংগ হয়ে উঠছে । গত কয়েক বছরে তিব্বতের বহু এলাকায় নতুন সহযোগিতা চিকিত্সা ব্যবস্থা চালু হয় । এই ব্যবস্থা অনুযায়ী , চিকিত্সার জন্য যে সব খরচ করা হবে , সে সব খরচের মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার , স্থানীয় সরকার আর পশুপালকরা যার যার যথাযোগ্য ভার বহন করে । ২০০৪ সালে চুংপা জেলায়ও এই ব্যবস্থা চালু হয়েছে । বর্তমানে পশুপালকদের বছরে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে মাত্র ১০ ইউয়ান জমা দিতে হয় । হাসপাতালে চিকিত্সার জন্য যে সব খরচ করা হবে , সে সব খরচের ৭০ শতাংশ সরকার বহন করবে । এই নতুন সহযোগিতা চিকিত্সা ব্যবস্থা পশুপালকদের সমাদর পেয়েছে ।