গতকয়েক বছরে প্রতিবন্ধীদের পরিসেবার লক্ষ্যে চীনের অনেক স্থানে একের পর এক জনহিতকর সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । চীনা ছাড়া বহু বিদেশী বন্ধুও স্বেচ্ছায় জনহিতকর সংস্থার জন্য কাজ করছেন । মার্কিন নাগরিক জর্জ ইয়াং তাঁদের মধ্যে একজন ।
পেইহাই পার্ক ও জিংসান পার্ক পেইচিংয়ের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত দুটো প্রসিদ্ধ পার্ক । দুটো পার্কের মাঝখানে নির্জন দা শি জুও গলির পাশে একটা আঙ্গিনাকে মাঝখানে রেখে তার চার দিক ঘিরে যে চারটা একতলা বাড়ী রয়েছে তা পেইচিং হুইলিং প্রতিবন্ধী পরিসেবা সংস্থার অফিস । হুইলিং সংস্থা প্রতিষ্ঠার প্রধান উদ্দেশ্য ১৬ বছরোর্ধ প্রতিবন্ধী তরুণ- তরুণীদের সাহায্য করা । প্রতিদিন দু'একজন বিদেশী স্বেচ্ছাসেবকও এখানে এসে প্রতিবন্ধী তরুণ তরুণীদের সঙ্গে তথাবার্তা বলেন এবং তাঁদের মনস্তাত্ত্বিক রোগের চিকিত্সা করেন। হুইলিং সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা মাদাম মেং ওয়েই না সি আর আইয়ের সংসাদদাতাকে জানিয়েছেন , বিদেশী স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে নি:স্বার্থ-প্রাণ মি জর্জ ইয়াং সবার মনে গভীর দাগ কেটেছেন ।তিনি বলেছেন , জর্জ ইয়াং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছেন , তিনি মানুষের অভদ্র ব্যবহার সংশোধনের বিশেষজ্ঞ। অতীতে তিনি ছিলেন পুলিশ । মধ্য বয়সে জর্জ ইয়াং পুলিশের চাকরি ছেড়ে কিশোর -কিশোরী তরুণ -তরুণদের ব্যবহার ও মনোবৃত্তির গবেষণায় আত্মনিয়োগ করেন । বিশ বছর ধরে মানসিক প্রতিবন্ধকতা ও মন:রোগ গবেষণা করে এবং দশ বছর ধরে কিশোর কিশোরীদের মন:রোগ চিকিত্সা করে এই ক্ষেত্রে তিনি খ্যাতি অর্জন করেছেন । চীনে এসে তিনি হুইলিং সংস্থায় তাঁর পেশাগত অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর নতুন সুযোগ পেয়েছেন ।
তিন বছর হলো জর্জ ইয়াং স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে হুইলিং সংস্থায় কাজ করেছেন । প্রতি মঙ্গলবার বিকালে তিনি এখানে এসে মন:রোগ চিকিত্সায় চীনা কর্মীদের সহায়তা করেন এবং নি:স্বার্থে চীনা কর্মীদের তাঁর মুল্যবান অভিজ্ঞতার ভাগ দিয়েছেন ।
সি আর আইয়ের সংবাদদাতা সম্প্রতি দা শি জুও গলিতে প্রথম জর্জ ইয়াংয়ের দেখা পান। তাঁর চুল সম্পূর্ণ পেকে গিয়েছে , শরীর ঈষত কুঁজো , তবে স্বাস্থ্য বেশ ভালো। তিনি বলেছেন , ৯ থেকে ১১ বছর বয়সে তিনি খুবই দুষ্ট ছিলেন । বাবা- মা কখনো কখনো তাঁকে দেখাশোনা করতে চীনা প্রতিবেশীকে অনুরোধ করতেন । চীনা প্রতিবেশীর বাড়িতে তিনি রহস্য-ভরা ঐতিহ্যিক চীনা সংস্কৃতির পরিচয় পেয়েছিলেন ।ছোটো বেলা থেকেই চীন সম্বন্ধে তাঁর চমত্কার ধারনা হয়েছে । তাই অবসর গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গেই চীনে এসেছেন ।তিনি বলেছেন , চীনের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস করার পর আমি এখানে কাজ করতে আসি।মাঝেমধ্যে বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ করতে যাই । আমি এখন থাইচি শরীরচর্চা আর চীনা ভাষাও শিখছি।
জর্জ ইয়াং পেইচিংয়ের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ইংরেজী ভাষার শিক্ষক । মাদাম মেং ওয়েই নার সংস্থায় কাজ করতে তিনি কোনো পয়সা নেন না । তিনি বলেছেন , মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবন্ধীদের সাহায্যদানকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয় । কিছুদিন বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে তাঁদের সাহায্য করলে তাঁরা স্বাস্থ্যবান মানুষের মত স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেন । অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ও গণ সংগঠন প্রতিবন্ধীদের নিয়ে গভীরভাবে গবেষনা করছে ।
হুইলিং সংস্থার শিক্ষিকা উ লি ইং জর্জ ইয়াংয়ের আয়োজিত শিক্ষাকোর্সে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন । তিনি জর্জ ইয়াংয়ের পেশাগত অভিজ্ঞার পরিচয় পেয়ে মুগ্ধ হয়েছেন ।তিনি বলেছেন , জর্জ ইয়াং মনোস্তাত্ত্বিক রোগীদের প্রতি অত্যন্ত সহানুভুতিশীল ।তাঁদের কারো ব্যবহারের ত্রুটি তাঁর চোখে পড়লে তা শুধরানোর উপায় বের করার চেষ্টা করেন তিনি ।তিনি যে সব উপায় আমাদের শিখিয়েছেন বাস্তবে তা ফলপ্রসু বলে প্রমানিত হযেছে ।
উ লি ইং জানিয়েছেন , রোগীর রোগের ইতিহাস পড়ার পর তিনি অনেকক্ষন নিরবে রোগীর হাবভাব ও হাতপায়ের ভংগীমা পর্যবেক্ষণ করেন এবং তাঁর পরিবার ও জীবনযাপনের পরিবেশের খোঁজ খবর নেন । তারপর তিনি চিকিত্সার যে পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন তা কার্যকরী করেন তাঁর চীনা সহকর্মীরা ।
প্রতি সপ্তাহের মঙ্গলবার ঝড়বৃষ্টি হলেও জর্জ ইয়াং দেরীতে আসেন না । মাদাম উ লি ইয়ং তারঁ কর্মনিষ্ঠার উচ্ছসিত প্রশংসা করেছেন । তিনি বলেছেন , মি:জর্জ ইয়াং সময়-সচেতন ও দায়িত্বশীল। আসলে মঙ্গলবার তাঁর ছুটি । কিন্তু তিনি অর্ধেকদিন আমাদের প্রশিক্ষণ দেন এবং চিকিত্সার কঠিন সমস্যা সমাধানে আমাদের সাহায্য করেন ।আমাদের জন্য তিনি যে তাঁর মুল্যবান সময় ব্যয় করেছেন তাতে আমরা গভীরভাবে মুগ্ধ হয়েছি ।
১৭ বছর বয়সী প্রতিবন্ধী রং ই চাপা স্বভাগের ছেলে। সম্প্রতি মি:জর্জ ইয়াং বিশেষভাবে যে তার প্রকৃতি বিশ্লেষণ করেছেন তা আরোগ লাভ করতে তাকে যথেষ্ট সাহায্য করেছে। বস্তুত: আগের তুলনায় তিনি এখন অনেক প্রানোচ্ছল হয়েছেন।
রং ই বলেছেন , এই বছর মি:জর্জ ইয়াং বিশ-তিরিশ বার স্নেহের সঙ্গে আমার সঙ্গে কথা বলেছেন , তিনি মানসিক ত্রুটি দূর করতে আমাকে সাহায্য করেছেন।আমি মনে করি , তিনি মহত প্রাণ মানুষ ,আমার দয়ালু দাদার মত ।
মি:জর্জ ইয়াং তিন বছর ধরে পেইচিংয়ে জীবন যাপন করেছেন । পেইচিংয়ের পরিবেশ তাঁর ভালোলাগে । তাঁর প্রতিবেশী সবাই চীনা এবং বন্ধুভাবাপন্ন । তাঁর অসুখ হলে অনেকে তাঁর বাড়িতে গিয়ে তার খোঁজ খবর নেন । এখন তাঁর জীবন নিতান্ত উপভোগ্য বলে তিনি মনে করেন ।
তিনি বলেছেন : আমার স্বাস্থ্য যতদিন ভালো থাকে ততদিন এখানে থাকব ,মনেহয়, আমার বয়স আশি বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত চীনে থাকব । স্বাস্থ্য ভালো না হলেও চীনকে ছেড়ে যেতে ইচছা করবে না ।
মি:জর্জ ইয়োং সি আর আইয়ের সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন , এই বছরের গ্রীষ্মকালে তিনি কুয়াং চৌ, সি আন, থিয়ান চিন প্রভৃতি শহরে গিয়ে মনস্তাত্ত্বিক রোগ চিতিত্সার শিক্ষাকোর্সের আয়োজন করবেন এবং চীনা সহকর্মীদের জন্য তাঁর অভিজ্ঞতা রেখে যাবেন ।
|