v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-12-19 15:06:33    
মধ্যচীন  অর্থনৈতিক উন্নয়নে পিছপা হতে  নারাজ

cri
    চীনের পূর্ব এবং দক্ষিপূর্ব অংশ প্রধানত সমুদ্র-উপকূলবর্তী অঞ্চল হবার সুবাদে পরিবহন সহ অন্যান্য সুবিধার আনুকূল্যে অর্থনীতির উন্নয়নের ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে । চীনের পশ্চিম অঞ্চল প্রধানত উপকূল থেকে অনেক দূরে স্থলবেষ্টিত অঞ্চল এবং অপেক্ষাকৃত অনুন্নত । এই দুই অঞ্চলের মধ্যে রয়েছে মধ্যচীন,যা বেশি উন্নত নয়, বেশি অনুন্নতও নয় । তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন তার পশ্চিমাঞ্চলের ব্যাপক উন্নয়নের কার্যক্রম শরু করেছে । এই অবস্থা দেখে মধ্যচীন কিন্তু মোটেই দমে যায় নি এবং কোনো মতেই পিছিয়ে পড়তে চাইছে না।

    সেজন্যেই মধ্যচীনের চিয়াংসি প্রদেশের রাজধানী নানছাং শহরের একটি " অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এলাকা" স্থাপিত হয়েছে, যাতে স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নের নতুন পথ খুঁজে বের করা যায়। এলাকাটির ব্যবস্থাপনা কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান মাদাম তেং ইউহুই একটি পরিবহন কোম্পানি পরিদর্শন কররা সময়ে বলেছেন, " আমাদের প্রদেশে কোনো সমুদ্র বন্দর নেই ,তাই গত দুই বছরে নানছাং শহরের সরকার কন্টেইনার ইয়ার্ড স্থাপনের মাধ্যমে এই স্থলবেষ্টিত এলাকায়ও সমুদ্র বন্দরের মতো কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সের সুবিধা ভোগ করতে চাইছে , তাই উপকূলীয় প্রদেশগুলোর শেনচেন, সিয়ামেন, নিংপো এবং সাংহাই বন্দরের সঙ্গে যৌথ পরিবহনের ব্যবস্থা স্থাপন করেছে। ফলে ঐ সব বন্দরের সুবিধা এই স্থলবেষ্টিত শহর পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়েছে।"

    নানছাং শহরের এই উন্নয়ন এলাকার বিশেষ সহযোগিতা পদ্ধতি গোটা চিয়াংসি প্রদেশে জনপ্রিয় হয়েছে। ভৌগলিক দিক থেকে চিয়াংসি প্রদেশ চীনের দুটো সবচেয়ে উন্নত অর্থনৈতিক এলাকার সঙ্গে সংলগ্ন। ওই দুটো এলাকার একটি হলো: পূর্বচীনের সাংহাই -সহ ইয়াংসি নদীর বদ্বীপ এলাকা এবং অন্যটি হলো হংকংয়ের কাছাকাছি দক্ষিণচীনের মুক্তা নদীর বদ্বীপ এলাকা । এই দুটো উন্নত এলাকার সঙ্গে চিয়াংসি প্রদেশের সহযোগিতা চালানো খুবই সুবিধাজনক। বিশেষ করে আজকাল ঐ দুটো এলাকায় আরও উচ্চ পর্যায়ের হাইটেক শিল্প উন্নয়নের জন্য তাদের আগেকার কতকগুলো শিল্প অন্যত্র অর্থাত্ চিয়াংসি প্রদেশের মতো সুবিধাজনক স্থানে স্থানান্তরিত করার প্রবনতা দেখা দেয়। চিয়াংসি প্রদেশ ঠিক এই সুযোগ আঁকড়ে ধরেছে। মধ্যচীনের অন্য ৫টি প্রদেশ যেমন শানসি, হোনান, হুপেই , হুনান এবং আনহুই প্রদেশও অনুরূপ নীতি অবলম্বন করেছে ।

    ২০০৪ সাল থেকে এই সব প্রদেশ পূর্ব উপকূলীয় উন্নত প্রদেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা জোরদার করেছে । যেমন হুনান ও চিয়াংসি প্রদেশ মুক্তা নদীর বদ্বীপ এলাকার সঙ্গে এবং আনহুই ও হুপেই প্রদেশ ইয়াংসি নদীর বদ্বীপের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার সম্পর্ক স্থাপন করেছে । ফলে মধ্যচীনের প্রদেশগুলো পূর্ব-উপকূলীয় উন্নত অঞ্চল থেকে প্রচুর পুঁজি ও প্রযুক্তিগত সাহায্য পাচ্ছে। শুধু তাই নয়, মধ্যচীনের প্রদেশগুলোর মধ্যেও সহযোগিতা জোরদার করা হয়েছে। চিয়াংসি প্রদেশের গভর্নর হুয়াং চিছুয়েন বলেছেন, " কৃষি ক্ষেত্রে আমরা হুনান এবং হুপেই প্রদেশের সঙ্গে যোগাযোগ বা আদানপ্রদান জোরদার করেছি। শক্তিসম্পদের ক্ষেত্রে আমাদের চিয়াংসি প্রদেশ প্রধানত মধ্যচীনের আনহুই , শানসি এবং হোনান প্রদেশ থেকে কয়লার সরবরাহ পায়। চিয়াংসি প্রদেশে উত্পন্ন প্রচুর কাঁচা মাল , যেমন তামা এবং টাংস্টেন ইত্যাদি ধাতু মধ্যচীনের অন্যান্য প্রদেশের জন্য সরবরাহ করা হয়।

    মধ্যচীন বরাবরই চীনের শিল্প, কৃষি ও শক্তিসম্পদের গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মধ্যচীনের প্রদেশগুলো অর্থনীতিতে কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে। যেমন হুপেই প্রদেশের শিল্প ও কৃষি উত্পাদনের মোটমূল্য ১৯৮৪ সালে চীনে ষষ্ঠ স্থান অধিকার করেছিল , কিন্তু এই সাম্প্রতিক কয়েক বছরে তার স্থান শুধু দশমের কাছাকাছি।

    হুপেই প্রাদেশিক সরকারের কর্মকর্তা চাং ছাংএর জানিয়েছেন, প্রদেশটির উন্নয়নের জন্য একটি নতুন কার্যকর পদ্ধতি গ্রহন করা হয়েছে । তা হলো প্রদেশটির রাজধানী উহানকে কেন্দ্র করে এক শো কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে ৮টি শহরের সঙ্গে বিজ্ঞানসম্মত কর্মবণ্টনের ভিত্তিতে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সহযোগিতার এক অর্থনৈতিক বলয় স্থাপন করা । এই অর্থনৈতিক বলয়ের মোট জি ডি পি হুপেই প্রদেশের অর্ধেকের বেশি। তিনি বলেছেন ," উহান শহরের নেতৃত্বাধীন এই অর্থনৈতিক বলয় গঠনের কাজ দ্রুততর করার জন্যে সারা প্রদেশের সমর্থন প্রয়োজন, যাতে উহান শহরকে একটি সুপার শহর হিসেবে আরও শক্তিশালী করা যায় । এখন অনেক কোম্পানির সদরদফতর উহান শহরে স্থানান্তরিত হয়েছে। এর সঙ্গে সঙ্গে এই অর্থনৈতিক বলয়ের অবকাঠামো নির্মাণ এবং বিভিন্ন শিল্পের যুক্তিযুক্ত বিন্যাসের পরিকল্পনা জোরদার করা দরকার।"

    তিনি জানিয়েছেন, উহান অর্থনৈতিক বলয় গঠনের মাধ্যমে উহান শহরে গবেষণা এবং প্রযুক্তি-ঘনিভুত এলাকা গড়ে উঠবে , উহানের আশেপাশের শহরগুলোতে শ্রমঘন শিল্প এলাকা গড়ে উঠছে, ফলে গোটা অর্থনৈতিক বলয়ের মধ্যে মেধার আদানপ্রদান এবং লোজিস্টিক্স, তথ্য ও পুঁজির আদানপ্রদান জোরদার হবে । এখন সড়ক উন্নয়নের ফলে উহান শহর থেকে এই বলয়ের অন্য ৮টি শহরের যে কোনো একটিতে যেতে গাড়িতে শুধু এক ঘণ্টা লাগে।

    মধ্যচীনের বেশির ভাগ প্রদেশ ছিল কৃষিপ্রধান প্রদেশ। কৃষকদের আয় তুলনামূলক কম। মধ্যচীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে এই অসুবিধা দূর করার জন্য সরকার কৃষি ও কৃষকদের জন্য সুবিধা দেয়ার ধারাবাহিক নীতি প্রবর্তন করেছে। হুপেই প্রাদেশিক সরকারের কর্মকর্তা চাং ছাংএর বলেছেন, " অতীতের এক দীর্ঘ সময়পর্বে কৃষকদের আর্থিক বোঝা বেশ ভারি ছিল, কৃষিপণ্যের অর্থনৈতিক কার্যকরিতা বেশ নিম্ন মানের ছিল ; প্রযুক্তি ও ব্যবসার দিক থেকে কৃষি অনুন্নত ছিল, গোটা পল্লী অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন পিছিয়ে পড়েছে । মধ্যচীনে এই সমস্যা খুবই লক্ষণীয়। সমাধানের জন্য ইতিমধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে । কৃষকদের কৃষি-কর সম্পূর্ণভাবে বাতিল করা হয়েছে । এখন কৃষককে কোনো কর দিতে হয় না । "

    আশা করা যায় , চীনের পূর্ব ও পশ্চিম অংশের মতো মধ্যচীনের উন্নয়ন আরও জোরদার হবে। ফলে সারা দেশে সুষম সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব হবে ।